Site icon Banking Gurukul [ ব্যাংকিং গুরুকুল ] GOLN

ঋণ মর্যাদাকরণ বা আদায়যোগ্যতা ভিত্তিক ঋণের শ্রেণী বিন্যাসকরণ [ Loan Grading or Classifications Based on Recoverability ]

ঋণ মর্যাদাকরণ বা আদায়যোগ্যতা ভিত্তিক ঋণের শ্রেণী বিন্যাসকরণ

ঋণ মর্যাদাকরণ বা শ্রেণীকরণ বলতে এখানে আমরা মোট ঋণের আদায় সম্ভাবনার ভিত্তিতে ঋণের বিন্যাস করাকে বুঝাচিছ। যে ঋণ আদায়ের সামান্যতম উৎকণ্ঠা থাকে না সে ঋণ ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত সন্তুষ্টির কারণ আর এরূপ ঋণ যারা বা যে প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করে থাকে ব্যাংকের দৃষ্টিতে তারা অত্যন্ত মর্যাদাশীল ঋণ মক্কেল [Prime Customer]।

ঋণ মর্যাদাকরণ বা আদায়যোগ্যতা ভিত্তিক ঋণের শ্রেণী বিন্যাসকরণ [ Loan Grading or Classifications Based on Recoverability ]

আদায় সম্ভাবনার নিরিখে ব্যাংকের দৃষ্টিতে বকেয়া ঋণকে সর্বমোট ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :

১। চমৎকার ঋণ : Prime Loans

২। সন্তোষজনক ঋণ : Satisfactory Loans

৩। ভালো ঋণ : Good Loans

৪। প্রান্তিক মান সম্পন্ন :  Substandard Marginal Loan

৫। সন্দেহ জনক ঋণ: Doubtful Loan

৬। কু-ঋণ ক্ষতি : Bad Loan Loan Loss

একই দেশে বিভিন্ন সময় অথবা বিভিন্ন দেশে একই সময়ে ভিন্নতর ভিত্তি ব্যবহার করে এরাপ ঋণের শ্রেণীকরণ করা হয়ে থাকে। সর্বনিম্ন শ্রেণীকরণ তিনটি যা নিম্নে দেখা যেতে পারে :

১। ভালো ঋণ : Good Loan যার আদায় সম্ভাবনা সন্দেহাতীত।

২। সন্দেহ যুক্ত ঋণ : Doubtful Loan যার আদায় ভিন্নতর স্তরের হলেও সন্দেহ থেকে যায় এবং

৩। কু-ঋণ ক্ষতি / ঋণ ক্ষতি : Bad Loans / Loan Loss

সমস্যাগ্রস্থ ঋণ সারণী

ক্রমিক নং শ্রেণী

অনাদায়ের ঝুঁকি সম্ভাবনা

পুনরীক্ষণ নিবিড়তা সমস্যাগ্রস্ততার হার
চমৎকার ঋণ Prime Loan ০.০০ আদৌ প্রয়োজন নাই ০%
সন্তোষজনক ঋণ  Satisfactory Loans ০.০১ বছরে এক বার ১%
ভালো ঋণ Good Loans ০.০৫ বছরে দু’বার ৫%
প্রান্তিক মান সম্পন্ন Substandard Marginal Loan ০.২০ চারমাসে এক বার ১০০%
সন্দেহ জনক ঋণ Doubtful Loan ০.৫০ মাসে এক বার ১০০%
কু-ঋণ ক্ষতি Bad Loan Loan Loss ১.০০ প্রয়োজন মাফিক যত বেশি সম্ভব ১০০%

 

উপরের চিত্র থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ঋণ আদায়ের ঝুঁকি ও ঋণ পুনঃরীক্ষণ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আদর সম্ভাবনা সন্দেহাতীত হলে ঋণ পুনরীক্ষণের প্রয়োজন হয় না। অপরপক্ষে আদায় সম্ভাবনায় যত কমতে থাকে সমস্যাগ্রস্ততা তত বাড়তে থাকে। আর তাই ঋণ পুনঃরীক্ষণ র প্রয়োজনীয়তা ততই বেশী।

সমস্যাগ্রস্থ ঋণ নির্দেশক [ Indicators of Problem Loans ]

সমস্যাগ্রস্থতা এক ধরণের রোগ বিশেষ। প্রাণীকূলের রোগ পূর্বাহ্নে ধরা পড়লে যেমন নিরাময় সহজতর হয় তেমনি অতিবিলম্বে বা রোগের শেষ পর্যায়ে ধরা পড়লে উঁচুমানের চিকিৎসা করা হলেও রোগী বাঁচে না বা নিরাময়ের প্রশ্নই ওঠে না। সুতরাং নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে পরীক্ষার রোগ চিহ্নিত করতে সক্ষম হলে সামান্য চিকিৎসাই রোগ নিরাময় সম্ভব হয়ে যায়। তদ্রূপ কণ সমস্যাগ্রস্থ হয়ে পড়ার পূর্বেই চিহ্নিত করা সম্ভব হলে নিয়মিত তদারকিসহ সামান্য সমন্বয় সাধন করে সমস্যাগ্রস্থতা দূর করা সম্ভব। যে সমস্ত অবস্থা দেখে প্রথম পর্যায়ে চিহ্নিত করে সমস্যাগ্রস্থতা দূর করা যায় যেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা গেলঃ

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

সমস্যাগ্রস্থ তার নির্দেশক চিত্র সমূহঃ

পরিমাণগত নির্দেশক
Quantitative Indicators
গুণগত নির্দেশক
Qualitative Indicators
১। অনিয়মিত ও বিলম্বিত আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা। ১। ব্যবসায়ের মালিক তথা প্রধান নির্বাহীর মৃত্যু বা দুর্ঘটনা।
২। বড় ধরণের বীমা দাবী অগ্রাহ্য হওয়া। ২। ঋণ গ্রহীতা ব্যাংকের সহিত যোগাযোগ এড়িয়ে চলা।
৩। অসময়ে ভারসাম্যহীন সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন। ৩। তদারকিদেরকে ঋণ গ্রহীতার অফিসে সানন্দে গ্রহণে অনীহা।
৪। আয়ের প্রধান উৎসে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়া। ৪। প্রায়শ: ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ভাল সুযোগের আশায় প্রতিষ্ঠান ত্যাগ।
৫। ক্রমাগত আমানত ফের হ্রাস । ৫। ঋণ গ্রহীতা আদালত কর্তৃ কবড় ধরণের প্রতিকুল রায় সম্ভব এমন মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়া
৬। মজুদ মালের অসম্ভব বৃদ্ধি ৬। মালিক তথা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পারিবারিক অসন্তোষের কারণে নিয়মিত অফিস পরিচালনায় বিঘ্ন
৭। ব্যাংক ছাড়া ও অন্যান্য পাওনাদারের ঋণ পরিশোধে অপারগতা। ৭। বড় বড় ক্রেতা বা কাঁচামাল বিক্রেতা যে দেশের সে দেশের সাথে ঋণ গ্রহীতার দেশের যুদ্ধ বা অন্যকোন বৈরিভাবহেতু ব্যবসায়ে মন্দাভাব।
৮। ঋণ কিস্তি পরিশোধ না করা। ৮। অনবরত শ্রমিক অসন্তোষ (Labour unrest strike]।
৯। ঋণ কিস্তি পরিশোধের জন্য বার বার সময় চাওয়া। ৯। ঋণগ্রহীতার পাওনাদারদের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক
১০। বর্তমান প্রধান ঋণদাতা ব্যাংক ছাড়া ও অন্য প্রতিষ্ঠানের তথা ব্যক্তির সাথে পুন: পুনঃ বড় ধরণের ঋণ চুক্তি সম্পাদন। ১০। দেনাদারের সংগে ধারে কাঁচামালের ক্রয় সম্পর্কের অবনতি।
১১। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব শেয়ারের ক্রমাগত বাজার দরপতন। ১১। ঋণ গ্রহীতা মকেলের ব্যবসায়ে জালিয়াতি ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি বড় ধরনের ঘটনা সংগঠিত।
১২। স্বল্পকালীণ ঋণে/জমাতিরিক্ত ঋণের জন্য বার বার আবেদন। ১২। ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের অবর্তমানে উত্তরাধিকারী সন্তানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও অব্যাহত কলহ।
১৩। প্রায়শ: নেতিবাচক তারল্য অবস্থা
১৪।হঠাৎ অথবা ক্রমাগত অতিরিক্ত আমানত উত্তোলনের হিড়িক

উপরোক্ত পরিমাণগত স্বণের সমস্যাসমূহ ও গুণগত নির্দেশকের মধ্যে কোনটি বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলা যাবে না। অর্থাৎ উভয় ধরনের নির্দেশকই সমস্যাগ্রস্থতা সম্পর্কে ঋণদাতা ব্যাংকের কাছে সমস্যাগ্রস্থতার বার্তা প্রের করে। কিন্তু ব্যাংক সর্বপ্রথম কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ অথবা বার বার কিস্তি পরিশোধের তারিখ বাড়ানোর আবেদন থেকেই ঋণ গ্রহীতার সমস্যাগ্রস্থতা সম্পর্কে আর্চ করতে পারে। এ প্রাথমিক সংকেত থেকে উল্লেখিত অন্যান্য নির্দেশক সমূহ সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যাংক ঋণ গ্রহীতার সমস্যাগ্রস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ

Exit mobile version