পুঁজির প্রকার ভেদ [ Types of Capital ] নিয়ে আজকের আলোচনা। পুঁজির অপর নাম মূলধন। একটি ব্যাংকের জননলগ্ন হতে বিলোপ সাধন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন মাত্রায় মূলধনের প্রয়োজনীয়তা লক্ষ্য করা যায়। সংক্ষেপে বলা যায়, ব্যাংকের জীবনচক্রে মূলধন বা পুঁজি স্নায়ুকেন্দ্র। ব্যাংকের সমস্ত কার্য প্রাথমিকভাবে মূলধন কেন্দ্রানুগ। মূলধন ব্যতীত ব্যাংকের কর্মপ্রবাহ বজায় রাখা সম্ভব হয় না। এই কারণে মূলধন সংক্রান্ত বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এমনকি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের কোন একটি ব্যাংকের সম্বন্ধে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ তথা প্রাথমিক কার্য সম্পাদনে মূলধনের প্রয়োজন হয়। বিশিষ্ট ব্যাংক বিশেষজ্ঞদের মতে, “The terms bank capital refers principally to funds contributed by the Bank’s owners, consisting mainly of stocks, reserves and those earnings that are retained in the Bank ”
“টাকা মানুষের শ্রম আর সত্ত্বার বিচিছন্ন সারমর্ম,
এই সারমর্ম নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে,
আর মানুষ একে করে উপাসনা”
– কার্ল মার্কস
ব্যাংক ব্যবসায় শুরু করতে হলে অফিস আসবাবপত্র জনশক্তি ইত্যাদির প্রয়োজন। মূলধনের অনুকূল না থাকলে এটা আদৌ সম্ভব নয়। এমনকি মূলধন ব্যতীত ব্যাংক ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন উল্লেখিত বিষয় থেকে প্রতীয়মান হয় যে ব্যাংকের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত মূলধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পুঁজির প্রকার ভেদ [ Types of Capital ]
পুঁজি সাধারণত দুই প্রকার
(ক) প্রাথমিক পুঁজি (Primary Capital)
(খ) মাধ্যমিক পুঁজি (Secondary Capitall
ক) প্রাথমিক পুঁজির উপাদান নিম্নরূপ :
(১) সাধারণ শেয়ার [Ordinary / Common Stock / sharesi]
(২) স্থায়ী অগ্রাধিকারী শেয়ার [ Perpetual Preferred Stock ]
৩) দেয়ার মালিকদের প্রদত্ত অতিরিক্ত পুঁজি [Capital Surplus (Share Premium) provided by the Owners]
(৪) অবণ্টিত মুনাফা [Undistributed Profits]
(৫) বাধ্যতামূলক রূপান্তরযোগ্য ঋণপত্র [Mandatory Convertible Instrument Debentures]
(৬) ঋণ ক্ষতি রিজার্ভ [Reserves of Loan Losses ]
(খ) মাধ্যমিক পুঁজির উপাদান নিম্নরূপ :
(১) অস্থায়ী অগ্রাধিকার শেয়ার [Limited life stock Share]
(২) দ্বিতীয় স্তরের দাবীযোগ্য নোটস ও ঋণপত্র [Subordinated Notes and Debenture]
(৩) প্রাথমিক পুঁজিতে রূপান্তরযোগ্য নয় এমন ঋণ পত্র (Mandatory Convertible Instrument ne Eligible for primary capital]
যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক পুঁজির সংগা দিতে গিয়ে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ FDIC এর মতে, উপরিউক্ত প্রাথমিক মাধ্যমিক পুঁজি একত্রে ব্যাংকের ভারযুক্ত ঝুঁকি সম্পত্তির শতকরা ৮ ভাগ হতে হবে। অধিকন্তু এই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পুঁজির মধ্যে বিভাজন করলে দ্বিতীয়টি অর্থাৎ মাধ্যমিক পুঁজির অংশ মোট পুঁজির মধ্যে পরিসর হবে এবং এটি অপেক্ষাকৃত কম এবং কোন ক্রমেই মোট পুঁজির অর্ধেকের বেশী হতে পারবে না। নিম্নে বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য উদাহরণ দেওয়া গেল ।
পরিমাণ | শতকরা ভার (%) | ভারযুক্ত ঝুঁকি সম্পত্তির পরিমাণ (মিলিয়ন ডলার) | |
সম্পত্তির শ্রেণী বিভাগ | |||
১ নগদ এবং কেন্দ্রীয় সরকারী ঋণপত্র (৯০ দিনের কম মেয়াদী) | ১০০ গুন | ০ | =০ |
২. কেন্দ্রীয় সরকারী ঋণপত্র (৯০ দিনের বেশী) | ১০০ গুন | ১০ | =১০ |
৩. প্রাদেশিক ও আঞ্চলিক সরকারী সাধারণ ঋণপত্র | ২০০ গুন | ২০ | =৪০ |
৪.আঞ্চলিক সরকারের রাজস্ব ঋণপত্র | ২০০ গুন | ৫০ | =১০০ |
৫. ঋণ | ৪০০ গুন | ১০০ | =৪০০ |
মোট | ১০০০ গুন | =৫৫০ | |
৮% হারে প্রয়োজনীয় পুঁজি | ৪৪ মিলিয়ন |
উৎসঃ Reed & Gill, “Commercial Banking” Englewood Cliffs. New Jersey 1989 p. 176 এ প্রদত্ত উপাত্ত ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় পুঁজির পরিমাণ অনুমান করা হয়েছে।
মন্তব্যঃ পূর্বোরিধিত সারনীতে একটি কল্পিত ব্যাংকের পুঁজির পরিমাণ অনুমান করা হয়েছে। এই কল্পিত ব্যাংকের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পুঁজির পরিমাণ হবে নিম্নরূপ :
প্রাথমিক পুঁজি + মাধ্যমিক পুঁজি = মোট পুঁজি
আমরা আলোচ্য ব্যাংকের মোট পুঁজির অনুমান জানি যা ৪৪ মিলিয়ন। তাহলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক আকারে কল্পিত ব্যাংকটির পুঁজি নিম্নরূপ হবে।

পরিমাণ মিলিয়ন ডলার | ||||
পুঁজির পরিমাণ | সর্বোচ্চ পরিমাণ | বিকল্প ১ | বিকল্প ২ | বিকল্প ৩ |
প্রাথমিক পুঁজি | $২২ | $২৪ | $২৯ | $১৪ |
মাধ্যমিক পুঁজি | $২২ | $২০ | $১৫ | $৩০ |
মোট পুঁজি | $৪৪ | $৪৪ | $৪৪ | $৪৪ |
উপরোক্ত চিত্রে যে তিনটি প্রকল্পের অবতারণা করা হয়েছে তার মধ্যে ১ম বিকল্প ও ২য় বিকল্প গ্রহণযোগ্য কিন্তু ৩য় বিকল্পটি গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে উক্ত বিকল্পের উদ্যোক্তা ব্যাংক আইন অমান্য করেছে বলে শাস্তিযোগ্য অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে। এবং নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক বলে বিবেচিত হবে। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে পুঁজি কাঠামো কাংখিত স্তরে উন্নীত করার নির্দিষ্ট মেয়াদ দিয়ে সতর্কতা নোটিশ জারী করবে। এ মেয়াদের ভিতরে সমস্যাগ্রস্থ ব্যাংক আইনানুগ ভাবে পুঁজি কাঠামো সংস্কার করতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকটি গোটানোর পদক্ষেপ নিতে কর্তপক্ষ বাধ্য হবে।
আরও পড়ুনঃ