ব্যাংকের হিসাব, তথ্য প্রকাশ ও নিরীক্ষা
Table of Contents
ব্যাংকের হিসাব, তথ্য প্রকাশ ও নিরীক্ষা
ক. ব্যাংক পরিদর্শন
নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যাংক পরিদর্শন কার্যক্রম দুইভাবে পরিচালিত ও সম্পদিত হয়ে থাকে
ক) সরেজমিন পরিদর্শন (On Site Inspection)
খ) বিবরনী ভিত্তিক তত্ত্বাবধান (Off Site Supervision)
সরেজমিন পরিদর্শন :
এ রূপ পরিদর্শনের বেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষন প্রাপ্ত পরিদর্শকগন প্রতিটি ব্যাংকে স্বশরীরে গমনপূর্বক নির্দিষ্ট ব্যাংকের নগদ স্থিতি ও স্থিতিপত্র ঋণ আগাম ও সংশ্লিষ্ট লেজার এবং অন্যান্য হিসাব বহি, ব্যাংকের লাভ ইত্যাদির বিবরনী ও ব্যালেন্সটি ব্যবস্থাপনার মান ইত্যাদি সরেজমিনে পরিদর্শন ও পরীক্ষা করতঃ উহার উপর প্রতিবেদন প্রস্তুত করে।
পরবর্তীতে উক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংশোধনী সময় সম্পাদন এবং প্রতিবেদনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতঃ ব্যাংকিং ব্যবসায় চালানের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে বা সংস্থাকে নির্দেশ প্রদান করে থাকে। উল্লেখিত প্রতিবেদনের পরিচালন প্রত্যয়ন মিশ্রিত করনের জন্য নির্দিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে উহা মনিটর করা হয়।
সরেজমিন পরিদর্শন আবার দু’প্রকার।
১। বিশদ পরিদর্শন,
২। বিশেষ পরিদর্শন।
বিশদ পরিদর্শনের ক্ষেত্রে কোন একটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সহ নির্দিষ্ট সংখ্যক ও মানের শাখায় একক তারিখ ভিত্তিক পরিদর্শন করা হয়। প্রধান কার্যালয় ও বৃহৎ শাখায় মোট বকেয়া ঋণের ৭৫% পরিদর্শনের আওতায় আনা হয়। এছাড়া ক্ষুদ্র শাখা সমূহ প্রতি তিন বৎসরে একবার পরিদর্শন করা হয়। বিশদ পদিরর্শনের সময় যে সকল বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় সে গুলো হচেছ :
১। ঋণ মঞ্জুরী বিতরণ ইত্যাদি বিদ্যমান আইনানুযায়ী করা হয়েছে কিনা
২। সম্পদের শ্রেণী বিনাস সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা
৩। সম্পদের খাত ভিত্তিক বিভাজন গ্লৌকিক কিনা
৪। সম্পদের বিপরীতে পর্যাপ্ত প্রভিশন রাখা হয়েছে কিনা
৫। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারীকৃত সার্কুলারের নির্দেশাবলী মেনে চলা হচেছ কিনা
৬। বৃহৎ ক্ষণ মঞ্জুরীর ক্ষেত্রে যথেষ্ট পর্যালোচনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা
৭। গ্রাহক সেবার মান কি রকম এবং
৮। সঠিকভাবে ব্যাংকটি দায় শুসম্পদের পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা হয় কিনা। বিশেষ পরিদর্শন ও সুনির্দিষ্ট কোন অনিয়ম বা অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় বা কোন শাখায় যখন জররী ভিত্তিতে আকস্মিক পরিদশন পরিচালিত হয় তাকে বলা হয়ে থাকে বিশেষ পরিদর্শন। বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে বিশেষ পরিদর্শণ দল বাংকে গমন করে এবং ঐ দায়িত্ব সম্পাদনই এর একমাত্র কাজ।
খ) অফ সাইট সুপারভিশণ বা বিবরণী ভিত্তিক তত্ত্বাবধান
অফ সাইট সুপারভিশনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন পরিচালক বা পরিচালক দল কোন ব্যাংকে স্বশরীরে গমন ও করেন না এবং খাতা পত্রাদিও সরেজমিনে পরীক্ষা করে না। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ও সুচিন্তিত ছকের মাধ্যমে কিছু নির্ধারিত বিবরণী ও তথ্য নির্দিষ্ট তারিখ ভিত্তিতে সাধারণতঃ যানমাসিক ভিত্তিক বিবরণী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন ইউনিটে প্রেরণ করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রাপ্ত বিবরণী ও তথ্যের ভিত্তিতে একটি ব্যাংকের মূলধন, দায়-সেনা ও লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ করা হয়। সম্পদ ও দায়ের আনুপাতিক অবস্থান নির্ণয় পূর্বক অপরাপর তথ্য সমূহের সহায়তায় ব্যাংকিং Net Worth নির্ণয় করা হয়। কাংকটির গৃহীত আমানত ও প্রদত্ত ক্ষণের আদায় প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা হয়। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও বিচার করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকটিকে “রেটিং” ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে উন্নত বিশ্বসহ বাংলাদেশেও এ রূপ রেটিংয়ের জন্য “CAMEL ব্যবস্থার করা হয়। CAMEL হচেছ একটি এক্রোনিম (acronym) যার ব্যাখ্যা দাঁড়ায়
C=Capital adequacy
A = Asset Quality
M = Management Efficiency
E Earnings
L= Liquidity
এ গুলোর ভিত্তিতে সংযুক্ত ভার অর্পনের মাধ্যমে ১ হতে ৫ পর্যন্ত ব্যাংক গুলোকে রেটিং করা হয়। CAMEL রেটিং এ কোন ব্যাংক এর সংযুত মান
১ হলে উহা সার্বিকভাবে শক্তিশালী (Storng)
২ হলে সন্তোষজনক (Satisfactory)
৩ হলে মোটামুটি ভাল (Fair)
৪ হলে প্রান্তিক (Marginal)
৫ হলে দুর্বল বা ভঙ্গুর (Weak)
এ পদ্ধতিতে ব্যাংকটির রেটিং করতঃ দুর্বল দিকগুলো পত্রযোতা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের গোচরে এনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও কার্যকর পদক্ষে গ্রহণের মাধ্যমে উহার অবস্থার উন্নয়ন সাধনের জন্য অফ সাইট সুপারভিশন ইউনিট পরামর্শ প্রদান করে থাকে।
উপরোক্ত বর্ণনা হতে বিভিন্ন প্রকার পরিদর্শনের ধরন এবং উহাদের মধ্যকার পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়েছে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
খ. হিসাবের তথ্য প্রকাশ ও নিরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনা
(ক) তথ্যাদি প্রকাশের ক্ষমতা
জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক কোম্পানীসমূহে ৩০ দিনের অধিক সময় অনাদায়ী ক্ষণ বা অগ্রিম সম্পর্কিত কোন তথা একীভূত অবস্থায় বা অন্য কোন অবস্থায় প্রকাশ করতে পারবে। ব্যাংক কোম্পানী আইন। সেকশন ৩৭।
(খ) হিসাব ও ব্যালান্স শীট
বাংলাদেশে বা বাংলাদেশের বাহিরে নিবন্ধনকৃত প্রত্যেক ব্যাংক কোম্পানী একটি নির্দিষ্ট সময় পরে লাভ-ক্ষতি ও ঝালেন্সশীটের বির প্রস্তুত করবে এবং এই প্রস্তুতকৃত বিবরণী কাকে কোম্পানীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বা ব্যবস্থপনা পরিচালনা বা অনুন তিনজন পরিচালকের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত হতে হবে।
ব্যাংক কোম্পানী আইন। সেকাল -৩৮)
(গ) নিরীক্ষা ঃ
ব্যাংক কোম্পানীর সৃষ্ট হিসাব নিরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কোন যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিরীক্ষক হিসেবেঅনুমোদন দেবেন। কোম্পানী আইনের অধীন প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী ছাড়াও কোন নিরীক্ষক তার প্রতিবেদন নিম্নলিখিত বিষয় উল্লেখ করতে পারেন।
১) কোম্পানীর আর্থিক আস্থা ও লাভ-ক্ষতি সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে কিনা ২) সাধারন হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে কিনা।
৩) বাংলাদেশ বাংক কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা মেনে চলা হয়েছে কিনা।
৪) হিসাব বিবরণী পেশাজীবী হিসাববিদদের নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে করা হয়েছে কিনা
৫) শাখা অফিস কর্তৃক প্রদত্ত রেকর্ড একত্রীভূত হয়েছে কিনা
৬) নিরীক্ষক কর্তৃক প্রার্থীর তথ্যাদি ও ব্যাংকিং সন্তোষজনক হয়েছে কিনা
৭) কোন বিষয়ের প্রকাশ, যা নিরীক্ষকগান শেয়ার হোল্ডারদের গোচরীভূত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে ব্যাংক কোম্পানীর জন্য অনুমোদিত নিরীক্ষা অবশ্যই নিম্নলিখিত ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবেন।
১) আইনের কোন গুরত্বপূর্ণ বিধান ব্যাংকে কর্তৃক গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।
২) প্রতারণা বা অসততার দরুন ফৌজদারী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ৩) লোকসানের দরুন মূলধন ৫০% এর নীচে নেমে এসেছে।
৪) পাওনাদারদের পাওনা প্রদানের নিশ্চয়তা বিঘ্নিত হওয়াসহ অন্য কোন গুরুতর অনিয়ম ঘটিয়েছে।
৫) পাওনা মিটাইবার জন্য কোম্পানীর সম্পদের পর্যাপ্ততা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ব্যাংক কোম্পানী আইন । সেকশন ৩.৪০]