উৎকৃষ্টতম বনাম নিকৃষ্টতম তারল্য

উৎকৃষ্টতম বনাম নিকৃষ্টতম তারল্য [ Best Liquidity Vs Worst Liqidity ] বিষয়টি নিয়ে আজকের আলোচনা। একটি ব্যাংক এর তথা শাখার তারল্য অবস্থা নানা স্তরের হতে পারে। যথা : সর্বোৎকৃষ্ট সন্তোষজনক মোটামুটি অসন্তোষজনক ও নিকৃষ্টতম। প্রত্যেক স্তরের ইঙ্গিত বা উপসর্গ তথা নির্ধারক সুষ্পষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা কষ্টকর। তবে উৎকৃষ্টতম ও নিকৃষ্টতম এদু’পর্যায়ের তারল্য অবস্থা চিহ্নিত করা কঠিন নয়। নিম্নে এদের ইঙ্গিত আপক ও চিহ্নসমূহ দেখা যেতে পারে।

উৎকৃষ্টতম বনাম নিকৃষ্টতম তারল্য [ Best Liquidity Vs Worst Liqidity ]

উৎকৃষ্টতম বনাম নিকৃষ্টতম তারল্য [ Best Liquidity Vs Worst Liqidity ]

তারল্যের ব্যবস্থাপনার

বিষয়

উৎকৃষ্টতম তারল্য অবস্থা নির্দেশকনিকৃষ্টতম তারল্য অবস্থা নির্দেশক তারল্য
আমানততহবিল তথা আমানত ব্যবস্থাপকদের সুচিন্তিত অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পূর্বাভাসের চেয়ে সংগৃহীত আমানতের স্তর যথেষ্ট বেশী।তহবিল  তথা আমানত ও  ব্যবস্থাপকদের সুচিন্তিত অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পূর্বাভাসের চেয়ে সংগৃহীত আমানতের স্তর অনেক কম।
তহবিল ব্যবহারকারী তথা ঋণ ব্যবস্থাপকদের সুচিন্তিত অভিজ্ঞতা ভিত্তিক ঋণ প্রকৃত ঋণ আবেদনের পরিমাণ কম।তহবিল ব্যবহারকারী তথা ঋণ  ব্যবস্থাপকদের সুচিন্তিত অভিজ্ঞতা ভিত্তিক ঋণ পূর্বাভাসের চেয়ে প্রকৃত ঋণ আবেদনের পরিমাণ অনেক বেশী।
৩. গৃহিত পদক্ষেপ(ক) উদ্ধৃত্ত তারল্য সংগঠিত হওয়া পূর্বাহ্নে আঁচ করে লাভজনক বিনিয়োগ খাত চিন্তা ভাবনা করে চিহ্নিত করে বিনিয়োগের বন্দোবস্ত করা।

(খ) ঘাটতি তারল্যের সম্ভাবনা পূর্বাহ্নেই আঁচ করে অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়ের সহজলভ্য তারল্য ঘাটতি পুরনার্থে প্রয়োজনীয় তহবিল বন্দোবস্ত করা।

(ক) উদ্ধৃত্ত তারল্য সংগঠিত হলে, যেহেতু পূর্বাহ্নে প্রস্তুতি থাকে না সেহেতু এরূপ উদ্বৃত্ত তারল্য কোন লাভজনক বিনিয়োগে ব্যবহৃত না হয়ে আলস অবস্থায় বিদ্যমান থাকে না ।

(খ) তারল্য ঘাটতি পূর্বাহ্নে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় যখন তারল্য ঘাটতির সম্মুখীন তখন সুবিবেচিত তারল্য সংস্থানে অক্ষম হয়ে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়ে।

 

তারল্য পূরণের জন্য উৎস নির্বাচনের বিবেচ্যসমূহ [ Considerations in Selecting the Liquidity Sources ]

সম্পত্তি বিক্রয় করে অথবা দায় বাড়িয়ে তারল্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। সম্পত্তি অথবা দায় যে ভিত্তিই ব্যবহার হোক না কেন তার সংগ্রহ খরচ গ্রহণযোগ্য পরিমাণের হওয়া উচিত। সংগ্রহ খরচ আয়ত্তের মধ্যে জন্য যে বিষয়গুলো সম্পত্তি ও দায় উৎসের জন্য বিবেচ্য তার প্রধান ও কয়েকটি নিম্নে দেয়া গেল । সম্পত্তি বিক্রয় ও নতুন দায় সৃষ্টি করে তারল্য পূরণ খরচ আয়ত্বে রাখার বিবেচ্য সমূহ :

সম্পত্তি বিক্রয় কালে বিবেচ্যদায় সৃষ্টি কালে বিবেচ্য
দালালী খরচদালালী খরচ
২. বাজার দরের ভিত্তিতে বিক্রিতব্য ঋণপত্রের মুনাফা লোকসানের সম্ভাবনা২. সৃষ্ট দায় বৃদ্ধির ফলে রিজার্ভের পরিমাণ
 ৩. ঋণপত্রের উপর প্রাপ্য সুদ আয় পরিত্যাগ করার খরচ।আমানত বীমার (যদি করা হয়) প্রিমিয়াম
৪. ঋণপত্র বিক্রিলব্ধ আয়ের ফলে প্রদেয় করের উপর প্রভাব-কর দায়বৃদ্ধি অথবা হ্রাসের পরিমাণ৪. সংশ্লিষ্ট দায় রক্ষণা-বেক্ষণ ও উন্নয়ন খরচ।
৫. প্রাপ্য সুদের আয়ের পরিমাণ হ্রাস বৃদ্ধির পরিমাণ৫. প্রদেয় সুদ খরচ।

 

উপরের খরচাদি বিবেচনার সময় সম্ভাব্য খরচ বা ব্যয়ের বর্তমান মূল্য প্রভাব (Present Value ) বিবেচনায় রাখতে হবে। একটি উৎসের তুলনায় আরেকটি উৎসের আপেক্ষিক ব্যয়ের বিবেচনা কালে পরোক্ষ প্রভাবকারী বিষয়সমূহ এবং এগুলোর প্রভাব বিস্তারের নিবিড়তা পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।

উৎকৃষ্টতম বনাম নিকৃষ্টতম তারল্য [ Best Liquidity Vs Worst Liqidity ]

ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা কৌশলসমূহ [ Liquidity Management Strategies for Banks ]

তারল্য সমস্যা ব্যাংকের ইতিহাসের জন্মলগ্ন থেকেই বিরাজমান। ব্যক্তি ব্যাংক তৎকালে তার মনগড়া ইচ্ছা ও মর্জি মত তারল্য সংকূলান করত। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকসমূহ ব্যাংক ইতিহাসের প্রথমার্ধে কেবল ব্যাংক কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত বুদ্ধিকে কাজে লাগাত। অধুনা তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য চাহিদার দাবিতে ও প্রয়োজনের নিরিখে নব নব কৌশল অবলম্বন করে দক্ষ তারল্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার প্রয়াস পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংক বিশেষজ্ঞগণ তিন ধরণের কৌশল অবলম্বন করে অপেক্ষাকৃত নির্ভরযোগ্য তারল্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সম্পাদন করে যাচ্ছে। এই তিন ধরণের তারল্য ব্যবস্থাপনা নিম্নরূপঃ

(ক) সম্পত্তি রূপান্তর কৌশল

(গ) ভারসাম্যপূর্ণ তারল্য ব্যবস্থাপনা কৌশল

নিম্নে তারল্য ব্যবস্থাপনা কৌশলগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা গেল :

(ক) সম্পত্তি রূপান্তর কৌশল Assets Conversion Strategies :

তারল্য ব্যবস্থাপনা কৌশলসমূহের মধ্যে এটা সবচেয়ে পুরাতন। এ কৌশলের নিখুঁত ইঙ্গিত হল নগদ অর্থ বা নগদান প্রায় সম্পত্তি বন্দোবস্ত করে রাখা যা প্রয়োজনে সহজেই তারল্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হতে পারে। এ কৌশলটিকে কেউ কেউ সম্পত্তি তারল্য ব্যবস্থাপনা বলে ও অভিহিত করে থাকে।

আবার কোন কোন ব্যাংক বিশেষজ্ঞ তারল্যের ব্যবস্থাপনার এ কৌশলটি জমাকরণ কৌশল অর্থাৎ (St Liquidity in Bank Assets) ও বলে থাকেন।

এরূপ সম্পত্তির ভিতরে যদিও নগদ অর্থই প্রধান তবুও প্রায় নগদান সম্পত্তিসমূহ নগদানে রূপান্তরের প্রয়োজনীয় সময় ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নিম্নরূপ হতে পারে :

(ক) এমন প্রায় নগদ যা সম্পত্তি কাল বিলম্ব না করে নগদ অর্থে রাপান্তর করা যায়।

(খ) এমন প্রায় নগদান সম্পত্তি যার বাজারে সদা সর্বদা স্থিতিশীল চাহিদা বিরাজমান। এরূপ সম্পা অল্প সময়ে বিক্রি হোক না কেন বা যত বড় পরিমাণেরই বিক্রির ইচ্ছা প্রকাশ করুক না কেন বাজ গুলোর মূল্য স্তর তেমন কোন কমতি হয় না।

(গ) এরূপ প্রায় নগদান সম্পত্তি বিক্রেতা ফেরত সংগ্রহ করতে চাইলে তেমন কোন ক্ষতির ঝুঁকি থা এরাপ প্রায় নগদান সম্পত্তি পুনঃক্রয় করতে তেমন কোন অসুবিধা হয় না।

উৎকৃষ্টতম বনাম নিকৃষ্টতম তারল্য [ Best Liquidity Vs Worst Liqidity ]

যে যে সম্পত্তি রূপান্তরের মাধ্যমে তারলা সংস্থার কৌশল অবলম্বিত হয় তা নিম্নে দেখা যেতে পারেঃ

(১) ট্রেজারী বিলসমূহ

(২) অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাওয়া সরকারী তহবিল, (৩) পুনঃ ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে ঋণপত্র,

(৪) অন্য ব্যাংকে জমা আমানতসমূহ.

(৫) নগর/শহর কৃর্তৃপক্ষের ইস্যুকৃত বন্ড ও নোটসমূহ, (৬) সরকারী সংস্থাসমূহের ঋণপত্রসমূহ,

(৭) মাধ্যমিক বাজারে পুনঃ বিক্রয় যোগ্য (Bankers Acceptances),

(৮) স্বল্প মেয়াদী বাণিজ্যিক ঋণপত্র,

(খ) দায় ব্যবস্থাপনা কৌশল Liability Management Strategy

তারল্যের সম্পত্তি রূপান্তর কৌশলের তুলনায় অপেক্ষাকৃত আধুনিক ও সাম্প্রতিক কৌশল হল দায় ব্যবস্থাপনা কৌশল বা Liability Management Strategy। যুক্তরাষ্ট্রে ষাটের দশক থেকে আরম্ভ করে সত্তরের দশক পর্যন্ত এ কৌশলটি তারল্য ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট নির্ভরযোগ্যতার কারণে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

এ কৌশলটিকে কোন কোন ব্যাংক বিশেষজ্ঞ বা ব্যাংক কর্মকর্তাবৃন্দ ক্রয় করা তারল্য (Purchased Liquidity) অথবা ধার করা তারল্য (Borrowed Liquidity) বলে অভিহিত করে থাকেন। এক্ষেত্রে ধার করে তহবিল সংস্থান করা হয় তখনই যখন তারল্য প্রয়োজন আসন্ন। এতে সম্পত্তি রূপান্তর কৌশলের মত অনুপার্জনশীল বা স্বল্প উপার্জনশীল খাতে প্রায় অলসভাবে তহবিল ধরে রাখতে হয় না।

ধার করা তারল্য বা দায় ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করে যে সকল উৎস থেকে তারল্যের প্রয়োজনীয় অর্থ সংগত করা হয়েথাকে তা নিম্নরূপ :

(ক) অন্য প্রতিষ্ঠান কে প্রতিশ্রুত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল।

(খ) পুনঃ ক্রয় চুক্তিতে কম ঝুঁকি সম্পন্ন সহজে বিক্রয়যোগ্য ঋণপত্র।

(গ) বড় বড় সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাসহ নাম করা শিল্পপতিদের বড় অংকের আমানত সনদ (Certificate of Deposit )

(ঘ) বিদেশী মুদ্রায় প্রাপ্তব্য আমানত সনদ বিক্রয়। যেমন : ইউরো ডলার আমানত

(ঙ) কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাট্টা তহবিল থেকে সরকার ঋণপত্র জামানত সাপেক্ষে রিজার্ভের জন্য ধার গ্রহণ।

উৎকৃষ্টতম বনাম নিকৃষ্টতম তারল্য [ Best Liquidity Vs Worst Liqidity ]

(গ) ভারসাম্য পূর্ণ তারল্য ব্যবস্থাপনা কৌশল Balanced Liquidity Management Strategy. :

তারল্য ব্যবস্থাপনার পূর্বোক্ত দুটি কৌশলেরই সীমাবদ্ধতার কারণে ভারসাম্য পূর্ণ তারল্য ব্যবস্থাপনা কৌশলটি ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যাংক বিশারদগণ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ভাবন করেছেন। তারল্যের ব্যবস্থাপনায় সম্পত্তি ও রূপান্তর কৌশল অবলম্বনে অনুপার্জনযোগ্য বা স্বল্প উপার্জনক্ষম (Non-earning of small earning) সম্পত্তিতে তহবিল ধরে রাখা অলস তহবিলেরই নামান্তর এতে তারল্য ব্যবস্থাপনা খরচ যথেষ্ট বেশী।

অপরপক্ষে ধার করা তহবিলের মাধ্যমে সংগৃহীত তারল্যের প্রদেয় সুদ খরচ ও নিতান্ত কম নয়। এই উভয় কৌশলের কোনটি একক ভাবে অবলম্বন না করে বরং এই দুটো কৌশলের যুক্তিযুক্ত সমন্বয়ের মাধ্যমে তারল্য ব্যবস্থাপনা করার নামই হল ভারসাম্য পূর্ণ তারল্য ব্যবস্থাপনা বা Banalced Liquidity Management তারল্য প্রয়োজনের কিছু অংশ নগদান ও প্রায় নগদান সম্পত্তির মাধ্যমে সংস্থান করা । অর্থাৎ তারল্য ব্যবস্থাপনা কৌশল ব্যবহার।

দায় ব্যবস্থাপনা কৌশল বা ধার করা তারল্য কৌশল ব্যবহার করে তারল্য চাহিদার বাকি অংশ সংস্থান করা প্রথম ও দ্বিতীয় কৌশলের মধ্যে তারল্য চাহিদা পূরণের অংশ কত হবে তার কোন পরিস্কার সীমা না রেখে অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও তারল্য প্রকৃতির নিরিখে তারল্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যাংক কর্মকর্তার বিচার বিবেচনার উপর নির্ভর করে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment