“আলী ব্রাদার্স কেস” [ কেস নম্বর -১৮ ]
“আলী ব্রাদার্স কেস” [ কেস নম্বর -১৮ ]
হায়দার আলী একজন ধার্মিক লোক ছিলেন, ত্রিশ বৎসর বয়সে অকালে মৃত্যুর সময় তিনি দুই পুত্র সবিদ আলী (৫) ও খুরশিদ আলী (৩) এবং স্ত্রী শাহেদা বেগমকে রেখে যান। শাহেদা বেগম ছিলেন ধনী বাবার একমাত্র কন্যা এবং উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি তার বাবার নিকট হতে ১০০ একর উর্বর জমি ও গঞ্জে ২টি দোকানের মালিক হন। অল্প বয়সে বিধবা হওয়ায় শাহেদা বেগমের বাবা ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজন তাকে দ্বিতীয় বিবাহ দিতে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তিনি এতে রাজি না হয়ে দুই সন্তানকে লালন-পালন করার মানসে আত্মনিয়োগ করেন।
দুই ভাই সুবিদ আলী ও খুরসিদ তাদের মা ও একজন শিক্ষকের অধীনে প্রথমে ধর্মীয় শিক্ষা ও পরে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহন আরম্ভ করেন। যে বছর সুবিদ আলী প্রথম বিভাগে এস. এস. সি পাশ করে সে বছরই তার নানা ইন্তেকাল করেন। ফলে তার আর লেখা পড়া করার সৌভাগ্য হয়না। কিন্তু সুবিদ তার ছোট ভাই খুরসিদকে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে এবং এর ফলেই খুরশিদ আলী এস. এস. সি ও এইচ. এস. সি উভয় পরীক্ষাতেই কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়।
গঞ্জে তাদের এক দুরসম্পর্কের আত্মীয় ছিল তিনি ছিলেন উক্ত এলাকার একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তারই পরামর্শে সুবিদ আলী ও খুরশিদ আলী উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দোকান ২টিতে ব্যবসায় আরম্ভ করলো। এছাড়াও উক্ত ২ ভাই তাদের প্রাপ্ত জমির অর্ধাংশ বিক্রি করে প্রাথমিক মূলধন হিসাবে সমানভাবে ভাগ করে নিল।
দুই ভায়ের মধ্যে সুবিদ আলী ছিল অত্যন্ত ধার্মিক এবং ব্যবসায়ী মনোভাবের, পক্ষান্তরে খুরসিদ আলী ছিল অত্যন্ত সামাজিক ও ক্লাব সংস্কৃতিমনা। তিন বছর পর খুরসিদ আলীর মূলধন বেড়ে পাঁচ গুণ হয় এবং তিনি স্থানীয় নেতৃত্বের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের একজন মেম্বার হিসাবে নির্বাচিত হন। একই সময়ে বড় ভাই সুবিদ আলীর ব্যবসার মূলধন পায় তিন গুণ বেড়ে যায় এবং তিনি অষ্টম শ্রেণী পাস এক ভুল শিক্ষকের মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অন্যদিকে, খুরসিদ আলী এক ধনী বাড়িওয়ালার স্নাতক পাশ একমাত্র কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
অতঃপর খুরসিদ আলী তার স্ত্রীর এক আত্মীয় যিনি কোন এক ব্যাংকে চাকুরী করতেন, তারই পরামর্শে তিনি ২৫০ লুম বিশিষ্ট একটি তাঁতশিল্প চালুর লক্ষ্যে তার দোকানটি বিক্রি করে দেন। এই দোকান বিক্রির সম্পূর্ণ অর্থ এবং উক্ত ব্যাংকার আত্মীয়ের সহযোগিতায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে তাঁত প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ করে। একই সাথে সহজ শর্তের ঋণ সুবিধায় ভারত থেকে প্রয়োজনীয় মেশিন আমদানী করে।
এভাবে সকল পদক্ষেপ শেষে প্রকল্পটি চালু করতে প্রায় ২ বছর সময় লেগে গেল। স্ত্রীর যে আত্মীয়টি ব্যাংক ঋণ পেতেসাহায্য করেছিল তারই পুত্রকে খুরশীদ আলী তার প্রকল্পের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ করেন। ম্যানেজার লোকটি ছিলেন একজন স্বাতন একই সাথে পুরে ব্যবসা দেখাশুনার ব্যাপারে যথেষ্ট স্মার্ট। ফলে তার এই কর্মদক্ষতায় গুরলিন প্রাথমিকভাবে অত্যন্ত চমৎকৃত হন। এ তার উপর যথেষ্ট নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
তিন বছর পর্যন্ত দেখা গেল যে খুরসিদ আলীর ব্যবসায় অনেক লাভজনক ভাবে চলতে লাগলো এবং তিনি সেইসাথে ফেডারেশন রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, তিনি ক্লাব সংস্কৃতিতে অত্যন্ত হয়ে পড়েন এ বিশেষ আমোদ-প্রমোদের জন্য ক্লাবে যাতায়াত করতে থাকেন। খুরসিদ আলীর স্ত্রীও স্বামীর সঙ্গে ক্লাবে যাতায়াত করতে করতে উদল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং এইভাবেই স্বামীর এক বছর প্রতি আসক হয়ে পড়েন।
এখানেই শেষ নয়, উষ্ণ স্ত্রী তার স্বামীর প্রতিও ধীরে ধীরে নিরৎসাহিত হয়ে উঠেন। ফলে পারিবারিক খুটিনাটি ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-কাটি নি নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এমনি একদিন ঝগড়ার এক পর্যায়ে খুরসিদ আল উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং স্ত্রীকে তীব্র বকাঝকা করেন। ফলে তার স্ত্রী বাড়ি যান। তখন খুরসিদ আলী তার ম্যানেজারকে এ ব্যাপারে সমঝোতা করার জন্য স্ত্রীর নিকট পাঠান। এখানে উল্লেখ্য যে, উক্ত ম্যানেজার ছিল খুরসিদ আলীর স্ত্রীর একজন চাচাত ভাই।
অবশেষে ম্যানেজার সফল হলো ঠিকই, কিন্তু খুরসিদ আলীর স্ত্রী আর স্বামীর ঘরে ফিরে আসলো না। বরং সুখের নীড় বাঁধার আশর চিরতরে স্বামীর ঘর ত্যাগ করে উক্ত ম্যানেজারের হাত ধরে চলে গেল। একদিন এ ব্যাপারে ম্যানেজারের সাথে খুরসিদ আলীর তুমুল বাক বিতন্ডা হয় এবং তিনি ম্যানেজারকে উক্ত প্রতিষ্ঠান ত্যাগের নির্দেশ দিলেন। এতে ম্যানেজার অপমানিত হয়ে ভাড়া করা মাস্তান দিয়ে খুরসিদ আলীর উপর হামলা চালায় এবং পরিণামে সে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায়।
অবশেষে খুরসিদ আলী উক্ত প্রতিষ্ঠান খেতে বিতাড়িত হয়ে বড় ভাই সুবিদ আলীর গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে গিয়ে সে দেখলো যে তার ভাই ধীরে ধীরে ব্যবসায় উন্নতি করে একটি ইচ খোলার মালিক হয়েছে এবং চার সন্তান ও এক কন্যা নিয়ে সুখে শান্তিতে বাস করছে। ঐ সন্তানদের সকলেই ছিল বি.এ পাশ এবং তারা তাদের পিতা ও চাচার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতো।
অন্যদিকে, উক্ত ম্যানেজার ও বেশী দিন খুরসিদ আলীর প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে সুখে বসবাস করতে পারল না। যেহেতু উক্ত ম্যানেজারের উদ্দেশ্য ছিল অসৎ সেহেতু সে উক্ত ব্যবসায় পরিচালনায় আর আগের মতো মনোযোগ না দেওয়ায় দিনে দিনে ক্ষতির সম্মুখীন হে লাগলো। এক পর্যায়ে ব্যাংকের নিয়মিত পাওনা পরিশোধকল্পে প্রয়োজনীয় নগদ অর্থও সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে উক্ত তাঁত শিল্পটি বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যাংক উহার বিরদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়। এখন আপনি ব্যবসায় উদ্যোগের একজন ছাত্র হিসাবে কিভাবে উক্ত ঘটনার প্রতি আপনার মূল্যবান মতামত প্রদান করবেন এবং কি কি পদক্ষেপ নিলে একজন উদ্যোক্তা এ ধরনের পরিস্থিতি হতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে পারে বলে আপনি মনে করেন।
আরও পড়ুনঃ