[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

ব্যাংকের তারল্যের চাহিদা ও সরবরাহ

আজকের আলোচ্য বিষয় ব্যাংকের তারল্যের চাহিদা ও সরবরাহ। ব্যাংকের নগদ অর্থের চাহিদা প্রধানত আসে আমানতকারীদের উত্তোলনের নির্দেশনা থেকে। এছাড়াও অন্যান্য মক্কেল ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৈনন্দিন নগদ চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যাংককে নগদ অর্থ সরবরাহ করতে হয়। তবে ব্যাংক নিজে টাকা সৃষ্টি করতে পারে না, বরং এটি বিভিন্ন উৎস থেকে সরবরাহকৃত নগদ অর্থের মাধ্যমে তার লেনদেন পরিচালনা করে।

যেসব মক্কেল বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ব্যাংক থেকে দৈনন্দিন নগদ অর্থ গ্রহণ করে তাদের চাহিদা ও ব্যবহারের মাত্রাকেই ব্যাংকের তারল্য চাহিদা (Demand for Liquidity) বলা হয়। অন্যদিকে, ব্যাংকের এই নগদ অর্থের চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে নগদ অর্থ সরবরাহের প্রক্রিয়া ও ইচ্ছাকেই তারল্য সরবরাহ (Supply of Liquidity) বলা হয়।

নিম্নের ছকে ব্যাংকের তারল্যের চাহিদা ও সরবরাহের প্রকৃতি বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ব্যাংকের তারল্যের চাহিদা ও সরবরাহ [ Demand for and Supply of Bank Liquidiy ]

ব্যাংকের তারল্য চাহিদা ও যোগান প্ৰকৃতি :

Nature of Demand for and supply of Liquidity of Bank

তারল্য সম্পদের সরবরাহ

Supply of Liquidity Assets

তারল্য সম্পদের চাহিদা

Demand for Liquidity Assets

১. আমানত বৃদ্ধি১ আমানত উত্তোলন
২. আমানত বহির্ভূত সেবা থেকে আয় ২ ঋণ কিস্তি বিতরণ
৩. ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ / ঋণের কিস্তি / ঋণের সুদ পরিশোধ৩ ধার পরিশোধ
৪. ব্যাংকের সম্পত্তি বিক্রয়লব্ধ অর্থ৪ স্বল্পমেয়াদী অন্যান্য দায় পরিশোধ
৫. মুদ্রা বাজার থেকে ধার গ্রহণ৫. ব্যাংক সেবা প্রস্তুতিকরণ ও বিতরণ বা
৬. কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার গ্রহণ৬. ব্যাংক মালিকদের লভ্যাংশ নগদ অর্থে প্রদান।

তারল্য চাহিদা সরবরাহ

ব্যাংকের তারল্য (লিকুইডিটি) চাহিদা এবং সরবরাহের উৎস ও প্রক্রিয়া বিভিন্ন দিক থেকে নির্ধারিত হয়। নিম্নে তারল্য চাহিদা ও সরবরাহের প্রধান উৎসসমূহ এবং সম্পর্কিত ধারণাগুলো ব্যাখ্যা করা হলো।

তারল্য চাহিদা

ব্যাংকের তারল্য চাহিদার প্রধান ৬টি উৎস রয়েছে, যেগুলো হলো:
১। আমানত উত্তোলন
২। ঋণের কিস্তি পরিশোধ
৩। স্বল্পমেয়াদী অন্যান্য ঋণের পরিশোধ
৪। ব্যাংকিং সেবা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও বিতরণ খরচাদি
৫। ব্যাংক মালিকদের নগদ লভ্যাংশ প্রদান
৬। নগদ প্রধানের অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা

তারল্য সরবরাহ

ব্যাংকের তারল্য সরবরাহের উৎসও প্রধানত ৬টি, যেগুলো হলো:
১। আমানতের বৃদ্ধি
২। সেবালঋণের কিস্তি গ্রহণ
৩। ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধ
৪। সম্পত্তি বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ
৫। মুদ্রা বাজার থেকে গ্রহণকৃত অর্থ
৬। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তরল সম্পদ

 

তারল্য চাহিদা সরবরাহের ভারসাম্য

তারল্য চাহিদা ও সরবরাহের বিভিন্নতার কারণে ব্যাংকের তারল্যের অবস্থা তিনভাবে বিবেচিত হয়ঃ

() নীট তারল্য (Net Liquidity – N):
যদি সরবরাহের পরিমাণ SSS এবং চাহিদার পরিমাণ DDD হয়, তাহলে:

N=S−DN = S – DN=S−D

নীট তারল্য শূন্য বা ইতিবাচক হলে অর্থাৎ সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য পূর্ণ থাকে।

() তারল্য ঘাটতি (Deficit Liquidity – D):
যদি সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কম হয়, অর্থাৎ S<DS < DS<D, তাহলে ব্যাংকের তারল্য ঘাটতি দেখা দেয়। এর ফলে ব্যাংককে অতিরিক্ত নগদ অর্থের যোগানের ব্যবস্থা করতে হয়।

() অতিরিক্ত তারল্য (Surplus Liquidity – S):
যদি সরবরাহ চাহিদার তুলনায় বেশি হয়, অর্থাৎ S>DS > DS>D, তাহলে অতিরিক্ত তারল্য সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত তহবিল ব্যাংকের জন্য অলস অর্থ হিসেবে রয়ে যেতে পারে, যা লাভজনক নয়।

যখন ব্যাংকের নীট তারল্য ভারসাম্যপূর্ণ থাকে, তখন ব্যাংকের জন্য বিশেষ কোনো আশঙ্কার কারণ থাকে না এবং অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয় না। তবে, তারল্য ঘাটতি দেখা দিলে ব্যাংককে জরুরি ভিত্তিতে নগদ অর্থের যোগান দিতে হয়, যা ব্যয়বহুল ও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। অন্যদিকে অতিরিক্ত তারল্যের সময় ব্যাংককে সেই তহবিলকে লাভজনক বিনিয়োগে রূপান্তরিত করতে হবে, কারণ দীর্ঘ সময় অলস অর্থ রাখলে ব্যাংকের লাভের সুযোগ ক্ষুণ্ণ হয়। তাই ব্যাংকের জন্য তারল্য চাহিদা ও সরবরাহের সঠিক সমন্বয় বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

 

google news logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

গতানুগতিক তারল্য পরিমাপক [ Traditional Measures of Liquidity ]

ব্যাংক তারল্য সংগ্রহ করে সম্পত্তি এবং দায় উভয় উৎস থেকে। অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যাংকগুলো সাধারণত মুদ্রা বাজারে সীমিত প্রভাব থাকার কারণে, তাদের তারল্য সংকুলানের জন্য স্বল্পমেয়াদী নগদ সম্পদের উপর বেশি নির্ভর করে থাকে। অপরদিকে, বড় ব্যাংকগুলো মুদ্রা বাজারে অধিক প্রভাবশালী হওয়ায় ঋণপত্র বিক্রয়ের মাধ্যমে নতুন দায় সৃষ্টি করে তারল্য সংগ্রহ করে থাকে।

নিম্নে তারল্য নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত সম্পত্তি ভিত্তিক ও দায় ভিত্তিক পরিমাপকগুলো সারণী আকারে উপস্থাপন করা হলো:

সম্পত্তি ভিত্তিক তারল্য নির্ধারকসমূহদায় ভিত্তিক তারল্য নির্ধারকসমূহ
১. দৈনন্দিন প্রয়োজনাতিরিক্ত হাতে নগদান পরিমাণ১. মালিকের পুঁজি – মোট সম্পত্তির অনুপাত
২. অন্য ব্যাংকে থাকা চলতি আমানতের পরিমাণ২. ঝুঁকি সম্পত্তি – মোট সম্পত্তির অনুপাত
৩. অন্য ব্যাংকে স্বল্পমেয়াদী আমানতের পরিমাণ৩. ঋণক্ষতি – মোট ক্ষতির অনুপাত
৪. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তাৎক্ষণিক নগদান যোগ্য পরিমাণ৪. ঋণক্ষতি রিজার্ভ ও সমস্যাগ্রস্থ ঋণ
৫. এক বছর মেয়াদী সরকারী ঋণপত্র৫. মেয়াদী ও চলতি আমানতের শতকরা হার
৬. এক বছর মেয়াদী সরকারী সংস্থাসমূহের ঋণপত্র৬. মোট আমানত ও মোট দায়ের অনুপাত
৭. উচ্চমানসম্পন্ন কর্পোরেট ঋণপত্রসমূহ৭. মূল আমানত (Core deposit) ও মোট সম্পত্তির অনুপাত
৮. উচ্চমানসম্পন্ন নগর/শহর কর্তৃপক্ষের ঋণপত্র৮. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ ও মোট দায়ের অনুপাত
৯. ঋণপত্রে রূপান্তরযোগ্য ঋণের পরিমাণ৯. স্বল্পমেয়াদী দায় এবং বাণিজ্যিক ঋণপত্র মোট

সম্পত্তি ভিত্তিক তারল্য মূলত রূপান্তরযোগ্য সম্পদের উপর নির্ভর করে, যা সহজে নগদে রূপান্তরযোগ্য এবং কম ক্ষতি হয়। এ ধরনের সম্পত্তি যত বেশি এবং দ্রুত নগদে রূপান্তরযোগ্য, ব্যাংকের তারল্য তত বেশি ধরা হয়। তারল্যের এই পরিমাপ ব্যাংকের তরল সম্পদের প্রকৃতি ও পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয় এবং তুলনা উলম্ব বা সমান্তরাল, দু’ভাবেই হতে পারে।

অপরদিকে, দায় ভিত্তিক তারল্য বলতে বুঝায় ব্যাংক কত দ্রুত ও স্বল্প খরচে স্বল্পমেয়াদী ঋণপত্র বিক্রি করে নগদ তহবিল সংগ্রহ করতে পারে, যা তারল্য চাহিদা পূরণে ব্যবহার করা হয়।

Leave a Comment