Site icon Banking Gurukul [ ব্যাংকিং গুরুকুল ] GOLN

বিক্রয় বিন্দু সেবা বা পয়েন্ট অফ সেল সার্ভিস [ Point-of-Sale Services ]

বিক্রয় বিন্দু সেবা বা পয়েন্ট অফ সেল সার্ভিস (POS) হলো একটি আধুনিক আর্থিক সেবা ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের সুবিধাজনক স্থানে দ্রুত ও নিরাপদভাবে সেবা প্রদান করে থাকে। এই পদ্ধতিতে পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধের সাথে সাথেই বিক্রেতার এবং গ্রাহকের হিসাব যথাক্রমে ক্রেডিট ও ডেবিট করা হয়, ফলে লেনদেনের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত হয়।

Table of Contents

বিক্রয় বিন্দু সেবা [ Point-of-Sale Services ]

POS সেবার মাধ্যমে সম্পাদিত লেনদেনের ধরণসমূহ

POS সিস্টেম বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করে, যার মধ্যে প্রধান কিছু হলো:

১) চেক যাচাই ও নিশ্চয়তা প্রদান (Check Verification Guarantee)

যখন কোনো গ্রাহক পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধের জন্য বিক্রেতার কাছে চেক উপস্থাপন করেন, তখন বিক্রেতার পক্ষে সেই চেক গ্রহণের আগে বিভিন্ন ঝুঁকি বিবেচনা করা প্রয়োজন। যেমন, চেকটি নিষ্ক্রিয় হিসাব থেকে জারি করা হয়নি কি না, যথেষ্ট ব্যালেন্স আছে কি না ইত্যাদি।

যে কোনো ব্যবসায়ীর জন্য চেক ফেরত আসার ঝুঁকি এবং ক্যাশিংয়ের অতিরিক্ত খরচ একটি বড় সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যদি চেকগুলো কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে যাচাই করা হয়, তাহলে চেক অমর্যাদা হওয়ার হার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে যায়। তাই POS সিস্টেম ব্যবসায়ীদের জন্য চেক যাচাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২) ক্রেডিট কার্ড অনুমোদন (Credit Card Authorization)

গ্রাহকের উপস্থাপিত ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের পূর্বে বিক্রেতাকে নিশ্চিত হতে হয় যে কার্ডটি হারানো, চুরি হওয়া বা অবৈধভাবে ব্যবহৃত হয়নি। এছাড়াও, নির্দিষ্ট পরিমাণের (Floor limit) উপরে লেনদেনের ক্ষেত্রে বিক্রেতাকে কার্ড ইস্যুকারী ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়।

অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়ীদের একটি লাইসেন্স প্রদান করে, যার সাথে লেনদেনের অনুমোদন প্রক্রিয়া যুক্ত থাকে। ব্যবসায়ীরা সরাসরি কার্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে লেনদেন অনুমোদন নিতে পারে অথবা Service Bureau ও ক্রেডিট কার্ড অ্যাসোসিয়েশনগুলোর মাধ্যমে অনলাইন প্রক্রিয়ায় দ্রুত অনুমোদন লাভ করতে পারে।

সর্বাধুনিক POS সিস্টেমে কার্ড-চালিত টার্মিনাল ব্যবহার করে অনলাইন কম্পিউটারের মাধ্যমে লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদিত হয়, যা নিরাপদ ও দ্রুত লেনদেন নিশ্চিত করে।

৩) ডেবিট কার্ড সেবা (Debit Card Service under POS)

ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহক সরাসরি নিজের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা কেটে পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ করতে পারেন। একই সময়ে বিক্রেতার হিসাব ক্রেডিট হয়।

টাকা স্থানান্তরের দুটি পদ্ধতি রয়েছে:

 

বিক্রয় বিন্দু সেবা পরিচালনায় ব্যবহৃত প্রধান উপাদানসমূহ

 

 

চেক স্তপ পরিষ্কার করণ [ Cheque Truncation ]

চেক স্তপ পরিষ্কারকরণ হলো এমন একটি আধুনিক সেবা প্রক্রিয়া, যেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহককে বাতিলকৃত চেকগুলো সরাসরি ফেরত না দিয়ে, সেগুলো সংরক্ষণ করে এবং গ্রাহককে মাসিক বিবরণীর মাধ্যমে বাতিলকৃত চেকের বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে।

এই প্রক্রিয়ায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের বাতিলকৃত চেকগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট সময়কাল (সাধারণত ৯০ দিন) পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখে। গ্রাহক এই সময়ের মধ্যে তার নিজস্ব রেকর্ড ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত মাসিক বিবরণীর মধ্যে যদি কোনো অসংগতি বা পার্থক্য দেখতে পান, তাহলে তিনি সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার হিসাব সমন্বয় বা সংশোধন করতে পারেন।

নির্দিষ্ট সংরক্ষণ সময় শেষ হওয়ার পর, বাতিলকৃত চেকগুলোর আসল কাগজপত্র নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয় এবং এর পরিবর্তে সেগুলোর মাইক্রোফিল্ম (Microfilm) কপি সংরক্ষণ করা হয়। এই মাইক্রোফিল্ম কপি সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্য হলো, ভবিষ্যতে যদি গ্রাহক কোনো অনুসন্ধান বা জিজ্ঞাসা করেন, তবে তাকে তার চেকের সঠিক ছবি বা তথ্য সরবরাহ করা যায়।

মাইক্রোফিল্ম কপিগুলো দেশের প্রযোজ্য আইন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময় (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত সাত বছর) পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়।

 

 

একটি পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থার প্রধান উপাদানসমূহ:

একটি পয়েন্ট অফ সেল (POS) ব্যবস্থা মূলত একটি কম্পিউটারভিত্তিক সিস্টেম, যেখানে POS সফটওয়্যার ইন্সটল করা হয়, একটি নির্দিষ্ট টার্মিনাল থাকে এবং তার সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন যন্ত্রাংশ অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে, এই উপাদানগুলো আপনার ব্যবসার ধরণ ও প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। চলুন, POS ব্যবস্থার প্রধান উপাদানগুলো বিস্তারিতভাবে দেখে নিই:

১. পিওএস মনিটর

POS মনিটরটি সেই পর্দা, যেখানে নিয়ন্ত্রণকারী (যেমন—বিপণী কেন্দ্রের ক্যাশিয়ার, বিউটি পার্লারের রক্ষণাবেক্ষণকারী বা রেস্টুরেন্টের ওয়েটার) গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেখতে পান এবং লেনদেন পরিচালনা করেন।

২. ফিসকাল রেজিস্ট্রার

এটি একটি প্রিন্টার ও আর্থিক মেমোরির কাজ করে। ফিসকাল রেজিস্ট্রারটি চেক, বিভিন্ন রিপোর্ট, দোকানের বিক্রয় তথ্য এবং অন্যান্য আর্থিক নথি প্রিন্ট করে।

৩. পিওএস কীবোর্ড

POS কীবোর্ডের মাধ্যমে তথ্য প্রবেশ করানো হয় এবং প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ নির্দেশ দেওয়া হয়। অধিকাংশ POS কীবোর্ডেই অন্তর্নির্মিত কার্ড রিডার থাকে, যা পেমেন্ট গ্রহণে সহায়তা করে।

৪. গ্রাহক স্ক্রীন

এটি ক্রেতাদের জন্য বিশেষ একটি পর্দা, যেখানে তাদের প্রদেয় টাকার পরিমাণ বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদর্শিত হয়।

৫. বারকোড স্ক্যানার

বারকোড স্ক্যানার দ্রুত পণ্যের কোড পড়ে এবং তা থেকে মৌলিক তথ্য সংগ্রহ করে, ফলে লেনদেন দ্রুত ও সঠিক হয়।

৬. ক্যাশ বক্স বা নগদ বাক্স

নগদ বাক্স নিরাপদে সকল নগদ অর্থ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়, যা ক্যাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৭. ব্যাংক কার্ড রিডার

ব্যাংক কার্ড রিডার POS ব্যবস্থায় ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি লেনদেনের প্রক্রিয়াকে সহজ, নিরাপদ এবং দ্রুত করে।

 

 

একটি পয়েন্ট অফ সেল (POS) ব্যবস্থার প্রধান কাজসমূহ

একটি পয়েন্ট অফ সেল (POS) ব্যবস্থার মূল কাজগুলো সাধারণত নিম্নরূপ:

১। বারকোডের মাধ্যমে পণ্য সনাক্তকরণ

ক্যাশিয়ার বা সেবাদানকারীর জন্য প্রতিটি পণ্য মাথায় রাখা প্রয়োজন হয় না। তারা কেবল পণ্যের বারকোড স্ক্যান করবেন, আর তাৎক্ষণিকভাবে পণ্যের সব প্রয়োজনীয় তথ্য সিস্টেমে প্রদর্শিত হবে। এর ফলে বিক্রয়ের কাজ দ্রুত ও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।

২। স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ ও পরিশোধ

একটি আধুনিক POS ব্যবস্থা পণ্যের মূল্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ করে এবং গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি সহজ ও ত্রুটিমুক্ত করে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, রেস্তোরাঁ, গ্যাস স্টেশন বা অন্যান্য ব্যবসায় এ কাজটি অপরিহার্য।

৩। ইনভেন্টরি ব্যালান্স নিয়ন্ত্রণ

POS সফটওয়্যার দোকান ও গুদামের পণ্যের স্টক স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব রাখে। এটি বিক্রেতাদের জানান দেয় কোন পণ্যের স্টক কমে এসেছে এবং নতুন অর্ডার দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কিনা।

৪। মূল্যহ্রাস, ছাড় এবং বিশ্বস্ততা প্রোগ্রাম ব্যবস্থাপনা

POS সিস্টেম মূল্যহ্রাস বা ছাড় এবং গ্রাহক বিশ্বস্ততা প্রোগ্রামগুলো সংক্রান্ত সকল তথ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে। ফলে ব্যবসায়ীরা সহজেই এসব প্রোগ্রাম চালানো ও পরিচালনা করতে পারেন।

৫। কর্মীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ

যে কর্মীরা POS ব্যবস্থায় কাজ করবেন, তাদের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।

৬। বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত

POS সিস্টেম থেকে সহজেই কোম্পানির বিক্রয়, স্টক, কর্মীদের কার্যক্রমসহ বিভিন্ন পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা যায়। এতে অন্তর্নির্মিত টেমপ্লেট থাকার পাশাপাশি প্রয়োজনমতো কাস্টমাইজেশনও সম্ভব।

৭। সরল তথ্য ব্যবস্থাপনা

POS ব্যবস্থার মাধ্যমে পণ্যের মূল্য, উপকরণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সহজেই পরিবর্তন ও হালনাগাদ করা যায়।

 

 

 

 

একটি পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থার কাজ করার প্রক্রিয়া:

সাধারণত, একটি সুপারমার্কেট বা খুচরা দোকানে পণ্য বিক্রির সময় ক্যাশিয়ার একটি নির্দিষ্ট স্ক্যানারের মাধ্যমে পণ্যের বারকোড স্ক্যান করেন। এরপর ক্রেতারা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড অথবা নগদ অর্থ দিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন। এভাবেই পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর বাকি কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু ক্লিকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। চলুন ধাপে ধাপে জানি এই প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে।

১. পণ্যের বারকোড স্ক্যান

স্ক্যানার পণ্যের বারকোড পড়া শুরু করে এবং সঙ্গে সঙ্গেই পণ্যের মূল্য, সম্ভাব্য ছাড়, মার্কডাউন ইত্যাদি তথ্য ক্যাশ রেজিস্টারের সফটওয়্যারে প্রবেশ করে। এরপর সফটওয়্যারটি সিদ্ধান্ত নেয় কোন পণ্যগুলো বিক্রয়ের জন্য ইস্যু করতে হবে এবং একটি বিক্রয় রশিদ তৈরি করে। এ পর্যায়ে ক্যাশিয়ার গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করে এবং পণ্য হস্তান্তর করেন।

২. মূল্য পরিশোধ প্রক্রিয়া

গ্রাহকের কার্ড নিতে ক্যাশিয়ার সেটিকে পয়েন্ট অফ সেল টার্মিনালে সোয়াইপ বা চিপ রিডারের মাধ্যমে পড়ান। এরপর পিওএস সিস্টেম কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে মূল্য পরিশোধ সেবা প্রদানকারীর সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এটি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে লেনদেন অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করে।

এই পর্যায়ে গ্রাহককে লেনদেন নিশ্চিত করতে পিন নম্বর প্রবেশ করানোর অনুরোধ জানানো হয়। পিন সঠিকভাবে প্রবেশ করালে, পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থা লেনদেন সম্পন্ন করে এবং গ্রাহককে ব্যাংক থেকে সফল লেনদেনের বার্তা পাঠানো হয়।

৩. তথ্যের স্বয়ংক্রিয় সংযোগ ও ব্যবস্থাপনা

পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থা সম্মুখ অফিসের—যেমন ওয়েটারের টার্মিনাল, বিক্রয় পয়েন্ট—এবং পশ্চাৎ অফিসের—যেমন হিসাবরক্ষণ, মানবসম্পদ, বিপণন বিভাগ, গুদাম ও প্রশাসন—সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত থাকে। সাধারণত, এই তথ্য বিনিময় একটি ক্লাউড সার্ভারের মাধ্যমে অনবরত পরিচালিত হয়, যা কার্যক্রমকে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য করে তোলে।

৪. ক্লাউড ভিত্তিক এবং অন-প্রেমিস পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থা

বর্তমানে পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থায় প্রধানত দুটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়—একটি হলো ক্লাউড ভিত্তিক পিওএস, যেখানে তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাউড সার্ভারে সংরক্ষিত হয় এবং পরিচালিত হয়; অন্যটি হলো অন-প্রেমিস পিওএস, যেখানে সব সফটওয়্যার এবং ডেটা সরাসরি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় সার্ভারে থাকে। প্রতিটি পদ্ধতির নিজস্ব সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

 

অন-প্রেমিস পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থা:

  • অন-প্রিমাইস পয়েন্ট অফ সেল বা POS ব্যবস্থা বলতে বোঝায় এমন একটি সিস্টেম যেখানে সফটওয়্যারটি হোস্টিং করার জন্য আপনি নিজের সম্পদ ব্যবহার করেন। অর্থাৎ, আপনি একটি সার্ভার কিনে তা আপনার অফিসের অভ্যন্তরে স্থাপন করতে পারেন অথবা কোনো তথ্য কেন্দ্র থেকে ডেডিকেটেড সার্ভার ভাড়া নিতে পারেন।

    ইতিবাচক দিকসমূহ:

    • উচ্চ মাত্রার নিরাপত্তা: আপনার ব্যবসার তথ্য সম্পূর্ণ আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কোনো তৃতীয় পক্ষ সহজেই তাতে প্রবেশ করতে পারে না, তাই এটি অনেক বেশি সুরক্ষিত।

    • স্বাধীনতা: আপনি সিস্টেম ব্যবস্থাপনায় বেশি স্বাধীনতা ও নিয়ন্ত্রণ পাবেন, যা প্রয়োজন অনুসারে কাস্টমাইজেশন বা আপগ্রেড সহজতর করে।

    নেতিবাচক দিকসমূহ:

    • উচ্চ খরচ: অন-প্রিমাইস ব্যবস্থা চালানো তুলনামূলক ব্যয়বহুল। সার্ভার কেনা, সেটআপ, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়মিত আপডেটের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ করতে হয়।

    • প্রযুক্তিগত জটিলতা: নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য সেবা নিশ্চিত করতে আপনাকে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দিতে হতে পারে, যা অতিরিক্ত দায়িত্ব এবং ব্যয় নিয়ে আসে।

    • ডেডিকেটেড সার্ভার ভাড়া নেয়ার সমস্যাসমূহ: যদি আপনি ডেডিকেটেড সার্ভার ভাড়া নেওয়ার কথা ভাবেন, তাহলে উচ্চ ভাড়া ছাড়াও অন্যান্য প্রযুক্তিগত জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন।

 

 

 

ক্লাউড-ভিত্তিক পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থা:

বর্তমান আধুনিক ব্যবসায়িক জগতে, অগ্রগামী ও চিন্তাশীল ব্যবসায়ীরা ক্রমশই ক্লাউড-ভিত্তিক পয়েন্ট অফ সেল (POS) সিস্টেম বেছে নিচ্ছেন। এই ব্যবস্থায় সমস্ত তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ হয় ক্লাউড বা ভার্চুয়াল সার্ভারে, যা একটি শেয়ার করা কম্পিউটিং পরিবেশে পরিচালিত হয় এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে।

ইতিবাচক দিকসমূহ

  • কাজের স্থিতিশীলতা: ক্লাউড সিস্টেম সার্ভার ডাউনটাইম কমিয়ে কাজের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে।

  • উন্নত পরিমাপযোগ্যতা: ব্যবসার চাহিদা অনুযায়ী সহজে সিস্টেম সম্প্রসারণ বা সংকোচন সম্ভব।

  • মসৃণ মূল্য পরিশোধ ব্যবস্থা: ব্যবহার অনুসারে খরচ নির্ধারণ হওয়ায় অর্থনৈতিক সুবিধা।

  • সার্বজনীন প্রবেশযোগ্যতা: যেকোনো ধরনের ডিভাইস থেকে বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে প্রবেশাধিকার (যদি অনুমতি থাকে)।

নেতিবাচক দিকসমূহ

অনেকেই মনে করেন, তথ্যের নিরাপত্তা ক্লাউড সার্ভারে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সঞ্চালিত হওয়ার কারণে ঝুঁকির মুখে পড়ে। গ্রাহকরা শুধুমাত্র ভার্চুয়াল পরিবেশ থেকে কাজ করায় এই উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। তবে সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও এনক্রিপশনের মাধ্যমে তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব এবং এই সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা যায়।

ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

গবেষণায় দেখা গেছে, ক্লাউড-ভিত্তিক পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থা আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী POS বাজারের নেতৃত্ব দখল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থার জন্য উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ:

আপনার ব্যবসার ধরন ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে সঠিক পয়েন্ট অফ সেল (POS) ব্যবস্থা বেছে নেওয়ার জন্য নিচের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করুন:

১. ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনা

আপনার পণ্য ও স্টকের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের জন্য নিম্নলিখিত ফিচারগুলো থাকা জরুরি:

২. মূল্য পরিশোধ বিকল্পসমূহ

বিভিন্ন ধরনের মূল্য পরিশোধের সুবিধা থাকা উচিত, যেমন:

৩. কর্মী ব্যবস্থাপনা

কর্মীদের কার্যক্রম ও অনুমতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ফিচারসমূহ:

৪. বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন

ব্যবসার অগ্রগতি ও ফলাফল পর্যবেক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত অপশনগুলো থাকা উচিত:

৫. বিশ্বস্ততা নীতি ও গ্রাহক ব্যবস্থাপনা

গ্রাহকদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ফিচার:

৬. রেস্তোরাঁর জন্য POS বৈশিষ্ট্য

যদি আপনি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করেন, তাহলে নিম্নলিখিত ফিচারগুলো জরুরি:

৭. অবস্থান ব্যবস্থাপনা

একাধিক শাখা বা অবস্থান থাকলে প্রয়োজনীয় ফিচার:

৮. চেকআউট প্রক্রিয়া

দ্রুত এবং সঠিক বিক্রয় সম্পাদনের জন্য:

৯. ইন্টারনেট ও হার্ডওয়্যার সামঞ্জস্যতা

পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থার প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য:

১০. ইনভয়েস ও বিলিং

ব্যবসার আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা ও সঠিকতার জন্য:

১১. কর্মচারী সময়সূচী

কর্মীদের শিফট এবং সময়সূচী ব্যবস্থাপনা যাতে কার্যক্রমে ত্রুটি না ঘটে।

 

 

 

একটি পিওএস ব্যবস্থা নির্বাচনের সময় বিবেচ্য বিষয়:

আপনি যখন আপনার ব্যবসার জন্য পয়েন্ট অফ সেল (পিওএস) ব্যবস্থা নির্বাচন করবেন, তখন নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করুন যাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন:

১. ব্যবহারকারী-বান্ধবতা

আপনি এমন একটি পিওএস ব্যবস্থা পছন্দ করবেন না যা চালাতে বারবার ম্যানুয়াল দেখতে হয় বা কোনো প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হয়। তাই, এমন একটি সহজ ও ব্যবহারকারী-বান্ধব ব্যবস্থা বেছে নিন যা আপনি এবং আপনার কর্মীবৃন্দ সহজেই পরিচালনা করতে পারেন।

২. সফটওয়্যার কর্মদক্ষতা

পিওএস ব্যবস্থার মূল শক্তি তার সফটওয়্যারে নিহিত। তাই, প্রতিটি বিকল্প সফটওয়্যারের কার্যকারিতা, সুবিধাসমূহ ও খরচ ভালো করে যাচাই করুন যেন তা আপনার ব্যবসার চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়।

৩. হার্ডওয়্যার উপযোগিতা

আপনার ব্যবসার আকার ও ধরন অনুযায়ী পিওএসের হার্ডওয়্যার নির্বাচন করুন। ছোট ব্যবসার জন্য সাধারণত একটি ট্যাবলেট, কার্ড স্ক্যানার, ও ক্যাশ ড্রয়ার যথেষ্ট, কিন্তু বড় ব্যবসার জন্য প্রয়োজন হতে পারে রশিদ প্রিন্টার, বারকোড রিডার, পয়েন্ট অফ সেল টার্মিনাল ইত্যাদি।

৪. স্বয়ংক্রিয়তা ও ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট

একটি আধুনিক পিওএস ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্ডার তথ্য ও ইনভেন্টরি আপডেট রাখতে সক্ষম হওয়া জরুরি। এটি সরবরাহ শৃঙ্খল এবং লজিস্টিক ব্যবস্থার সঙ্গে সুষ্ঠু সমন্বয় নিশ্চিত করবে।

৫. সমন্বয় ও ইন্টিগ্রেশন

আপনার বিদ্যমান অ্যাপ্লিকেশন, সফটওয়্যার ও যন্ত্রপাতির সঙ্গে পিওএস ব্যবস্থার সহজ সমন্বয় জরুরি। এমন একটি পিওএস সিস্টেম বেছে নিন যা তৃতীয় পক্ষের সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে সহজেই ইন্টিগ্রেট হতে পারে।

৬. ২৪/৭ সহযোগিতা ও সাপোর্ট

সবসময় এমন সেবা প্রদানকারী বেছে নিন যারা ফোন, ইমেইল, এবং লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা, সপ্তাহের ৭ দিন সেবা ও সহযোগিতা দিতে সক্ষম।

৭. তথ্য সুরক্ষা ও পিসিআই সম্মতি

গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট ব্যবসাগুলোর প্রায় ৪৩% সাইবার আক্রমণের শিকার হয়। তাই, এমন একটি পিওএস ব্যবস্থা নির্বাচন করুন যা পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রির (PCI) নিরাপত্তা মান পূরণ করে এবং এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ও ডেটা টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনার গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষিত রাখে।

৮. বৈশিষ্ট্যসমূহ (Features)

আপনার ব্যবসার প্রয়োজন অনুযায়ী পিওএস ব্যবস্থার বিভিন্ন ফিচার যেমন বিক্রয় রিপোর্ট, ইনভেন্টরি ট্র্যাকিং, মাল্টি-স্টোর ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি থাকা উচিত।

৯. সেবা প্রদানকারী বা কোম্পানি সম্পর্কিত প্রশ্ন

পিওএস ব্যবস্থা কেনার আগে সেবা প্রদানকারী কোম্পানির ব্যাপারে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো যাচাই করুন:

  • কোম্পানির আর্থিক স্থিতি কেমন? (দীর্ঘমেয়াদে তারা ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে কি না)

  • পিওএস কি কোম্পানির মূল ব্যবসা? (তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নির্ণয় করতে)

  • কোম্পানির পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা কেমন? (আপনার ব্যবসার মতো ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা আছে কিনা)

  • কোম্পানি সরাসরি পণ্য প্রদান করে না কি রিসেলার? (সরাসরি প্রদানকারীর সঙ্গে কাজ করা সাধারণত বেশি সুবিধাজনক)

  • কোম্পানির রিভিউ ও গ্রাহক প্রতিক্রিয়া কেমন? (অনলাইন রিভিউ ও ফিডব্যাক যাচাই করুন)

১০. খরচ ও বাজেট

আপনার বাজেটের মধ্যে এমন একটি পিওএস ব্যবস্থা বেছে নিন যা আপনার ব্যবসার প্রয়োজনগুলো সর্বোত্তমভাবে পূরণ করতে পারে এবং অতিরিক্ত খরচ এড়াতে সহায়তা করবে।

 

আমাদের এই পয়েন্ট অফ সেল ব্যবস্থার বিস্তারিত গাইডটি পড়ে আপনি নিশ্চয়ই পিওএস সিস্টেমের মূল দিকগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ও গভীর ধারণা লাভ করেছেন। পিওএস শুধু বিক্রয় প্রক্রিয়া সহজতর করে না, বরং ব্যবসার ইনভেন্টরি, লেনদেন, গ্রাহক ব্যবস্থাপনা ও রিপোর্টিং এর কার্যকারিতাও উন্নত করে। তাই, আপনার ব্যবসার ধরন, আকার ও প্রয়োজন অনুসারে সর্বোত্তম পিওএস ব্যবস্থা বেছে নিন এবং এর বিভিন্ন সুবিধাকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগান। সঠিক পিওএস সিস্টেমের ব্যবহার আপনার ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং আপনাকে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

আপনার ব্যবসার সাফল্যের জন্য পয়েন্ট অফ সেল সার্ভিস একটি অপরিহার্য হাতিয়ার—সুতরাং বিবেচনা করুন, নির্বাচন করুন এবং আপনার ব্যবসাকে আরও শক্তিশালী ও আধুনিক করুন।

Exit mobile version