একটি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার নির্দেশক [ Indicators of a Failed Bank ] বিষয়টি নিয়ে আজকের আলোচনা। যেকোন ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার নির্দেশক থাকে। ইংরেজিতে যাকে দেউলিয়া হওয়ার নির্দেশক Indicators of a Failed Bank বলা হয়। ব্যাংক এর আর্থিক অবস্থা কেমন, তা সেসব নির্দেশক দেখে বিচার করা যায়।
একটি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার নির্দেশক [ Indicators of a Failed Bank ]
ইতিপূর্বে CAMEL স্তর আলোচনা করার সময় যে পাঁচটি স্তর আলাপ করা হয়েছে তার মধ্যে পঞ্চম স্তর অসন্তোষজনক পর্যায় বলে ধরা হয়েছে। CAMEL পাঁচটি দৃষ্টি কোনের মূল্যায়ন শেষে কোন ব্যাংক যদি বেশিরভাগ দৃষ্টিকোন ও সমন্বিত দৃষ্টিকোন থেকে এ স্তরে মূল্যায়িত হয় তবে এ ব্যাংক গুলো আি ভাবে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন বলে ধরা যাবে। সাফল্য মূল্যায়নের তৃতীয় স্তর অর্জনকারী ব্যাংকগুলোকে প্রতিকার যোগা সমস্যাক্সটি বলে পরিগণিত করা যায়।
এরূপ সমস্যার সম্মুখীন ব্যাংক স্বাভাবিক প্রতিকার ব্যবস্থার মাধ্যমে অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। অপরপক্ষে সাফল্য মূল্যায়নে চতুর্থ ও পঞ্চম স্তরের ব্যাংকের অবস্থা উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে প্রতিকার গ্রহণ করেও আর্থিক অবস্থা উন্নয়ন করার সম্ভাবনা খুবই কম। এরপ স্তরের ব্যাংকগুলোকে বড় রকমের আর্থিক সংস্কার কঠোর ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের মাধ্যমে সব কয়টি ব্যাংককে না হলেও কয়েকটিকে দেউলিয়া উন্মুখ অবস্থা থেকে উত্তোরণ ঘটানো সম্ভব।
পরবর্তীতে চতুর্থ ও পঞ্চম স্তরে সমস্যাক্লীষ্ট ব্যাংকসমূহের মধ্যে কঠোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও চূড়ান্ত পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়াত্ব অর্জনে চিত্র সংখ্যা দেখা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ডিপোজিট ইন্সুরেন্স কোম্পানী (FDIC) দ্বারা সমন্বিত স্তর মূল্যায়ণে যে সকল ব্যাংক চার বা পাঁচ স্তরে অবস্থান করেছিল এরূপ সমস্যাক্সটি ব্যাংকের সংখ্যা নিয়ে দেখা যেতে পারে :
সন | সমস্যাগ্রস্থ ব্যাংকের সংখ্যা | দেউলিয়া প্রাপ্ত ব্যংকের সংখ্যা | সমস্যাগ্রস্থ দেউলিয়া ব্যাংকের শতকরা হার |
১৯৮৪ | ৮৪৮ | ৮০ | ৯.৪৩% |
১৯৮৫ | ১১৪০ | ১২০ | ১০.৫৩% |
১৯৮৬ | ১৪৮৪ | ১৪৫ | ৯.৭৭% |
১৯৮৭ | ১৫৭৫ | ২০৩ | ১২.৮৯% |
১৯৮৮ | ১৪০৬ | ২২১ | ১৫.৭২% |
১৯৮৯ | ১১০৯ | পাওয়া যায়নি | |
১৯৯০ | ১০৪৬ | পাওয়া যায়নি |
উৎস : The FDIC Quarterly Banking Profile, Fourth Quarter. 1990
উপরের চিত্র থেকে প্রতীয়মান হয় যে CAMEL স্তর পদ্ধতিতে সঠিকভাবে ব্যাংক চিহ্নিত করা সম্ভব এবং এরূপ ব্যাংক সনাক্ত করার পর সময়মত সতর্কতা প্রদান করে উপযুক্ত প্রতিকার উদ্যোগ গ্রহণকরে বেশীরভাগ সমস্যা কুষ্টি ব্যাংককে দেউলিয়াত্ব থেকে রক্ষা করে স্বাভাবিকতার দিকে ধাবিত করেছে।
দেউলিয়া গ্রস্ত ব্যাংক নির্দেশক কয়েকটি সংকেত নিম্নে ইঙ্গিত করা গেলঃ
অনুপাত | অবস্থান |
আয় ও সম্পদের অনুপাত | (-) |
ঋণ ও সম্পদের অনুপাত | (+) |
পুঁজি ও সম্পদের অনুপাত | (-) |
ক্রয় করা তহবিল ও সম্পদের অনুপাত | (+) |
নীট কু-ঋণ ও ঋণের অনুপাত | (+) |
বাণিজ্যিক ঋণ এবং শিল্প ঋণ সম্পদের অনুপাত | (+) |
১৯৮৫-৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোত্তম ব্যাংকগুলোর ২০ ভাগ একটি গড় আকৃতির ব্যাংকের ও একটি দেউলিয়া প্রাপ্ত ব্যাংকের গড় অবস্থা দেখে দেউলিয়া উন্মুখ ব্যাংক সনাক্ত করা যেতে পারে।
নির্দেশক | একটি উত্তম ব্যাংকের গড় অবস্থা | একটি দেউলিয়াগুস্ত ব্যাংকের গড় অবস্থা |
১৯৮৬ | ১৯৮৫ | |
নীট আয় | ১.৬৩% | -১৩.১৪% |
গড় মালিক পুঁজির আয় | ১৮.১১% | -২৪৯.৬৮% |
মালিক পুঁজি বৃদ্ধি হার | ১০.৮৪% | -৯৮.২৪% |
নীট উপরি খরচ ও অর্জনকারী সম্পদের হার | ২.৮৩% | ১১.১৯% |
সম্পদ বৃদ্ধির হার | ৮.৫০% | -১০.২০% |
নীট কুঋণ ও ঋণের হার | ০.৬৭% | ৯.০৯% |
কুঋণ পুনঃ উদ্ধারের হার | ৩২.০৫% | .০০% |
নীট ঋণ ও সম্পদের হার | ৪৭.৪০% | ৬৪.৩০% |
ছবির ঋণ ও পুঁজির হার | ১১.৯৩% | ২৩৫.৮৯% |
উপরোক্ত তথ্য থেকে বোঝা যায় বিশেষ অনুপাত বেশী হলে ব্যাংকের অবস্থা ভালো এবং কম হলে অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে ধরা যেতে পারে। অনুপাত সমূহ নেতিবাচক পর্যায়ে নেমে গেলে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা আংশকা জনক অবস্থায় নেমে গেছে বলে ধারণা করা হয়। অবস্থা নির্দেশক অনুপাত সমূহ বছরে অন্তত একবার এবং নিয়মিত ত্রৈমাসিক অনুপাত তৈরী করেও খারাপ অবস্থা পরিলক্ষিত হলে উপযুক্ত শুদ্ধি পদক্ষেপ সঠিক সময়ে গ্রহণ করলে অনেক দূর্বল ব্যাংকের অবস্থার প্রতিকার করা সম্ভব।
ব্যাংক তহবিল সংগ্রহ, তহবিল ব্যবহার ও এই দুইয়ের মধ্যে উদ্ভূত ঝুঁকি আয়ত্বে রেখে কার্যক্রম সম্পাদনে সক্ষম হলে সফলতা লাভে উত্তীর্ণ হতে পারে। পর্যাপ্ত পুঁজি সংগ্রহ তথা কালের আবর্তনে পুঁজির পর্যাপ্ততা রক্ষার প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। আমনত সংগ্রহকালে ব্যাংক কর্মকর্তাকে কাম্য আমানতের গুণগত দিক পরীক্ষা করে স্পর্শকাতর তথা নির্ভরযোগ্য মূল আমানতের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে হবে।
তারল্য রক্ষা তথা লাভের উদ্দেশ্যে তহবিল ঘাটতি পূরণের জন্য খোলা বাজার থেকে ধার করা অসমীচিন নয়। তে এরূপ যার গ্রহণকালে সংগ্রহ খরচ ও পরিশোধ ঝুঁকি বিবেচনা করে তহবিলের উৎস নির্বাচন করা আবশ্যক।ঋণ ও বিনিয়োগ উভয়ই মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাবৃন্দ অবলম্বন করে থাকে। এদের অতি সাবধান ব্যবহারে উদ্বৃত্ত তহবিলের সম্ভাবনা থাকে যা ব্যাংকের লাভ অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব রাখে। অপরদিকে, অতি নমণীয় ও সহজ ঋণ কার্যক্রম ব্যাংকের মুনাফা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখলেও তারল্য সংকট বা পুঁজি পর্যাপ্ততা ক্ষুন্ন করার আশংকা থাকে।
সাফল্য নির্দেশক হাতিয়ারসমূহ জানা থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে এরূপ হাতিয়ারসমূহ ব্যবহার করে নেতিবাচক নির্দেশিকা যথাসময়ে প্রতিকার করে সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। নির্বাচিত হিসাব অনপাতসমূহ নির্ণয় করে আশঙ্কাজনক গতিধারা চিহ্নিত করা সম্ভব। যে সব কার্যক্রম নির্বাচিত হিসাব অনুপাতের নিরিখে নেতিবাচক সংকেত প্রদান করে, অবস্থার অধিকতর বিপর্যয় ঘটার পূর্বেই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করে ব্যাংক কর্মকর্তাবৃন্দ সেসব কার্যক্রমের মোড় ইতিবাচক দিকে ঘুরাতে সক্ষম হয়। এরূপ সতর্ক পদক্ষেপ অবলম্বনের মাধ্যমে অনেক সময় দূরদর্শী ব্যাংক কর্মকর্তাবৃন্দ কোন একটি ব্যাংককে সম্ভাব্য দেউলিয়াত্ব পরিগ্রহ থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় বলে দেখা গেছে।
আরও পড়ুনঃ
- সাফল্য ভিত্তিক ব্যাংকের শ্রেণী করণ [ Performance Based Classification of Bank ]
- ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সূচিপত্র
- ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ধারণা [ Concepts of Bank Management ]
- বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা [ Banking System in Bangladesh ]
- ব্যাংক ব্যবসায়ের বহিঃ উপাদান [ External Factors of Bank Environment ]
- ব্যাংক ব্যবসায়ের পরিবেশ ব্যবস্থাপনা [ Management of Bank Environment ]