বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং পদ্ধতি এখনো জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। প্রয়োগের কারিগরী দিক ও ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং বাতি আহরণের প্রাথমিক বিনিয়োগের ভয়ে অনেকেই এখানো এইরূপ প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ দেখায়নি। তবে এইরূপ ইলেকট্রনিক পদ্ধতির মাধ্যমে অধিকতর সন্তোষজনক গ্রাহকসেবা প্রদান সম্ভব। এ ব্যাপারে ব্যাংক, গ্রাহক ও ব্যাংক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সবাই একমত। আশা কর যায় অচিরেই ধাপে ধাপে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়া চালু হবে।
Table of Contents
বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর বর্তমান চালচিত্র [ Present Position of Electronic Banking in Bangladesh ]
বর্তমানে বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রয়োগ খুবই সামান্য। এটি বর্তমানে তার প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে বলা যেতে পারে। নিম্নে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিদেশী ব্যাংকে অন্যান্য কিছু সংখ্যক সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকের ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং অবস্থা দেখা গেছে পারে।
(ক) বাংলাদেশ ব্যাংক :
বাংলাদেশ ব্যাংকে সত্যিকার অর্থে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা চালু হয়নি। তবে কম্পিউটার ভিত্তিক MIS পদ্ধতি চালু করা হয়েছে যার মাধ্যমে একটি ডাটাবেস (Database) গড়ে তোলা হয়েছে। প্রয়োজনে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তথা সরকারকে এই ডাটাবেস (Database) থেকে তথ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আশা করা যাচেছ খুব শীঘ্রই নেটওয়ার্ক পদ্ধতি চালু করে সমস্ত সদস্য বাক সমূহের প্রধান কার্যালয়ের সাথে তথ্য প্রবাহের যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।
(খ) রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাণিজ্যিক বাংকসমূহ (Nationalised Commercial Banks) :
জনতা ব্যাংক অতি সম্প্রতি “ReadyCash” নামে একটি স্মার্ট কার্ড পদ্ধতি চালু করেছে। সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক চারটি (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী) ইন্টারনেট ছাড়া কিছু কিছু কম্পিউটারভিত্তিক তত্ত্ব সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে থাকে। তবে খুব শীঘ্রই জোনাল অফিসে, জি এম অফিস সমূহের সাথে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানা গেছে।
জনতা ব্যাংকের রেডি-ক্যাশ:
[ আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ইনকর্পোরেটড এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ লিঃ, বাংলাদেশে প্রথমবারের মত চালু করেছে রেডিক্যাশ কার্ড। মাইক্রো প্রসেসর প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরী এই কার্ডকে “স্মার্ট কার্ড’ বলা হয়। রেডিক্যাশ কার্ড হবে নগদ টাকায় লেনদেনের একটি যোগ্য বিকল্প। কার্ডের গ্রাহকরা পাবেন তাদের টাকার নিরাপত্তা এবং সেই সাথে কার্ডে গচ্ছিত টাকার উপর লভ্যাংশ।
সর্বোপরি এই কার্ড ব্যবহারে কার্ডের গ্রাহক একই জায়গা থেকে পরিশোধ করতে পারবেন বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন এ পানি বিল। নগদ টাকা বহন ঝুঁকিপূর্ণ। হেডিক্যাশে রয়েছে বহু সংখ্যক দোকানপাট, চাল ডাল সহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় প্রবাসী, উপহার সামগ্রী, কাপড়-চোপর, বাড়ীতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র প্রভৃতি অল্প সময়ে কেনাকাটা ও ভ্রমণসহ হোটেল রেস্তোরার বিল পরিশোষের অবাধ সুযোগ। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বিল পরিশোষের এই মাধ্যমটি যেমন সহজ তেমনি ঝুঁকিহীন।
অত্যাধুনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ ব্যবহৃত এই কার্ডে আছে কার্ড গ্রাহকের চার সংখ্যার একটি গোপন ব্যক্তিগত নম্বর (PIN) যা শুধুমাত্র কার্ড গ্রাহক কর্তৃক কার্ডের ব্যবহার নিশ্চিত করবে। এছাড়া কার্ডে থাকছে কার্ড গ্রাহকের ছবি, নমুনা স্বাক্ষর এবং
ছাপার অক্ষরে নাম যা হবে কার্ড গ্রাহকের একটি আদর্শ পরিচয় পত্র। রেডিক্যাপ ওয়ান স্টপ ইউটিলিটি বিল সার্ভিস রেডিক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে একই স্থান থেকে অল্প সময়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন ও পানি বিল পরিশোধের সুবিধা পাওয়া যায়। ব্যাংকে লা লাইনে দাঁড়ানোর আর প্রয়োজন হবে না। রেডিক্যাশ সহজেই ব্যবহারযোগ্য।
রেডিক্যাশ অনুমোদিত দোকানপাট/প্রতিষ্ঠানে পত্রক বা সেবা নগদ টাকার পরিবর্তে কার্ডে ক্রয় করা যাবে। দোকানে প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত রেডিক্যাশ টার্মিনালে কাডটি ঢুকিয়ে গোপন ব্যাক্তিগত নম্বর চালে কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করলেই তাৎক্ষনিকভাবে লেনদেন অনুমোদিত হয়ে একটি ছাপানো আশিস বিল বের হয়ে আসবে। রেডিক্যাশ কার্ড ক্রয় করতে হলে আয় অথবা সম্পদের বিবরণ দিতে হবে না। রেডিক্যাশ কার্ড, থাকবে গ্রাহকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই।]
(গ) দেশীয় বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ (Domestic Private Commercial Banks)
প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড ক্রেডিট কার্ড চালু করেছে, ATM স্থাপন করেছে এবং অতি শীঘ্রই চালু করবে বলে জানা গেছে। ন্যাশনাল ব্যাংক লিঃ ক্রেডিট কার্ড পদ্ধতি চালু করেছে। আরব বাংলাদেশ বাংক লিঃ ১০ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ‘কাপিতি’ নামে একটি সফটওয়ার ইলেকট্রনিক ব্যাকিং প্রশনয়ে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ক্রয় করেছে। অন্যান্য অধিকাংশ বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ কেবল কম্পিউটারভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে MIS ব্যবস্থা উন্নয়নে সচেষ্ট রয়েছে।
(ঘ) বিদেশী বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক (Foreign Private Commercial Bank) :
বাংলাদেশ যদিও ১৪টি বিদেশী বেসরকারী ব্যাংক কর্মরত রয়েছে। তাদের মধ্যে নিম্মোক্ত কয়েকটি কমবেশী ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু রেখেছে বলে জানা যায়।
১. স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক
২. এ এন জেড গ্রীনলেজ ব্যাংক
৩. আমেরিকান এক্সপ্রেস বাকে
৪. হংকং বাংক লিঃ
৫. সিটি ব্যাংক লিঃ
৬. হাবিব ব্যাংক লিঃ
৭. দি হংকং এন্ড সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন (এইচ, এস, বি.সি)
উল্লেখিত বিদেশী বেসরকারী ব্যাংক সমূহের মধ্যে স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক ও এ এন জেড গ্রীনলেজ ব্যাংক অপেক্ষাকৃত ব্যাপক পরিসরে বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছে যা নিম্নে দেখা যেতে পারে :
স্ট্যান্ডার্ট চাটার্ড ব্যাংক প্রদত্ত ইলেকট্রনিক ব্যাকিং সেবা সমূহের সংক্ষিপ্ত সার :
প্রদত্ত সেবাসমূহ:
ক. ফোন লিংক (Phone Link)
খ. এটি এম (ATM)
নডিএম-এর সংজ্ঞা : ৭
অনুর ভবিষ্যতে আরো ৩টি স্থাপন করা হবে।
এটি এম কার্ডের গ্রাহক : ৭০০০ (প্রায়)
গ. ১৯৯১ সাল থেকে স্বল্প পরিসরে মূল্যবান গ্রাহকদের জন্য PC Home Banking সেবা দিয়ে আসছে।
ঘ. ভবিষ্যতে Expansion পরিচালনা : স্মার্ট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং।
এ এন জেড গ্রীনলেজ ব্যাংক প্রদত্ত ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবা সমূহের সংক্ষিপ্তসারঃ
প্রদত্ত সেবা সমূহ:
ক. ফোন ব্যাংকিং
খ. ক্রেডিট কার্ড
গ. এটিএম ATM
এটিএন সংখ্যা ও
শীঘ্রই আরো ৩টি স্থাপন করা হবে।
- কার্ডের গ্রাহক
ক্রেডিট কার্ড- ৮০০০ (প্রায়)
এটিএম ৭০০০ (প্রায়)
ঘ. ১৯৯৯ সাল থেকে স্বল্প পরিসরে শুধুমাত্র মূল্যবান গ্রাহকদের PC Home Banking সেবা দিয়ে আসছে।
ঙ. নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থায় যে কোন শাখার একাউন্ট খুলেই ব্যাংকের সকল শাখায় লেনদেন করা যায়।
চ. ভবিষ্যৎ Expansion পরিকল্পনাঃ স্মার্ট কার্ড ইন্টানেট ব্যাংকিং।
ইলেকট্রনিক পদ্ধতি ব্যবহার কর আমানতের টাকা উত্তোলন সহজতর হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। বিদেশে টাকা স্থানান্ত হয়েছে এটিও সন্দেহাতীত। কিন্তু বৈদেশিক আইনের লংঘন হবে বলে বিদেশে থেকে টাকা স্থানান্তর কাজে নিয়োজিত কেবলমাত্র বাংলাদেশী টাকায় মঞ্চেলকে বিনিময় স্থানান্তর করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ