বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রয়োগের সুপারিশমালাঃ বাংলাদেশে বর্তমানে অর্থনৈতিক আধুনিকায়ন এবং ইলেকট্রনিক ব্যাংক সেবা সমূহের ব্যবহার প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। অধিকাংশ দেশী ব্যাংকগুলোতে ম্যানুয়ালী হিসাব নিকাশ করা হয়। আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই পশ্চাতপদ অবস্থায় হঠাৎ করে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং প্রদানের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইলেকট্রনি ব্যাংকিং এর সাথে বাংলাদেশের মানুষদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রয়োগের সুপারিশমালা [ Suggestions for Introduing Elcectronic Banking in Bangladesh ]
এই লক্ষ্যে নিম্নে কতকগুলি সুপারিশ মালা প্রদান করা হল :
(১) দেশের সরকারকে এমন একটা পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে যেখানে সরকারী বেসরকারী খাতসমূহ সকলে নতুন প্রযুক্তির উপযোগিত পরীক্ষা করে দেখতে পারে।
(২) সরকারী ও বেসরকারী সমন্বিত ব্যবস্থার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ব্যাংক সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ব্যবস্থাপনা সহ সকলকে কম্পিউটার সহ উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান দান করতে হবে।
(৩) ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবা সহজে বিতরনের জন্য আভ্যন্তরীন ও বিদেশের সাথে উন্নত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে হবে।
(৪) স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় বাজার উন্নয়নের জন্য ব্যাংকগুলোতে Strategic Plan নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
(৫) অল্প সময়ের মধ্যে সমন্বিত ব্যাংকিং সফ্টওয়ার তৈরি করা উচিত।
(৬) বাংলাদেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং প্রয়োগে সহযোগিতা প্রদানের জন্য একটি বিশেষায়িত, স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে।
(৭) ঝাকে কম্পিউটার পেশাজীবীদের জন্য সঠিক Carrier Design করা উচিত। যাতে করে তারা অধিক আর্থিক সুযোগ সুবিধার জন্য বিদেশে পাড়ি না জমায়।
(৮) বাংলাদেশে ব্যাংকের ক্লিয়ারিং হাউস অপারেশন পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় হওয়া উচিত। যাতে করে এটা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্বয়ংক্রিয় সম্মুখ অফিসের দিকে এগিয়ে যাবার প্রয়োজনীয়তাকে উৎসাহিত করতে পারে এবং উপরোক্ত দুটি ক্ষেত্রে তাদের এগিয়ে যাবার চাহিদা পূরণ করতে পারে।
(৯) সরকারের আইনগত কাঠামো প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে। ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারনের লক্ষ্যে সঠিক আইন প্রণয়ন করা উচিত। যাতে করে সঠিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেশের স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ না করে দেশের আভ্যন্তরে এবং দেশের বাহিরে সহজে ফান্ড স্থানান্তর করা যায়।
(১০) বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সমন্বিত ব্যবস্থায় সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় আর্থিক সেক্টর বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর প্রাথমিক অবস্থায় বৃহৎ পরিসরে খুচরা ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর দিকে ধাবিত না হয়ে পাইকারী ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হল পরিপূর্ণ পশ্চাত অফিস ইলেকট্রনিক ব্যাকিং পদ্ধতির ব্যবস্থা করা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক আধুনিক স্বয়ংক্রিয় ক্লিয়ারিং হাউজের ব্যবস্থা করা। সাথে সাথে অল্প পরিসরে এটিএম, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি চালু করে আস্তে আস্তে গ্রাহকের সনাতন ব্যাংকিং স্বভাব পরিবর্তন করে অদূর ভবিষ্যতে পরিপূর্ণ ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবা আমাদের দেশে প্রচলন করা যেতে পারে।
উপসংহার [ Conclusion ]
পৃথিবী আজ আর অতি বিস্তৃত নয় বরং একটি ছোট গ্রামে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে বিশ্ব সভা জাতিসংঘ যতটুকু এর জন অবদান রেখেছে তার কয়েকগুণ বেশী গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ও অবদান রাখছে আন্তঃরাষ্ট্র বাণিজ্যের প্রসার ও আন্তঃনির্ভরশীলতা (Interdependence)। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্রমাগতশীল ঘনিষ্ট যোগাযোগের প্রয়োজনে আজকাল রাষ্ট্রীয় কাঠামোর জটিলতা হ্রাস করে মানসে দূরদূরান্তের ক্রেতা-বিক্রেতাগণই ইলেকট্রনিক বাণিজ্য এবং ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং নামক উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর শক্তিশালী বন্ধুর আশ্রয় গ্রহন করেছে। দেখা গেছে বর্তমান যুগে যে রাষ্ট্র বা যে জাতি যত বেশী উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর আন্তরাষ্ট্র বাণিজ্য এবং তার সুষ্ঠু ও দ্রুততার নিস্পেনের জন্য যতবেশী উন্নত প্রযুক্তির ফসল ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবহার করছে সে রাষ্ট্র বা ব্যাক্তি অন্য সকলের চেয়ে তত বেশী পরিমানগত ও গুণগত সাফল্য লাভে সক্ষম হচেছ।
বাংলাদেশে সচেতন মহল উচচ প্রযুক্তির ফসল প্রয়োগ করে লাভবান হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ বলেই মনে হয়। তবে এখন প্রয়োজন উপযুক্ত প্রযুক্তি আহরণের জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। ইলেকট্রনিক বাণিজ্য ও ব্যাকিং উভয়ই যে আপেক্ষিক ভাবে অধিক সাশ্রয়ী ও লাভজনক সে ব্যাপারে ব্যবসায়ীমহলসহ ব্যাকিং প্রতিষ্ঠান সমূহকে দ্বিধাদ্বন্ধের উপরে উঠে আন্তরিকতার সাথে ধাপে ধাপে এগোতে হবে। তবেই বাংলাদেশের বিশ্ব প্রযুত্তি সভায় নূন্যতম স্থান হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
পরিশিষ্ট
ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিংএ ব্যবহৃত নির্বাচিত ABBREVIATIONS
১) ATM = Automated Teller Machine.
২) ACHs = Automated Clearing House Services.
৩) CHIPS = Clearing House Interbank Payment Service
৪) CD = Cash Depenser
৫) DTC= Depository Transfer Check
৬) DVU = Digital Value Units
৭) EFTs = Electronic Fund Transfer System.
৮) IT = Information Technology
৯) L/C = Letter of Credit
১০) MIS = Management Information System
১১) NACHA = National Automated Clearing House Association
১২) NCB = National Commercial Bank
১৩) PC = Personal Computer
১৪) PIN= Personal Identification Number
১৫) POS = Point of Sale
১৬) SET = Secured Electronic Transaction
১৭) SSL=Secured Socket Layer
১৮) SWIFT = Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunication
১৯) VHB = Video Home Banking dal
২০) www = World Wide Web.
আরও পড়ুনঃ