ব্যাংকে সচরাচর প্রচলিত জামানত

ব্যাংকে সচরাচর প্রচলিত জামানত [ Frequently Used Security in Bank ] – বিষয়টি নিয়ে আজকের আলোচনা। জামানতযোগ্য সম্পত্তির মধ্যে সাধারণতঃ ব্যাংকের নিকট যে সকল জামানত সুবিধাজনক ব্যাংক কেবলমাত্র সেগুলোই জামানত হিসেবে গ্রহণ করে।

ব্যাংকে সচরাচর প্রচলিত জামানত [ Frequently Used Security in Bank ]

ব্যাংকে সচরাচর প্রচলিত জামানত [ Frequently Used Security in Bank ]

ঋণ দানের বিপক্ষে ব্যাংক সাধারণতঃ যে সকল প্রচলিত জামানত সংরক্ষণ করে থাকে নিম্নে তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপস্থাপন করা হলো –

১ ব্যক্তিগত নিশ্চয়তা বা জামিন (Personal Surety) :

তৃতীয় কোন ব্যক্তি ঋণ গ্রহীতার পক্ষে ব্যাংককে ঋণ পরিশোধের যে নিশ্চয়তা প্রদান করে তাকে ব্যক্তিগত নিশ্চয়তা বলে। যে কেউ নিশ্চয়তা প্রদান করলেই তা ব্যাংকের নিকট গ্রহণযোগ্য হয় না। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল এবং সুনাম সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের নিশ্চয়তা সাধারণতঃ ব্যাংক গ্রহণ করে থাকে। ঋণ গ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক নিশ্চয়তা প্রদানকারীর নিকট থেকে ঋণের অর্থ আদায় করে।

২. স্থাবর সম্পত্তি- (Immovable property) :

স্থাবর সম্পত্তি বলতে স্থায়ী সম্পত্তি যথাঃ দালান কোঠা ভূমি যন্ত্রপাতি ইত্যাদিকে বুঝায়। স্থায়ী সম্পত্তির জামানত যেমন নিরাপদ তেমনি ঝামেলাপূর্ণত বটে । অনেক ক্ষেত্রে সম্পত্তির মালিকানার (গ্রহীতার ) ত্রুটি দেখা দেয়। তাছাড়া যে কোন সময় সন্তোষজনক মূল্যে এগুলো বিক্রীও করা যায় না। তাই স্থাবর সম্পত্তি ব্যাংকের নিকট খুব আকর্ষনীয় জামানত নয়। সাধারণত : দীর্ঘ মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে এ ধরনের জামানত গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

৩. পণ্য দ্রব্য-(Pledge) :

পণ্য দ্রব্যের জামানতের প্রচলন যথেষ্ট। ঋণ গ্রহীতা জামানত হিসেবে উপস্থাপিত পণ্য ব্যাংকের নিকট হস্তান্তর করে। পণ্য ব্যাংকের দখলে থাকলেও মালিকানা ঋণ গ্রহীতার হাতেই থাকে। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে একটি নোটিশের মাধ্যমে ঋণ গ্রহীতাকে অবহিত করে জামানতকৃত পণ্য বিক্রী করে ব্যাংক ঋণের অর্থ আদায় করে। ঋণ গ্রহীতা যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করবে, সে পরিমাণ পণ্য সে ব্যাংকের নিকট থেকে ছাড়িয়ে নিতে পারে। এ জামানতের বিক্রয়যোগ্যতা ও তারল্য সন্তোষজনক । তবে এ জামানতের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে পন্যের মূল্য হ্রাস।

ব্যাংকে সচরাচর প্রচলিত জামানত [ Frequently Used Security in Bank ]

৪. বিক্রয় যোগ্য সিকিউরিটি- (Marketable Seurities) :

বিক্রয় যোগ্য সিকিউরিটি বলতে মুদ্রা বা পুঁজি বাজারে লেনদেনযোগ্য শেয়ার ষ্টক, ডিবেঞ্চার ট্রেজারি বিল সরকারী বন্ড, প্রথম শ্রেণীর বিল, ইত্যাদিকে বুঝায়। বিভিন্ন শর্তাধীনে এবং বিভিন্ন মূল্যমানের সরকারী, আধা সরকারী স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারী বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এগুলো ইস্যু করে থাকে।

৫. পণ্যের দলিল (Documents of Title of Goods) :

পণ্য দ্রব্যের স্বত্বাধিকারী নির্দেশক দলিল পত্রাদি জামানত হিসেবে বর্তমানে ব্যাংকের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। এসকল দলিলের মধ্যে স্বীকৃত বিনিময় বিল, পণ্যের ছাড়পত্র, গুদাম রশিদ রেলের রশিদ পরিবহণপত্র গুদাম রক্ষাকারীর সনদ ডকের রশিদ ইত্যাি উল্লেখযোগ্য।

৬. স্থায়ী আমানতের সঙ্গ (Certificate of Fixed Deposits- FDR) :

ব্যাংক মক্কেলের স্থায়ী আমানতের স্বীকৃতি স্বরূপ সনদ সরবরাহ করে থাকে। এ ধরনের সনদ একটি উত্তম জামানত হিসেবে ব্যাংকের নিকট স্বীকৃত। FDR যে ব্যাংকের, সে ব্যাংকেই সাধারণতঃ জামানত হিসেবে তা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এর মেয়াদ পর্যন্ত এ জামানত বৈধ থাকে। তবে এক ব্যাংকের FDR জামানত হিসেবে অন্য ব্যাংক গ্রহণ করা অবৈধ

৭. বীমা পত্র- (Insurance policies) :

বীমা পলিসি জামানত রেখে পলিসির সমর্পন মূল্যের।(Surrender Value) উপর ভিত্তি করে ব্যাংক সময় সময় ঋণ দান করে থাকে। বীমা পলিসি গুলোর মধ্যে জামানত হিসেবে জীবন বীমা পলিসি বেশী গ্রহণযোগ্য হতে দেখা যায়। ৮ অন্যান্য (Others) উপরে বর্ণিত জামানত গুলো ছাড়াও স্বর্ণালংকার মূল্যবান দলিল পত্র ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী ঋণের জামানত হিসেবে গ্রহন করার প্রচলন প্রায় সকল দেশেই অল্প বিস্তর বিদ্যমান।

ব্যাংকে সচরাচর প্রচলিত জামানত [ Frequently Used Security in Bank ]

উপসংহার [ Conclusion ]

উপযুক্ত ক্ষণ কাঠামো ঋণ কার্য সম্পাদনের প্রশাসনিক প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করার জন্য আবশ্যক ঋণ কর্মপন্থা (বড়হ / ঈৎবফরঃ চড়প) সর্বোত্তম চিন্তাভাবনা করে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা উচিত। সুচিন্তিত ঋণ কর্মপন্থা ঋণ কার্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের জন্য রাজপথ তথা রেলপথের মত অর্থাৎ কোন পরিস্থিতিতে কি সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে নির্দেশনা সুচিন্তিত ক্ষণ কর্মপন্থায় বর্ণিত থাকে বিধায় ঋণ কর্মকর্তাদেরকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেগ পেতে হয় না। সৎ, নিষ্ঠাবান ও নিবেদিত প্রাণ ক্ষণকর্মকর্তাবৃন্দ সরলভাবে এরূপ ক্ষণ কর্মপন্থা অবলম্বন করে ঋন কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। ঋণকর্মপন্থা ঋণ কার্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত বিবেচনার অবকাশ রাখেনা সেহেতু অসাধু কলকর্মকর্তা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ঋণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হন না।

ক্ষণ বিশ্লেষণ সঠিক তথ্যের উপর নির্ভর করে হওয়া প্রয়োজন। বেঠিক তথ্য ও অনুপযুক্ত বিশ্লেণ ভুল সিদ্ধান্তে পৌছাতে বাধ্য করে। এছাড়াও ঋণ কার্য সম্পাদনের জন্য যৌক্তিকভাবে নয়টি ধাপ অতিক্রম করা আবশ্যক। অনুকম্পা বিশেষ সুবিধা বা চাপ প্রয়োগের ফলে এই যৌক্তিক ধাপ অতিক্রম না করে ঋণ কার্যক্রমে তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নিলে পরিণাম প্রায়শই ভালো হতে দেখা যায় না। অপরপক্ষে, এই ধাপ অনুসরণ করতে গেলেও নামমাত্র কোন একটি ধাপ অনুসরণ না করে পুরোপুরি অনুসরণ করা উচিত অন্যথায় গৃহীত সিদ্ধান্তের জন্য ল কার্যে দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিকে শেষকালে পদ্মাতে হবে।

ঋণ প্রদান ও গ্রহণ এক ধরণের আর্থিক চুক্তি বিশেষ। এ চুক্তির ধারা উপধারা যাতে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র তথা দলিলাদি সংগ্রহ  সংরক্ষণ করা আবশ্যক। ফলে প্রয়োজন হবে এরূপ প্রমাণাদী সালিশ অথবা আদালতের মাধ্যমে প্রদত্ত ঋণ আদায়ে ব্যাংকের পক্ষে বলিষ্ঠ

ভূমিকা রাখে। চল তদারকি, ঋণের সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করে ঋণ আদায়ে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকে সহায়তা করে। সঠিক ঋণ তথা ঋণ গ্রহীতা চিহ্নিতকরণে মাঠ পর্যায়ে বিচরণ তথা তদারকি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অপরপক্ষে বিতরণের পর নিয়মিত তদারকি ঠিক সময়ে ক্ষণ আদায়ে প্রভূত অবদান রাখে। এ ছাড়াও কোন একটি নির্দিষ্ট ঋণের আদায়কার্য সমাপ্ত হওয়ার পর ঋণ গ্রহীতার সঙ্গে সংলাপ অথবা রক্ষা করে ঐ সকল ক্ষণগ্রহীতা পুনঃ ক্ষণ গ্রাহক হতে ইচছুক হয়ে থাকে। অতএব দেখা যাচেছ যে, ঋণের প্রশাসনিক ব্যবস্থা যত দক্ষ ও সুস্পষ্ট হবে, ঋণ কার্যক্রম, পাতা বাংকে ও ক্ষপ গ্রহীতা উভয়ের জন্যই ততবেশী সুখকর হতে বাধ্য।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment