Site icon Banking Gurukul [ ব্যাংকিং গুরুকুল ] GOLN

কেস স্টাডি কাকে বলে ? [ What is Meant by Case Study? ]

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার সময় নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়। এসব সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ঋণ বা অগ্রিম সংক্রান্ত জটিলতা। ব্যাংক লাভের প্রত্যাশায় গ্রাহকদের ঋণ বা অগ্রিম প্রদান করে, কিন্তু অনেক সময় নির্ধারিত সময়ে সুদসহ সেই অর্থ আদায় সম্ভব হয় না। ফলে ব্যাংকের আর্থিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এবং বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দেয়।

এছাড়াও ব্যাংকগুলোকে নিয়মিতভাবে সামলাতে হয়:

এইসব সমস্যা কাটিয়ে উঠেই ব্যাংককে তার দৈনন্দিন কার্যক্রম সচল রাখতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার—কোনও একটি সমস্যার নির্দিষ্ট ও চূড়ান্ত সমাধান সাধারণত থাকে না। দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে কোনও সমস্যার সমাধানপদ্ধতিও ভিন্ন হয়ে যেতে পারে। একই সমস্যার জন্য ‘ক’ ব্যাংক একধরনের সিদ্ধান্ত নেবে, আর ‘খ’ ব্যাংক হয়তো সম্পূর্ণ ভিন্ন পন্থা গ্রহণ করবে—এটি খুব স্বাভাবিক।

কেস এবং কেস স্টাডি – এই দুইয়ের পার্থক্য কী?

কেস’ বলতে বোঝায়—ব্যাংক বা যেকোনও প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট একটি সময়ে উদ্ভূত বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য পরিস্থিতি, যার ভিত্তিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
যদি এসব বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে পূর্বেই পরিচিত হওয়া যায়, তাহলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নতুন কর্মকর্তারাও ভবিষ্যতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।

শহীদের সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়, কিন্তু ঋণের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
আল হাদীস

এই প্রেক্ষাপটে, কেস স্টাডি বলতে বোঝায়—একটি কাল্পনিক বা বাস্তব পরিস্থিতিকে সামনে রেখে নিজের বিচার-বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণের অনুশীলন। অর্থাৎ, শিক্ষার্থী বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কেউ যদি নিজেকে ঐ বাস্তব পরিস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে কল্পনা করে এবং বিশ্লেষণ করে—তাহলেই তা কেস স্টাডি হিসেবে বিবেচিত হয়।

সংক্ষেপে,

???? কেস হলো বাস্তব সমস্যা বা পরিস্থিতির বিবরণ,
???? কেস স্টাডি হলো সেই পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুশীলন।

এই কেস স্টাডি পদ্ধতি বাস্তব জীবনের সিদ্ধান্তগ্রহণে প্রস্তুতি গ্রহণের একটি কার্যকর উপায়।

 

কেস স্টাডির প্রকারভেদ (Types of Case Studies):

প্রতিদিন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেশনসমূহ নানাবিধ নতুন ও জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। এসব পরিস্থিতি সময়, স্থান, অর্থনৈতিক কাঠামো, সামাজিক মূল্যবোধ, নীতিমালা এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। ফলে সমস্যার সমাধানের ধরণও পরিবর্তিত হয়। এজন্য বাস্তব জীবনের সমস্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একক পদ্ধতি যথেষ্ট নয়; বরং সমস্যার ধরণ অনুযায়ী কেস স্টাডির ধরনও বৈচিত্র্যময় হতে হয়।

বিশেষত, শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কেস স্টাডিগুলো প্রকৃতি ও প্রয়োগের দিক থেকে ভিন্ন হতে পারে। শিক্ষার্থী বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রয়োজন, কল্পনাশক্তি, যুক্তি প্রয়োগ এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার কেস স্টাডি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

প্রধান ভিত্তিতে কেস স্টাডির শ্রেণিবিভাগ:

১. প্রস্তুতকরণ ভিত্তিক (Preparation-based Case Studies)
এই ধরনের কেস স্টাডিগুলো মূলত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়ার উপর জোর দেয়। এদের ধরনগুলো হলো:

২. উদ্দেশ্য ভিত্তিক (Purpose-based Case Studies)
এই ধরনের কেস স্টাডিগুলোতে শিক্ষার উদ্দেশ্য, প্রশিক্ষণ লক্ষ্য কিংবা ব্যবস্থাপনাগত প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রকারভেদসমূহ হলো:

কেস স্টাডি একটি কার্যকর শিক্ষণ বিশ্লেষণমূলক কৌশল, যা শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তাদের বাস্তব জীবনের সমস্যার সঙ্গে পরিচিত করে এবং তাদের মধ্যে সিদ্ধান্তগ্রহণ, সমস্যা সমাধান ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা গড়ে তোলে। প্রয়োজন অনুযায়ী কেস স্টাডির বিভিন্ন প্রকারভেদ প্রয়োগ করে সৃজনশীল, যুক্তিনিষ্ঠ বাস্তবসম্মত নেতৃত্ব গড়ে তোলা সম্ভব।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

প্রধান কেস স্টাডির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি (Brief Overview of Major Types of Case Studies):

কেস স্টাডি পদ্ধতি মূলত বাস্তবধর্মী পরিস্থিতির বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা গঠনে সহায়ক। ব্যবহার, প্রয়োগ ও প্রস্তুতির ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে কেস স্টাডির বিভিন্ন ধরন রয়েছে। নিচে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণির সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করা হলো:

 

১. প্রস্তুতকরণ ভিত্তিক কেস স্টাডি (Preparation-based Case Study)

প্রস্তুতকরণ ভিত্তিক কেস স্টাডি বলতে বোঝায়—এমন কেস স্টাডি, যা সরাসরি মাঠ পর্যায়ে জরিপ, পর্যবেক্ষণ তথ্যসংগ্রহ করে প্রস্তুত করা হয়। লেখক বা গবেষক নিজেই প্রতিষ্ঠান বা ঘটনার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার গ্রহণ, কার্যপরিচালনা পর্যবেক্ষণ, কিংবা ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করেন। এই পদ্ধতিতে তৈরি কেস স্টাডির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো:

এই ধরনের কেস স্টাডি মূলত গবেষণাভিত্তিক ও প্রমাণনির্ভর হয়, যা শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য বাস্তব অনুশীলনের সুযোগ করে দেয়।

 

২. উদ্দেশ্যভিত্তিক কেস স্টাডি (Purpose-based Case Study)

উদ্দেশ্যভিত্তিক কেস স্টাডি তৈরি হয় নির্দিষ্ট কোন শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বা বিশ্লেষণমূলক প্রয়োগের উদ্দেশ্যে। এটি সাধারণত ব্যবহার করা হয়:

উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও ব্যাংক তার ঋণনীতি সংস্কার করতে চায়, তবে পূর্ববর্তী ঋণনীতির প্রেক্ষাপট এবং ফলাফল বিশ্লেষণ করে তৈরি করা একটি কেস স্টাডি হতে পারে উদ্দেশ্যভিত্তিক কেস। এর মাধ্যমে সিদ্ধান্তদাতারা পূর্বতন ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত দিকনির্দেশনা তৈরি করতে পারেন।

এছাড়াও, ঐতিহাসিক ঘটনাবলির ধারাবাহিকতা অনুসারে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি অনুমান করতে ঐতিহাসিক ধারাবাহিক কেস স্টাডি ব্যবহৃত হয়।
এ ধরনের কেস স্টাডি কখনো কখনো অনুসাঙ্গিক সমস্যা প্রাসঙ্গিক উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বৃহৎ সমস্যার সমাধানের পথ নির্দেশ করে

এই কেস স্টাডিগুলো মূলত শিক্ষণ অনুশীলনের মাধ্যমে বিশ্লেষণধর্মী দক্ষতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে, বিশেষ করে যারা সিদ্ধান্তপ্রহণকারী ভূমিকায় থাকবে বা ইতিমধ্যে আছেন।

প্রস্তুতকরণ ভিত্তিক উদ্দেশ্যভিত্তিক কেস স্টাডি—উভয়ই বাস্তব জগতের জটিলতা অনুধাবন বিশ্লেষণে সহায়ক। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং ব্যবস্থাপকদের মধ্যে বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণ ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা গড়ে ওঠে।

এই পদ্ধতি শুধু তাত্ত্বিক শিক্ষা নয়, বরং সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ সচেতন নেতৃত্ব গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

Exit mobile version