সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংক তার দরিদ্র ও ভূমিহীন সদস্যদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে গত ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ১৫৫তম বোর্ড সভায় গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণসহ সাতটি প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান ও নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিচালক মনোনয়ন দেয় ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ।
Table of Contents
ড. ইউনূসের অভিযোগের জবাবে গ্রামীণ ব্যাংক
২. ড. ইউনূসের অভিযোগ
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন:
- গ্রামীণ ব্যাংকের এই মনোনয়ন বেআইনি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর।
- তিনি নিজেকে গ্রামীণ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক দাবি করেন।
- দাবি করেন, এসব প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করার আইনি এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের নেই।
- আরও দাবি করেন, এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের অর্থ ব্যবহৃত হয়নি।
তবে আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তনের বিষয়ে ড. ইউনূসের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে, ২০০৯ সালে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তন করে চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিচালক মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষমতা বিলুপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
লিখিত বক্তব্যে ড. ইউনূস নিজেকে গ্রামীণ ব্যাংক ও এই ব্যাংকের সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক দাবি করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা গ্রামীণ ব্যাংকের ১ কোটি ৫ লাখ ঋণগ্রহীতার স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, অনৈতিক ও আইন পরিপন্থী। কারণ প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, যার মালিক বাংলাদেশ সরকার ও এর ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারগণ। এমনকি এ বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে।
৩. গ্রামীণ ব্যাংকের জবাব ও ব্যাখ্যা
(ক) আইনগত অধিকার
গ্রামীণ ব্যাংকের মতে, তারা যে সকল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে বা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, সেগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালক মনোনয়ন দেয়ার অধিকার আইনত তাদের রয়েছে।
- গ্রামীণ টেলিকমের আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন: ধারা ৫১, ৩৫(iii)
- গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন: ধারা ৩২(iii), ৪৮
(খ) অতীত নজির
- ১৯৯৫ সালে গ্রামীণ ব্যাংকই ড. ইউনূসকে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মনোনীত করে।
- ১৯৯৬ সালে একইভাবে তাকে গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়।
এই প্রেক্ষাপটেই ২০২৪ সালের বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ এবং ধারাবাহিক।
৪. ড. ইউনূসের বক্তব্য সম্পর্কে গ্রামীণ ব্যাংকের অবস্থান
(ক) মালিকানা ও আইনগত কাঠামো
- গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান।
- এর মালিক বাংলাদেশ সরকার ও এর ১ কোটি ৫ লাখ ঋণগ্রহীতা সদস্য।
- ড. ইউনূসের মালিকানা দাবিকে আইন পরিপন্থী, নৈতিকতাবর্জিত ও বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করে গ্রামীণ ব্যাংক।
(খ) প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট
- ১৯৯৬ সালের ২৫ এপ্রিল, গ্রামীণ ব্যাংকের ৪২তম বোর্ড সভায় ড. ইউনূসের প্রস্তাবেই গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
- সেই সময় ব্যাংক নিজেই প্রাইভেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে তার অংশীদার হয়েছিল — এটি সুপ্রতিষ্ঠিত এবং বৈধ প্রক্রিয়া।
৫. অফিসে প্রতিনিধিদের আগমন ও জবরদখলের অভিযোগ
ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা জোরপূর্বক অফিস দখল করেছেন।
তবে গ্রামীণ ব্যাংক জানায়—
- প্রতিনিধিদের সাদর অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন করা হয়।
- তারা শুধু বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের চিঠি হস্তান্তর করেন।
৬. গ্রামীণ ব্যাংকের প্রত্যাশা
গ্রামীণ ব্যাংক বোর্ড আশা করে,
“দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এবং তাদের স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে গৃহীত এ সিদ্ধান্ত বোর্ডের গঠনতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন ও সদস্যদের অধিকার সুরক্ষায় সহায়ক হবে।”
৭. ড. ইউনূসের সংবাদ সম্মেলনের সারাংশ
- সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস উপস্থিত ছিলেন মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে।
- তাঁর দাবি: “এই ভবনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক মুনাফার টাকা দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো বিনিয়োগ নেই।”
- তিনি বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপের এখতিয়ার রাখে না।”

এই বিবৃতির মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক ড. ইউনূসের অভিযোগকে আইনগত, নৈতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রেক্ষাপটে খণ্ডন করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে আরও আইনি ও নীতিগত আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।