[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের যৌক্তিকতা

ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের যৌক্তিকতা [ Rationale of increasing importance of Bank Management ] নিয়ে আজকের আলাপ। যে কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানই প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সমগোত্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে অধিকতর আকর্ষণীয় হওয়ার জন্য তুলনামূলকভাবে বেশী মুনাফা অর্জনে নিবেদিত থাকে আর এ প্রয়াস বাস্তবায়নের একমাত্র চাবিকাঠি হল দক্ষ ও ফলপ্রসু ব্যবস্থাপনা।

 

ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের যৌক্তিকতা [ Rationale of increasing importance of Bank Management ]

 

ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের যৌক্তিকতা [Rationale of increasing importance of Bank Management ]

ব্যাংক যদিও একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তথাপিও এটির উপর সরকারী তথা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ সদাসতর্ক নজর রাখে বলে অন্যবিধ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এটির ব্যবস্থাপনা অনেক চ্যালেঞ্জিং ও কষ্টকর। সরকারী নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ক্রমবর্ধমানহারে চ্যালেঞ্জিং হওয়ার যথার্থতা নিম্নের চিত্রে পরিলক্ষণ করা যেতে পারে।

  • পরিবর্তনশীল নিয়ন্ত্রক বিধি-বিধান
  • প্রযুক্তিনির্ভর ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা
  • ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের যথার্থতার নির্ধারকসমূহ
  • পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

ব্যাংক ব্যবস্থাপনা দিন দিন জটিলতর হচেছ তিনটি প্রভাবকারী নির্ধারকের জন্য। এদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাথা নিম্নে দেখা যেতে পারে :

 

ব্যাংক ব্যবসায় ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা ও অন্যান্য বিষয়ের কারণে চৌকস ব্যবস্থাপনা কোন বিকল্প নেই [ Free Image from Pixabay.com ]

 

(১) পরিবর্তনশীল নিয়ন্ত্রক বিধি-বিধান [Changing Regulations for Banks]

বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের শেষার্ধে সংগঠিত অর্থনৈতিক মন্দার ফলে সারা বিশ্বে হাজার হাজার ব্যাংকে লালবাতি জ্বলেছে বলে জানা যায়। ব্যাংকের ব্যর্থতার জন্য কোটি কোটি আমানতকারী আমানত ফেরত না পেয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয় এবং ব্যাংকগুলো দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তখন থেকেই আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে আমানত বীমা বাধ্যতামূলক করে ব্যাংকগুলোর ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়। ইতপূর্বে অন্যসকল প্রতিষ্ঠানের মত নিবন্ধন পত্র লাভ বা ব্যবসায় আরম্ভের অনুমতি লাভসহ বাৎসরিক আর্থিক বিবরণী পেশই নিয়ন্ত্রণকারীদের পক্ষে যথেষ্ট ছিল।

ব্যাংক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণের গতি প্রকৃতি দেশে দেশে তথা একই দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময় জনস্বার্থের নিরিখে পরিবর্তন, পরিবর্ধন হওয়া স্বাভাবিক। সরকার তথা ব্যাংক নিয়ন্ত্রনকারী কর্তৃপক্ষসমূহ ব্যাংক যাতে ব্যর্থ না হয়, আমানতকারীদের তহবিল যাতে নিরাপদ থাকে, বৈষম্যহীন ঋণসুবিধা যাতে সবার জন্য খোলা থাকে তথা দেশের সর্বসাধারণের স্বার্থে মুদ্রা সরবরাহও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজন অনুযায়ী নুতন নুতন বিধান মেনে কার্যক্রম সম্পাদনে ব্যবস্থাপকীয় কৌশলাদি যুগোপযোগী করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে।

যে সকল কৌশল অবলম্বন করে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সমূহ বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তার প্রধান কয়েকটি নিম্নরূপঃ

  • ব্যাংক সেবার ন্যায্য মূল্যের নির্দেশনা
  • আমানত বীমা প্রচলন
  • পর্যাপ্ত তারল্য রক্ষায় নির্দেশণা
  • মূলধনের অপর্যাপ্ততার নির্দেশণা
  • অনুমোদিত ও অনঅনুমোদিত ব্যাংক ঋণ কার্যক্রমের নির্দেশনা
  • পরিচালক নিয়োগ, কর্তবা ও দায় সংক্রান্ত নির্দেশনা
  • ঋণ তদারকী ও পুনরীক্ষণ
  • রিজার্ভ সংক্রান্ত নির্দেশনা

প্রতিনিয়ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষসমূহ নতুন নতুন আইন কানুন ও নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে তুলছে।

 

(২) প্রযুক্তি নির্ভর ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা [ Increasing Competition due to Changing Technological Development]

গ্রাহক সেবার সংখ্যা ও সেবামান প্রতিযোগিতার ভিত্তি। যে ব্যাংক যত অধিকসংখ্যক ও যত উন্নত সেবা প্রদানে সক্ষম সে ব্যাংক প্রতিযোগিতার তত বেশী সফলতা অর্জনে সক্ষম পুনঃপুনঃ গ্রাহক সৃষ্টি (Repeated Customers) সেবা সফলতার পরিচায়ক। একটি ব্যাংক অন্য আরেকটি ব্যাংকের সাথে নুতন নুতন সেবারধরন সৃষ্টি করে তা জনপ্রিয় করার পদক্ষেপ নেয় নতুন উদ্ভাবিত সেবা পণ্যটি গ্রাহক ব্যবহার করে অন্য ব্যাংক প্রদত্ত সেবার চেয়ে কেন বেশী সন্তুষ্ট ও লাভবান হবেন সে সম্পর্কে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে প্রতিদিন ব্যাংক ব্যবস্থাকে বাহবাপূর্ণ প্রতিযোগিতায় (Multi Dimentional Competition) অবতীর্ণ হতে হয়।

একই এলাকায় কার্যরত ব্যাংক সমূহের মধ্যে এক ব্যাংকের গ্রাহকদেরকে অন্য ব্যাংক ওলগত ও লাভজনক সেবার আকর্ষণে সরিয়ে নিতে সক্ষম। এমনকি একই ঘরে স্বামী-স্ত্রী বা পিতা-পুত্র জৈষ্ঠাকে অনুকরণ না করে উন্নত সেবা প্রদানকারী ব্যাংকের গ্রাহক হয়ে থাকে। উপরন্তু সঞ্চয় সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাংকমনা নয় এমন ব্যক্তিবর্গকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যাংকের গ্রাহক হতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। উদাহরনস্বরূপ বলা যেতে পারে ঢাকার আজিমপুরে বাসরত একজন চাকুরীজীবির বাসায় একদিন এক ব্যাংক কর্মকর্তা অনুসন্ধান করে জানতে পারলেন যে, বাড়ির গৃহকর্তাটির নামে কোন ব্যাংকেই কোন প্রকার সঞ্চয়ী হিসাব নেই।

উক্ত কর্মকর্তা সেদিন এতটুকু জেনেই চলে যান। সাত দিন পরে গৃহস্বামী যখন অফিসে থাকেন এমন সময় ব্যাংক কর্মকর্তা উক্ত গৃহিনীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। কুশলাদি বিনিময়ের পর প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলেন যে বাড়িটি তাদের নিজস্ব কিনা। ভদ্রমহিলা না সূচক উত্তর দিলে বাড়ীর ভাড়া কোথা থেকে আসে তা ব্যাংক কর্মকর্তা জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে তিনি জানালেন যে তার স্বামীর অফিস থেকে বাড়ী ভাড়া দেয়া হয়। তখন ব্যাংক কর্মকর্তা জিজ্ঞেস করেন যে চাকুরী থেকে অবসর নেয়ার পরও অফিস বাড়ী ভাড়া প্রদান করে কিনা?

উত্তর না সূচক হলে স্বামীর অবসর গ্রহন উত্তর কালে কোথায় থাকবেন জিজ্ঞেস করলে তারা দেশে স্বামীর পিত্রালয়ে ফিরে যাবেন বলে জানান। এসব জানার পর ব্যাংক কর্মকর্তা বহুদিন শহরে অবস্থান করার পর গ্রামের বাড়ীতে ফিরে গেলে কি কি অসুবিধা হবে তা ব্যাখ্যা করলেন। এছাড়াও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ও তখন তাদের সাথে যোগাযোগের সমস্যাদি ব্যাখ্যা করলেন। এতে ভদ্রমহিলা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তখন উচচস্বরে ব্যাংক কর্মকর্তা হেসে ভদ্রমহিলাকে ভাবী সম্বোধন করে বললেন যে তাতে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

আপনি সহায়তা করলে ব্যাংক থেকে আমি ঋণ পেতে আপনাকে সর্বাত্মক সাহায্য করবো। প্রত্যুত্তরে ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি করে আপনাকে সাহায্য করতে পারি। উত্তরে ব্যাংক কর্মকর্তা বললেন আপনি মাসের খরচ থেকে প্রথমেই চারভাগের একভাগ টাকা অর্থাৎ চার হাজার টাকা ব্যাংকে এনে জমা দিলে দুই বছর পর সুদ সহ যা টাকা হবে তার কয়েকগুণ ঋণ ব্যাংক থেকে ব্যবস্থা করে দিব এবং সেই টাকা দিয়ে এগার লাখ টাকা দামের একটি ফ্লাট প্রপার্টি ডেভলপমেন্ট নামক এ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসায়ী থেকে ক্রয়ের ব্যবস্থা করে দিবেন বলেও তিনি জানান।

ভদ্রমহিলা বিলম্ব না করে ব্যাংক কর্মকর্তার পরামর্শে রাজী হয়ে যান এবং সেই দিনই পাঁচশ টাকা জমা দিয়ে তার নামে একটি হিসাব ব্যাংকে খোলেন। সত্যি সত্যিই দুই বছর পর ব্যাংক কর্মকর্তা তার কথা রাখেন এবং পরিবারটিকে একটি গর্বিত ফ্লাট বাড়ীর মালিক হতে সহায়তা করেন।

এসবই করা হয়েছে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ কার্যরত অপর ব্যাংকগুলো থেকে অধিকতর মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে আমানত ও ঋণের পরিমান বৃদ্ধির মানসে। এই গল্পটি সাক্ষ্য দেয় যে প্রতিযোগিতা যত বাড়ছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার বহুধাকরন তত বেশী চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। ব্যাংকের সেবার দ্রুততা ও শুদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য বিজ্ঞানের আশীর্বাদ কম্পিউটার তথা ইলেকট্রনিক

ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যাপক অবদান রাখছে। প্রতিযোগিতা অবতীর্ণ ব্যাংকসমূহকে কত বেশী সন্তুষ্ট মক্কেল সৃষ্টি করতে পারে তার উপর নির্ভর করে কার কত পুনমক্কেল (Repeated Client) সৃষ্টি হবে। এই নবতর প্রযুক্তি প্রয়োগে অতিরিক্ত বিনিয়োগ ও উন্নত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। এতে করে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কালের গতিতে নতুন নতুন ব্যবস্থাপকীয় কৌশল অবলম্বন করে প্রতিযোগিতা নামক দৌড়ে টিকে থাকতে প্রয়াসী হয়।

 

google news logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

(৩) পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক [Changing Internatioal Relationship]

বহুজাতিক ব্যাংক ব্যবসায় কার্যরত দেশগুলোর নিজস্ব স্বার্থে নতুন নূতন আইন কানুনের বেড়াজাল অতিক্রম করে ব্যাংক ব্যবসায় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচেছ। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাণিজোর গতি প্রকৃতি, তহবিল স্থানান্তর বিধিবিধান ও কার্যরত দেশগুলোর সাংস্কৃতিক উন্নতির স্তর ভেদ করে ও প্রতিযোগি অবতীর্ণ হয়ে বিজয়ী হবে নব নব ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবন ও অনুশীলন করতে প্রতিনিয়তই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়।

বিজ্ঞানের যুগে তীব্র প্রতিযোগিতা নিরসন কল্পে ও আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের জটিলতার মধ্যেও সফল ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত দেশের সীমানা উত্তীর্ণ ব্যাংকগুলোর মধ্যে একত্রীকরণ, অধিগ্রহন ও নানাধরনের সমঝোতায় অবতীর্ণ হতে হচেছ। আর এ সব কিছুই ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে অধিকতর জটিল ও ক্রমাগত চ্যালেঞ্জিং করে তুলছে।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment