বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা
Table of Contents
বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা [ Organization of Mangement of Commercial Bank ]
ক. অন্যান্য নির্দেশনা : Other Guidelines
(ক) পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী :
প্রস্তাবিত ব্যাকিং কোম্পানীটিকে কোম্পানী আইন,১৯৯২-এর অধীন একটি পাবলিক লি: কোম্পানী হতে হবে।
(খ) মূলধন ও রিজার্ভ কাঠামো :
বাংলাদেশে নিবন্ধিত একটি প্রাইভেট ব্যাংকের ৪০ কোটি টাকা অথবা মোট তলবী ও মেয়াদী আমানতের ৬% উহার মধ্যে যেটা বেশী সে পরিমান পরিশোধিত হতে হবে।
(গ) ব্যবস্থাপনাঃ
ব্যাংকের পরিচালক বা ভোক্তাগণকে প্রতিষ্ঠিত ও প্রত্যাশাত ব্যবসায়ী/শিল্পপতি হতে হবে এবং এর প্রধান নি কমপক্ষে ১৫ বৎসরের বাংকিং পেশায় অভিজ্ঞ হতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে প্রধান নির্বাহী নিয়োগ করা হয়।
(ঘ) উদ্যোক্তা বা পরিচালকগণকে ঋণ প্রদানে বিধি নিষেধঃ
(১) বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ব্যতীত ব্যাংকটির উদ্যোক্তা বা পরিচালকগণকে বা তাদের স্বার্থসংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এ ব্যাংক হতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ৫০ লক্ষ টাকার অধিক ঋণ দেওয়া যাবেনা। তবে ক্যাশ ক্রেডিট, ওভারড্রাফট,লিম (LIM) প্রি-পূর্বানুমোদন গ্রহন করতে হবে।
(২) ব্যাংক কোম্পানী নিম্ন বর্ণিত ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পরিচালক খ্যাতিত অন্যান্য পরিচালকগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুমোদন ব্যতিরেকে, কোন ঋণ বা অগ্রীম প্রদান করবেনা,
(ক) উহার কোন ব্যক্তি, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান কোন কোম্পানী, যার সাথে বা যাতে উক্ত ব্যাংক কোম্পানীর কোন পরিচালক-অংশীদার, পরিচালক বা জামিন দাতা হিসেবে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট রয়েছে। এখানে পরিচালক বলতে পরিচালকের স্ত্রী, স্বামী, পিতা, মাতা পুত্র, কলা ভাই বোন এবং ঐ পরিচালকের উপর নির্ভরশীল সকলকে বুঝাবে।
(৩) বাংলাদেশ ব্যাংকের লিখিত পূর্বানুমোদন বাতিরেকে কোন ব্যাংক কোম্পানী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন ব্যক্তি বা সংস্থাকে এমন কোন সুবিধা দিতে পারবেনা যার পূর্ণ মূল্যায়ন
(ক) উক্ত ব্যাংক কোম্পানীর মোট মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশী বা
(খ) যে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সহজে বিপনন করা যায় এমন আর্থিক সিকিউরিটি দ্বারা উক্ত সুবিধার নিরাপত্তা বিধান করা হয়, উবার কোম্পানীর মোট মূলযনের ২৫ শতাংশের বেশী।
তবে শর্ত থাকে যে বাংলাদেশ তাকে কোন বাক্তি বা সংস্থাকে বা একই মালিকানাধীন বা গোত্রভুক্ত সংঙ্গাকে কোন ব্যাংক কোম্পানী মোট মূলধনের ১০০% এর বেশী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সুবিধাদানের অনুমতি দিতে পারবেনা।
(৪) কোন ব্যাংক কোম্পানীর উদ্যোক্তা বা পরিচালকগণ যৌথভাবে ঐ ব্যাংক কোম্পানীর ঋণ প্রদানযোগ্য তহবীলের ১০% এর বেশী সুবিধা ঐ ব্যাকিং কোম্পানী হতে গ্রহন করতে পারবেনা।
(ঙ) ক্রেডিট নির্দেশনা :
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত ও আরোপিত সকল ঋণ সংক্রান্ত নির্দেশনা ব্যাংক কোম্পানীর কান কালে অবশ্যই পরিপালনীয়।
(চ) সাধারন শর্তাবলী :
উপরের বর্ণিত সকল শর্তাবলী ছাড়াও ব্যাংক কাম্পানী আইন, ১৯৯১ এর সকল পালনীয় শর্তাবলী এক বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনানুযায়ী প্রয়োগ করতে পারবে।
(ছ) জয়েন্ট ভেঞ্চার ব্যাংক
দেশী ও বিদেশী যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংক স্থাপনের প্রক্রিয়া তখনই সমর্থন করা হবে যখন ইহা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, জয়েন্ট ভেঞ্চার ব্যাংকের ফলে দেশে সরাসারি বৈদেশিক বিনিয়োগ (Foreign Direct Investment) প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। এতদ্যতিত উপরোক্ত “ক” হতে “ছ” পর্যন্ত বর্ণিত সকল নিয়মাচার ও জয়েন্ট ভেঞ্চার ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
(জ) উপরোক্ত সকল শর্তাবলী বা উহার কোন অংশ বাংলাদেশ ব্যাংক সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন করার ক্ষমতা সংরক্ষন করে।

খ. ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশনা
প্রধান নির্বাহী
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হবেন পরিচালনা পর্ষদের প্রধান। অথবা যদি প্রধান নির্বাহীর (পদ যাই হোক না কেন) পদটি যদি শূন্য থাকে তবে তার পদের বিপরীতে অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক দায়িত্ব পালনে দায়বদ্ধ থাকবেন। তবে প্রধান নির্বাহীর পদটি যদি তিন মাসের মধ্যে পূরণ করা না হয় দেশ বা কো ন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রশাসক নিযুক্ত করতে পারবে এবং সংড়ির কোম্পানী তাহার নানি অন সুবিধাদি বাবদ খরচ বহন করবে এই কানুনটি (১৫ ক) ধারা মতে উদ্ধৃত হলো ৪ বাংক কোম্পানী আইন !সেকশন ১৫ ক)
গ. নতুন পরিচালক নির্বাচন, পরিচালক পদের শুন্যতা এবং পরিচালক কর্তৃক কতিপয় সুযোগ সুবিধার বিষয় সম্পর্কিত বিধান
ব্যাংক কোম্পানী আইন ১৯৯১ এর ১৫ ধারা মতে নতুন ব্যাংক বা বিশিষ্ট ব্যাংক ব্যতীত অন্য যে কোন ব্যাংক কোম্পানীকে উহার নতুন পরিচালক নির্বাচিত করার উদ্দেশ্যে উক্ত কোম্পানীর সাধারন সভা আহবানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ প্রদান করতে পারে। এ নির্বাচন বাংলাদেশ ব্যাকের প্রদত্ত আদেশের ২ মাসের মধ্যে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বর্ণিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ মর্মে বিধান করতে পারবে যে, নতুন ব্যাকে বা বিশিষ্ট ব্যাংক ব্যতীত অন্য যে কোন ব্যাংক কোম্পানীতে উহার উপদেষ্টা (যদি থাকে) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নিবাহী কর্মকর্তা, পদের নাম যাই হোক না কেন, এর নিযুক্তির পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে এবং এরূপ নিযুক্ত উপদেষ্টা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নিবাহী কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ব্যতিত তার পদ হতে বরখাস্ত করা অব্যহতি দেয়া বা অপসারন করা যাবেনা।
পরিচালক পদে শুন্যতা
ব্যাংক কোম্পানীর কোন পরিচালকের পদ শূন্য হবে:
(ক) যদি তৎকর্তৃক গৃহীত অগ্রীম বা ঋণ বা উক্ত অগ্রীম বা ঋণের কিস্তি বা সুদ পরিশোধ করতে তিনি ব্যর্থ হন।
(খ) কোন জামিনের জন্য তাঁর নিকট প্রাপ্য টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন, বা
(গ) তৎকর্তৃক সম্পাদনীয় কোন কর্তব্য যার দায়িত্ব তিনি লিখিত ভাবে গ্রহন করেছেন, তা সম্পাদন করতে ব্যর্থ হন। এবং উক্ত ব্যাগে কোম্পানী বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে নোটিশ দ্বারা তাকে উক্ত অগ্রীম, ঋণ, কিন্তুি, সুদ বা ঢাকা পরিশোধ বা উক্ত কর্তর সম্পাদন করতে নির্দেশ পাওয়ার ২ মাসের মধ্যে তিনি উক্ত রূপ পরিশোধ বাকর্তব্য সম্পাদন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে উক্ত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে তার পদ শুন্য হবে।
তবে উপরোক্ত বিষয়সমূহ সম্পর্কে নোটিশ প্রাপ্ত হলে সংশিষ্ট বিষয় সম্পর্কে যদি তার কোন বস্তুত থাকে, তবে তিনি তা নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরন করবেন এবং উহার একটি কপি নোটিশে প্রদানকারী ব্যাংক কোম্পানীকেও প্রেরন করবেন।
উপরোক্ত তাঁর বক্তব্যের উপর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। তবে শুন্য হওয়া পদের বিপরীতে যে ব্যক্তি পরিচালক ছিলেন তার নিকট হতে ব্যাংকের প্রাপ্ত টাকা তার শেয়ার সমন্বয়ের মাধ্যমে আদায় করা হবে এবং উরু রূপ সমন্বয়ের পর যে টাকা কাকী থাকবে উহা প্রচলিত আইনানুযায়ী আদায় করা হবে।
পরিচালক কর্তৃক কতিপয় সুযোগ সুবিধার বিষয় সম্পর্কিত বিধান
(১) ব্যাংক কোম্পানীর কোন পরিচালক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় অংশ গ্রহনের জন্য নির্ধারিত ফিস বা ব্যাংকের ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হওয়ার কারণে পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত দ্বারা তার উপর আরোপিত কোন বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য পর্ষদ কর্তৃক স্থিরিকৃত অর্থ ব্যতিত ব্যাংক হতে আর্থিক বা অন্য কোন সুযোগ সুবিধা গ্রহন করবেন না । উল্লেখ্য, বেসরকারী ব্যাংক সমূহের পরিচালকদের পরিচালক পর্ষদের সভায় উপস্থিতির জন্য প্রদেয় সম্মানীর হা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সর্বোচ্চ ১৫০০ (এক হাজার পাঁচ শত) টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
(২) যদি বাংক কোম্পানীর কোন পরিচালক কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থাপনার সহিত বা সংশ্লিষ্ট থাকাকালীন চিতে অন্ততঃ তাহার অনুম দশ শতাংশ স্বত্ব থাকাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংক কোম্পানীর বাকে ব্যবসার ব কোন ব্যবসা সম্পাদিত হয়। তাহলে বাংক কোম্পানীকে উহার সাধারণ সভায় এ বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা সম্বলিত একটি প্রতিবেদনপেশ করতে হবে।
ঘ. ব্যাংকের কার্যাবলী সংক্রান্ত নির্দেশনা
(ক) বাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক ব্যবসা ছাড়াও এ প্রতিষ্ঠান অন্যান্য অনুমোদিত ব্যবসায়িক কার্যাবলীও সম্পাদন করে ধে আবার কিছু কাজ ব্যবসা সংক্রান্ত হলেও ব্যাংক তা করতে পারে না। নিম্নে ব্যাংকের অনুমোদিত ও অননুমোদিত কার্যের কিছু তালিক উপস্থাপন করা হলো।
অনুমোদিত কাজ | অনুমোদিত কাজ |
(ক) ব্যাংক সাধারণত গ্রহণ, অর্থ সংগ্রহ, বা গ্রহন, বিনিময় বিল, ছণ্ডি, প্রতিশ্রুতিপত্র, কুপন, ড্রাপট, বহনপত্র, রেলওয়ে রশিদ, ওয়ারেন্ট, ঋণপত্র, মেয়াদী অংশগ্রহন পত্র, মেয়াদী অর্থ সংস্থান পত্র ইত্যাদি গ্রহন ও ঘাট্টা এবং প্রয়োজনে হস্তান্ত করে। এছাড়া ব্যাংক স্বর্ণ, রৌপ, অন্যান্য ধাতব মুদ্রা ক্রয় বিক্রয়, অন্যান্য বিদেশী ব্যাংক নোটসহ বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিনো করে। ব্যাংক স্টক, তহবিল, শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড, দায় ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত অন্যান্য দলিল ও সর্বপ্রকার বিনিয়োগ গ্রহন, ধারণ ও উহাদির লেনদেন করতে পারে। এছাড়া ব্যাংক মূল্যবান জিনিস গচিহ্নত রাখার জন্য ভল্টের ব্যবস্থা করে, জামানতি সম্পাত্তির উপর অধিকার বা স্বত্ব অর্জনের ব্যবস্থা করে। ব্যাংক ট্রাষ্টি ও শেয়ার বাজারের সিকিউরিটি ছাড়ার জন্য অবলেখক হিসেবে করতে পারে। সর্বোপরি ব্যাংকের কর্মচারী ও তাদের পোষ্যগণের কল্যাণার্থে পেনশন, ভাতা, বীমার প্রিমিয়াম ইত্যাদির ব্যবস্থা করে থাকে। | (ক) অনুমোদিত ব্যবসা ব্যতীরেকে সকল ধরণের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। |
ব্যাংক কোম্পানী আইন, সেকশন-৭]
(খ) বাকে-কোম্পানী সম্পর্কিত কতিপয় তৎপরতার উপর বাধা নিষেধ।
বাংলাদেশ ব্যাংক কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরূদ্ধে নিম্নলিখিত তৎপরতার জন্য অনুর্য ২ বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্য ২০ হাজার টাকা দন্ডের ব্যবস্থা করেছে।
(১) বাংক কোম্পানীর কোন দপ্তরে বা কার্যস্থলে আইনানুগভাবে অন্য কোন ব্যক্তির প্রবেশ বা কোন কার্যসম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করলে
(২) ব্যাংক কোম্পানীর কোন দপ্তরে উগ্রভাবে মিছিল করলে বা স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটালে
(৩) ব্যাংক কোম্পানীর উপর আমানতকারীর আস্থা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোন কাজ করলে উপরোল্লিখিত কেস তৎপরতা বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্যও প্রযোজ্য। ব্যাংক কোম্পানী আইন! সেকশন-৭)
আরও পড়ুনঃ