ব্যাংক ব্যবসায়ের আভ্যন্তরীণ উপাদানসমূহ [ Internal Factors of Environment of Banking ] অর্থ যা ব্যাংকের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত এবং ব্যাংকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এসব বিষয়ে ব্যাংকের সিদ্ধান্ত পরিবেশি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে।
Table of Contents
ব্যাংক ব্যবসায়ের পরিবেশর আভ্যন্তরীণ উপাদানসমূহ :
সংগঠন সংক্রান্ত উপাদান [ Factors Relating to Organization ]:
ব্যাংক ব্যবসায়ে প্রভাব সৃষ্টিকারী আভ্যন্তরীণ উপাদানগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাংকের সাংগঠনিক প্রভাব বিস্তার করে আছে। নিমে সংক্ষেপে উপাদানগুলো আলোচনা করা হলোঃ
১. ব্যাংকের অবস্থান (Location of Bank):
শহরাঞ্চলে অবস্থিত ব্যাংক এবং এর শাখাসমূহ সহজেই ব্যাংক ব্যবসায়ে লাভ করতে পারে। জনসাধারণ শিক্ষিত এবং ব্যাংকিং লেনদেনে অভ্যস্ত। অর্থনৈতিক কার্যক্রমও শহরাঞ্চলে অধিকতর ব্যাপক। ফলে সহজেই এ সকল ব্যাংক এর লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাতে পারে। হার অল্প, এরা ব্যাংকিং লেনদেনে যথেষ্ট অভ্যস্ত নয়। তাছাড়া অর্থনৈতিক বিশেষ মৌসুমে সীমাবদ্ধ। ফলে ব্যাংকিং কার্যক্রমও বিশেষ বিশেষ মৌসুমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। কোন কোন জায়গায় ব্যবসায়-বাণিজ্য বেশি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অনুকূল। ঐ স্থানে ব্যাংক ব্যবসায়ও থাকে। অপরপক্ষে অনুন্নত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ব্যাংক ব্যবসায় সমস্যার সম্মুখীন হয়।
২. ব্যাংকের লে আউট’ (Lay Out Designing of Bank):
ব্যাংকের অফিসে কার্যক্রম পরিচালনায় কর্মচারী খরিদ্দারের বসা অন্যান্য সুবিধা পর্যাপ্ত থাকলে সে ব্যাংক সহজে দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন করে উন্নতি লাভ করতে সন্তুষ্টির সাথে কাজ করতে পারে এবং মক্কেলগণও সে ব্যাংকের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে করেন। কার্য সম্পাদন কালে হাঁটাচলা সহজ অফিসে আলো বাতাস পর্যাপ্ত হলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজ করার উৎসাহ-উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়। ফলে দক্ষতার সঙ্গে তারা কার্য থাকেন।
৩. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নীতিমালা (Defined Goals and Policies):
প্রতিটি ব্যাংকেরই নিজস্ব লক্ষ্য নীতিমালা থাকে। সে নীতিমালা সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত থাকলে সে লক্ষ্য উদ্দেশ্য ব্যাংক ব্যবসায়ের পরিবেশ ব্যবস্থাপনা অর্জন ব্যাহত হয়। লক্ষ্য ও নীতিসমূহ পরিষ্কার ভাষায় বোধগম্য হলে তার সম্পর্কে ভুল বুঝাবুঝির সম্ভাবনা কম থাকে।
৪. দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুস্পষ্টতা (Clear Cat Responsibility & Duty):
ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য যদি স্বচ্ছভাবে বর্ণিত না থাকে তা হলে তাদের সে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন ব্যাহত হয় এবং ফলশ্রুতিতে ব্যাংকের লক্ষ্য ও সফলতা অর্জন ব্যাহত হয়।
৫. পর্যাপ্ত স্থান ও সামাপি (Adequate Place & Logistics for work):
পর্যাপ্ত স্থানাভাবে এবং আসবাবপত্র ও অন্যানা প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাবে সুষ্ঠুভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন ব্যাহত হয়ে থাকে এবং কর্মচারীদের দক্ষতা কমে যায়। সুতরাং সুচারুরূপে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ সবের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা উচিত।
৬. ট্রেড ইউনিয়ন (Trade Union):
ট্রেড ইউনিয়নের ধারণার জন্ম হয়েছিল মূলত কর্মচারী ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য; কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এ ট্রেড ইউনিয়ন প্রায়শঃই ব্যাংকিং-এর স্বাভাবিক কার্যক্রমে অহেতুক বাধার সৃষ্টি করে। ফলে ব্যাংকের সফলতার গতি মন্থর হয়ে পড়ে। তবে সহযোগীতাপূর্ণ ও গঠনমূলক মনোভাব ট্রেড ইউনিয়ন ব্যাংকের সুষ্ঠু কার্য পরিচালনা এবং লক্ষ্য অর্জনের অনুকূল।
৭. দক্ষতা ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক পদোন্নতি ও বদলী (Promotion and Transfer on the Basis of Efficiency):
দক্ষতা ও ন্যায় বিচারভিত্তিক পদোন্নতি ও বদলী অবস্থার পরিবর্তে স্বজনপ্রিয়তা কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং এতে তাদের কর্মদক্ষতা হ্রাস পায়। ৮. দক্ষ আমানত ও ঋণ কার্যক্রম (Efficient Deposit & Credit Operations): দক্ষ আমানত ও ঋণ ব্যবস্থাপনার ওপরও ব্যাংক ব্যবসায়ের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। একজন দক্ষ আমানত ব্যবস্থাপক সঠিক আমানত মিশ্রণের মাধ্যমে আমানতের উপর ব্যয় সংকোচন ও মুনাফা বৃদ্ধি করতে পারে। আবার একজন দক্ষ ঋণ ব্যবস্থাপক তার অভিজ্ঞতার আলোকে অপেক্ষাকৃত স্বল্প পরিমাণ তহবিল দিয়েও অধিক সংখ্যক ঋণ গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে পারে।
৯. দক্ষ ব্যবস্থাপনা (Efficient Management):
কোন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা যদি দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয় তাহলে সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তা ব্যাংককে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। অন্যদিকে অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ত্রুটিপূর্ণ নীতিমালা নির্ধারণ ও সংযোগের ফলে ব্যাংকের অমঙ্গল ঘটতে পারে।
১০. আর্থিক সচ্ছলতা- (Financial Solvency):
আর্থিক সচ্ছলতা একটি ব্যাংকের প্রতি মক্কেলগণের আস্থা সৃষ্টি করে, যার ওপর ব্যাংকের সফলতা বহুলাংশে নির্ভরশীল। অপরদিকে আর্থিক অস্বচ্ছলতা জনগণের আস্থা নষ্ট করে ব্যাংক ব্যবসায়ের করুণ পরিণতি ডেকে আনে।
১১. আর্থিক শৃংখলা (Financial Discipline):
এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর্থিক শৃংখলার অভাবে ব্যাংক তার প্রকৃত আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে পারে না। ফলে নানা ক্ষেত্রে বিপর্যয় দেখা দেয়। অন্যদিকে আর্থিক শৃংখলা বিদ্যমান থাকলে যে কোন সময় ব্যাংক এর প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সঠিক নীতি নির্ধারণ ও এর বাস্তবায়ন করতে পারে। ১২. সেবা প্রদান (Service Rendered): একটি ব্যাংক বহুমুখী মক্কেল সেবা সরবরাহ করে। জনপ্রিয়তা অর্জনের মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে পারে।
১৩. কাজের পদ্ধতি (Method of Work):
ব্যাংকের কাজের প্রক্রিয়া যদি প্রযুক্তিভিত্তিক হয় সময়ে এবং স্বল্প শ্রম ব্যয়ে অধিক কর্ম সম্পাদন করতে পারে। এতে মক্কেলসাধারণও উপকৃত হয় ও সন্তুষ্টি লাভ করে।
১৪. উন্নত প্রযুক্তি (Use of Technology):
এবং প্রক্রিয়ায় যদি উন্নত যন্ত্রপাতি যথা টেলি ব্যবস্থা, কম্পিউটার, ফ্যাক্স ইত্যাদি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা হলে ব্যাংকের কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি মক্কেলগণও অধিকতর বেশি হারে আকৃষ্ট হয়। যা ব্যাংকিং ব্যবসায়ের সফলতা আনে।
১৫. মক্কেলের সঙ্গে সম্পর্ক (Relation of Bank with Customers):
ব্যাংকের কর্মচারীবৃন্দ যদি মক্কেলদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন এবং ভাল ব্যবহার করেন তা হলে উক্ত ব্যাংক, ব্যাংকিং ব্যবসায়ে সফলতা অর্জন করতে পারে।
১৬. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা (Bureaucratic Complexity):
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যে কোন সংগঠনে কর্ম সম্পাদনে অনাকাংক্ষিত বিলম্ব ঘটায়। ফলে সময়মত কোন জরুরী সিদ্ধান্ত কার্যকর করা অনেক সময় সম্ভব হয় না।

কর্মচারী সংক্রান্ত উপাদান [ Factors Relating to Bank Employees] :
ব্যাংকের সফলতার উপর প্রভাব সৃষ্টিকারী আভ্যন্তরীণ উপাদানের মধ্যে কতগুলি উপাদান সরাসরি কর্মচারীদের সাথে সম্পর্কিত। কর্মচারীদের সাথে সম্পর্কিত এ সব উপাদান প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ব্যাংকের সাফল্যের সাথে জড়িত। সংক্ষেপে এ সব উপাদান নিঙ্গে আলোচনা করা হলোঃ
১. পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মচারী (Number of Employee):
অধিক সংখ্যক কর্মচারী যেমন কাজকর্মে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি অপর্যাপ্ত কর্মচারীও ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পাদনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। সুতরাং সুষ্ঠুভাবে প্রত্যাশিত কর্মসম্পাদনের জন্য ব্যাংকে অবশ্যই পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মচারী থাকা আবশ্যক।
২. দক্ষ কর্মচারী (Effecient Employee):
অধিক সংখ্যক অদক্ষ কর্মচারীর চেয়ে তুলনামূলকভাবে স্বল্পসংখ্যক দক্ষ ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মচারী অল্প সময়ে অধিকতর কর্মসূচারুরূপে সম্পাদন করতে পারে। সুতরাং ব্যাংকে অনুকূল আভ্যন্তরীণ পরিবেশ সৃষ্টি করবার জন্য দক্ষ কর্মী দরকার। এ দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বাস্তব ও গঠনমূলক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।
৩. সেবা মনোভাব (Service Oriented Attitude):
ব্যাংক মূলতঃ একটি “Services selling Industry”। সুতরাং কর্মীদের মধ্যে অবশ্যই সেবার মনোভাব থাকতে হবে। উন্নত সেবা প্রদানের মাধ্যমে কর্মীগণ অধিকতর লাভজনক মক্কেল সৃষ্টি করতে পারেন এবং ব্যাংকের সফলতা তরান্বিত করতে পারেন।
৪. ব্যাংকের প্রতি অনুরাগ- (Loyalty to the Bank):
ব্যাংকের প্রতি অনুরাগী কর্মীগণ ব্যাংকের মুনাফা ও সম্পত্তি রক্ষায় ত্যাগ স্বীকার করতে সদা প্রস্তুত থাকেন এবং এ ধরনের কর্মীবাহিনীর মধ্যে সেবা মনোভাবও থাকে যথেষ্ট। তাই এ অনুরাগী কর্মীগণ ব্যাংকের জন্য সম্পদ বিশেষ। সুতরাং অনুকূল আভ্যন্তরীণ পরিবেশ সৃষ্টি করবার জন্য ব্যাংকের প্রতি অনুরাগী কর্মী বাহিনী সৃষ্টি করতে হবে।
আরও পড়ুন: