Site icon Banking Gurukul [ ব্যাংকিং গুরুকুল ] GOLN

বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রহণযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য ঋণ আবেদনের উদাহরণ

বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রহণযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য ঋণ আবেদনের উদাহরণ

বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রহণযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য ঋণ আবেদনের উদাহরণ [ Examples of Acceptable and Unacceptable loan Requests of Commercial Bank ] – বিষয়টি নিয়ে আজকের আলোচনা। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ প্রাপ্যতা বিশ্লেষণ ঋণ আদায়ের নিরিখেই নিবেদিত হয়ে থাকে। বিশ্লেষণ শেষে ব্যাংক ঋণ আবেদন সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় অর্থাৎ হয় ঋণ আবেদন মঞ্জুর করে বা প্রত্যাখ্যান করে থাকে। সাধারণত যে সকল ঋণ অনুরোধ গ্রহণযোগ্য হয় সাধারণত ঐ গুলোই সাধারণত মঞ্জুরীর জন্য বিবেচিত হয়ে থাকে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রহণযোগ্য ও অগ্রহণযোগ্য ঋণ আবেদনের উদাহরণ [Examples of Acceptable and Unacceptable loan Requests of Commercial Bank ]

অপরদিকে অগ্রহণযোগ্য ঋণ অনুরোধ মঞ্জুরী লাভের বিবেচনায় ব্যর্থ হয়। যা হোক নিঙ্গে ব্যাংক অনুরোধের মধ্যে গ্রহণযোগ্য উদাহরণের কয়েকটি প্রদত্ত হল:

গ্রহণযোগ্য ঋণ অনুরোধ

Acceptable Loan Request

অগ্রহণযোগ্য ঋণ অনুরোধ

Unacceptable Loan Request

১. স্ব-পরিশোধে সক্ষম স্বল্পমেয়াদী চলতি পুঁজির অনুরোধ । ১. কারবারের মালিকানা কাঠামো পরিবর্তনের নিমিত্তে ঋণ অনুরোধ।
২. পুরাতন বিশ্বস্ত ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক নতুন ঋণের পরিশোধ উৎস নিশ্চিত করে প্রদত্ত আবেদন । ২. নিশ্চিত পরিশোধ উৎস ও সারণী ব্যতিরেকে নির্মাণ ঋণ আবেদন।
৩. হস্তান্তরযোগ্য গুদাম রশিদ জামানতে মাল স্থানান্তর নিমিত্তে অর্থায়নের আবেদন।  ৩. দ্বিতীয় স্তরের দাবীযোগ্য স্থাবর সম্পত্তি জামানতে ঋণ আবেদন ।
৪. নিশ্চিত দীর্ঘমেয়াদী ঋণের মাধ্যমে পরিশোধ্য সারণীসহ নতুন নির্মাণ ঋণের আবেদন। ৪. পূর্বেই নিশ্চিত না কার একাধিক মালিকানায় দালানকোঠা নির্মাণের জন্য ঋণ আবেদন।
৫. বিদ্যমান স্থাবর সম্পত্তির উন্নয়ন তথা সম্প্রসারণ।  ৫. অতীতের ঋণ গ্রহীতা ছিল না, যথেষ্ট জামানত বহনে এরূপ ব্যবসায়ীর নতুন ঋণের আবেদন।
৬. বিভিন্ন ধরণের অনুমোদনযোগ্য ভোক্তাঋণ  আবেদন। ৬. ঋণ পরিশোধকল্পে ক্রমবর্ধমান অর্থ ভান্ডার সৃষ্টির পরিকল্পনা ব্যতিরেকে দীর্ঘমেয়াদী আবেদন।
৭. একক মালিকানায় নির্মিতব্য গৃহ ঋণ (যে সম্পত্তি ব্যাংকের কাছে বন্ধক দেওয়া হয়েছে)। ৭. জামানত বিহীন স্থাবর সম্পত্তি ঋণের আবেদন।
৮. নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত মক্কেলদের থেকে অস্বাভাবিক দীর্ঘমেয়াদী ও আবর্তন প্রকৃতির ঋণের আবেদন । ৮. পরিশোধ উৎস সরকারী কি বেসরকারী তা স্পষ্ট ভাবে নিশ্চয়তা প্রদান ব্যাতিরেকে পেশকৃত ঋণের আবেদন।
৯. কোন জামানত ছাড়াই, ব্যবসায়িক সাফল্য ও সুনাম আছে এমন ব্যক্তির ঋণ আবেদন। ৯. বাজারজাতকরণ অযোগ্য ঋণপত্রের জামানত সহকারে পেশকৃত ঋণের আবেদন।

ব্যাংক ঋণের মূল্য নির্ধারণ [ Pricing Bank Loans ]

ব্যাংক ব্যবসায়ের সবচেয়ে জটিলতম বিষয় হল ব্যাংক ঋণের মূল্য নির্ধারণ। ব্যাংক অবশ্যই অপেক্ষাকৃত বেশী মূল্য নির্ধারণে আগ্রহ থাকে যাতে ব্যাংক তহবিলের খরচ, প্রশাসনিক ও অন্যান্য খরচ মিটিয়েও সন্দেহ যুক্ত তথা কু ঋণের ঝুঁকি পুষিয়ে প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ব্যাংকের কিছুটা লাভ অবশিষ্ট থাকে। অপরপক্ষে, স্ব গ্রহনকারী মক্কেলবৃন্দ অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী থাকে যাতে মেয়াদান্তে মক্কেলের পক্ষে ঋণ পরিশোধ কষ্টকর না হয়। মক্কেলবৃন্দ ব্যাংকের সুদ তাদের বহনশক্তির বাইরে হলে বিকল্প উৎস সন্ধানে তৎপর থাকে।

এমন কি মুদ্রা বাজারের অন্যান্য উৎস থেকেও যুক্তিযুক্ত মূল্যে ঋণ গ্রহণে সচেষ্ট হয়। এরূপ ঋণদাতাও গ্রহীতার দর কষাকষিতে বাজারে সাধারণ ঋণের মূল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। গতানুগতিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের মূল্যকে সুদ বলা হয়ে থাকে। অপরপক্ষে সাম্প্রতিক কালে মুসলমান সমাজে ইসলামী ব্যাংক নামে সুদ বিহীন এক ব্যাংক ব্যবস্থা চালু হয়েছে এ ব্যাংক ব্যবস্থায় ঋণের মূল্যকে সুদ না বলে লাভ বা মুনাফা বলা হয়ে থাকে।

যদিও লাভ লোকসানের ভিত্তিতে পরিচালিত ইসলামী ব্যাংক কার্যক্রমে লাভ অথবা লোকসান দুটিই থাকতে পারে। অতএব গতানুগতিক বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রদত্ত ঋণ পুঁজি কমার সম্ভাবনা কম, কারণ আসল +মূল্য এ পদ্ধতি কু-ঋণ না হলে কোন ক্রমেই বিতরণকৃত আসল ঋণের কম হয় না। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকে লেনদেনের ক্ষেত্রে লাভ লোকসানের ভিত্তি যেমন আসল +।

সুতরাং যেমন বিতরণকৃত ঋণ পরিমাণের লাভসহ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে তেমনি লোকসান সংগঠিত হলে আসল কমে যাওয়ার ও সম্ভাবনা থাকে। তবে ইসলামী ব্যাংক জানামতে সুদ নেয় না এবং শরীয়ত বিরোধী নয় এমন বিনিয়োগ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে ব্যাংক প্রদত্ত বিনিয়োগের লোকসানের ঝুঁকি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। যা হোক বর্তমান আলোচনায় আমরা গতানুগতিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের মূল্য নির্ধারণে আমাদের আলোচনা সীমাবদ্ধতা রাখবো।

ঋণের মূল্য আসলের শতকরা হারে প্রকাশ করে সংগ্রহ করার নিয়মকে সুদের হারের ভিত্তি বলা হয়ে থাকে। গতানুগতিক বাণিজ্যিক ব্যাংকে এটি বহুল প্রচলিত। এছাড়াও অন্যভাবেও ঋণের মূল্য আদায় করা হয়ে থাকে। নিম্নে চিত্র থেকে ঋণ মূল্য নির্ধারণের বিভিন্ন ধরণ বা প্রক্রিয়া অবলোকন করা যেতে পারে :

ঋণের মূল্য নির্ধারণ

১. সুদ ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ

ক. পরিবর্তনশীল হার

খ. স্থির হার

২. সুদ-বিহীন স্বল্পমূল্য নির্ধারণ

ক. ন্যূনতম গড় আমানতের জের

খ. চার্জ, ফিস ইত্যাদি

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

নিম্নে উপরোক্ত ঋণ মূল্য নির্ধারক সমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি সংক্ষেপে নিম্নে দেওয়া গেল :

ক্রমিক নং

মূল্য কৌশল

পরিচিতি

খ. সুদ ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ :

১। স্থির হার Fixed Rate ঋণ আলোচনা কালেই ঋণের উপর প্রদেয় পূর্ণ মেয়াদের | নির্দিষ্ট হারে সুদ নির্ধারণ হয়ে থাকে।
২। পরিবর্তনশীল হার Variable Rate চাহিদা ও তহবিল প্রাপ্ত নিরিখে ন্যূনতম হারের উপর ভিত্তি করে সুদের হার সময় সময় পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
৩। বিশেষ ঋণ গ্রহীতার হার  Prime Rate উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বিশ্বস্ত বাণিজ্যিক ঋণ গ্রহীতাদের প্রদেয় সুদের হার। এ হার সাধারণত, সাধারণ সুদের হারের অনেক কম হয়ে থাকে।
৪। সাধারণ ঋণ গ্রহীতার হার Rate for general Customer সাধারণত কণ গ্রহীতাদের প্রদত্ত ঋণের হার। এ হার Prime Rate এর চেয়ে বেশী হয়ে থাকে।
৫। ঊর্ধ্ব নিম্ন সীমাভিত্তিক সুদের হার Caps and Floors এক ধরণের পরিবর্তনশীল সুদের হার যার উচ্চতম ও নিম্নতম সীমা বেধে দেওয়া হয়। অর্থাৎ সুদের হার এ সীমার মধ্যে মক্কেল ভেদে ভিন্নতর হয়ে থাকে।
৬। গুণিতক ভিত্তিক সুদের হার

Prime Times

বিশেষ সুদের হারের মানে Prime Rate এর কয়েক গুণ হয়ে থাকে। ঋণের মেয়াদ বাড়লে বা কমলে এরূপ বিশেষ | সুদের হার গুণিতক হারে হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটে থাকে।
৭। অন্যান্য ভিত্তি নির্ভর সুদের হার Rates on other Basis কোন ঋণ পত্রের সুদের হার বা কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রচলিত সূচী অনুসারে এরূপ ঋণের হার নির্ধারণ করা হয়ে থাকে হারটি Prime Rate এর মত এক ধরণের বিশেষ হার যা সাধারণত Prime Rate এর কিছু বেশী বা কম হয়ে থাকে ।

খ. সুদ বিহীন ঋণ মূল্য নির্ধারণ :

১. ন্যূনতম ন্যূনতম আমানত গড় আমানতের জের Compensating Balances ঋণগ্রহীতা কর্তৃক ঋণের মেয়াদ কালে ন্যূনতম আমানত জের আবশ্যক। নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট অংকের আমানত না হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে গড় আমানত পরিমাণের জেরের স্বর এইরূপ ক্ষতিপূরক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

 

২. চার্জ, ফিস ইত্যাদি Fees, charges etc. ঋণ মঞ্জুর করে বিতরণ পূর্ব পর্যন্ত সময়ের জন্য ধার্যকৃত ফিস বা চার্জ নেয়া হয়ে থাকে। ঋণ গ্রহীতার ঋণ গ্রহণের অহেতুক বিলম্ব নিরোধে এ মূল্য আদায় করা হয়। এ ছাড়া ও কোন কোন সময় জাতীয় স্বার্থে স্বল্প সংখ্যক ও স্বল্প পরিমাণ ঋণের উপর এরূপ নামমাত্র মূল্য ধার্য্য হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ

Exit mobile version