বিনিয়োগ কৌশলসমূহ [ Investment Strategies ] বিনিয়োগ মুখ্যত আয়ের উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে। তারল্য প্রয়োজন মিটানো বিনিয়োগের আরেকটি উদ্দেশ্য থাকে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকের পর্যাপ্ত পুঁজি সংরক্ষণ একান্ত আবশ্যক। পর্যাপ্ত পুঁজি সংরক্ষণের জন্য প্রদত্ত গুণের ভারযুক্ত ঝুঁকি নাম করে ও বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা তথা অনুমোদন সাপেক্ষে ঋণপত্রসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে থাকে। উল্লেখিত লক্ষ, অজর্নে সাফল্যের নিমিত্তে বিনিয়োগ কালে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ কর্মকর্তাবৃদ্ধ কালের আবর্তনে বিভিন্ন ধরণের বিনিয়োগ কৌশল অবলম্বন করে আসছে। ভিন্ন ভিন্ন কৌশল নানাভাবে লক্ষ্য অধর্মে সহায়ক হয়। প্রতিটি কৌশলের নিজস্ব প্রেক্ষিত তথা সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। ব্যাংক বিনিয়োগ কর্মকর্তাবৃন্দকে ব্যাংকের মূল লক্ষ্য মুনাফার মাধ্যমে সম্পদ সর্বাধীকরণ মনে রেখে এবং প্রেক্ষিত বিবেচনা করে এরূপ কৌশল প্রয়োগ করতে হয়।
Table of Contents
বিনিয়োগ কৌশলসমূহ [ Investment Strategies ]
বিনিয়োগ কৌশল সাধারণত দু’প্রকারের হয়ে থাকে। যথাঃ লেনদেন প্রকৃতি কৌশল ও মেয়াদপূর্ণতা কৌশল।
উল্লেখিত কৌশল সমূহ আবার বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। চিত্রে তা প্রদর্শিত হল ঃ
বিনিয়োগ কৌশলসমূহ | |
লেনদেন প্রকৃতি কৌশল | মেয়াদপূর্ণতা কৌশল |
১. নিষ্ক্রিয় কৌশল | ১. মই/ সমকাল অস্ত্র কৌশল |
২. সক্রিয় কৌশল | ২. সম্মুখ প্রান্ত সীমা বোঝাই কৌশল |
৩. পশ্চাত প্রান্তসীমা কৌশল | |
৪. ভার উত্তোলন কৌশল | |
৫. প্রত্যাশিত হার কৌশল |
চিত্রে উল্লেখিত দু’ধরণের বিনিয়োগ কৌশল সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোকপাত করা গেল :
(ক) লেনদেন প্রকৃতি কৌশল :
ব্যাংকের বিনিয়োগ লেনদেন সাধারণত দু’রকমের হতে পারে। যথাঃ
১. নিষ্ক্রিয় কৌশল – Inactive Strategy
বিনিয়োগের এ কৌশল অনুযায়ী ব্যাংকের বিনিয়োগ কর্মকর্তা পোর্টফলিও নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয়সমূহ এবং বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের নিরিখে কোন নির্দিষ্ট অনুমোদিত ঋণপত্র, বন্ড, ট্রেজারী বিল অথবা শেয়ার ক্রয় করে মেয়াদ পূর্ণতা পর্যন্ত সংরক্ষণ করে থাকে। মেয়াদ পূরণান্তে দলিলাদির লাভসহ মূল টাকা গ্রহণ করে ব্যাংক তৃপ্ত থাকে। অবশ্য তারল্য প্রয়োজনের চাপের মুখে সময়/মেয়াদ পূরণের পূর্বেই এরূপ বিনিয়োগে অবসায়ন ঘটানো হয়ে থাকে।
২. সক্রিয় কৌশল – Active Strategy
বিনিয়োতার এ কৌশল অনুযায়ী বাংকের বিনিয়োগ কর্মকর্তা পরী হিল, শেয়ার ইত্যাদি মেয়াদ পূর্ণকাল পর্যন্ত অলস ভাবে ধরে বসে থাকেনা। বহু প্রতি দিনকার রাজার পর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করাই এরূপ লেনদেন কৌশলের প্রধান বিষয়। এছাড়াও এই কৌশল অবলম্বনকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা সুদের হার পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীল থাকেন।
অর্থাৎ সক্রিয় লেনদেন কৌশল অনুযায়ী মেয়াদ পূর্ণ হবার পূর্বেই মূলধন স্ফীতি (Capital Appreciation) অপর হাতের পরিবর্তনের ফলে লাভের সম্ভাবনা থাকলে ধারনকৃত স্বর্ণপত্র ও অন্যান্য দলিলাদি বিক্রয় করে তৎকালীন বাজারে পাওয়া যায় এমন কারজনক নতুন সিকিউরিটি বিনিয়োগ পোর্টফলিও সন্নিবেশিত করে থাকে। এরূপ লেনদেন কৌশল অবলম্বন করলে গেমসনজনিত লোকজন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে অনবরত আক্রমণাত্মক সক্রিয় লেনসন কৌশল প্রায়শ দক্ষ বিনিয়োগ কর্মকর্তা কর্তৃক প্রযুক্ত হলে কাকে বহু সহান্তে নিষ্ক্রিয় কৌশলের মাধ্যমে প্রাপ্য লাভের চেয়ে কয়েক গুণ বিনিয়োগ লাভ অর্জন করতে পারে।
খ. মেয়াদ পূর্ণতা কৌশল -(Maturity Strategy)
ঋণপত্র, বন্ড ইত্তাদিতে বিনিয়োগ করে নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে মুনাফা বা সুদ প্রাপ্য হয় কোন মেয়াদের কত পরিমাণের বিনিয়োগ করা হবে ব্যাংকের পক্ষে এ সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিনিয়োগ মুনাফা অর্জন ছাড়াও ব্যাংকের তৃতীয় সারির তারল্য রক্ষা কবজ হিসেবে কাজ করে থাকে। দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ বেশী মুনাফা অর্জনে সক্ষম। কিন্তু এখন বিনিয়োগ থেকে তারল্য সুবিধা পাওয়া অসম্ভব। অপরপক্ষে স্বল্প মেয়াদী বিনিয়োগ থেকে তারল্য সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী বিনিয়োগজনিত লাভ সম্ভাবনা কম। অতএব বিনিয়োগের পাঁচ ধরনের ভিন্নতর কৌশল অবলম্বন করা হয়। যথা:
১. মই/ সমকাল অস্ত্র কৌশল- (Ladder/ Equal Space Strategy)
এ কৌশল অনুযায়ী বিনিয়োগ কর্মকর্তা বিনিয়োগযোগ ব ও সম্ভাব্য সর্বোচ্চ বিনিয়োগ মেয়াদ প্রথমে ঠিক করে থাকেন। অতঃপর বিনিয়োগ যোগ্য তহবিলকে সর্বোচচ মেয়াগ দ্বারা ভাগ করে প্রতি বছরই সমান পরিমাণ বিনিয়োগ করে থাকে। এতে প্রত্যেক বছরের শেষে লাভ সহ উক্ত বিনিয়োগ অবসান হয়। এবং বিনিয়োগ কর্মকর্তা এরূপ তহবিল পুনরায় একই নিয়মে নির্দিষ্ট কোন মেয়াদের ঋণপত্রে বিনিয়োগ করে থাকে। এ কৌশল অবলম্বন করতে বিনিয়োগ কর্মকর্তাকে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিশেষায়িত কারিগরী জ্ঞানের অধিকারী না হলেও চলে। তবে এ কৌশল অবলম্বন করে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্য লাভের তেমন কোন হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেনা ।

২. সম্মুখ প্রান্ত সীমা বোঝাই কৌশল- (Front-End Load Maturity Strategy)
বিনিয়োগ নির্ধারণের এ কৌশল অনুযায়ী সাধারণত যত্ন মেয়াদে করে থাকে। এরূপ বিনিয়োগের মূখ্য উদ্দেশ্য তারল্য চাহিদা পূরণ ও গৌণ উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। অতএব এ কৌশল বিনিয়োগকারী কর্মকর্তা স্বল্পমেয়াদকে উপলক্ষ করেই বিনিয়োগ মেয়াদ পূর্ণতা স্থির করেন। এ কৌশল অবলম্বন করলে পুঁজিস্ফীতি জনিত লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম।
৩. পশ্চাত প্রান্তসীমা কৌশল – (Back End Maturity Strategy)
এ কৌশল অবলম্বন করা হয় সাধারণত যখন স্বল্প মেয়াদী পত্র রাখার দরকার হয়না। এ কৌশল অবলম্বনকারী বিনিয়োগ কর্মকর্তা অপেক্ষাকৃত মধ্যম অথবা দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ করে থাকেন। সতকর্তার সাথে এরূপ মেয়াদে বিনিয়োগ যোগ্য তহবিলকে বিভিন্ন মেয়াদে বিন্যাস্ত করে ঝুঁকি কমানোর প্রচেষ্টা নিবেদন করা হয়ে থাকে। দেখা গেছে এরূপ মেয়ান নির্বাচনের পশ্চাত প্রাপ্ত সীমা কৌশল অবলম্বন করে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারী ব্যাংক সবার্ধিক মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়।
৪. ভার উত্তোলন কৌশল-(Barbell Strategy)
এ কৌশল অবলম্বনকারী বিনিয়োগ কর্মকর্তা বিনিয়োগযোগ্য তহবিল নিরূপণ করে তারল্য ও মুনাফা উভয় লক্ষ্যকে সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অর্থাৎ বিনিয়োগ কর্মকর্তা বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের অর্ধেক তারল্য প্রয়োজনে লক্ষ্য রেখে স্বল্পমেয়াদের এবং বাকী অর্ধেক বিনিয়োগযোগ্য তহবিল অধিক হারে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে অপেক্ষাকৃত মধ্যম/ দীর্ঘ মেয়াদের জন্য নির্বাচন করে থাকে।
৫. প্রত্যাশিত হার কৌশল-(The Rate of Expectation Strategy)
এ কৌশল অবলম্বনকারী কর্মকর্তা সাধারণত সক্রিয় লেনসেনে বিশ্বাসী । এর ফলে বিনিয়োগ কর্মকর্তা সুদের হারের হ্রাস বৃদ্ধি নিবিড় ভাবে লাভের আশায় স্বল্প/মধ্যম দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বিনিয়োগ করে থাকেন। এরপ কৌশল অবলম্বন-কারী কর্মকর্তা প্রায়শঃ মেয়াদ পরিবর্তন করে মুনাফা বৃদ্ধির প্রয়াস নিয়ে থাকে।
অনেক সময় সুদের হারে মুদ্রাস্ফীতিজনিত পরিবর্তনের পূর্বাভাস অনুযায়ী এরূপ কৌশল অবলম্বনকারী বিনিয়োগ ‘কর্মকর্তা আক্রমনাত্বক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সঠিক পূর্বাভাসের জন্য ব্যাংকের যেমন অধিক হারে বিনিয়োগ জনিত অধিক মুনাফা অর্জনের সুবিধা আছে আবার ত্রুটিপূর্ণ যা স্কুল সুদের হার তথ্য মুলক্ষীতি পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে বড় পরিমাণের বিনিয়োগের জন্য মেয়াদ পূর্ণতা নির্বাচন করলে বড় ধরনের ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে।
আরও দেখুনঃ
- ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সূচিপত্র
- ব্যাংকের বিনিয়োগের কর্মপন্থা [ Bank’s Investment Policy ]
- উত্তম বিনিয়োগ নীতিসমূহ [ Principles of Sound Investment ]
- ব্যাংকের বিনিয়োগের উদ্দেশ্যাবলী ও কার্যাবলী [ Objectives & Functions of Bank Investment ]
- ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রমের প্রশাসনিক কাঠামো [ Administrative Structure of Investment Activities ]