উত্তম বিনিয়োগ নীতিসমূহঃ ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রম ঋণকার্যক্রমের তুলনায় অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক মুনাফার উৎস বহুধাকরণের লক্ষ্যেই সর্বপ্রথম ব্যাং বিনিয়োগ কার্যক্রমে টাকা খাটাতে আরম্ভ করে। ব্যাংকের তহবিল মুখ্যত আমানতকারীদের থেকে সংগৃহিত। আমানতকারীদের চাহি মত টাকা ফেরত না দিতে পারলে ব্যাংক ব্যবসায়ের সুনাম ক্ষতি তথা চূড়ান্ত পর্যায়ে পতনের আশংকা অনেক এমতাবস্থায় ব্যাংক তহবিল বিনিয়োগ কার্যে ব্যবহার করতে হলে একটি সু-চিন্তিত এবং পরীক্ষিত নীতি অবলম্বন করা উচিৎ। নিম্নে একটি সুষ্ঠু বিনিয়োগ নীতির প্রথম উপাদানসমূহ দেখা যেতে পারে।
Table of Contents
উত্তম বিনিয়োগ নীতিসমূহ [ Principles of Sound Investment ]
সুষ্ঠু বিনিয়োগ নীতির উপাদান
১. গুণগত উপাদান
- উদ্দেশ্য
- নিরাপত্তা
- বিস্তৃতি ও ঝুঁকি বহুধাকরণ
- সামাজিক দায়িত্ব
- জাতীয় স্বার্থ
- রপান্তরযোগ্যতা
- ব্যবসায়ীক নৈতিকতা
- প্রশাসনিক দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব
২. পরিমাণগত উপাদান
- মুনাফা ও লাভজনকতা
- ব্যবসায়িক সচঞ্চলতা
- তারল্য
উপরোক্ত সুষ্ঠু বিনিয়োগ নীতির উপাদানগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেওয়া গেল :
গুণগত উপাদান-(Qualitative Factors) :
নিম্নে গুণগত উপাদানগুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো :
১. উদ্দেশ্য-(Purpose of the Investment):
বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ তাদের আয় বর্ধনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। । বিনিয়োগ বা Investment হচেছ তার অন্যতম পদ্ধতি । বিনিয়ো-তারল্য সমন্বয় অথবা কর দায় কমানোর জন্যও হতে পারে এছাড় ঝুঁকি বহুধাকরণ করার প্রয়াসেও এরূপ বিনিয়োগ কার্যক্রম গৃহিত হয়ে থাকে। কোন উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কিরূপ পদক্ষেপ তথা কেন ধরনের বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত প্রযোজ্য বিনিয়োগ নীতিতে তা স্পষ্ট করে থাকা আবশ্যক। তাহলে ব্যাংকের বিনিয়োগ কর্মকর্তা প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে কোনরূপ দ্বন্দ্ব, অস্পষ্টতা বা সিদ্ধান্তহীনতায় না ভুগে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে
২. নিরাপত্তা- (Safety):
ক্ষণপত্র ক্রয়কালে ব্যাংকের বিনিয়োগ কর্তাকে অবশ্যই ঋণপত্রের মূল্যমান হ্রাস বৃদ্ধি প্রক্রিয়া বিবেচনা করা দেখতে হয়। বিনিয়োজিত অর্থ মূল্যের উত্থান পতনের ফলে বিরাটাকারের ক্ষতির সম্মুখীন হবে কিনা তার সম্ভাবনার নিরিখে বিনিয়োগ করা আবশ্যক অর্থাৎ ক্রেডিট রেটিং বা ঋণপত্রের মর্যাদা বিবেচনা করে ব্যাংকের বিনিয়োজিত অর্থের নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব।
৩. বিস্তৃতি ও ঝুঁকি বহুধাকরণ-(Spread and Risk Diversification):
ব্যাংক ব্যবসায় লাভজনকতার সাথে সাথে ঝুঁকিকেও বিশ্ববি ও ঝুঁকি বহুধাকরণ করা হয়। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কর্মকর্তাকে ক্রেডিট রেটিং পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে একটি ক্ষণপত্রে বিনিয়োগ না কর বিভিন্ন ক্ষণপত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভ-লোকসানের ঝুঁকির সম্ভাবনা বিস্তৃতি ও বহুধাকরণ করা উচিৎ।
৪. সামাজিক দায়িত্ব- (Social Responsibility)
ব্যাংক ব্যবসায়ের সুনাম তথা প্রসার নির্ভর করে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনে মাধ্যমে তথ্য সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের ঋণপত্র ক্রয়ের মাধ্যমে ব্যাংক সামাজিক দায়িত্ব পালনে প্রয়াস পায়।
৫. জাতীয় স্বার্থ- (National Interest) :
বার্ষিক উন্নয়ন তথা পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনা, মুদ্রাস্ফীতি ও করনীতির মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সরকার তথা ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসমূহ যে ধরনের অগ্রাধীকার দিয়ে থাকে ব্যাংক বিনিয়োগ কার্যক্রম সে অগ্রাধীকার ভিত্তিক হওয়া উচিৎ। এতে জাতীয় স্বার্থ উন্নতিতে ব্যাংকের সমর্থন ও অংশগ্রহণ কাম্য ।
৬. রপান্তরযোগ্যতা-(Convertibility) :
ঋণপত্রে বিনিয়োগ করলে অত্যন্ত সহজেই টাকায় রূপান্তর সম্ভব হয়। তথাপী ব্যাংক বিনিয়োগ কর্মকর্তাকে ঐ সমস্ত ঋণপত্রে অধিকতর বিনিয়োগ করা উচিৎ যা সামান্য কম দামে হলেও দ্রুত টাকায় রূপান্তর সম্ভব।
৭. ব্যবসায়ীক নৈতিকতা-(Business Ethics) :
বিনিয়োগ কার্যক্রম ব্যাংকের আয়ের একটি অন্যতম উপায় হলেও ব্যবসায়িক অতিকতা বিবর্জিত উপায়ে বিনিয়োগ করা উচিৎ নয়। অসামাজিক প্রতিষ্ঠানের ঋণপত্রে বিনিয়োগ করা সমীচীন নয়।
৮. প্রশাসনিক দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব- (Administrative Authority and Responsibility) :
বিনিয়োগযোগ্য তহবিল নির্ধারন, ক্ষণপত্র নির্বাচন এবং কণপত্র তথা মেয়াদ নির্বাচন ও ঋণপ্রস্তাব বিশ্লেষণ করার দায়-দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে কণ্টন করে দেওয়া আবশ্যক। অস্পষ্টতা কর্মকর্তাদিগকে কার্য অবহেলার সুযোগ করে দেয়।

পরিমাণগত উপাদান- (Quantitative Factors)
নিম্নে পরিমাণগত উপাদানসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিপিবদ্ধ করা গেল:
১. মুনাফা ও লাভজনকতা – (Profit and Profitability) :
অন্য সকল ব্যবসায়ের মত ব্যাংকেরও মূল উদ্দেশ্য মুনাফা। অর্জনের মাধ্যমে সম্পদ সর্বাধিকরণ বিনিয়োগলব্ধ আয় সন্তোষজনক না হলে তহবিল ব্যয় নির্বাহ করে যথেষ্ট মুনাফা অর্জন সম্ভব নয়। দক্ষ কিার, বিবেচনা, বিশ্লেষণের মাধ্যমে উন্নততর ও অপেক্ষাকৃত ভালো ক্ষণপত্রে বিনিয়োগ করে লাভজনকতা নিশ্চিত করার স্বার্থে বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা আবশ্যক।
২. ব্যবসায়িক সচঞ্চলতা – (Business Solvancy) :
ব্যাংক একটি লাভজনক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসায়িক স্বচছলতা রক্ষা করতে হবে। এ কারণে বিনিয়োগের পরিমাণ এমন অবস্থায় রাখতে হবে যাতে আমানত কারীদের জন্য রক্ষিত তারল্যের ঘাটতি না হয়।
৩. তারল্য-(Liquidity) :
তারল্য ও মুনাফা একই সূত্রে গাঁথা এজন্য শুধু মাত্র বিনিয়োগে অধিকতর মূলধন বিনিয়োজিত না করে, তারল্য পরিমাণ সন্তোষজনক অবস্থায় রেখে বিনিয়োগ করা উচিৎ।
আরও পড়ুনঃ
- ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সূচিপত্র
- ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমের প্রশাসনিক কাঠামো [ Administrative Structure of Investment Activities ]
- ব্যাংকের বিনিয়োগ বলতে কি বুঝায়? [ What is Meant by Bank Investment? ]
- সমস্যাগ্রস্থ/দূর্দশাগ্রস্থ ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের গৃহীতব্য পদক্ষেপ [ Handling Problem/Distressed Loans ]
- সমস্যাগ্রস্থ ঋণের কারণসমূহ [ Causes of Problem Loans ]