ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্য [ Objectives of Electronic Banking ]

ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্যঃ প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত সমাজকে পরিবর্তন করছে। আমাদের সমাজ ও জাতীয় জীবনের যোগাযোগ, ব্যবসায় বাণিজ্য, শিক্ষা, ইত্যাদি প্রতিটি পর্যায়ে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে যেহেতু ভোক্তার জীবনযাত্রার পরিবর্তিত হচ্ছে ফলে তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকিং কার্যক্রমও পরিবর্তিত হচেছ এবং বিশ্ব বাণিজ্য তথা বাি ফাইনান্স ক্রমশঃ বেড়ে চলেছে। ব্যাংকিং সিস্টেমে নতুন নতুন সেবা আবিষ্কারের ফলে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের সহজ থেকে সহজতর সেবা প্রদান করছে ফলে ব্যাংকার এবং গ্রাহকদের মধ্যে সম্পর্ক দিন দিন উন্নত হচেছ।

 

ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্য [ Objectives of Electronic Banking ]

 

ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্য [ Objectives of Electronic Banking ]

ব্যাংকিং ব্যবসায় গ্রাহকদের সহজতর এবং উন্নত সেবা প্রদানের জন্য উদ্ভাবিত প্রযুক্তি নির্ভর সেবাগুলোর মধ্যে ইলেকট্রনিক ব্যাংকি নবীনতম ও প্রধান। প্রশ্ন আসতে পারে কেন গবেষণার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর মত আধুনিক সেবা মাধ্যম সৃষ্টি করা হয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং গ্রাহকরা কেন এই ইলেকট্রনিক ব্যাংকিংকে সহজেই গ্রহণ করছে ও লুফে নিচেছ। তাই ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্য-কে ব্যাখ্যা করতে হলে বিষয়টিতে ব্যাংক বা আমানত গ্রহনকারী প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি ভঙ্গি এবং গ্রাহকদের দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে পৃথক পৃথকভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।

নিম্ন সারণীর মাধ্যমে মকেলের ও ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা করা হল :

 

ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর উদ্দেশ্য:

ব্যাংকের পক্ষ থেকে উদ্দেশ্যমক্কেলের পক্ষ থেকে উদ্দেশ্য
(১) ব্যাংক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে খুচরা সেবা প্রদান ও খরচ হ্রাস করা।(১) সময়মত ও তাৎতক্ষনি তথ্য প্রাপ্তি।

যেমনঃ (১) স্থিতি বিবরনী

(২) হিসাব বিবরনী

(৩) লেনদেন বিবরনী

(২) ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর সহায়তায় শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে প্রশাসন ব্যয় কমানো।(২) নির্ভুলভাবে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে ও খরচে টাকা জমা ও উত্তোলন।
(৩) ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে বহুবিধ কাগজী লেনদেন কমানো।(৩) অত্যন্ত সুবিধাজনক পন্থায় কম সময়ে ও কম খরচে পণ্য ও সেবার মূল্য পরিশোধ।
(৪) বিবিধ ফি ( ডেবিট কার্ড ফি, ক্রেডিট কার্ড ফি ইত্তাদি) এর মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি। (৪) ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে বিনিয়োগ সুবিধা, ঘরে বা অফিসে বসে লেটার অব ক্রেডিট খোলার সুবিধা, ঋণ সুবিধা ও সর্বোপরি তহবিল স্থানান্তর সুবিধা লাভ।
(৫) প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করা।(৫) মক্কেলের হিসাব সংক্রান্ বিষয়ে উচ্চ মাত্রার গোপনীয়তা রক্ষা ।
(৬) দুর-দুরান্তে সেবা বিস্তৃত করা। (৬) মঞ্চেলের হিসাবের নিরাপত্তা।

ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্য [ Objectives of Electronic Banking ]

 

ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ [ History and Development of Electronic Banking ] :

১৯৬১ সালের দিকে First National City Bank of Newyork সর্বপ্রথম ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ফলপ্রসু হস্তান্তরযোগ্য আমানতী সনদ চালু করে। এই প্রযুক্তিটির মাধ্যমে ব্যাংকগুলি ফান্ড ক্রয় করতে পারত এবং তাদের দায় ব্যবস্থা করত। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে যে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর সূচনা ঘটে তারই প্রাথমিক ধাপ হল Electronic fund transfer system (EFT)।

এই Electronic transfer system (EFT) এর মূল উপাদান স্বয়ংক্রিয় গণনাকারী যন্ত্র (Automated Teller Machine ATM), বিক্রয় সেবা বিশ্ব টার্মিনাল (Point of Sale POS Terminals) এবং স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘর (Automated Clearing House-ACH
যুক্তরাজ্যের Barclays বাংক ১৯৬৭ সালের জুন মাসে প্রথম Cash dispenser (CD) স্থাপন করে। এই মেশিনের কার্যপদ্ধতি বর্তমান মেশিনের কর্মপদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল।

তখন আজকের মত কোন চুমুকের কার্ড ব্যবহার করা হতনা। থাকে তার গ্রাহকদের। কাগজের ভাউচার প্রদান করত এবং ঐ মেশিনে ঢুকিয়ে দিলে ১০ পাউন্ড বের হয়ে আসত। তবে ভাউচারটি মেশিনে থেকে যেত। এর কিছু সময় পর বাকগুলো কাগজের ভাউচারের পরিবর্তে গ্রাহকদেরকে পাতলা plastic card সরবাহ করত। কাজী মেশিনে-এ ঢুকিয়ে লেনদেন করত। প্রত্যেক লেনদেনের পর কাজটি মেশিনে থেকে যেত।

পরবর্তীতে ব্যাংক তার গ্রাহককে কাজটি ডাকে পাঠিয়ে দিত যাতে গ্রাহক আবার কাজটি ব্যবহার করতে পারে। Barclays cash dispenser চালু করার বছর খানেক পরে France: Sweden Switzerland প্রথম National cash dispenser network চালু করে। ১৯৯৯ সালে জাপান এবং আমেরিকা নিজেদের উৎপাদিত এই মেশিন চালু করে। প্রথম দিক্কার এই মেশিনগুলি ছিল off-line। এই মেশিন গুলি ব্যাংক-এর কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত ছিল না।

ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্য [ Objectives of Electronic Banking ]

দ্বিতীয় যুগের মেশিন :

১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যের Lloyd’s Bank প্রথম অন লাইন (On Line) Cash Point” মেশিন স্থাপন করে। তারা তাদের গ্রাহকদের Plastic কার্ড সরবরাহ করত। সেই কার্ডের উপর magnetic stripe দেয়া থাকত। ফলে গ্রাহক-এর হিসাব বা গ্রাহককে সনাক্ত করা যেত। এই অন লাইন প্রযুক্তিতে প্রতিটি মেশিন ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকত। যদি মেশিন বাকের কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত না থাকত, তবে মেশিন কাজ করতে পারত না।

এই অন-লাইন মেশিনে Magnetic Stripe দেয়া Plastic কার্ড দিয়ে লেনদেন করার পর মেশিন কার্ডটি না রেখে দিয়ে লেনদেন এর অব্যবহিত পরেই কার্ডটি গ্রাহককে ফেরত দিত। বর্তমান মেশিন ঃ বর্তমান মেশিন গুলো হল গত ৩০ বছরের গবেষণা ও উন্নতির ফসল। বর্তমান মেশিনগুলোতে রঙিন কম্পিউটারের মত Full Graphics] Screen Monitor থাকে এবং একই মেশিন থেকে বিভিন্ন মুদ্রার লেনদেন করা যায়। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে মেশিনের দামও ক্রমে কমে আসছে। বর্তমানে ৫০-৬০ লক্ষ টাকায় একটি মেশিন স্থাপন করা যায়। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি উন্নত এবং স্বল্প উন্নত দেশে এই মেশিন দেখতে পাওয়া যায়। আজকাল এইরূপ মেশিনের সর্ববৃহৎ বাজার হল এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহে এবং সর্বনিম্ন বাজার হল আফ্রিকায়।

বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে বিশ্বে যখন ইলেকটনিক ব্যাংকিং কার্যকম চলছে, সেখানে বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সম্পর্কে প্রাথমিক চিন্তাভাবনা চলছে মাত্র। বাংলাদেশের কার্যকং সেক্টরের মূল্যায়ন করলে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সনাতন পদ্ধতি থেকে পরিবর্তিত হয়ে “আধুনিক ব্যাংক” এর দিকে অগ্রসর হচেছ। তবে কিছু কিছু বিদেশী ব্যাংক ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং পদ্ধতি স্বল্প পরিসরে চালু করেছে। অন্যদিকে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে “ভারচুয়াল” (Virtual) ব্যাকিং ব্যবস্থা চালুর চিন্তা-ভাবনা চলছে। “ভারচুয়াল’ ব্যাংকিং ব্যবস্থা বলতে আমরা উপলব্ধি করি যেখানে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হয় সম্পূর্ণ প্রযুক্তির উপর, যাকে বলা হয় “No mun Banks” নিচের চিত্র থেকে আমরা ব্যাকিং ব্যবস্থার সেবা প্রদানের পর্যায়গুলো দেখতে পাই।

  • মানববিহীন উচচ প্রযুক্তি চালিত ব্যাংকিং
  • ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং
  • আধুনিক ব্যাংকিং
  • প্রচলিত সনাতন ব্যাংকিং
  • ব্যাংক সেবা উন্নয়ন ধাপসমূহ

 

 

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment