Site icon Banking Gurukul [ ব্যাংকিং গুরুকুল ] GOLN

তারল্য বনাম লাভজনকতা

তারল্য বনাম লাভজনকতা

তারল্য বনাম লাভজনকতা [ Liquidity Vs Profitability ] নিয়ে আজকের আলোচনা। আমানতকারীদের অর্থই ব্যাংক ব্যবসায়ের মূল উপাদান। আমানতকারীগণ টাকা ঘরে না রেখে তাদের উদ্বৃত্ত টাকা ব্যাংকে যে যে উদ্দেশ্যে গচ্ছিত রাখে তার প্রধান একটি হল নিরাপত্তা বিধান। আমানতকারীগণ যখনই টাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে তখনই জের থাকা সাপেক্ষে ব্যাংক টাকা প্রদানে প্রস্তুত থাকে। এটি তাদের ন্যূনতম প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা পূরণে ব্যাংক বিলম্ব অথবা অক্ষম হলে আমানতকারীগণের হতাশ হওয়া স্বাভাবিক। এমতাবস্থায় এরূপ আমানতকারীগণ তাদের গচ্ছিত টাকা অন্যত্র স্থানান্তর করা বিচিত্র।

 

A man’s best friends are his ten fingers.

                                                                                    -Robert Collyer

অপরপক্ষে ব্যাংক কেবল টাকা আমানত নিতে আমানতকারীদেরকে তাদের চাহিদামত ফেরৎ দেয়। এটি ব্যাংকের মুনাফা অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মত প্রত্যাশিত হারে মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যাংক টাকা লগ্নি করে থাকে- অর্থাৎ যাদের প্রয়োজন মুনাফার অর্থাৎ সুদের বিনিময় তাদের ঋণ প্রদান করা হয়। সকল টাকা আমানত কারীদের জন্য ধরে রাখলে এরূপ ঋণ কার্যক্রম অকল্পনীয় হয়ে পড়বে।

ব্যাংকের একটি কৌশল হল ঋণ মঞ্জুর করে আলোচনা সাপেক্ষে স্থিরকৃত কিস্তিতে বিতরণ করা। এরপ প্রদেয় কিন্তুি যখন বিতরণ যোগ্য হবে ব্যাংক তখন কিস্তি প্রদান করতে পারলে ঋণ প্রাপক খুশী থাকেন। অন্যথায় টাকার অভাবে কিস্তির টাকা প্রদানে অসমর্থ হলে প্রতিশ্রুতি (Commitment) ভঙ্গের কারণে ঋণ গ্রহীতাগণ অন্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে গেলে ব্যাংকের সমূহ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং একদিকে আমানতকারীগণ অপরদিকে ঋণ গ্রহীতাগণ উভয়েরই প্রয়োজন অনুযায়ী নগদ অর্থ বিতরণের জন্য তৈরী না থাকলে অন্য সকল স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বর্গের চেয়ে ব্যাংকেরই অপেক্ষাকৃত বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক।

তারল্য বনাম লাভজনকতা [ Liquidity Vs Profitability ]

 

তারল্য ও লাভজনকতা পরস্পর দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক যুক্ত দুটি ধারণা বিশেষ। একটি ছাড়া অপরটি সচল থাকে না। কিন্তু একটির আধিক্য অপরটিকে মন্থর ও নিষ্প্রভ করে দেয়। একটির অতিরিক্ত সংকোচনও অপরটিকে সুষ্ঠু কার্যায়ণে প্রভুতভাবে ক্ষতি গ্রস্ত করে।

ব্যাংক অর্থের ব্যবসায়ী আমানতকারীগণ মূল তহবিলের সিংহভাগ সরবরাহকারী ও আমানত নিরাপদে ব্যাংক কোষাগারে গচ্ছিত রাখলে ব্যাংক কেবল সেবা বিক্রয় লব্ধ চার্জ বা আয় ছাড়া কোন মুনাফার উৎস পায় না। অথচ এ আমানত রক্ষণাবেক্ষণে ব্যাংক প্রচুর লেনদেন খরচ বহন করে থাকে। শুধমাত্র আমানত রক্ষণাবেক্ষণ করলে ব্যাংকের মুনাফা অর্জন লক্ষ্য সূদূর পরাহত থেকে যাবে। তজ্জন্য ব্যাংক তারল্য তাদের বিনিয়োগ যোগ্য তহবিল সুদে ঋণ প্রার্থীদের বিতরণ করে সুদ আদায়ের মাধ্যমে যথেষ্ট আয় করে থাকে।

ঋণ কার্যক্রম ছাড়াও ব্যাংক তারল্য অতিরিক্ত সম্পদের একটি অংশ মুদ্রা ও পুঁজি বাজারের উঁচু মাপের ঋনপত্র আয় করে লভ্যাংশ, সুদ, মূল্য বৃদ্ধিপত্র আয় ইত্যাদি আয় করে থাকে। যে ব্যাংক যতবেশি তহবিল প্রত্যক্ষ ঋণ প্রদান করে এবং মুদ্রা পূঁজি বাজার থেকে ঋণ পত্র কিনে বিনিয়োগ করবে, সে ব্যাংক ততবেশী মুনাফা অর্জনে সক্ষম বলে বিবেচিত হবে।

কিন্তু ব্যাংকের মোট তহবিলের একটি অংশ অবশ্যই তারল্য হিসেবে দৈনন্দিন তথা স্বল্পকালীন দায় পরিশোধে তৈরি রাখতে হয়।

অন্যথায় তহবিলের সংকট দেখা দিলে বা ন্যূনপক্ষে পরিশোধে বিলম্ব হলে আমানতকারীগণ বা ব্যাংকের অন্যান্য প্রাপকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। আর এরপ অসন্তোষ সৃষ্টি হলে গ্রাহকবৃন্দ ব্যাংকের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে আরম্ভ করে। এবং পরিশেষে বারবার এরূপ তারল্য সংকট দেখা দিলে আমানত স্থানান্তরিত হওয়ার আশংকা থাকে। এবং ব্যাংকের অন্যান্য গ্রাহকবৃন্দও নতুন ব্যাংকের সন্ধানে এ ব্যাংকের উপর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারে। আর এরূপ অবস্থা উপনীত হলে ব্যাংক সমস্যাগ্রস্থ বলে চিহ্নিত হতে বাধ্য।

অতএব, দেখা যাচ্ছে আমানত কেবল রক্ষা করে ধরে রাখলে চলবে- না যা তারল্যের জন্য খুবই উত্তম। এরূপ তারল্য তহবিল আটকিয়ে থাকলে ব্যাংকের লাভ অর্জন, ঋণ ও বিনিয়োগ কার্যক্রম মন্থর হতে বাধ্য। অপরপক্ষে তারল্য রক্ষার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ তহবিল নিশ্চিত না করে প্রায় সব তহবিল বিনিয়োগ করলেআমানতকারী সহ অন্যান্য স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।

এমন পরিস্থিতি ব্যাংকের জন্য কাম্য নয়। ব্যাংক যথেষ্ট পরিমাণ তারল্য রক্ষা করবে তারপরেই অবশিষ্ট মুনাফা অর্জনক্ষম খাতে বিনিয়োগ করবে। এদুটি ভাগে বিচার বিবেচনা প্রসূত অর্থ বরাদ্দ করতে ব্যর্থ হলে ব্যাংক তারল্য সংকট অথবা মুনাফা সংকটে পতিত হবে। প্রকৃতপক্ষে, তারল্য ও বিনিয়োগ ভারসাম্য পূর্ণ কার্যক্রম ব্যাংকের সাফল্যের চাবিকাঠি।

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

আরও পড়ুনঃ

Exit mobile version