এ প্রকল্পের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন একজন উদ্যমী, শিক্ষিত ও স্মার্ট নারী—মিসেস সেলিনা। তাঁর পিতা একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং তাঁর স্বামী ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। মিসেস সেলিনা বহু দেশ ভ্রমণ করে আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করেন এবং উচ্চপর্যায়ের بيرোক্র্যাট ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।
এক পর্যায়ে একটি বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে ১০০% রপ্তানিমুখী খেলনা প্রকল্প স্থাপনের উদ্দেশ্যে আসে এবং একটি ফাইভ-স্টার হোটেলে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। মিসেস সেলিনা সেই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন এবং বিদেশি কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনা সফল হলে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়।
Table of Contents
প্রকল্প কাঠামো ও ব্যাংক ঋণ
MoU অনুযায়ী—
- যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল সরবরাহ করবে বিদেশি কোম্পানি, যারা বিশ্বে একমাত্র প্রযুক্তি ও বিপণন সেবাদাতা ছিল।
- প্রকল্প অর্থায়নের কাঠামো ছিল:
- ৭০% ব্যাংক ঋণ
- ১৫% স্থানীয় উদ্যোক্তার নিজস্ব মূলধন (equity)
- ১৫% বিদেশি অংশীদারদের অংশগ্রহণ
মিসেস সেলিনা ব্যাংকের কাছে ৪.৫০ কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব করেন। ব্যাংক মূল্যায়নের পর ৪.০০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে, যার মধ্যে—
- ১.০০ কোটি টাকা নির্ধারিত হয় টেকনিক্যাল ফি বাবদ,
- ৩.০০ কোটি টাকা নির্ধারিত হয় যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য।
প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা
- উদ্যোক্তারা ঢাকার শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে একটি জায়গায় প্রকল্প স্থাপনের জন্য জমি নির্বাচন করেন, যেখানে প্রাথমিক পরিকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা ছিল না।
- ব্যাংক এল/সি খুলে পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করে দেয়, যার মধ্যে টেকনিক্যাল ফিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
- যন্ত্রপাতি স্থাপনের সময় দেখা যায় যে, মূল যন্ত্রাংশ প্রেরণ করা হয়নি। ফলে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হয়নি।
অতিরিক্ত অর্থ চাওয়া ও ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া
- প্রকল্পের কোনও উৎপাদন শুরু না হলেও, কোম্পানি একটি প্রসপেকটাস প্রকাশ করে পাবলিক শেয়ার ইস্যু করে।
- পরবর্তীতে উদ্যোক্তারা ব্যাংকের কাছে পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়নের জন্য অতিরিক্ত ঋণ প্রস্তাব করেন। কিন্তু ব্যাংক এই প্রস্তাব গ্রহণ না করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
বর্তমান অবস্থা
- কোম্পানি কোনও উৎপাদন শুরু করতে পারেনি।
- ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের একটি টাকাও পরিশোধ করা হয়নি।
- প্রকল্প এখন কার্যত অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে এবং ব্যাংক মামলার প্রক্রিয়ায় আছে।
???? বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন: প্রকল্প ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ
ব্যবসা প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী (MBA/M.Com) বা ব্যাংক নির্বাহী হিসেবে আপনি নিচের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করুন:
১. উচ্চ-প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রকল্প পরিচালনায় অযোগ্যতা (Incompetence to Run the High-Tech Export-Oriented Project)
- উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত পরিচিতি ও লবিং থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে শিল্পব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল জ্ঞানের ঘাটতি ছিল
- প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও দূরবর্তী স্থান বেছে নেওয়া
মূল প্রশ্ন:
→ উদ্যোক্তা কি প্রকল্পটির ঝুঁকি ও কারিগরি জটিলতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেছিলেন?
২. সংশ্লিষ্ট পক্ষের অসাধুতা (Dishonesty of the Parties)
- বিদেশি কোম্পানি মূল যন্ত্রপাতি না পাঠিয়েও সম্পূর্ণ অর্থ গ্রহণ করেছে
- উদ্যোক্তা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ আহ্বান করেছেন অথচ প্রকল্পের ভিত্তি ছিল দুর্বল
মূল প্রশ্ন:
→ ব্যাংকের অর্থ সুরক্ষায় এবং যন্ত্রপাতি গ্রহণের নিশ্চয়তায় কী ধরনের ত্রুটি ছিল?

এই কেসটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয় যে—
✅ ব্যক্তিগত পরিচিতি, লবিং বা বিদেশ ভ্রমণ নয়,
✅ প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করে বাস্তব ভিত্তিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও সততার ওপর।
যখন এসব উপাদানের অভাব থাকে, তখন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানসহ বিনিয়োগকারী সকল পক্ষই ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ ধরনের কেস ব্যাংকারদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত, যাতে ঋণ প্রদানের আগে প্রকল্পের বাস্তবতা, উদ্যোক্তার সক্ষমতা এবং অংশীদারদের প্রামাণ্যতা সঠিকভাবে যাচাই করা হয়।