ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের কৌশল / হাতিয়ারসমূহ [ Tools & Strategies of Bank Regulation ]

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের কৌশল / হাতিয়ারসমূহ [ Tools & Strategies of Bank Regulation ]পূর্ববর্তী আলোচনায় প্রদত্ত ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনের জন্য ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কতিপয় কৌশল বা হাতিয়ার অবলম্বন করে থাকে। আর এই সকল কৌশল বিভিন্ন দেশে এবং একই দেশে বিভিন্ন সময়ে ভিন্নতর হওয়া বিচিত্র নয়। যুগের চাহিদা ও দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থার নিরিখে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত কৌশল ভিন্নতর হয়ে থাকে।

সাধারণত যে যে কৌশল প্রায়শঃই অবলম্বন করা হয়ে থাকে তা বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠীর নিরিখে নিম্নরূপ –

১. মক্কেলের স্বার্থ সংরক্ষণে গৃহীত কার্যক্রম

২. ব্যাংকের স্বচছলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত কার্যক্রম ও

৩. সর্বাঙ্গীন জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে গৃহীত কার্যক্রম।

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের কৌশল / হাতিয়ারসমূহ [ Tools & Strategies of Bank Regulation ]

Table of Contents

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের কৌশল / হাতিয়ারসমূহ [ Tools & Strategies of Bank Regulation ]

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের কৌশল / হাতিয়ারসমূহ
মক্কেলের স্বার্থখ. ব্যাংকের স্বার্থগ. জাতীয় স্বার্থ
১. আমানতকারীদের নিরাপত্তা সংরক্ষণ১. নতুন ব্যাংক নিবন্ধীকরন ও স্থাপন অনুমতি১. মুদ্রা সরবরাহ ও কাম্য স্থিতিশীলতা সুরক্ষিত করা
২. ব্যাংক সেবার ন্যায্য মূল্যের নির্দেশনা২. শাখা সম্প্রসারণ অনুমতি২. দক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক আর্থিক ব্যবস্থা উন্নয়ন
৩. ভোক্তা স্বার্থসংরক্ষণ৩. পরিচালক নিয়োগ, কর্তব্য ও দায় সংক্রান্ত নির্দেশনা৩. বড় ধরনের ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে ঋণের বহুধা নিশ্চিতকরণ
৪. মক্কেলের হিসাবের গোপনীয়তা রক্ষা৪. তহবিল ব্যবহার হ্রাসকল্পে নির্দেশনা৪. ব্যাংকের একত্রীকরণ ও অঙ্গ সংগঠণ নিয়ন্ত্রণ
৫. আমানত বীমার ব্যবস্থা৫. স্পর্শকাতর আমানত সম্পর্কে সতর্কতা৫. ব্যাংক সমূহের মধ্যে সমন্বয়ের নির্দেশনা
৬. মক্কেলের হিসাবের তদারকি ও পরীক্ষা৬. মূলধনের পর্যাপ্ততার নির্দেশনা৬.একই ব্যক্তির একাধিক ব্যাংকের পরিচালক না হওয়ার নির্দেশনা
৭. বৈষম্যমূলক ব্যাংকিং দূরীকরণ৭. তারল্যের পর্যাপ্ততার নির্দেশনা৭. বৈষম্যমূলক ব্যাকিং সেবা প্রতিরোধকরণ
৮- সামাজিক অগ্রাধিকার ভিত্তিক ঋণ প্রদান নির্দেশনা৮. একই ব্যক্তির একাধিক ব্যাংকের পরিচালক না হওয়ার নির্দেশনা৮. মুনাফা বণ্টনের নির্দেশনা
৯. গণআস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্দেশনা প্রদান৯. গ্রহণযোগ্য জামানতের নির্দেশনা৯. অনুমোদিত ও অনুনমোদিত ব্যাংক ঋণ কার্যক্রমের নির্দেশনা
১০. পর্যাপ্ত তারল্য রক্ষার নির্দেশনা১০. ঝুঁকি হ্রাসকল্পে বড় ধরণের ঋণ নিয়ন্ত্রণ১০. সামাজিক অগ্রাধিকার ভিত্তিক ঋণ প্রদান নির্দেশনা
১১. উদ্ভাবিত নতুন সেবার অনুমোদন১১. বিনিয়োগযোগ্য শেয়ার, সিকিউরিটিজ এর নির্দেশনা১১. নতন ব্যাংক নিবন্ধীকরণ ও স্থাপন অনুমতি
১২. ঋণ আদায় নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে নির্দেশনা১২. শাখা সম্প্রসারণ অনুমতি
১৩. ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রোভিশন সম্পর্কে নির্দেশনা১৩. মূলধনের পর্যাপ্ততার নির্দেশনা
১৪ ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে ঋণ আদালত গঠন সহ সংশ্লিষ্ট বিধি বিধান প্রনয়ন১৪. তারল্যের পর্যাপ্ততার নির্দেশনা
১৫. ঋণ তদারকী ও পুনরীক্ষণ১৫. ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ
১৬. রিজার্ভ সংক্রান্ত নির্দেশনা১৬. ঋণ সহ ও অন্যান্য ব্যাংক সেবা তথ্যাদির জন পরিবেশন নির্দেশনা
১৭. বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঝুঁকি নিয়ন্ত্রক নির্দেশনা
১৮. ব্যাংক হোল্ডিং কোম্পানী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ
১৯. দক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক আর্থিক ব্যবস্থা উন্নয়ন :
২০. রুগ্ন বাংক সনাক্ত ও পরিচর্যা করার নির্দেশনা
২১. বর্ণ বাংক সমূহের কাঙ্খিত ভাবে অবসায়ন নিশ্চিত করণ

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের কৌশল / হাতিয়ারসমূহ [ Tools & Strategies of Bank Regulation ]

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের প্রধান কৌশল সমূহ নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হলোঃ

ক. মক্কেলের স্বার্থে গৃহীত কৌশল / হাতিয়ার সমুহ Strategies/ Tools to Safeguard the Interest of the Bank Customers:

১. আমানতকারীদের নিরাপত্তা সংরক্ষণ

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ব্যাংকে রক্ষিত আমানতকারীদের সঞ্চয়ের সব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

২. ব্যাংক সেবার ন্যায্য মূল্যের নির্দেশনা :

ব্যাংক যাতে এর সেবার অধিক মূল্য মক্কেলের ঘাড়ে চাপাতে না পারে, তার জ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় আইন বাস্তবায়ন করেন।

৩. ভোক্তা স্বার্থসংরক্ষণ :

অন্যান্য ফলের পাশাপাশি ব্যাংক যাতে তার মক্কেলকে ভোগা গুলের সুবিধা প্রদান করে, এজন্য কিছু বিশেষ আইন প্রণীত হয়।

৪. মক্কেলের হিসাবের গোপনীয়তা রক্ষা :

মকেলের হিসাবের গোপনীয়তা রক্ষার সকল ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ করে থাকে।

৫. আমানত বীমার ব্যবস্থা :

আমানত বীমার মাধ্যমে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আমানতকারীর টাকা ফেরত দেবার নিশ্চয়তা গ্রহন করেন।

৬. মক্কেলের হিসাবের তদারকি ও পরীক্ষা :

বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তার নিরীক্ষক নিয়ে ব্যাংকে রক্ষিত রেল কর্তৃক গৃহীত ঋণ হিসাবের তদারকিও পরীক্ষা করেন।

৭. বৈষম্যমূলক ব্যাংকিং দূরীকরণ :

কোন ব্যাকে যাতে বৈষম্যমূলক ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করতে না পারে তার জন্য বাবে নিবো। কর্তৃপক্ষ সজাগ দৃষ্টি রাখে।

৮. সামাজিক অগ্রাধিকার ভিত্তিক ঋণ প্রদান নির্দেশনা :

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে সামাজিক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ও সুষ্ঠু ভাবে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

৯. গণআস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্দেশনা প্রদান

গণআস্থা ব্যাংকের উন্নত সেবা প্রদানের উপর নির্ভরশীল । ব্যাংক সমূহ যাতে উন্নত সেবা প্রদান করতে পারে, তার জন্য ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

১০. পর্যাপ্ত তারল্য রক্ষার নির্দেশনা :

জনগনের রক্ষিত আমানত চাহিবামাত্র ফেরৎ দেয়া ব্যাংকের জন্য বাধ্যতামূলক এবং বাক্সে তারল্যের উপর গণআস্থাও অনেকখানি নির্ভরশীল তাই ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ব্যাংকের সুষ্ঠু তারল্য বজায় রাখার জন্য কোন কোন ধরনের সম্পদ ও রিজার্ভ সংগ্রহ করবে তার দিক নির্দেশনা দেয় ও এর প্রেক্ষিতে বিশেষ নীতির প্রয়োগ করে। উদাহরন স্বরূপ বলা যেতেপারে সঠিক তারল্য বজায় রাখার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতিদিনের আমানতের উপর ৫% CRR(Cash Reserve Requireten বাধ্যতামূলক এবং ২০% SLR (Statutory Liquidity Requirement) রাখার বিধান জারী করেছে।

১১. উদ্ভাবিত নতুন সেবার অনুমোদন :

গতিশীল এই বিশ্বে নবতর সেবার দ্বার উন্মোচন হচ্ছে যার ফলশ্রুতিতে গ্রাহকও উন্নত সেবা পেতে সক্ষম হয়। ব্যাংক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদন স্বাপেক্ষে উদ্ভাবিত নতুন সেবা প্রচলন করতে হয়।

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের কৌশল / হাতিয়ারসমূহ [ Tools & Strategies of Bank Regulation ]

খ. ব্যাংকের স্বার্থে গৃহীত কৌশল / হাতিয়ার সমুহ :

Tools/Strategies to Safeguard the Interest of the Bank:

১. নতুন ব্যাংক নিবন্ধীকরন ও স্থাপন অনুমতি :

ব্যাংক একটি মুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নতুন ব্যাকে খোলার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রনয়ন করে থাকে। এই নীতিমালা অঞ্চল, জনগণের ঘনত্ব ব্যাংকের প্রকৃতি, আর্থিক পরিবেশ ইতালি ভিত্তিতে বিভিন্ন হতে পারে। যেমন: মতিঝিল এলাকায় নতুন একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক স্থাপনের নীতিমালা আর কোন পল্লী অঞ্চলে একটি কৃষি বা সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নীতিমালা নিশ্চয়ই এক হবেনা। তাই জাতীয় স্বার্থে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নতুন ব্যাংক খলার জন্য কিছু শর্তাবলী আরোপ করে এবং এই শর্ত পুরনের ভিত্তিতে একটি ব্যাংক খোলার অনুমতি দেয়।

২. শাখা সম্প্রসারণ অনুমতি

বিদ্যমান ব্যাংকসমূহের নতুন নতুন শাখা খোলার প্রস্তাব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের আবশ্যকতা রয়েছে। বিদেশে নিবন্ধিত বহুজাতিক ব্যাংকের শাখা খোলার জন্য ও এরূপ অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে।

৩. পরিচালক নিয়োগ, কর্তব্য ও দায় সংক্রান্ত নির্দেশনা

বাংকের পরিচালকের যোগ্যতা, দায়িত্ব ও কর্তসহ প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী ব্যাংকিং কোম্পানী আইন ছাড়াও নিয়োগ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন মাফিক হতে হবে।

৪. তহবিল ব্যবহার হ্রাসকল্পে নির্দেশনা

যেহেতু তহবিলের সিংহভাগ শেয়ার হোল্ডারগণ নয় বহু আমানতকারী সেহেতু অতিপয় ঝুঁি সম্পন্ন বিনিয়োগ সীমিত করার লক্ষ্যে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসমূহ কড়াকড়ি আরোপ করে থাকে। এমনকি এরূপ বিধি বিধান সঠিকভাবে কার্যরত ব্যাংকগুলো মেনে চলছে কিনা তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাংক নিমাণ কর্তৃপক্ষসমূহ দেখাশুনা করে

৫. স্পর্শকাতর আমানত সম্পর্কে সতর্কতা

আমানত যত বেশী স্পর্শকাতর হবে ব্যাংকের জন্য তহবিল ব্যবস্থা করা ততবেশী কষ্টকর হয়ে পড়ে। সুতরাং ব্যাংকের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষসমূহ স্পর্শকাতর আমানতের ঊর্ধ্বসীমা প্রায়শ গেঁথে নিয়ে থাকে।

৬. মূলধনের পর্যাপ্ততার নির্দেশনা :

শেয়ার হোল্ডারদের মূলধন ব্যাংকের মোট তহবিলের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কার্যরত ব্যাংক সমূহকে সব সময় ক্ষুদ্র হলেও পর্যাপ্ত (ভারযুক্ত ঝুঁকি সম্পত্তির শতকরা ৮ ভাগ) তহবিল শেয়ার হোল্ডারদের তরফ থেকে ব্যাংকে রাখার জন্য সজাগ দৃষ্টি দিয়ে থাকে।।

৭. তারল্যের পর্যাপ্ততার নির্দেশনা:

তারল্য সংকট ব্যাংক ব্যবসায়ের জন্য আশংকাজনক পরিনতি ডেকে আনে। সুতরাং বাংক নিে কর্তৃপক্ষ সব সময় ব্যাংক গুলোকে পর্যাপ্ত তারল্য রক্ষায় নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

৮. একই ব্যক্তির একাধিক ব্যাংকের পরিচালক না হওয়ার নির্দেশনা :

একাধিক ব্যাংকের কোন এক ব্যাক্তির পরিচালক হওয়ার উপরে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বিধি নিষেধ জারী করে থাকে। এতে আমানতকারীসহ সর্ব সাধারনের স্বার্থ রক্ষিত হয়ে থাকে।

৯. গ্রহণযোগ্য জামানতের নির্দেশনা :

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসমূহ কোন কোন সম্পত্তির আমানত হিসেবে গ্রহনযোগ্য অথবা গ্রহনযোগ্য নয় এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

১০. ঝুঁকি হ্রাসকল্পে বড় ধরণের ঋণ নিয়ন্ত্রণ :

বড় বড় কল স্বল্প সংখ্যক ঋণ গ্রহীতার মধ্যে বিতরন করা হলে ব্যাংকের তহবিল ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ কারনে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসমূহ ঋণের উর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের নির্দেশনা নিয়ে বড় বড় ঋণ প্রদানে নিরুৎসাহিত করে থাকে।

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের কৌশল / হাতিয়ারসমূহ [ Tools & Strategies of Bank Regulation ]

১১. বিনিয়োগযোগ্য শেয়ার, সিকিউরিটিজ এর নির্দেশনা :

খোলা বাজার থেকে ঋণ পত্র ক্রয় করে বিনিয়োগ করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সে কারনে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সমূহ বিনিয়োগযোগ্য ঋণপত্র নির্বাচনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

১২. ঋণ আদায় নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে নির্দেশনা :

ব্যাংকের তহবিল আবর্তনের জন্য প্রয়োজন সন্তোষজনক ফল আদায় হার। নিষ্ক্রিয় ক্ষণ তহবিল আবর্তনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অতএব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সমূহ নির্দিষ্ট সময়ান্তে আদায় যোগ্যতার হারে ঋণের শ্রেনী বিন্যাস করার নির্দেশনা দিয়ে কার্যরত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে সমস্যাগ্রন্থ ঋণ এড়াতে সহায়তা করে থাকে।

১৩. ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রোভিশন সম্পর্কে নির্দেশনা :

ঋণের শ্রেনীকরনের বিস্তারিত নির্দেশনা এবং সময়ের প্রয়োজনে প্রদত্ত নির্দেশনা সমূহের পরিবর্তন পরিবর্ষণ করে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসমূহ সুষ্ঠু পর্যাপ্ত শ্রেণী বিন্যাস করতে সহায়তা করে।

১৪. ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে ঋণ আদালত গঠন সহ সংশ্লিষ্ট বিধি বিধান প্রনয়ন

নিষ্ক্রিয় ঋণ আদায়ে প্রয়োজনবোধে আদালতের মাধ্যমে ঋণ আদায় নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ধরনের ঋণ আদালতসহ এরূপ ঋণ আদালতের কার্যপ্রনালী সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

১৫. ঋণ তদারকী ও পুনরীক্ষণ

রুপ তদারকী পুনঃরীক্ষণের মাধ্যমে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঋণ আদায় সন্তোষজনক নিশ্চিত করে থাকে।

১৬. রিজার্ভ সংক্রান্ত নির্দেশনা :

ব্যাংক দৈনন্দিন চাহিদা পুরনার্থে পর্যাপ্ত তারলা সংরক্ষণ আবশ্যক। আর এই লক্ষ্যে কাকে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সমূহ আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ বাধ্যতামূলকভাবে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক রিজার্ভ হিসাবে সংরক্ষনের বিধি বিধান প্রনয়নের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখে।

১৭. বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঝুঁকি নিয়ন্ত্রক নির্দেশনা :

দেশীয় মুদ্রার স্বার্থে বৈদেশিক মুদ্রার কাম্য হার নির্ধারন করে বাংক নিে কর্তৃপক্ষসমূহ দেশে কার্যরত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে ঝুঁকি এড়াতে সহযোগিতা করে থাকে।

১৮. ব্যাংক হোল্ডিং কোম্পানী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ :

ব্যাংক ব্যবসায়ে এক চেটিয়া নিয়ন্ত্রণ হ্রাসকরে বড় বড় ব্যাংকসমূহের জেছি কোম্পানী বা সাবসিডিয়ারী কোম্পানী রাখার উপর নিয়ন্ত্রনমূলক বিধি বিধান প্রয়োগ করে থাকে।

১৯. দক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক আর্থিক ব্যবস্থা উন্নয়ন :

ব্যাংকসমূহের মধ্যে সুস্থ্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন-কানুন প্রনয়ন ও প্রয়োগ করে।

২০. রুগ্ন বাংক সনাক্ত ও পরিচর্যা করার নির্দেশনা :

ব্যাংকসমূহ সময় থাকতে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পরামর্শের মাধ্যমে অ উন্নয়ন ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসমূহ প্রয়োজনীয় নিয়ম-নীতি প্রনয়ন ও প্রয়োগ করে থাকে।

২১. বর্ণ বাংক সমূহের কাঙ্খিত ভাবে অবসায়ন নিশ্চিত করণ

শত চেষ্টা শর্তেও যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয় এবং সে বাংকগুলোর পাওনাদারদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যাংকের অবসায়ন তথা বিলোপ সাধনে কাকে নিে কর্তৃপক্ষসমূহ প্রয়োজনীয় আইন-কানুন প্রনয়ন ও প্রয়োগ করে থাকে।

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের কৌশল / হাতিয়ারসমূহ [ Tools & Strategies of Bank Regulation ]

গ. জাতীয় স্বার্থে গৃহীত কৌশল / হাতিয়ার সমূহ : Tools/Strategies to Safeguard of the Interest the Nation:

১. মুদ্রা সরবরাহ ও কাম্য স্থিতিশীলতা সুরক্ষিত করা :

দেশের মুদ্রা সরবরাহ কাম্য হারে রেখে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। জন্য ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসমূহ ঋণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমসহ মুদ্রা সরবরাহ হ্রাস-বৃদ্ধি করে থাকে। ব্যাকে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসমূহ এসব কার্যক্রমে কার্যরত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ প্রয়োজনীয় সাড়া দিতে হয় । সাড়া দিয়ে দেশের মুদ্রা সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে প্রদত্ত নির্দেশ মেনে চলতে হয়।

২. দক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক আর্থিক ব্যবস্থা উন্নয়ন :

ব্যাংকসমূহের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন-কানুন প্রনয়ন ও প্রয়োগ করে

৩. বড় ধরনের ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে ঋণের বহুধা নিশ্চিতকরণ :

বড় বড় ঋণ স্বল্প সংখ্যক ঋণ গ্রহীতার মধ্যে বিতরন করা হলে কাকের তহবিল ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ কারনে ব্যাংক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষসমূহ ঋণের ঊর্ধ্ব সীমা বেঁধে দিয়ে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের নির্দেশন দিয়ে বড় বড় ঋণ প্রদানে নিরুৎসাহিত করে থাকে।

৪. ব্যাংকের একত্রীকরণ ও অঙ্গ সংগঠণ নিয়ন্ত্রণ :

ব্যাংক ব্যবসায়ে এক চেটিয়া নিয়ন্ত্রণ হ্রাসকল্পে বড় বড় ব্যাংকসমূহের হোলি কোম্পানী বা সাবসিডিয়ারী কোম্পানী রাখার উপর নিয়ন্ত্রনমূলক বিধি বিধান প্রয়োগ করে থাকে।

৫. ব্যাংক সমূহের মধ্যে সমন্বয়ের নির্দেশনা :

কার্যরত ব্যাংকসমূহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয় রক্ষার মাধ্যমে সুষ্ঠু ব্যাংক কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসমূহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

৬. একই ব্যক্তির একাধিক ব্যাংকের পরিচালক না হওয়ার নির্দেশনা :

একাধিক ব্যাংকের কোন এক ব্যাক্তির পরিচালক হওয়ার উপরে ব্যাংক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের বিধি নিষেধ জারী করে থাকে। এতে আমানতকারী সহ সর্ব সাধারনের স্বার্থ রক্ষিত হয়ে থাকে।

৭. বৈষম্যমূলক ব্যাকিং সেবা প্রতিরোধকরণ :

ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, এলাকা, রাজনৈতিক দল ইত্যাদি ভেদে বৈষম্যহীন ব্যাংক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সমূহ সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে থাকে।

৮. মুনাফা বণ্টনের নির্দেশনা

অর্জিত মোট অংকের মুনাফা লভ্যাংশ হিসাবে বিতরন করনে মালিকি পুঁজি না হওয়ার পথে বাঁধা দেয়। সে কারনে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সমুহ নতুন এবং পুরাতন ব্যাংক সমূহের অর্জিত মুনাফা লভ্যাংশ হিসেবে বিতরনে নির্দেশনা দিয়ে মালিকি পূর্জির পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করে থাকে।

৯. অনুমোদিত ও অনুনমোদিত ব্যাংক ঋণ কার্যক্রমের নির্দেশনা

আমানতকারীদের সঞ্চিত অর্থই বাণিজ্যিক ব্যাংলের সিংহ ভাগ প তহবিল সরবরাহ করে থাকে। আমানতকারীদের ঋণ তহবিল সরবরাহ করে থাকে ।আমানতকারীদের তহবিল নিরাপত্তার স্বরে অপেক্ষাকৃত লাভজনক অথবা নিরাপদ খাতে তথা ক্ষণ কার্যক্রমে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ঝাকে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষসমূহ কার্যরত বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের কৌশল / হাতিয়ারসমূহ [ Tools & Strategies of Bank Regulation ]

১০. সামাজিক অগ্রাধিকার ভিত্তিক ঋণ প্রদান নির্দেশনা :

সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা সহ ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যাংক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষসমূহ রাষ্ট্রের দ্বারা চিহ্নিত অগ্রাধিকারী খাত তথা অর্থনৈতিক ক্রিয়া কাতে অপেক্ষাকৃত বেশী ঋণ প্রদানের নির্দেশনা নিয়ে থাকে।

১১. নতন ব্যাংক নিবন্ধীকরণ ও স্থাপন অনুমতি :

কাকে একটি মুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নতুন ব্যাংক খোলার এয়াজনীয় নীতিমালা প্রনয়ন করে থাকে। এই নীতিমালা অঞ্চল, জনগণের ঘনত্ব ব্যাংকের প্রকৃতি, আর্থিক পরিবেশ ইত্যাদির ভিত্তিতে বিভিন্ন হতে পারে। যেমন: মতিঝিল এলাকায় নতুন একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক স্থাপনের নীতিমালা আর কোন পত্নী অঞ্চলে। একটি কৃষি বা সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নীতিমালা নিশ্চয়ই এক হবেনা। তাই জাতীয় স্বার্থে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নতুন ব্যাংক খোলার জন্য কিছু শর্তাবলী আরোপ করে এবং এই শর্ত পুরণের ভিত্তিতে একটি ব্যাংক খোলার অনুমতি দেয়। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রেখে অস্ট্রীয় ব্যাংক তথা ব্যাংক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষসমূহ কাম্য সংখ্যক ব্যাংকের স্থাপন ও নিবন্ধীকরন ব্যবস্থা করে থাকে।

১২. শাখা সম্প্রসারণ অনুমতি :

বিদ্যমান ব্যাংকসমুহের নতুন নতুন শাখা খোলার প্রস্তাব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের আবশ্যকতা রয়েছে। বিদেশে নিবন্ধিত বহুজাতিক ব্যাংকের শাখা খোলার জন্য ও এরূপ অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বসাধারনের কল্যানের দিকে দৃষ্টি রেখে বিশেষ করে পশ্চাৎপদ পল্লী এলাকার প্রতি দায়িত্ব পালন করে বিদ্যমান ব্যাংকসমূহকে ব্যাংক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সমূহ প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে থাকে।

১৩. মূলধনের পর্যাপ্ততার নির্দেশনা :

শেয়ার হোল্ডারদের মূলধন ব্যাংকের মোট তহবিলের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। ব্যাংক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কার্যরত ব্যাংকসমূহকে সব সময় ক্ষুদ্র হলেও পর্যাপ্ত (ভারযুক্ত ঝুঁকি সম্পত্তির শতকরা ৮ ভাগ) তহবিল শেয়ার হোল্ডারদের তরফ থেকে ব্যাংকে রাখার জন্য সজাগ দৃষ্টি দিয়ে থাকে। মূলধন সংকট দেখা দিলে মূল তহবিল সরবরাহকারী আমানতদারদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হতে পারে বিধায় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ পুঁজি পর্যাপ্ততা রক্ষার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক সমুহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

১৪. তারল্যের পর্যাপ্ততার নির্দেশনা

তারল্য সংকট ব্যাংক ব্যবসায়ের জন্য আশংকাজনক পরিনতি ডেকে আনে। সুতরাং ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সব সময় ব্যাংক গুলোকে পর্যাপ্ত তারল্য রক্ষায় নির্দেশনা দিয়ে থাকে। সর্বসাধারনের তথা আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে কার্যরত বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহকে পর্যাপ্ত তারল্য রক্ষার জন্য ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সমূহ বিধি বিধান প্রনয়ন করে সতর্কতার সাথে প্রয়োগ করে থাকে।

১৫. ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ :

ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসমূহ ভোক্তা ঋণ সরবরাহ সহজতর করার লক্ষ্যে প্রায় দেশেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে কার্যরত বাণিজ্যিক ব্যাংক সমুহকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ভোগ্য পন্য ব্যবহারের তারতম্য হ্রাস করে থাকে।

১৬. ঋণ সহ ও অন্যান্য ব্যাংক সেবা তথ্যাদির জন পরিবেশন নির্দেশনা :

সঠিক ঋণ বিশ্লেষণের জন্য হাল নাগাদ ও যথাযথ পর্যাপ্ত তথ্যের প্রয়োজন । ঋণ তথ্য বুরোর সৃষ্টি করা সহ অন্য সব উপায়ে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহকে পর্যাপ্ত, প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সহজলব্ধ ও সহজতর করতে ব্যবস্থা করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment