ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমের প্রশাসনিক কাঠামো [ Administrative Structure of Investment Activities ]

ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমের প্রশাসনিক কাঠামো [ Administrative Structure of Investment Activities ] প্রতিটি ব্যাংকেই যেমন ঋণ কার্যক্রম রয়েছে তেমনি বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দপ্তর বা বিভাগ রয়েছে। এ দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তাকে প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ একটি স্থায়ী বিনিয়োগ পর্ষদ কমিটির মাধ্যমে বিনিয়োগ বিভাগের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিনিয়োগ নীতি ও কর্মপন্থা পরিচালকদের সমন্বয়ে স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদন লাভ করতে হয়। অনুমোদিত বিনিয়োগ নীতি ও কর্মপন্থা ব্যাংকে প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।

ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমের প্রশাসনিক কাঠামো [ Administrative Structure of Investment Activities ]

ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমের প্রশাসনিক কাঠামো [ Administrative Structure of Investment Activities ]

নিম্ন চিত্রে একটি বিনিয়োগ বিভাগের প্রশাসনিক কাঠামো দেখা যেতে পারে।

পরিচালনা পর্যদ

বিনিয়োগ কমিটি

প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা

  • লেনদেন বিভাগ
  • সুইচিং বিভাগ
  • অবলেখন
  1. অবলেখন অফিসার ১
  2. অবলেখন অফিসার ২
  3. অবলেখন অফিসার ৩
  • বন্ড বিভাগ
  1. প্রাতিষ্ঠানিক বক্ত
  2. সরকারী বক্ত
  • ঋণপত্র মূল্যায়ন বিভাগ
  • নথি সংরক্ষন বিভাগ

ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমের প্রশাসনিক কাঠামো [ Administrative Structure of Investment Activities ]

ব্যাংকের বিনিয়োগের বৈশিষ্টাবলী [ Characteristics of Bank Investment ]

বাকে যার করা অর্থের ব্যবসায়ী একথা পূর্বেই বলা হয়েছে আর রুপ ও বিনিয়োগ দুটি মুনাফা অর্জনের পন্থা। ঋণের তুলনায় বাকের বিনিয়োগ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত। ব্যাংকের বিনিয়োগের প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিমে দেখা যেতে পারে।

১. বলের ধরন- (Nature of Fund)

ব্যাংকের বিনিয়োগ সাধারণত রিজার্ভ ও ঋণ প্রয়োজন মিটানোর পর অবশিষ্ট (Residual)

তহবিল দ্বারা হয়ে থাকে। ব্যাংকের বেলায় বিনিয়োগ না করে ঋণযোগ্য সব তহবিল ঋণ কার্যক্রমে ব্যবহার করার নজির আছে। কিন্তু রাকেশ প্রয়োজন না মিটিয়ে মুনাফা অজর্নের উদ্দেশ্যে তারল্যের অতিরিক্ত মোট তহবিল ক্ষণপত্রে বিনিয়োগ করার নজির কোথাও নাই। অতএব ব্যাংকের বিনিয়োগ মানেই ক্ষণ প্রয়োজন মিটানোর পর অবশিষ্ট থাকা তহবিলের লাভজনক ব্যবহার।

২. তৃতীয় সারির প্রতিরক্ষা কবজ – (Third Line of Defense)

ব্যাংক ঋণকে তারল্যহীন সম্পদ বলা হয়ে থাকে। তারল্যের নিরিখে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক রিজার্ভ প্রথম ও দ্বিতীয় সারির প্রতিরক্ষা কবজ হিসাবে সর্বজন বিদিত। প্রয়োজনে মাধ্যমিক রিজার্ভ সম্পত্তি ব্যবহার করার পরও তারল্য ঘাটতি সংকট দেখা দিলে ব্যাংকের ক্ষণ নামক সম্পত্তি যত বড় অংকেরই হোক না কেন কোন কাজে আসে না। এমতাবস্থায় ব্যাংক বিনিয়োগের ধারণ করা ঋণপত্র তারল্য সংকটে তৃতীয় সারির রক্ষা কবজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

৩. বাংকের পাওনাদার মর্যাদা – (Creditors Status of Bank) :

ঋণ অথবা বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই বাকে পাওনাদার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। তবে ঋণ গ্রহীতার কাছে ব্যাংক বড় পাওনাদার বা অল্প কয়েকজন পাওনাদারের একজন। অথচ ঋণপত্র বিক্রেতাদের কাছে ব্যাংক অনেকগুলো পাওনাদারের মধ্যে মাত্র একটি পাওনাদার।

৪. লেনদেনের উদ্যোগ-(Initiative of Transaction)

ঋণের ক্ষেত্রে লেনদেনের উদ্যোগ আসে ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে অথচ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্যোগ আসে ঋণপত্র ক্রেতা ব্যাংকের কাছ থেকে।

৫. ব্যাংকের আকার ভেদে বিনিয়োগ – (Volume of Investment Relative to the Size of Bank)

বড় বড় ব্যাংকগুলো তাদের কার্য আততা এলাকার বড় বড় উঁচু মর্যাদাধারী বিশ্বস্ত । ঋণ গ্রহীতাদের সংগে লেনদেন করে অধিক লাভবান হয়ে থাকে। অথচ অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যাংকগুলো বড় বড় ঋণ গ্রাহক না পাওয়ায় মুনাফা ও তারল্য উভয় প্রয়োজন পূরণার্থে মুদ্রা তথা পূজিঁ বাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে থাকে পাশ্চাত্যের কয়েক দশকের তহবিল ব্যবহারের ধরণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ছোট ব্যাংকগুলো অনেক সময় মুনাফায় ব্যবহারযোগ্য তহবিলের এক-তৃতীয়াংশ বিনিয়োগে ব্যবহার করে থাকে। অথচ একই সময়ে বড় -ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ শতকরা ২০ ভাগের বেশী অতিক্রম করেনি।

৬. ব্যক্তিক বনাম অব্যক্তিক লেনদেন- (Personal Vs Impersonal Transaction)

ঋণ কার্যক্রমে ব্যাংকের সংগে ঋণগ্রহীতার বক্তিগত লেনদেন হয়ে থাকে অথচ ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয় কালে ঋণপত্রের মূল বিক্রেতার সাথে ব্যাংকের কোনই যোগাযোগ হয়না।

ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমের প্রশাসনিক কাঠামো [ Administrative Structure of Investment Activities ]

৭. মাধ্যমিক রিজার্ভ সম্পত্তি বনাম বিনিয়োগ সম্পত্তি (Secondary Reserve Assets Vs Investment Assets)

মাধ্যমিক রিজার্ভ ও বিনিয়োগ কার্যক্রম উভয়ক্ষেত্রেই ঋণপত্র তথা বাজার দলিল ভিত্তিক তহবিল ব্যবহার করা ঋনপত্রসমূহ সাধারণত স্বল্প মেয়াদী হয়ে থাকে অথচ বিনিয়োগ খাতে ক্রয় করা ঋণপত্রসমূহ সাধারণত মধ্যম তথা দীর্ঘমেয়াদী হওয়াই বাঞ্ছনীয়

৮. বাজার মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি-(Fluctations of Market Price)

ঋণপত্রসমূহ মর্যাদা ভেদ করে বাজার মূল্যের হ্রাস বৃদ্ধির অধীনে ।প্রদত্ত ঋণ পরিশোধ বকেয়ার ফলে পরিমাণে বাড়ে কিন্তু ঋণপত্রসমূহের বাজার মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়মের অধীন।

৯. দর কষাকষি – (Negotiation)

ঋণ গ্রহীতা ও ব্যাংক ঋণের পরিমাণ, ঋণের কিস্তি পরিশোধ সারণী, জামানত, সুদ ইত্যাদি ব্যাপারে লাকের সাথে দর কষাকষি করতে পারে। অর্থাৎ চূড়ান্ত ঋণ ব্যবহারকারী ও ঋণদাতা ব্যাংক আলোচনায় অবতীর্ণ হয়ে থাকে। কিন্তু দিত ব্যাপারে ঋণপত্রের মূল বিক্রেতা ঋণপত্র ক্রয় কারী ব্যাংকের সাথে কোনরূপ আলোচনা করার প্রয়াস পায়না। শতাদি নিয়ে দর লহ্যকবির প্রশ্নই আসেনা।

১০. লব্ধ তহবিল ব্যবহার সম্পর্কে তহবিল দাতার অবগতি- (Knowledge of Use of Fund By the Provider of Fund)

ক্ষণদাতা ব্যাংক কি কাজে ঋণ ব্যবহার করবে তা অকাত থাকে। অথচ ঋণপত্রের ক্রেতা হিসেবে তহবিল দাতা ব্যাংক ঋণ বিক্রেতা বাক প্রদত্ত তহবিল কিভাবে ব্যবহার করবে ব্যাংক ঘুনাক্ষরেও অবগত থাকেনা।

১১ অবসারন- (Termination)

লেনদেন ব্যাংক ইচছা করলেই যে কোন সময় অবসায়ন ঘটাতে পারেনা এ ব্যাপারে গ্রহীতার ইচছাই অবসায়ন নির্ধারক হিসেবে কাজ করে অথচ ঋণপত্রধারী ব্যাংক ইচছানুযায়ী যে কোন সময় কিঞ্চিৎ লোকসান কিছু হলেও বিনিয়োগ দলিলাদী অবসারন সম্ভব।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment