ঋণ ও বিনিয়োগের পার্থক্য

ঋণ ও বিনিয়োগের পার্থক্য [ Loan Vs Investment ] – বিষয়টি নিয়ে আজকের আলোচনা। ঋণ ও বিনিয়োগ উভয়ই ব্যাংক তহবিল ব্যবহারের উদাহরণ। ব্যাংক মক্কেলকে ঋণ প্রদান করে লাভ হিসাবে সুদ আয় করে থাকে। অপর পক্ষে ঋণযোগ্য তহবিল উদ্বৃত্ত থাকলে ব্যাংক মুদ্রা ও পুঁজি বাজার থেকে ঋণপত্র বা অন্যান্য দলিলাদির মাধ্যমে তহবিল বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ, সুদ বা বোনাস শেয়ার এর আয় বাড়াতে পারে।

মাঝে মধ্যে বিনিয়োজিত এ সমস্ত দলিলাদি ক্রয় মূল্যের চেয়ে বেশী মূল্যে বিক্রী করেও মূল্য বৃদ্ধিজনিত (Capital Appreciation) মুনাফাও ব্যাংক অর্জন করে থাকে। তবুও ঋণ ও বিনিয়োগ উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

ঋণ ও বিনিয়োগের পার্থক্য [ Loan Vs Investment ]

ঋণ ও বিনিয়োগের পার্থক্য [ Loan Vs Investment ]

যা নিম্ন সারণী থেকে অবলোকন করা যেতে পারেঃ

ঋণ বনাম বিনিয়োগ

ক্রমিকপার্থক্যের বিষয়ঋণবিনিয়োগ
 ১. লেনদেনের ধরন Transaction Type 

ঋণ লেনদেন

বেশির পক্ষে মালিক পুঁজি
২.যোগাযোগ : Contactsপ্রত্যক্ষপরোক্ষ ও অব্যক্তিক
৩.মেয়াদ কাল অবগতি

Knowledge of Maturity Period

স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সবার জন্যডিবেঞ্চার ছাড়া ও অন্য দলিলের বেলায় অবগত থাকে না
৪.মেয়াদ কাল

Term

কয়েকদিন থেকে চল্লিশ বছরেরও হতে পারে।মেয়াদ ব্যাংকের উপর  নির্ভর করে।
৫.দর কষাকষি Negotiation দর কষাকষি ভিত্তিকদর কষাকষি ভিত্তিক নহে।
৬.তহবিলের উদ্দেশ্য :

Purpose of the Raised Funds

ঋণ বিতরণকারী ব্যাংক অবগত থাকেদলিলাদী ক্রয়কারী ব্যাংক অবগত থাকে না
৭.আয়ের উৎস : Income Sourceকেবল সুদ ও দন্ড সুদলভ্যাংশ বোনাস শেয়ার, মূল বুদ্ধি জনিত আয় তবে ডিবেঞ্চারের বেলায় সুখ হয়ে থাকে।
৮.কার্য আওতা :

Operation Area

বেশীর ভাগই স্থানীয় ভিত্তিতে ব্যাপক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও হতে পারে।
৯.ঝুঁকি নিবিড়তা ব্যাপ্তি | (Intensity & Extent of risk)মর্যাদা সম্পন্ন মক্কেল ছাড়া বেশীর ভাগ ঋণ আদায়ই ঝুঁকি পূর্ণ।দলিল ভেদে ঝুঁকি তারতম্য ঘটে।তবে সাধারণত ঋণ তুলনামূলক ঝুঁকি কম।
১০.উত্তোলিত তহবিলের পরিমান (ব্যবহাকারীর তহবিল)

Volume of Fund

শিল্প প্রতিষ্ঠান ছাড়া তহবিল অধিকাংশই  ক্ষুদ্রাকার হয়ে থাকে।সব সময়ই বৃহৎ পরিমাণ তহবিল
১১.রূপান্তর যোগ্যতাঃ Shiftabilityরূপান্তর করা খুবই দুঃসাধ্যতুলনামূলক অনেক সহজ।
১২.অবসায়নঃ Terminationঋণগ্রহিতার সদিচ্ছার ভিত্তিতেই অবসায়ন সম্ভব।শেয়ার মালিক তথ্য ঋণপত্রের মালিক / ব্যাংকের ইচ্ছার উপরই এর অবসায়ন হয়ে থাকে।
১৩.হিসাবে ব্যবহার Accounting treatmentঋণ কোম্পানী বা ব্যক্তির জন্য পায়।বিনিয়োগ কোম্পানীর জন্য একটি সম্পত্তি।

ঋণ ও বিনিয়োগের পার্থক্য [ Loan Vs Investment ]

ব্যাংক ঋণের বৈশিষ্ট্য [ Characteristics of Bank Loan ]

উদ্দেশ, ব্যবহার এবং প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যাংক ঋণের কতক গুলো স্বতন্ত্র রয়েছে। মক্কেলের পনের প্রেক্ষিতে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত সাময়িক অর্থ সহায়তাকে ব্যাংক ঋণ বা ধার বলা হয়ে থাকে। এরূপ ব্যাংক ঋণ বা ধারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলঃ

(ক) পক্ষ সমূহ (Parties) :

ঋণের লেনদেন ব্যাংক ও আবেদনকারী মক্কেলের মধ্যে সংগঠিত হয়। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক মক্কেল এরূপ সুবিধা প্রাপ্তির আবেদন করবে এবং ব্যাংক যুক্তি গ্রাহ্য হলে আবেদন রক্ষা করবে।

খ) ঋণের পরিমাণ- (Amount of Loan) :

আবেদনকৃত অর্থের পরিমাণ কম বেশী হতে পারবে। আবেদন প্রাপ্তির পর ব্যাংকের বিশ্লেষণে উল্লেখিত উদ্দেশ্যের জন্য মক্কেলের ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতানুসারে মঞ্জুরীকৃত ঋণের পরিমাণ কম বা বেশী হতে পারবে।

(গ) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত – (Ultimate Decision) :

ঋণ আবেদনে ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অর্থাৎ ব্যাংক তার নিজস্ব তহবিল, মঞ্চেলের সুনাম ও অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়ের ভিত্তিতে ঋণ মঞ্জুর করতে বা না করতে পারে আবেদনকৃত ঋণ মঞ্জুরীর পরিমাণ কম বেশী করতে পারে। ঋণ বিতরণ তাৎক্ষণিক অথবা কিস্তিতে করতে পারে। এ সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ কালে ব্যাংক মঞ্চেলের সংগে আলোচনা করতে পারে কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্র একমাত্র ব্যাংকের আওতাভুক্ত যা প্রশ্নাতীত রাপে গণ্য হয়ে থাকে। এরূপ সিদ্ধান্ত এমনকি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না।

(ঘ) ঋণের মাধ্যম ( Mode of Loan) :

ঋণের মাধ্যম সাধারণত টাকার অংকে হয়ে থাকে। তবে মাঝে মাঝে যন্ত্রপাতি কাঁচামাল ইত্যাদির অগ্রীম ক্রয় অথবা ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে এরাপ ঋণ প্রদান করা যেতে পারে।

ঋণ ও বিনিয়োগের পার্থক্য [ Loan Vs Investment ]

(ঙ) বিতরণের প্রকৃতি- (Nature of Distribution) :

ব্যাংক সাধারণত মঞ্জুরীকৃত ঋণ কিস্তির মাধ্যমে বিতরণ করে থাকে।

(চ) ক্ষণবিতরণ প্রক্রিয়া (Process of Disbursement) :

প্রায়শ ব্যাংক ঋণ মক্কেলের বিদ্যমান চলতি হিসাবের মাধ্যমে দিয়ে থাকে। মক্কেল নতুন হলে ব্যাংক মক্কেলকে নতুন চলতি হিসাব খোলার পরামর্শ দিয়ে থাকে। যার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা যেতে পারে।

(ছ) জামানত (Security) :

যার বা ঋণ সাধারণত জামানতের ভিত্তিতে দেওয়া হয়ে থাকে। তাকে মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগত নিশ্চয়তার ভিত্তিতেও ছোট খাটো পরিমাণের ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে।

(জ) ঋণের মূল্য- (Loan Price) :

ব্যাংক কখনই বিনা সুদে বা লাভে ঋণ মঞ্জুর করে না। তবে ঋণের ধরণ ও মক্কেল ভেদে ঋণের হারের তারতম্য ঘটা অস্বাভাবিক নয়। কোন কোন সময় বিশেষ ধরণের ঋণ প্রদান কালে ব্যাংক অতি অল্প সুদ “সার্ভিস চার্জ” নামে গ্রহণ করে থাকে।

(ঝ) ঋণের মেয়াদ কাল-

(Periodicity of Bank Loan) : ঋণের ধরণ মক্কেলের সুনাম ও সুদ ভেদে ঋণ বিভিন্ন মেয়াদের হয়ে থাকে। যথা : চাহিবামাত্র ফেরং, স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী ও হতে পারে।

 

(ঞ) ঋণ পরিশোধ (Repayment of Loan) :

ঋণ পরিশোধ এককালীন বা কিস্তির মাধ্যমে হয়ে থাকে। ঋণ পরিশোধ স্মারণী প্রস্তুত কালে ব্যাংক সাধারণত মক্কেলের অর্থাগমন সুবিধা ও নগদান প্রবাহের প্রতি সৃষ্টি রেখে থাকে।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment