বিশ্বে প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থা

বিশ্বে প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থা [ Bank System Around the World] : পৃথিবীব্যাপী প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার পদ্ধতির মধ্যে নীতিগত মিল রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের কার্যাবলীর পরিধি নির্ধারণে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে অমিল পরিলক্ষিত হয়। সমাজতান্ত্রিক দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পূর্ণই ভিন্নতর। মুক্ত বাজার অর্থনীতির ধনতান্ত্রিক দেশসমূহের ব্যাংকসমূহের মধ্যেও কিছু মৌলিক ভিন্নতা বিবেচনার দাবী রাখে। সে নিরিখে পৃথিবীর দেশে দেশে প্রচলিত প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থাকে নিম্নের কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়

উপরোক্ত ৪ ধরণের বাণিজ্যিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যে নীতিগত বিরোধ নেই, তবে কোনটি অন্যটির তুলনায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে থাকে।

 

 

এ্যাংলো আমেরিকান ব্যাংকিং ব্যবস্থা (Anglo-American Banking System):

এই ব্যবস্থা বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে প্রচলিত আছে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকিং এর সাথে “বিনিয়োগ ব্যাংকিং এর পার্থক্য নিরূপন করা হয়। অর্থাৎ কোন বাণিজ্যিক ব্যাংক বিনিয়োগ ব্যাংকিং কার্যাবলী পরিচালনা করতে পারে না। বিনিয়োগ ব্যাংকিং কার্যাবলী পরিচালনার জন্য এ সমস্ত দেশে পৃথক বিনিয়োগ ব্যাংক বা মার্চেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া, মক্কেলের ভিন্ন ভিন্ন একাউন্টের জন্য কোন শেয়ার বা সিকিউরিটিজ এর লেনদেন না করার বিধান ও এ ব্যবস্থায় বিদ্যমান।

বিশ্বে প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থা [ Bank System Around the World] ব্যাংক - Banking, Money [ Free Image from https://pixabay.com ]

অবশ্য বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়। বাণিজ্যিক ব্যাংক অন্য কোন বাণিজ্যিক কর্পোরেট কোম্পানীর পর্যাপ্ত শেয়ার ক্রয় করে উক্ত কোম্পানীর মালিক বা পরিচালক হতে পারে না। অর্থাৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সম্পর্ক শুধুমাত্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে (Creditor relationship), আমানত গ্রহণের মাধ্যমে (Client relationship) : মালিকানার ভিত্তিতে নয় (Owner relationship)।

 

জার্মান সার্বজনীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা (Garman Universal Banking System):

এ ব্যবস্থা জার্মানীতে প্রচলিত আছে। এক্ষেত্রে ‘বাণিজ্যিক ব্যাংকিং এর সাথে বিনিয়োগ ব্যাংকিং এর কোন পার্থক্য করা হয় না। অর্থাৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক যে কোন ধরণের ব্যবসায়িক কার্যাবলীতে নিয়োজিত হতে পারে। মূলতঃ এ ব্যবস্থায় সিকিউরিটিজ কোম্পানী ও বিনিয়োগ বা মার্চেন্ট ব্যাংকের সাথে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। বাণিজ্যিক ব্যাংক কোন কর্পোরেট ফার্মের ৪০% পর্যন্ত শেয়ার কিনে উ ফার্মের মালিকানায় অংশ নিতে পারে।

বিশ্বে প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থা [ Bank System Around the World] ব্যাংক, Frankfurt, Germany, Free Photo from Pixabay

এ ব্যবস্থায় ব্যাংক দুই ভাবে কোন ফার্মকে মনিটর করতে পারে : প্রথমতঃ পাওনাদার হিসেবে (as creditor) এবং দ্বিতীয়তঃ মালিক/পরিচালক হিসেবে ( owner/Director)। ব্যাংক উক্ত ফার্মের বিনিয়োগসহ বিভিন্ন আর্থিক নীতি নির্ধারণে অংশ গ্রহণ করে। একারণে এ বাণিজ্যিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সার্বজনীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা বা সম্পর্কযুক্ত ব্যাংকিং (relationship banking) বলে আখ্যায়িত করা হয়।

 

জাপানীজ মেইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা (Japanese Main Banking System):

এ ব্যবস্থা সম্পর্কযুক্ত ব্যাংকিং (relationship banking) এর অনূরূপ না হলেও তার নিকটবর্তী ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে ‘বাণিজ্যিক ব্যাংকিং’ এবং ‘বিনিয়োগ ব্যাংকিং’ এর সাথে পার্থক্য নিরাপণ করা হয় সত্য কিন্তু কোন কর্পোরেট ফার্মের মালিকানায় অংশ নিতে ব্যাংকের কোন বাধা নেই। এটি উপরোক্ত দুটি ব্যবস্থার মাঝামাঝি ব্যবস্থা (Hybrid/ quasi)। অর্থাৎ সিকিউরিটিজ কোম্পানীর কার্যাবলী বাণিজ্যিক ব্যাংক সম্পাদন করতে পারে না। আবার ব্যাংক যে কোন কোম্পানীর শেয়ারের ৫% পর্যন্ত কিনে মালিকানায় অংশ নিতে পারে। একইভাবে কোন কোম্পানীকে ব্যাংক মালিক ও পাওনাদার হিসেবে মনিটর করতে পারে (Monitoring as owner & Creditor)।

বিশ্বে প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থা [ Bank System Around the World] ব্যাংক , Japanese-Yen-Bank-Money-Free-Image-From-Pixabay.com

ব্যাংক উক্ত কোম্পানীর আর্থিক ও বিনিয়োগ নীতি প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কোম্পানীর সংকটের সময় ব্যাংক সাময়িকভাবে উহার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও নিতে পারে। অর্থাৎ ব্যাংক তার মক্কেল ফার্মের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক বজায় রাখে। মেইন ব্যাংক ব্যবস্থায় একটি কোম্পানীর প্রধান নিয়ন্ত্রক ব্যাংক থাকবে ১টি। যদিও কোম্পানী অন্য মেইন ব্যাংকগুলো থেকে লোন নিতে পারে এবং তাদের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে পারে। ১টি কোম্পানীর মেইন ব্যাংক হল সে ব্যাংক যে উক্ত কোম্পানীকে সবচেয়ে বেশী ঋণ দেয় (১০-২০%) এবং যে উক্ত কোম্পানীর প্রধান শেয়ার হোল্ডার (৫%)। এছাড়াও কোম্পানীর সমস্ত ব্যাংকিং লেনদেন এই ব্যাংকের মাধ্যমেই সম্পাদিত হয়।

 

ইন্ডিয়ান লিড ব্যাংকিং ব্যবস্থা (Indian Lead Banking System) :

১৯৬০ এর শেষ দিকে ভারতে এ ব্যবস্থা প্রচলিত হয়েছে। প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থার সাথে প্রতিটি লিড ব্যাংক কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে। মূলতঃ সঞ্চয়ের হার বাড়ানো, আর্থিক সম্পদ সুষ্ঠুভাবে (equitable allocation of financial resources on the basis of some criteria to various sectors of the economy) বিতরণ, বিনিয়োগ ও উৎপাদন দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়।

বিশ্বে প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থা [ Bank System Around the World] ব্যাংক - India, Bank, Currency, Money, Free Photo from Pixabay.com

এই ব্যবস্থায় দেশের ভৌগলিক এলাকাকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে প্রতিটি ভাগের জন্য একটি লিডার ব্যাংক ঠিক করে দেয়া হয়। এবং ঐ এলাকায় কার্যরত প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের ঋণ কার্যক্রম। এ লিড ব্যাংকের সাথে পরামর্শক্রমে পরিচালনা করে থাকে।

আরও পড়ুন :

Leave a Comment