ব্যাংক পুঁজির পর্যাপ্ততা পরিমাপক

ব্যাংক পুঁজির পর্যাপ্ততা পরিমাপক [ The Measures of Capital Adequacy of Bank ] নিয়ে আজকের আলোচনা। পর্যাপ্ততা একটি আপেক্ষিক শব্দ। যে পরিমাণ পুঁজি একটি ব্যাংকের জন্য পর্যান্ত হওয়া বিবেচিত নয়। ব্যাংকের আমানত যে সাধারণত ব্যাংকের পুঁজি বেশী রক্ত প্রদর্শন করে থাকে। অপরপক্ষে পরিমাণ লভ্যাংশের হার কমে যায়।

সেজন্য ব্যাংকের মালিকানা সাধারণত অপেক্ষাকৃত কম পুঁজি রাখার পর পরি এ বিপরীত মুখী দ্বন্দ্ব নিরসনকল্পে যুক্তরাষ্ট্র সহ অনেক দেশে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সমূহ ঝুঁকিযুক্ত সম্পত্তির নিরিখে ব্যাংক পুঁজির পর্যাপ্ততা বিধিবদ্ধ স্তর নির্দেশক সূত্র প্রচলন করেছেন এতে আমানতকারীগণ ও ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারগণ, সকলের স্বার্থ রক্ষার দিকে নজর দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য যে পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডারগণ দক্ষ ও উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক সম্পত্তির পরিমাণ কমাতে পারে। এবং এতে ব্যাংক শেয়ার হোল্ডারগণ পরোক্ষভাবে পুঁজির পর্যাপ্ততার পরিমান কাংখিত স্তরে রাখতে সক্ষম হতে পারে।

একই ব্যাংকের কার্য এলাকা, কার্য পরিধি ও সময় ভেদে পুঁজির পর্যাপ্ততা ভিন্নতর হতে পারে। একটি ব্যাংক হতে অপর একটি ব্যাংকের ঝুঁকির পর্যাপ্ততার তারতম্য ব্যাংকের আকার, সময় ব্যবহৃত প্রযুক্তির মান এবং সর্বোপরি স্বর্ণ কার্যক্রমের ভারযুক্ত ঝুঁকি (Weighted Risky Assets) তারতম্যের উপর বহুলাংশে নির্ভর করে।

ব্যাংক পুঁজির পর্যাপ্ততা পরিমাপক [ The Measures of Capital Adequacy of Bank ]

Table of Contents

ব্যাংক পুঁজির পর্যাপ্ততা পরিমাপক [ The Measures of Capital Adequacy of Bank ]

ব্যাংকের বিনিয়োজিত তহবিল ফেরৎ পাওয়ার সম্ভাবনা যত কম ঝুঁকির সম্ভাবনা তত বেশী এবং ঝুঁকির পর্যাপ্ততা ততবেশী পরিমান হতে বাধ্য। নিজে ব্যাংক পুঁজির পর্যাপ্ততা পরিমাপকের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা গেলঃ

১. ব্যাংক ব্যবস্থাপনার গুণগতমান (The Quality of Bank Management)

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার যোগ্যতা প্রশিক্ষণ, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদি ব্যাংকের পুঁজি ব্যবস্থাপনার উপর প্রভূত প্রভাব রাখে। যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা যত উন্নত ও দক্ষ সেই ব্যাংক তত অপেক্ষাকৃত কম তহবিলে পুঁজিতে বেশী ব্যাংকিং কার্যক্রমে সক্ষম অর্থাৎ সৎ ও দক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাবৃন্দ সতর্কতার সঙ্গে অপেক্ষাকৃত নিখুঁত ক্ষন কার্যক্রম সম্পাদন করে। সঠিক ও যোগ্য ঋণ গ্রহীতা নির্বাচন ব্যাংক কর্মকর্তাদের অন্যতম মুখ দায়িত্ব। অপরপক্ষে ব্যক্তিগত ও নিবিড় তদারকি ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রমকে সমস্যা গ্রস্ততা থেকে অনেকটা নিরাপদ রাখে।

অপরদিকে আমানত ব্যবস্থাপনা দক্ষ ও সুষ্ঠু হলে অধিক পরিমাণ ঋণ কার্যক্রম সম্ভব। অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী ব্যাংক কর্মকর্তাবৃন্দ নির্ভরযোগ্য মেয়াদী আমানত ব্যবস্থায় সচেষ্ট থাকে এবং যতদূর সম্ভব সংবেদনশীল (Volatile) আমানত পরিহার করে চলতে যত্নবান থাকে। ইতিপূর্বে বর্তমান অধ্যায়ের [৪২] অংশে ব্যাংকের বিনিয়োজিত তহবিলের ঝুঁকির মাত্রা উল্লেখিত হয়েছে। দেখাগেছে সরকারী উপপত্র সমূহে ঝুঁকির নিবিড়তা অনেক কম।

কিন্তু এটা প্রশ্নাতীত যে, সাধারণ ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক ঋণের চেয়ে সরকারী, কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক যাই হোক না কেন ইত্যাদির ঝুঁকি নিবিড়তা ঋণের চেয়ে অনেক কম। দক্ষ ও চৌকষ ব্যবস্থাপনা বেশী বেশী নির্ভরযোগ্য মেয়াদী আমানত সংগ্রহ করে তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। আর তহবিলের পরিমাণ বেশী হলে একটি বিশেষ অংশ ঝুঁকির নিবিড়তা কম এরূপ সরকারী বন্ড বা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি ভিত্তিক পুঁজির পর্যাপ্ততার পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব।

ব্যাংক পুঁজির পর্যাপ্ততা পরিমাপক [ The Measures of Capital Adequacy of Bank ]

২. সম্পত্তির তারল্যতা (Liquidity of Assets)

যে ব্যাংকের আমানত তথ্য অন্যান্য দায় যত বেশী সংবেদনশীল সেই ব্যাংকের দৈনন্দিন নগদ অর্থের তারল্যের প্রয়োজন তত বেশী। যে ব্যাংক তারল্য ব্যবস্থাপনায় যত দক্ষ অভিজ্ঞ সে ব্যাংকের পুঁজি পর্যাপ্ততার প্রয়োজন তত কম পরিমানের। তারল্য ব্যবস্থাপনা দৈনদিন। স্বল্পমেয়াদী, মধ্যম মেয়াদী মেয়াদী সহ ঘটনাভিত্তিক তারল্যের সম্ভাবনা ইত্যাদি দক্ষ ভাবে সু-ব্যবস্থিত হলে কম পুঁজিতেও ব্যাংক বেশী ব্যবসায় করতে সক্ষম হয়।

যে ব্যাংক তারল্য ব্যবস্থাপনায় যত বেশী দক্ষ তার উপার্জনক্ষম নগদ তহবিলে বা কম উপার্জনক্ষম সম্পত্তিতে তারল্য রক্ষার জন্য বেশী অর্থ ধরে রাখতে হয় না। দক্ষতা রক্ষ সমূহের ঝুঁকির নিবিড়তা কম এমন সম্পত্তিতে বেশী বেশী বিনিয়োগ সক্ষম হয়। ফলে এ সব ব্যাংক সমুদ্রে পুঁজির পর্যাপ্ততার পরিমাণ বিনিয়োজিত সম্পত্তির ঝুঁকির নিবিড়তার নিরিখে অন্য সকল ব্যাংক সমূহ কেন অপেক্ষাকৃত কম।

৩. মুনাফার ইতিহাস ও অবণ্টিত মুনাফার পরিমান (The History of Earnings and Retention Thereof)

ধারাবাহিক মুনাফা অর্জনের সাফল্য এবং অবণ্টিত মুনাফার পরিমান যে ব্যাংকের যত বেশী তার মালিকের পুঁজির পরিমাণও তত বেশী। আর এরূপ মালিকের পুঁজি যে ব্যাংকের যতবেশী তার নির্দিষ্ট সু বহি: উৎস থেকে পুঁজি সংগ্রহের প্রয়োজন হয় না। যে সকল ব্যাংক নিয়মিত লোকসানের বা অ বা অবণ্টিত মুনাফা রেখে মালিকী পুঁজি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয় না সে সকল ব্যাংক থেকে এদের পূি পর্যাপ্ততা আশাব্যাঞ্জক। অতিরিক্ত পুঁজি সংস্থান করে পুঁজির পর্যাপ্ততা রক্ষার জন্য এদের ব্যস্ত হতে হয় না।

৪. ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানার মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য (The Quality & Character of Ownership)

যে ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডারগণ অতিশয় বিস্তৃত ও প্রত্যেকের অিল্প সংখ্যক ছাড়া। স্বল্প সংখ্যক পেয়ারের মালিক এবং ব্যাংকের লাভ যাই হোক না কেন উচ্চ লভ্যাংশ প্রত্যাশী সে ব্যাংকে মালিকের পুঁজি বৃদ্ধি পেয়ে পারে না। অপর পক্ষে অবষ্টিত মুনাফার মাধ্যমে যে সকল ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডারগণ বাৎসরিক লভ্যাংশের চেয়ে মালিকি পুঁজির স্তর সম্প্রসারণে প্রত্যাশী সে সকল ব্যাংকের পুঁজির পর্যাপ্ততা সমস্যা নেই বলসের চলে। এরূপে শেয়ার মালিকদের প্রত্যাশার তারতম্যতা পুঁজির পর্যাপ্ততার নির্ধারক হিসাবে কাজ করে।

ব্যাংক পুঁজির পর্যাপ্ততা পরিমাপক [ The Measures of Capital Adequacy of Bank ]

৫. ব্যাংক অফিসের ভাড়া খরচ (The Burden of Meeting Occupancy Expenses)

ব্যাংকের নিজস্ব স্থায়ী সম্পত্তি বা ভাড়া করা সম্পত্তি অ-উপার্জনশীল সম্পত্তি হিসাবে বিবেচ্য। দাি মক্কেল আকর্ষন ও ব্যাংকের সামাজিক মর্যাদা তথা সুনাম বৃদ্ধিকল্পে কোন কোন ব্যাংক অতিশয় বিলাস বহু ও বেশী বেশী ভাড়ার বাড়ী ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য বন্দোবস্ত করে থাকে। যে ব্যাংক পুঁজির যতবেশী আ এরূপ অ-উপার্জনশীল সম্পত্তিতে নিয়োজিত রাখবে সে ব্যাংকের উপার্জনশীল সম্পত্তিতে বিনিয়োগের জন্য তত কম সম্পদ অবশিষ্ট থাকবে। এরূপ ব্যাংক সমূহের ঋণ পর্যাপ্ততার জন্য পুঁজির পরিমাণ বেশী হয়ে থাকে। অপরপক্ষে একই আকারের অথচ মধ্যম মানের বাড়ি ভাড়া করে কার্যক্রম নির্বাহ করলে অপেক্ষাকৃত বড় বাড়ী ভাড়া পর্যাপ্ত বলে বিবেচিত হবে।

 

 

৬. ঝুঁকিপূর্ণ আমানতের তারতম্য (The Potential Volatility of Deposit Structures)

আমানত ঝুঁকিপূর্ণ হলে তারতম্য রক্ষার জন্য বেশী বেশী উপার্জনাক্ষম বা অতি কম উপার্জনাক্ষম অ প্রতিনিয়ত প্রস্তুত রাখতে হয়। আমানত ব্যবস্থাপনায় যে ব্যাংক যত সফল সে ব্যাংক সতর্কতা সহক সংবেদনশীল আমানত যথাসম্ভব কম সংগ্রহ করবে। অপরপক্ষে আমানতের মোট পরিমানের মেয়া পরিমাণ যতবেশী এবং আমানতকারীর ব্যবহার যত নিখুঁত তথা আর্চ করা সম্ভব সে ব্যাংকের তারল্য রক্ষার জন্য অ-উপার্জনশীল তথা স্বল্প নগদ অর্থ ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা কম। অতএব দেখা যাচ্ছে আমানতের এবং মোট আমানতের সংবেদনশীল আমানতের পরিমাণ একটি ব্যাংকের পুঁজির পর্যান্ত নির্ধারণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।

৭. ব্যাংক পরিচালনা পদ্ধতির গুনগত মান (The Quality of Operating Procedures)

যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ব্যাংক তার দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে ঐ প্রক্রিয়ার দক্ষতা নিপুনতার গুনগত মান ততবেশী। এ প্রক্রিয়া ব্যবহারকারী ব্যাংক সমূহের যতকম সংবেদনশীল আমানত তত কম নিবিড় ঝুঁকি বিশিষ্ট ঋণ কার্যক্রম সম্পাদন করতে সক্ষম। ফলে এরূপ ব্যাংক সমূহ পুঁজির পর্যাপ্ততার পরিমাণ অন্য সকল ব্যাংক সমূহের চেয়ে অপেক্ষাকৃত অনেক কম।

ব্যাংক পুঁজির পর্যাপ্ততা পরিমাপক [ The Measures of Capital Adequacy of Bank ]

৮. প্রতিযোগিতা বিবেচনায় রেখে কার্যরত এলাকায় অংশগ্রহণ করে বর্তমান ও আর্থিক পুয়োজন মিটানো (The Bank’s Capacity to Meet the Present & Future Financial Needs of their Trade Areas. Considering the competition they face)

যে এলাকায় একটি ব্যাংক কার্যরত থাকে সে এলাকায় ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক তথা শিল্প বাণিজ্যিক ঋণ চাহিদা পূরণ করে ব্যাংক ব্যবসায়িক তথা সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকে। যে সকল ব্যাংক তাদের কার্য আওতার চাহিদা সমূহের প্রতি দায়িত্বশীল থাকে ও সামাজিক অংশগ্রহনে যত্নবান থাকে সে সকল ব্যাংকের পুঁজির পর্যাপ্ততার প্রয়োজন, যে সকল ব্যাংক এরূপ কার্যক্রমে আগ্রহী থাকে না তাদের চেয়ে অনেক বেশী।

৯. প্রযুক্তি ব্যবহারের তারতম্য (Variation in the use of Technology)

বর্তমান যুগ প্রযুক্তি বিপ্লবের যুগ। উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে সকল ব্যাংক সেবার গুনগত মান উন্নত ও সেবার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান সময় হ্রাসে যত্নবান হয় সে সকল ব্যাংকের পুঁজির পর্যাপ্ততার পরিমাণ অন্য সকল ব্যাংক যারা এরূপ প্রযুক্তিব্যবহারে আগ্রহী হয় না তাদের চেয়ে অনেক বেশী। অতএব ব্যাংকে উন্নততর প্রযুক্তি সৃষ্টির জন্য স্থায়ী পুঁজি সহ উন্নত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত উচ্চ বেতনভোগী কর্মকর্তা কর্মচারী প্রয়োজন। এবং এ কারণে এরূপ ব্যাংকের পুঁজির পর্যাপ্ততার স্তর গতানুগতিক প্রযুক্তি ব্যবহারকারী ব্যাংক সমূহের চেয়ে অনেক বেশী।

১০. সম্পত্তি প্রতি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা (Need for Replacement of Assets)

স্থায়ী সম্পত্তি যথা জমির অবচিতি রক্ষনাবেক্ষন ব্যয় কম হলেও ব্যাংক ব্যবহার করে। এরূপ সকল প্রকার দালানকোঠা, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, মোটরগাড়ী ইত্যাদি কালের পরিক্রমায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া সম্ভব। এমতাবস্থায় ব্যাংক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য বা যুগের প্রয়োজনে অধিকতর উন্নততর সুযোগ সৃষ্টির জন্য পূর্বের সম্পত্তি সমূহ প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। আর এরূপ কার্য নির্বাহের জন্য প্রয়োজন অর্থের। যে সকল ব্যাংক কার্যক্রম কয়েক বছর অতিক্রান্ত করেছে তাদের প্রত্যেকের বেলায় কমবেশী এরূপ প্রতিস্থাপন বিনিয়োগ প্রয়োজন। তবে প্রতি বছর বা প্রতি মাসে একই বছর প্রতিমাসে এরূপ প্রতিস্থাপন বিনিয়োগের প্রয়োজন না হওয়াই স্বাভাবিক। অতএব যে ব্যাংক যতবেশী প্রতিস্থাপন বিনিয়োগ অর্থ ব্যবহার করবে সেই সময়ে সে ব্যাংকের পুঁজির পর্যাপ্ততার পরিমাণ অন্য সময়ের চেয়ে বেশী হবে এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।

আরও পড়ুনঃ

 

Leave a Comment