ঋণ প্রশাসনিক কাঠামো

ঋণ প্রশাসনিক কাঠামো [ Structure of Loan Administration ] – বিষয়টি নিয়ে আজকের আলোচনা। ঋণ কার্যক্রম দক্ষভাবে সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং সাংগঠনিক কাঠামো। ইতপূর্বে বলা হয়েছে যে ঋণ কার্যক্রম ব্যাংকের অতি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের একটি। যে ব্যাংক যত দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ঋণ কার্যক্রমের বিভিন্ন ধাপ ও আঙ্গিক সম্পাদন করতে সক্ষম সে ব্যাংকের ঋণ আসায় হয় তত বেশী এবং সমস্যাগ্রস্থ ঋণের সংখ্যার পরিমাণও হয় তত কম।

আমেরিকায় আশির দশকে গড়ে প্রতি বছরে দুইশতের বেশী ব্যাংক সমস্যাগ্রস্থ হয়েছিল। আর এরূপ দুর্দশাগ্রস্থ ব্যাংক সংকটের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (Comptroller of currency) যে যে কারণগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় তারমধ্যে দুর্বল ক্ষণ প্রশাসনিক কাঠামো অন্যতম।

ঋণ প্রশাসনিক কাঠামো [ Structure of Loan Administration ]

ঋণ প্রশাসনিক কাঠামো [ Structure of Loan Administration ]

কম্পট্রোলার অব কারেন্সি প্রশাসনিক দূর্বলতার বিভিন্ন দিক যেভাবে সনাক্ত করেছিলেন তা নিম্নে দেখা যেতে পারেঃ

ক. ঋণ নীতি অমান্য করে ঋণ কার্য সম্পাদন

খ. ঋণের শর্তাদি ও মান অস্পষ্ট ও অতিশয় নমনীয়।

গ. ব্যাংকের কার্যনীতি ও ঋণ কার্যক্রম সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।

ঘ. বিপদজনকভাবে ঋণ কেন্দ্রীভূতকরণ

ঙ. ঋণ কর্মকর্তাদের উপর পূর্বল নিয়ন্ত্রণ

চ. ব্যাংকের তহবিল ক্ষমতা বহির্ভূত আকারে ঋণ বৃদ্ধি

ছ. সমস্যাগ্রস্থ ঋণ চিহ্নিতকরণের দূর্বল কৌশল

জ. ঋণ গ্রহীতার অর্থ আগমন-নির্গমন প্রবাহ নির্ণয় করতে অক্ষমতা

ঝ. ব্যাংকের আওতা বহির্ভূত এলাকায় ঋণ প্রদান।

ঋণ প্রশাসনিক কাঠামো [ Structure of Loan Administration ]

উপরোক্ত প্রশাসনিক দুর্বলতাগুলো বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় যে, ঋণ প্রশাসনিক কাঠামোগত দূর্বলতাই দুর্দশাগ্রস্থ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের জন্য দায়ী। সঠিক ও যোগ্য ঋণ কর্মকর্তা নিয়োগসহ, বিভিন্ন বিভাগ বা সেকশন সৃষ্টিকরে ঋণ কার্যক্রম নির্বাহ করা আবশ্যক। প্রত্যেকটি ঋণ কর্মকর্তার কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব পরিষ্কার ভাবে বোধগম্য হতে হবে, পরিস্কার কার্য সম্পাদন অবহেলার জন্য দায়িত্ব চিহ্নিতকরণসহ প্রতিকারের পদক্ষেপ জানা থাকলে ব্যাংক কর্মকর্তাবৃন্দ দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট সতর্ক থাকবে বলে বিশ্বাস।

ঋণ প্রশাসন কাঠামো সুস্পষ্ট ও কার্যকর করার লক্ষ্যে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের যে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন তার প্রধান কয়েকটি নিম্নে প্রদত্ত হলো:

১। লিখিত ঋণ নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন

২। সুস্পষ্ট দায়িত্ব কর্তব্য ব্যাখ্যা করে ঋণ প্রশাসন কাঠামো নির্ণয় করা।

৩। সুশৃঙ্খল ও নিবিড় ঋণ পুনরীক্ষণ পদক্ষেপের মাধ্যমে নিয়মিত প্রদত্ত ঋণের মান পর্যালোচনা করে সমস্যাগ্রস্থ ঋণ চিহ্নিতকরণ।

৪। প্রতিটি ঋণ গ্রহীতার জন্য স্বতন্ত্র ব্যাপক তথ্য ভিত্তিক ফাইল তৈরী করা যাতে ঋণ গ্রহীতার বর্তমান অতীতের ব্যবসায় তথা আর্থিক অবস্থার প্রয়োজনীয় উপাত্ত, ঋণ পরিশোধ সারণী সহ নির্দিষ্ট সময়াে আর্থিক প্রতিবেদনে সংরক্ষিত থাকবে।

৫। সমস্যাগ্রস্থ ঋণ সনাক্ত করণের উপযুক্ত কৌশল ও প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা।

৬। সমস্যাগ্রস্থ ক্ষণ তদারকির জন্য বিশেষ দক্ষতা ও কৌশল উদ্ভাবন।

৭। প্রতিটি ঋণ আদায়ের পদক্ষেপ অনন্য ও ব্যক্তি কেন্দ্রীক করে পদক্ষেপ গ্রহণ।

৮। কু-ঋণ উদ্ধারে ফলপ্রসু কার্যক্রম নিবেদন করা ও

৯। কু-ঋণের পরিমাণ, কারণ ও গৃহীত পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করে ব্যাংকের ঋণ নীতি ও ঋণ প্রক্রিয়া পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা।

ঋণ কার্যক্রম ব্যাংক প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। জাতীয় ভিত্তিক ও যথেষ্ট বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য প্রদেশ অঞ্চল তথা জেলা ভিত্তিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা রাখে। অপরদিকে শিল্প ঋণ তথা বাণিজ্য ঋণ এবং আমদানী-রপ্তানী ঋণ অনেক সময় বিশেষ ঋণ সেকশন দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে।

শাখা পর্যায়ে শাখা ব্যবস্থাপক ঋণ কার্যক্রমের প্রধান এবং তার অধীনে ঋণ কার্যক্রম দেখাশুনা করার জন্য একজন কর্মকর্তার অধীনে একটি ঋণ সেকশন থাকে। কিন্তু শাখা অতিশয় ছোট হলে শাখার সব কর্মচারীই ব্যবস্থাপকের নির্দেশক্রমে ঋণ কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক দেখাশুনা করে থাকেন। লক্ষ্যণীয় যে শাখা পর্যায়ে শাখা শ্রেণী (A,B,C) এবং শাখা ব্যবস্থাপকের পদমর্যাদা অনুযায়ী ঋণ সম্পর্কে নির্দিষ্ট পরিমাণ বা সীমা পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্পিত থাকে। নির্দিষ্ট অংকের বেশী পরিমাণের বেশী ঋণ প্রস্তাব হলে শাখা পর্যায়ে বিশ্লেষণ সমাপ্ত করে প্রতিবেদন সহকারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য উপরস্তরের ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে প্রেরিত হয়ে থাকে।

ঋণ প্রশাসনিক কাঠামো [ Structure of Loan Administration ]

ব্যাংকের ঋণ কর্মপন্থা [ Bank Loan Policy ]

ঋণ কার্যক্রম দক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে হলে প্রয়োজন সুস্পষ্ট ও ঋণ কর্মপন্থা প্রণয়ন। ঋণ কর্মপন্থা ব্যতিরেকে অনেক দক্ষ ঋণ কর্মকর্তাও নিঁখুত ভাবে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হয় না। ঋণযোগ্য অর্থনৈতিক তহবিল কিভাবে নিরূপিত হবে. কি কি কাজে কি কি মেয়াদে কি রূপ জামানতে ঋ প্রদান করতে হবে তার পূর্বাহ্নেই অর্থনৈতিক স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলে বার বার নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ত্রুটি সংগঠিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

অপরদিকে ব্যাংকের প্রয়োজনে ঋণ কর্মকর্তাদের এক স্থান হতে অন্য স্থানে বদলী করা হয়ে থাকে। এমতাবস্থায়, ঋণ কর্মপন্থা সুস্পষ্ট না থাকলে ঋণ সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া ঋণ কর্মকর্তা চাকুরী নিয়ে অন্যত্র চলে গেলে অথবা চাকুরীর মেয়াদান্তে অবসর গ্রহণ করলে ঋণ কর্মপন্থার অবর্তমানে নতুন ঋণ কর্মকর্তাকে প্রায়শ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হয় অথবা বিলম্বে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ব্যাংকের ঋণ কর্মপন্থা (Bank Loan Policy) ঋণ কার্যক্রম দক্ষভাবে সম্পাদনে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা রাখে।

 ঋণ কর্মপন্থা কাকে বলে? [ What is Bank Loan Policy? ]

ঋণ কর্মপন্থা কতগুলো সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের সমাহার যা ঋণ কার্যক্রমে প্রতিধাপে ঋণ কর্মকর্তাকে দক্ষ ও সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে।

Edward W. Reed নামক ব্যাংক বিশেষজ্ঞের মতে, “IA Loanj policy establishes the direction and use of the funds of a bank that have derived from stockholders and depositors. and influences the decision on whether or not to lend

আরও পড়ুনঃ

 

Leave a Comment