ঋণের তথ্যের উৎস সমূহ [ Sources of Credit Information ] – বিষয়টি নিয়ে আজকের আলোচনা। ঋণের আবেদনের ভিত্তিতে ঋণ মঞ্জুর করা হয়ে থাকে। আবেদনপত্রে উল্লেখিত টাকা ও তা ব্যবহারের উদ্দেশ্য দেখেই সাধারণত ঋণ মঞ্জুর করা হয় না বরং আবেদনকারী সম্পর্কে তথ্য আবেদনকারীর আবেদনপত্রে উল্লেখিত ঋণের উদ্দেশ্য ইত্যাদি ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য কিনা তা পর্যালোচনা করে দেখা হয়ে থাকে।
এরূপ বিচার বিবেচনা ঋণ আদায় নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই করা হয়ে থাকে। যা হোক ঋণের আবেদনকারী সম্পর্কে তথা ঋণ সম্পর্কে প্রাপ্যতা বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্যে যে যে উৎস থেকে তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়ে থাকে নিম্নে তা দেখা যেতে পারে।
Table of Contents
ঋণের তথ্যের উৎস সমূহ [ Sources of Credit Information ]
নিম্নে এ সকল উৎসের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা গেল
ক. আভ্যন্তরীণ উৎস
১ আবেদন পত্র- (Application) :
ঋণের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপিত আবেদনপত্রে ঋণগ্রহীতা সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য তথা ঘুটিঘাটি বিষয়সমূহ বিচার বিবেচনা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পারেন
২ সাক্ষাৎকার (Interview) :
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ গ্রহীতার সংগে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ঋণগ্রহণের কারণ, বর্তমান আর্থিক অবস্থা। জামানতের ধরন প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে পারে।
৩ আর্থিক বিবরণী- (Financial Statement) :
কোন ব্যবসায় বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ গ্রহণ করতে চাইলে ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকের নিকট তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী পেশ করতে হয়। উই বিবরণীতে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া সম্ভব।
৪ ব্যাংকের নিজস্ব দলিলাদী (Bank’s Own Record)
ব্যাংকে রক্ষিত অতীত লেনদেন সম্পর্কে দলিলাদী নথিপত্র থেকে বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশন যেমন অতীতে ঋণ পরিশোধের ধরণ, আমানত ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ সম্ভব।
বহিঃ উৎস সমূহ
ব্যাংকের বহি উৎস সমূহ থেকে নানাবিধ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এ উৎস আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। সরকারী তথা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষএকটি দেশের ব্যবসায়িক কার্যাবলী আইন মোতাবেক, সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও মান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়মনীতি নির্ধারণ করে থাকেন। নিম্নে এ সমস্ত উৎসসমূহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল :
১ রাজস্ব / আয়কর অফিস (Income Tax Office) :
ব্যাংক ঋণগ্রহীতার দেয় রাজস্ব বা কর সম্পর্কে জানতে চাইলে ঋণ গ্রহীতার মেয়াদান্তে পরিশোধ্য আয়কর/রাজস্ব সম্পর্কে রেকর্ডসমূহ আয়কর/রাজস্থ অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারে।
২. সরকারী গেজেট-(Government Gazette ) :
সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ান্তে প্রকাশিত গেজেট থেকে ঋণ গ্রহীতা সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে।
৩ সরকারী অফিস সমূহের নথিপত্র- (Records From the Other Govt Office) :
ঋণ গ্রহীতার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠান যারা বিভিন্নভাবে উক্ত ঋণগ্রহীতার সংগে জড়িত। এ সমস্ত সরকারী প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত দলিলাদী বা নথিপত্র থেকেও ঋণ গ্রহীতা সম্পর্কে ব্যাংক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
৪ জয়েন্ট ষ্টক রেজিষ্টার (Registrar of Joint Stock) :
বৃহদায়তন তথা যৌথমূলধনী কারবারের ক্ষেত্রে জয়েন্ট ষ্টক রেজিষ্ট্রার থেকে অনুমতি লাভ করে ব্যবসায় পরিচালনা করতে হয়। ব্যাংক প্রয়োজনে জয়েন্ট ষ্টক রেজিষ্ট্রার অফিস থেকে উক্ত ঋণ গ্রহীতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
অন্যান্য উৎস:
১ পরিদর্শন-(Inspection) :
ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ ঋণগ্রহীতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য সশরীরে বা সরেজমিনে পরিদর্শন করে উক্ত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্যক তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
২ বাজার প্রতিবেদন- (Market Report) :
ব্যাংক প্রস্তাবিত ঋণ গ্রহীতা সম্পর্কে তার বাজার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করতে পারে। ঋণ গ্রহীতা কি ধরণের ব্যবসায় করতে চায় এবং সে ব্যবসায় ভবিষ্যৎ অবস্থা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং বা ব্যক্তি বিশেষের সংগে যোগাযোগের মাধ্যমেও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
৩. ঋন সংক্রান্ত তথ্য ব্যুরো- (Credit Information Bureau) :
বড়বড় ব্যবসায়ীদের ঋণ গ্রহণ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও তা সুবিন্যস্ত ভাবে সংরক্ষণ করে ঋণ সংক্রান্ত তথ্য ব্যুরো। বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ প্রয়োজনে উক্ত ব্যুরো হতে ঋণ গ্রহীতা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পেতে পারে।
৪ সংবাদ পত্র (News) :
প্রস্তাবিত ঋণ গ্রহীতা বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য সংগ্রহ করে তা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ঋণ গ্রহীতার ব্যবসায়ের ধরণ, সুনাম, দুর্নাম ইত্যাদি ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে সে তথ্য সহজে পাওয়া যায়।
৫. অডিট ফার্ম-(Audit Firm) :
বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের হিসাবপত্রসমূহ অডিট ফার্ম থেকে অডিট করিয়ে নেওয়ার বিধি প্রচলিত আছে। অডিট ফার্ম কোন প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট প্রণয়ন কালে তার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করেন। ব্যাংকসমূহ ঋণপ্রদানকালে কোম্পানীর অডিট ফার্ম থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

৬. অন্যান্য ব্যাংকের রিপোর্ট – (Other Bank’s Report) :
প্রস্তাবিত ঋণ গ্রহীতার অন্যান্য ব্যাংকের সহিত লেনদেন ও ঋণ গ্রহণ পরিশোধ প্রক্রিয়া রিপোর্ট থেকেও ঋণ গ্রহীতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
৭. ব্যবসায় সংক্রান্ত জার্নাল- (Trade Journal) :
ব্যবসায় সংক্রান্ত প্রকাশিত জার্নালসমূহ থেকে সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য পেতে পারে।
৮. ট্রেড ডাইরেক্টরী- (Trade Directory) :
ব্যবসায় বাণিজ্য সম্পর্কিত নানাবিধ তথ্য সম্বলিত ডাইরেক্টরী থেকে হবু ঋণগ্রহীতার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত তথ্যাদির সংগ্রহ করা সহজতর হয়।
আরও পড়ুনঃ
- ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সূচিপত্র
- উৎকৃষ্টতম বনাম নিকৃষ্টতম তারল্য [ Best Liquidity Vs Worst Liqidity ]
- ব্যাংক তারল্যের প্রয়োজনীয়তার পরিমাণ অনুমান করণ [ Estimating a Bank’s Liquidity Needs ]
- তারল্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত তত্ত্ব সমূহ [ Liquidity Management Theory ]
- ব্যাংকের দৈনন্দিন নগদান ব্যবস্থাপনা [ Management of Day-to-day Cash in Bank ]