পুনরীক্ষণ ও সমস্যাগ্রস্থ ঋণ চিহ্নিত করণ [ Review and Identification of Problem Loans ] ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সমূহ প্রধানত আমানতকারীদের ঝুঁকি নিরসনকল্পে ও সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তথা ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুস্থ্যতা রক্ষার জন্য নিয়মিতভাবে কার্যরত ব্যাংক সমূহের আদাইয় ব্যবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও পুনরীক্ষণ করে থাকে।
পুনরীক্ষণ ও সমস্যাগ্রস্থ ঋণ চিহ্নিত করণ [ Review and Identification of Problem Loans ]
ব্যাংকগুলোও স্ব-উদ্যোগে প্রদত্ত ঋণের গুনগত মান বাড়ানোর জন্য ঋণ পুনরীক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করে থাকে। সদস্য ব্যাংক সমূহ নির্দিষ্ট ছকের মাধ্যমে নিয়মিত অর্থাৎ ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক ও বার্ষিক ঋণ আদায় ও বকেয়া প্রতিবেদন ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়। এছাড়া ও এরাপ কর্তৃপক্ষের অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ ব্যাংকসমূহের অফিস সরজমিনে পরিদর্শন করে ঋণ আদায় ও বকেয়া হিসাব বহিসমূহ থেকেও ব্যক্তিগতভাবে নিরাপন করে দেখে থাকেন।
নিয়মিত প্রতিবেদন ঋণের অবস্থা অবগত হতে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করে। স্বল্পকালীন বিবরণে অনেক সময় কিছু অহেতুক সমন্বয় দেখিয়ে অনাদায়ী ঋণের সঠিক অবস্থা সাময়িকভাবে গোপন করা যায়। কিন্তু দীর্ঘকালীন গতিধারা বিশ্লেষণ কালে এরূপ গোপনীয়তা প্রকাশ পেতে বাধ্য। অতএব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ পুনঃরীক্ষণের মাধ্যমে আদায় অবস্থা বিশ্লেষন করে প্রতিটি সদস্য ব্যাংকের সমস্যাগ্রস্থতা নিরসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সতকর্তার নির্দেশ দিয়ে থাকেন। ঋণের ক্ষতি নিয়ন্ত্রণসীমার মধ্যে রাখতে কার্যরত ব্যাংকসমূহকে সাহায্য করাই ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পুনঃরীক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য।
ঋণ পুনঃরীক্ষণের উদ্দেশ্য সমূহ : Objective of Loan Review
পুনঃরীক্ষণ ঋণ আদায় সম্পর্কিত ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের একটি বিশেষ ধরণের কার্যক্রম। নিম্নে পুনঃরীক্ষণের লক্ষ্যসমূহ পরিবেশিত হল :
ঋণ পুনঃরীক্ষণের উদ্দেশ্য
১. প্রকৃত ও ভাবি সমস্যাগ্রস্থ ঋণ চিহ্নিতকরণ
২. ঋণ আদায়ে ঋণ কমকর্তাদের উৎসাহিতকরণ
৩. ঋণ কর্মকর্তাদের কে সমস্যাগ্রস্থ ঋণ গ্রহীতার আচরণ সম্পর্কে প্রতিবেদনের সুযোগ করে দেয়া
৪. ব্যাংকসমূহের মধ্যে অভিন্ন রকম দালিলি আনুষ্ঠানিকতা নিশ্চিত করণ
৫. ঋপ কর্মপন্থা ও ব্যাকিং বিধি বিধান নিশ্চিত করণ
৬. উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তথা পরিচালনা পর্ষদকে গতিধারা সম্পর্কিত হাল নাগাদ ও সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিতকরণ
৭. সমস্যাগ্রন্থ ও সন্দেহ জনক ঋণের জন্য ঋণের ক্ষতির বিপরীতে পর্যাপ্ত রিজার্ভ সৃষ্টি করা
উপরে পরিবেশিত চিত্র থেকে প্রতীয়মান হয় যে ঋণ পুনঃরীক্ষণে সময় থাকতে ব্যাংক সমূহকে ঋণ কার্যক্রমে কাঙ্খিত শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করে। পুনঃরীক্ষণের নিয়ম কার্যরত থাকায় প্রতিটি ব্যাংক তার সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত ঋণ কার্যে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের সতর্কতার সহিত ঋণ কার্যকলাপের প্রতিটি ধাপ নিয়মমাফিক ভাবে অতিক্রম করতে এবং প্রতিটি ঋণ নিয়ে স্বক্রিয় থাকতে বাধ্য করে। ফলে গোটা ব্যাংক ব্যবস্থার ঋণ আদায় অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালো থাকে এবং ব্যাংকের লাভজনকতা সনৈ সনৈ বৃদ্ধি পায়।
ঋণ পুনঃরীক্ষণের বিবেচ্য বিষয় [ Considerations of Loan Review ]
ঋণ পুনঃরীক্ষণ সত্যিকারার্থে হতে হলে দায়িত্ব প্রাপ্ত ঋণ পুনরীক্ষণ কর্মকর্তাদের প্রতিটি ঋণের ফাইল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। এ কাজ গতানুগতিক ব্যক্তিগত ও হাতে কলমে করা একটি সমুদ্রসম কাজ। তবে কম্পিউটারের আবিস্কারের ফলে প্রয়োজনীয় নেট ওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ অতীতকালের যে কোন সময় অপেক্ষা অতিশয় সহজ হয়েছে। এছাড়া ও প্রায়শ নমুনা পুনরীক্ষণ ও বড় বড় ঋণসমূহ নিয়মিত পুনঃরীক্ষণের আওতায় এনে পুনঃরীক্ষণ কার্য সহজতর করা হয়েছে। যাহোক, পুনঃরীক্ষণ কার্য সম্পাদন কালে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা আবশ্যক :
১। ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থা ও পরিশোধ ক্ষমতা ।
২। ঋণ কর্মপন্থা অনুসরণ।
৩। প্রয়োজনীয় দলিলাদি নিখুঁত ও পরিপূর্ণ ভাবে সংরক্ষণ।
৪। আইনগত ও বিধিবদ্ধ নিদর্শন সঠিকভাবে প্রয়োগ।
৫। নির্ভরযোগ্য জামানত সংগ্রহ ও জামানতলব্ধ আয়ের লোকসান ছাড়া নিরাপদ সংগ্রহ নিশ্চিত করা।
৬। পরিকল্পিত মুনাফা অর্জন সম্ভাবনা প্রণয়ন ও প্রয়োগ।
পুনরীক্ষণ কার্য নিয়মিত ও ফলপ্রসূ হলেও সব ব্যাংকের সকল ঋণ যথাসময়ে আদায় হয়ে যাবে এরূপ নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে পুনঃরীক্ষণ না করলে কু-ঋণ তথা ঋণ ক্ষতি যত বড় পরিমাণের হয়- পুনরীক্ষণ দক্ষভাবে প্রযুক্ত হলে তার পরিমাণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ
- ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সূচিপত্র
- সমস্যাগ্রস্ত/দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ কি? [ What is Problem / Distressed Loans? ]
- ঋণ তদারকি কার্যক্রম [ Loan Supervision Activities ]
- ব্যাংকে সচরাচর প্রচলিত জামানত [ Frequently Used Security in Bank ]
- ঋণ বিশ্লেষণে আর্থিক অনুপাতের ব্যবহার [ Use of Financial Ratios for Credit Analysis ]