ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষসমূহ [ Bank Regulatory Authorities ] ব্যাংক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এক বা একাধিক কর্তৃপক্ষের উপর ন্যাস্ত থাকতে পারে ব্যাংকিং খাতের দক্ষতাবৃদ্ধি,ব্যক্তিগত ও ব্যবসাগত ঝুঁকি হ্রাস এবং লাঘব এর উদ্দেশ্যেই নিয়ন্ত্রণ ভার বাণিজ্যিক ও অন্যান্য অপারেশনাল ব্যাংকগুলো ব্যতীত একটি শীর্ষ ও শক্তিশালী কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যাস্ত রাখা হয়।
সাাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতেই ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বা ক্ষমতা অর্পন করা হয়ে থাকে। কিন্তু এটি সব অর্থনীতিতে বা দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে অথবা অন্যকোন স্ব কর্তৃপক্ষের হাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুবিন্যস্ত থাকবে কিনা এ নিয়ে সাম্প্রতিক কালে বোদ্ধা ব্যক্তিদের মধ্যে মত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়ে। এতদব্যাতীত দেশে দেশে এ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার সংস্থার ভিন্নতা ও পরিলক্ষিত হয় যা নিজের স্বারণী হতে স্পষ্টতর হবে।
সাম্প্রতিক কালে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শুধুমাত্র অর্থ ও অর্থসরবরাহ সংক্রান্ত কার্যাবলীতে নিয়োজিত থাকা উচিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি নিয়ন্ত্রণ ও পরিদর্শন সংক্রান্ত কাজে সম্পৃক্ত থাকে, তবে কেন্দ্রীয় ঝাকের পক্ষে উহার “Monetary Stabilization” এবং নিয়ন্ত্রণ ও তদারকী ভিন্ন ভিন্ন এজেন্সীর হাতে ন্যস্ত থাকলে ব্যাংকিং কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতা দেখা দেবে এবং উহা সুস্থ ও কাম্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য কোন ক্রমেই বিলুপ্ত হতে পারেনা।
যাহোক, বাস্তবে আমরা দেখতে পাই যে, ব্যাংক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণভার বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভিন্ন অন্যান্য সংস্থার উপরও ন্যস্ত রয়েছে। নিম্নোক্ত টেবিলটি হতে এ বিষয়টি অধিকতর সুস্পষ্ট হবে
ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষসমূহ [ Bank Regulatory Authorities ]
টেবিল – ১: ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ
অঞ্চল | কেন্দ্রীয় ব্যাংক | অর্থ মন্ত্রণালয়/বিভাগ | অন্যান্য সংস্থা |
আফ্রিকা | ৪১ | ০ | ১(ঘ) |
এশিয়া | ২৫ | ৩(ক) | ২(ঙ) |
ইউরোপ | ৩৬ | ১(খ) | ৭(চ) |
মধ্যপ্রাচ্য | ১৬ | ০ | ১(ছ) |
পশ্চিম গোলার্ধ তথা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা | ১৭ | ৩(গ) | ১৫(জ) |
নোটঃ
ক- জাপান,কিরিবাতি ও কোরিয়া
খ- অস্ট্রেলিয়া
গ- ডোমেনিকা, মেক্সিকো এবং সেন্ট লুইস
ঘ- মাদাগাস্কার
ঙ হংকং ও মার্কলি দ্বীপ
চ- বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, জার্মানী, হাঙ্গেরী, নরওয়ে, সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ড
ছ- লেবানন
জ- এন্টিগুয়া এবং বারমুডা, বলিভিয়া, কানাডা, চিলি, কলম্বো, ডোমিনিকান রিপাবলিক, ইকুয়াডোর, এল সালভাদর, গুয়েতমালা, নিকারাগুয়া, পানামা, পেরু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভেনেজুয়েলা।
ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থা নিজে সক্রান্ত ক্ষমতা ও দায়িত্ব পরিবর্তন সংক্রান্ত ২টি ঘটনা আমরা সম্প্রতি লক্ষ্য করেছি।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের সর্বময় ক্ষমতা ব্যাংক অব ইংল্যান্ড হতে সম্পূর্ণ বিভাজন করে ঐ ক্ষমতা “Financial Service Authority” নামে একটি পৃথক ও স্বস্তা এজেন্সীর নিকট অর্পন করা হয়েছে, অপর দিকে একই উদ্দেশ্যে অস্ট্রেলিয়া APRA(Australian Prudential Regulatory Authority) নামে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা গঠন পূর্বক আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণের ভার এর উপর অর্পন করা হয়েছে।
উপরোক্ত বিশ্লেষণ হতে আমরা দেখতে পাই যে, দেশ ভেসে ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের তার ভিন্ন ভিন্ন সত্যের উপর ন্যস্ত হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোন সংস্থা একটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে কিনা সেটা সে দেশের সরকার এবং আইনই নির্ধারণ করবে।
বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা [ Bank Regulation Arrangement in Bangladesh ]
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে তৎকালীন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকায় অবস্থিত আঞ্চলিক অফিসকে স্বাধীন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। তৎকালীন পাকিস্তানের ১২ টি বাংকের ১০৯০ টি শাখা নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে ৬টি রাষ্ট্রাচত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক গঠন করা হয়। অতঃপর ১৯৭২ সনে ৩১ শে অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ (প্রেসিডেন্ট আদেশ ।। ১২৭) জারী করে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নিজেশের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
১৯১৩ সনের কোম্পানী আইন ও ১৯৪১ সনের বাকিং কোম্পানী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে ব্যাংক ব্যবস্থা নিরেশ কার্য পরিচালনা করত। অতঃপর ১৯৯১ সনে সর্ব প্রথম ব্যাংক কোম্পানী সম্পর্কিত ১৪ নং আইন (ঝাকে কোম্পানী আইন ১৯৯১ নামে) পাশ করা হয়। এই আইন ১৯৯১, ২৪ শে ফেব্রুয়ারী থেকে তাকে ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণের কাজে বাংলাদেশ ব্যাংক তথা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রয়োগ হয়ে আসছে।
প্রয়োজনের তাগিদে ১৯৭৫ এ এই আইনের অংশত্ত পরিবর্তন করা হয়েছে এবং ভবিষতে ও এরূপ পরিবর্তন হতে পারে। ব্যাংক কোম্পানী বিধিগত ভিত্তি প্রথমে কোম্পানী আইন ১৯১৩, বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৭২ এবং তাকে কোম্পানী আইন ১৯১১। অতঃপর অবস্থার প্রয়োজনে বিভিন্ন বিধিবিধান, অধ্যাদেশ, সার্কুলার এরূপ নিয়ন্ত্রণ কাজে ব্যবহৃত হওয়া স্বাভাবিক।
বাংলাদেশে বলবৎ ব্যাংক ও বাকিং সংক্রান্ত আইন ও অধ্যাদেশসমূহ:
বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকিং সংক্রান্ত যে সব আইন কানুন বিদ্যমান রয়েছে সে সব আইন কানুনকে নিম্নোক্ত দু’টি ভাবে ভাগ করা যায়।
১। সরাসরি বা প্রত্যক্ষ
২। পরোক্ষ
বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রক আইন ও বিধি-বিধানসমূহ
এ সকল আইন কানুনকে ছকের সাহায্যে দেখানো হল :
ব্যাংক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রক আইন, বিধি-বিধানসমূহ | |
প্রত্যক্ষভাবে ব্যবহৃত | পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত |
১। বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৭২ (প্রেসিডেন্ট আদেশ নং ১২৭) | ১। কোড অব সিভিল প্রসিডিউর ১৮৯৮ |
২। ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ | ২। কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর স্বাক্ষ্য আইন ১৮৯৮ |
৩। বাংলাদেশ ব্যাংক (রাষ্ট্রীয়করণ) | ৩। স্বাক্ষরতা আইন ১৮৭২ |
৪। কোম্পানী আইন ১৯১৩,৯৪ | ৪। জেনারেল কজেস্ এ্যক্টস ১৮৭৭ |
৫। আমানত বীমা অধ্যাদেশ ১৯৮৪ | ৫। লেমিটেশন এ্যক্টস্ ১৯০৮ |
৬। দেউলিয়া আইন ১৯৯৭ | ৬। হস্তান্তরযোগ্য ঋণের দলিল আইন ১৮৮১ |
৭। অর্থ ঋণ আদালত ১৯৯০ | ৭। পেনাল কোড ১৮৬০ |
৮। বৈদেশিক বিনিময় তথা মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭ | ৮। ট্রাষ্ট এ্যক্ট ১৮৭২ |
৯ । আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ | ৯ । ট্রান্সফার অব প্রপার্টি এ্যক্ট |
১০। আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত বিধিবিধান ১৯৯৪ | ১০। বাংলাদেশ চাটার্ড একাউন্টস অধ্যাদেশ ১৯৭৩ |
১১। সমবায় সমিতি অধ্যাদেশ ১৯৮৪ |
ব্যাংক সংস্কার কার্যটি নিম্নোক্ত দু’টি আইন প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছে
১। Plnancial Institutious (Security of Loan)
২। Debit Recovery Agencies Act
বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বলতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককেই বুঝায়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সময় সমর পরোক্ষভাবে ব্যাংক কার্যক্রমের নির্দেশনা ও উপদেশ দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ