ড. ইউনূসের অভিযোগের জবাবে গ্রামীণ ব্যাংক যা জানালো

ড. ইউনূসের অভিযোগের জবাব দিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় – সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংকের দরিদ্র ও ভূমিহীন সদস্যদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ। তারই অংশ হিসেবে গত সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) গ্রামীণ ব্যাংকের ১৫৫তম বোর্ড সভায় গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণসহ সাতটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ডে চেয়ারম্যান ও নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিচালক মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

 

গ্রামীণ ব্যাংক লোগো, Grameen Bank Logo

 

ড. ইউনূসের অভিযোগের জবাবে গ্রামীণ ব্যাংক

 

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এ বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক সংবাদ সম্মেলন করে বেশ কিছু বিভ্রান্তমূলক, অসত্য, বেআইনি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়েছেন, যা ১ কোটি ৫ লাখ সদস্য ও তাদের পরিবারের অধিকার খর্ব করার শামিল। তাই গ্রামীণ ব্যাংক এ বিষয়ে সঠিক তথ্য উল্লেখ করে নিজেদের বক্তব্য ও ব্যাখ্যা জাতির সামনে প্রকাশ করাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।

গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতা ও সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে চেয়ারম্যান ও নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিচালক নিয়োগ দেয়ার আইনি এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের রয়েছে। এ বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকমের আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের ৫১, ৩৫(iii), ৫১, গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের ৩২(iii) এবং আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের ৪৮ নং ধারায় বিস্থারিত উল্লেখ আছে।

মূলত এ দুটি প্রতিষ্ঠানের আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের আলোকেই ড. ইউনূসকে ১৯৯৫ সালে গ্রামীণ টেলিকম এবং ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন দেয় গ্রামীণ ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার অনুষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের ১৫৫তম বোর্ড সভায় উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে চেয়ারম্যান ও নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিচালক মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

 

ড. ইউনূসের অভিযোগের জবাবে গ্রামীণ ব্যাংক যা জানালো

 

তবে আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তনের বিষয়ে ড. ইউনূসের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে, ২০০৯ সালে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তন করে চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিচালক মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষমতা বিলুপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

লিখিত বক্তব্যে ড. ইউনূস নিজেকে গ্রামীণ ব্যাংক ও এই ব্যাংকের সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক দাবি করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা গ্রামীণ ব্যাংকের ১ কোটি ৫ লাখ ঋণগ্রহীতার স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, অনৈতিক ও আইন পরিপন্থী। কারণ প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, যার মালিক বাংলাদেশ সরকার ও এর ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারগণ। এমনকি এ বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে।

 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

 

লিখিত বক্তব্যে ড. ইউনূসের পক্ষে বলা হয়েছে, সরকারি আদেশবলে তৈরিকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক কখনোই আইনগতভাবে কোনো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি সৃষ্টি করা বা তার মালিক হতে পারে না। কিন্তু তাদের এই বক্তব্য স্ববিরোধী ও আইনের অপব্যাখ্যার শামিল। কারণ ১৯৯৬ সালের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের ৪২তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ড. ইউনূসের প্রস্তাবেই খোদ গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এসব আইনি বিধান মেনেই গত সোমবার অনুষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ১৫৫তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট প্রতিনিধিরা গ্রামীণ টেলিকম ভবনে অবস্থিত ছয়টি প্রতিষ্ঠানে যান। সংবাদ সম্মেলনে তারা জবরদখলের অভিযোগ তুললেও প্রকৃত পক্ষে সেদিন তারা ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাদর অভ্যর্থনা জানান এবং আপ্যায়ন করেন। প্রতিনিধিরা নিয়ম মেনে প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের চিঠি হস্তান্তর করেন।

 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

 

গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ আশা করছে, গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর কল্যাণে এবং তাদের স্বার্থরক্ষার যে অঙ্গীকারে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বোর্ড সভার এ সিদ্ধান্ত তা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম এবং গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মঈনুদ্দিন চৌধুরীকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন ড. ইউনূস। সেখানে তিনি দাবি করেন, ওই ভবনে থাকা প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসার মুনাফার টাকায় গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে হস্তক্ষেপ করার কোনো এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment