ব্যাংক পুঁজির নিরাপত্তা বিধান

ব্যাংক পুঁজির নিরাপত্তা বিধান [ Arrangement of Safety of Bank Capital ] নিয়ে আজকের আলোচনা। ১৯৫০ সাল থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা সত্বেও পৃথিবীতে দেউলিয়াত্ব পরিগ্রহ করেছে এরাপ ব্যাংকের সংখ্যায় শত চেষ্টা করেও শুন্যের কোটায় আনা সম্ভব হয় নাই। যে যে কারণে ব্যাংক দেউলিয়া হয় এর বিভিন্নতা এবং কারণ সমূহের নিবিড়তা অনুমান করা কঠিন নয়। স্বল্প পুঁজি অযোগ্য ও অদক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তা ত্রুটি পূর্ণ ঋণ কার্যক্রম ইত্যাদির কারণে ব্যাংক সমূহ দেউলিয়াত্ব বরণ করে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে  ব্যবহৃত হচেছ।

ব্যাংক পুঁজির নিরাপত্তা বিধান [ Arrangement of Safety of Bank Capital ]

ব্যাংক পুঁজির নিরাপত্তা বিধান [ Arrangement of Safety of Bank Capital ]

পুঁজির নিরাপত্তা বিধান সাধারণত তিনভাবে হতে পারে। যেমন :

(ক) আভ্যন্তরীন পদক্ষেপ ।

(খ) ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ ।

(গ) সামাজিক সতর্কতা ।

(ক) আভ্যন্তরীন পদক্ষেপ ।

আভ্যন্তরীন পদক্ষেপ বলতে বুঝায় যে যে কারণে ব্যাংক পুঁজির উপর চাপ পড়ে সে বিষয়ের উপর সতর্ক থেকে ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এরূপ কয়েকটি পদক্ষেপ নিম্নে ইঙ্গিত করা গেল।

(১) দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুঁজির উপর অহেতুক চাপ পড়ে এরূপ লেনদেন পরিহার করা ন্যূনতম করার প্রয়াস চালান।

(২) বড় ধরণের যে কোন লেনদেন সংগঠিত হওয়ার পূর্বে বিধি বিধান লংঘিত হচ্ছে কি না তা দেখে এরুপ
লেনদেন সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন।

(৩) সৎ চরিত্র সম্পন্ন সুর ব্যক্তিত্বের অধিকারী ব্যাংক কর্মকর্তাদিগকে বড় বড় রূপ ও বিনিয়ে সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিশ্লেষনের দায়িত্ব প্রদান করা উচিত।

(.৪) অনুকূল ঝুঁকিযুক্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনার নিরিখে ঝুঁকি এখন বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজ পরিবেশ সৃষ্টি করে বাস্তবায়ন করা।

(৫) আমানত মিশ্রন ব্যবস্থাপনা অবশ্যই স্পর্শকাতর আমানতের পরিমাণ নির্দিষ্ট সীমার উর্ধ্বে যাতে না তার জন্য পদক্ষেপ রাখা।

(৬) ঝুঁকি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা বহুধাবিস্তৃত করে প্রদ রাখার ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকা।

ব্যাংক পুঁজির নিরাপত্তা বিধান [ Arrangement of Safety of Bank Capital ]

খ) ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ

(১) আমানত ঋণ সংক্রান্ত বিবাদী যথা সময়ে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যথাঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতবীমা কোম্পানী ও অন্যান্য সংস্থার কাছে যথা সময়ে বিবরনারী দাখিল করা আবশ্যক। নাি বিবরনার্থী বিশ্লেষণ করে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যে সমস্ত পরামর্শ প্রদান করে বিনা দ্বিধায় কাল বিলম্ব না করে বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।

(২) আমানত বীমার সুবিধা পরিহার না করায় অনেক ব্যাংক সচরাচর দেউলিয়াত্ব পরিগ্রহ করে না বসে।প্রিমিয়াম খরচ বাঁচাবার জন্য আমানত বীমা গ্রহণ করে না। এরূপ ভুল সিদ্ধান্ত পরিহার করে বীমাযোগ্য আমানত অতি তাড়াতাড়ি অবশ্যই বীমা করে ঝুঁকি স্থানান্তরে উদ্যোগী হওয়া উচিৎ।

(৩) নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বা বীমা কোম্পানী স্বতস্ফূর্ত প্রদত্ত নির্দেশিকা বা পরামর্শ অবশ্যই পালনীয়। এতভিন্ন সময় সময় ব্যাংক স্ব-উদ্যোগে এ সকল কর্তৃপক্ষের কাছে উদ্ভুত সমস্যাদির সমাধানকল্পে পরামর্শ উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।

গ. সামাজিক সতর্কতা :

ব্যাংকের আভ্যন্তরীন ও ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ছাড়াও ব্যাংকের সাফল্যে স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আর্থিক বিবরণী ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। এরাপ স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামাজিক সতর্কতা মেনে চললে ব্যাংক জটিল অবস্থা পরিগ্রহ করার পূর্বেই পুঁজি নিরাপদ রাখতে সক্ষম হতে পারে।যেমন :

(১) অন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মত ব্যাংক ও বাধ্যতামূলক নিরীক্ষাধীন একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান মেয়াদান্তে নিরীক্ষিত ব্যাংক হিসাবের অনিয়মিত ত্রুটিপূর্ণ, প্রতারণামূলক, জালিয়াতিমূলক ম প্রদত্ত পরামর্শের নিরিখে শোধরানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ।

(২) পেয়ার হোল্ডারদের বার্ষিক সাধারণ সভার পুঁজি, ঋণ ও আমানত ঝুঁকি সম্বন্ধে প্রদত্ত পরামর্শ সমূহে নিরিখে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(৩) গবেষকবৃন্দ ব্যাংকের উপাত্ত বিশ্লেষনের মাধ্যমে ত্রুটি বিচ্যুতি চিহ্নিত করে পুঁজি ঋণ আমানত সম্বন্ধে প্রদত্ত পরামর্শর নিরিখে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এবং

(৪) খবরের কাগজ, জার্নাল প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিবেদক কর্তৃক চিহ্নিত ব্যাংকের পূর্বপ সমূহ বিশেষ করে পুঁজি, ঋণ আমানত ঝুঁকি সম্পর্কে ত্রুটি চিহ্নিত করে উক্ত ত্রুটি শোধরানোর উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহন করা।

ব্যাংক পুঁজির নিরাপত্তা বিধান [ Arrangement of Safety of Bank Capital ]

উপসংহার [ Conclusion ]

ব্যাংক তহবিলের সিংহভাগ আমানত থেকে সংগৃহীত হলেও ব্যাংকের মালিকী পুঁজির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা অসম্ভব। প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ ব্যাংক নিবন্ধনের জন্য বাধ্যতামূলক। অপরপক্ষে পুঁজির পর্যাপ্ততা রক্ষা করাও ব্যাংকের জন্য আবশ্যক। পুঁজি সাধারনত দু’রকমের হতে পারে। যথা-মালিক পুঁজি যারলক পুঁজি। পরিশোধকৃত শেয়ার থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে মালিকী পুঁজি সংগৃহীত হয়। পরবর্তীকালে সাধারণ সঞ্চিতি, অবণ্টিত মুনাফা (Surplus of Specific reserve), অ-দাবীকৃত লভ্যাংশ ইত্যদিও মালিকী পুঁজির অন্তর্গত। অপরপক্ষে, খোলাবাজার থেকে ঋণের দলিলের মাধ্যমে সংগৃহীত ধার করা তহবিল ব্যাংকের ধারলব্ধ পুঁজি হিসাবে পরিগণিত হয়ে আসছে।

পুঁজি পর্যাপ্ততা রক্ষা করা বিদ্যমান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দক্ষতার পরিচায়ক। এটি একটি দক্ষ কার্যক্রমের পরীক্ষাও বটে। পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে আভ্যন্তরীণ ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়লে ব্যাংক ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হয়। সে কারণেই ব্যাংক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষসমূহ পুঁজি পর্যাপ্ততা পরিমাপক অনুপাত বা হাতিয়ার ব্যবহার করে সদস্য ব্যাংকগুলোকে সতর্কতা সংকেত পরিবেশন করে থাকে। এ সংকেত প্রাপ্তির পর নির্দিষ্ট ব্যাংক উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করে কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয় এবং এতে করে পুঁজির পর্যাপ্ততা নিরিখে সদস্য ব্যাংকসমূহ অতিরিক্ত ঋণ তথা স্পর্শকাতর আমানত নিয়ন্ত্রণ ও ঋণ আদায় হার বাড়িয়ে পুঁজি পর্যাপ্ততা বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment