ঋণের উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসা করা কঠিন হচ্ছে বলেছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) প্রতিনিধিরা। রোববার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালকুদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব কথা জানিয়েছেন বিসিআই প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন ব্যাংকে ঋণের সুদহার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। পাশাপাশি ডলার সংকটের কারণে কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসিও খোলা যাচ্ছে না।
ঋণের উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসা করা কঠিন
সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ব্যাংক ঋণের সুদহার, কাঁচামালের এলসি খুলতে না পারা, নির্ধারিত দরে ডলার না পাওয়া, সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট (একক ঋণগ্রহীতার সীমা), রপ্তানির প্রণোদনা এবং গ্রুপ শ্রেণীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়ে যাচ্ছে। যার কারণে ইন্ডাস্ট্রিজগুলো টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হচ্ছে। আবার ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো বন্ডে বিনিয়োগ করছে। যার কারণে বেসরকারি খাত ফান্ড পাচ্ছে না। এসব বিষয়ে গভর্নরকে বলা হয়েছে।
গভর্নর বলেছেন, এই মুহূর্তে ঋণের সুদহার কমানো সম্ভব নয়। কারণ মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। তবে ঋণের সুদহার যেন বেশি জ্যাম্প না করে সে বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির কারণে প্রবৃদ্ধির দিকেও বাংলাদেশ ব্যাংক নজর দিচ্ছে না। তবে এসএমই ও কৃষি খাতে যাতে ঋণ পায় সে বিষয়ে নজর রয়েছে। এ পলিসিতে মূল্যস্ফীতি কমবে বলে গভর্নর আশা করছেন।
আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা যাচ্ছে না। আবার এলসি খুলতে গেলেও নির্ধারিত দরে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো এর চেয়ে বেশি রেট নিচ্ছে। অন্যদিকে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট নিয়েও কথা হয়েছে। যেটা আগে ৩৫ শতাংশ ছিল, তা এখন ২৫ শতাংশ করা হয়েছে, যার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা করতে সমস্যা হচ্ছে।
এই বিষয়ে গভর্নর তাদের জানান, এ বছরের শেষে ডলার সংকট কেটে যাবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে ঢালাওভাবে এলসি ওপেন করা বন্ধ হয়েছে। এলসি খোলাতেও তদারকি করা হচ্ছে। যার কারণে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং করতে পারছে না। ফলে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট পজেটিভ হচ্ছে। আর্থিক হিসাবের ঘাটতিও কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দেশে ব্যক্তিগত কোম্পানি ব্যক্তিগতভাবে বিবেচনা করা হয়। যারা গ্রুপ তাদের রেজিস্টার্ড করতে হয়। ৪-৫ কোম্পানি মিলে একটি গ্রুপ করতে হয়। বাংলাদেশে গ্রুপ হিসেবে কেউ রেজিস্টার্ড নয়। তাহলে একটি কোম্পানিকে কেন গ্রুপ হিসাবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে গভর্নরকে বলা হয়েছে।
রপ্তানি প্রণোদনা কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা ধরেই ব্যবসা করার চেষ্টা করছে। তবে এটা যথাযথভাবে পাচ্ছে না। ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। সেটাও যদি বন্ধ করেন তাহলে ব্যবসায় টিকে থাকা যাবে না। কারণ গ্যাস-বিদ্যুতের বিল বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে গভর্নর বলেন, এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
আরও দেখুন: