ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসি (DBBL) বাংলাদেশের অন্যতম প্রথম বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ড যৌথ উদ্যোগে গঠিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, যা প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ অনুযায়ী এবং কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর অধীনে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। ব্যাংকটি ১৯৯৬ সালের ৩ জুন আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে।
ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তা এম. সাহাবুদ্দিন আহমদ এবং নেদারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান Dutch Financing Company for Developing Countries (FMO)। ২০০৪ সালে ব্যাংকটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়।
Table of Contents
ডাচ বাংলা ব্যাংক
সাইবার অপরাধ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘটনা
বিভিন্ন সময় ডাচ-বাংলা ব্যাংক সাইবার অপরাধ ও ডাকাতির ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
-
২০১৫ সালের এপ্রিল: কুষ্টিয়ায় এটিএম বুথ থেকে ৩.১৮ লক্ষ টাকা ডাকাতি
-
২০১৬ সালের নভেম্বর: আবুল কাশেম মোঃ শিরীন এমডি হিসেবে নিয়োগ পান
-
২০১৯ সালের জুন: বিদেশি হ্যাকাররা ঢাকার এটিএম থেকে ১৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে
-
একই বছর ব্যাংকটি সাইবার হ্যাকিংয়ে প্রায় ৩০ লাখ ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়
-
২০২১ সালের জুন: ব্যাংকের ২.৫৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চারজন আটক
-
২০২৩ সালের মার্চ: উত্তরা মডেল টাউন থেকে ১১.২৫ কোটি টাকা ডাকাতি
-
২০২৩ সাল: কিশোরগঞ্জে এক এজেন্ট ব্যাংকার গ্রাহকের ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে
শাখা, এটিএম ও ডিজিটাল উপস্থিতি
ডাচ-বাংলা ব্যাংক দেশের বৃহত্তম এটিএম নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে:
ব্যাংকিং মাধ্যম | সংখ্যা (২০২৫ পর্যন্ত) |
এটিএম বুথ | ৪,৯০৭+ |
এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্ট | ৫,৯৫৪+ |
ফার্স্ট ট্র্যাক | ১,১০০+ |
শাখা | ২৩৯ |
ব্যাংকের ডিজিটাল অবকাঠামো সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় আধুনিক আর্থিক সেবা পৌঁছে দিয়েছে।
মোবাইল ব্যাংকিং : রকেট
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ, ‘ডাচ-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং’ নামে যাত্রা শুরু হয়, যা পরে “রকেট” নামে পরিচিত হয়। এটি ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ-এর পাশাপাশি দেশের অন্যতম বৃহৎ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা।
- রকেটের গ্রাহক সংখ্যা: প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ
রকেটের মাধ্যমে মোবাইল থেকে সহজেই টাকা লেনদেন, বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন ও ভাতা প্রদান, স্কুল ফি প্রদান ইত্যাদি করা যায়।
এজেন্ট ব্যাংকিং: গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যাংকিং
প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগণের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। এটি বর্তমানে:
- প্রচলিত শাখার বিকল্প হিসেবে গ্রামে কার্যকর
- সকল ধরনের আর্থিক সেবা প্রদান করছে (সঞ্চয়, ঋণ, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি)
- সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ও অনুদান বিতরণেও ব্যবহৃত হচ্ছে
আন্তর্জাতিক অংশীদার ও শেয়ার হস্তান্তর
- ২০১৯ সালের নভেম্বরে, Dutch Development Finance Company (FMO) ডাচ-বাংলা ব্যাংকে তাদের পূর্ণ শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে সরে দাঁড়ায়
- ২০২৩ সালে, ব্যাংকের পরিচালক আবেদুর রশিদ খান তার শেয়ার হস্তান্তর করেন হরাইজন অ্যাসোসিয়েটস-এর কাছে
আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বাজারে অবস্থান
- ২০২২ সালে, ডাচ-বাংলা ব্যাংক দেশের বাজারে ৯টি ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম, যারা দেশের ৬১% অতিরিক্ত তারল্য ধারণ করেছিল
- এটি ইঙ্গিত দেয় ব্যাংকটির তরল সম্পদ ও আর্থিক স্থিতি যথেষ্ট শক্তিশালী
ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসি কেবল একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক নয়—এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং আন্দোলনের পথিকৃৎ। এটিএম নেটওয়ার্ক, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিংসহ নানা উদ্যোগে দেশের প্রান্তিক জনগণের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করছে।
আরও পড়ুনঃ