ব্যাংক ঋণের শ্রেণী বিভাগ [ Classification of Bank Loan ] – বিষয়টি নিয়ে আজকের আলোচনা। ব্যাংক অর্থ ও ঋণের ব্যবসায় নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠান। ঋণ যতভাবে যত বেশী পরিমাণ প্রদান করা যায় ততই ব্যাংকের জন্য কল্যাণকর ও লাভজনক। অবশ্য প্রদত্ত ঋণ সঠিক ঋণ ব্যবহারকারীকে প্রদান করে নিবিড় তদারকর মাধ্যমে লাভ সহ প্রদত্ত ঋণ আদায় নিশ্চিত করতে হবে।
মেয়াদ ব্যবহারকারী ও জামানতের ভিত্তিতে ঋণ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। পরবর্তী চিত্রে ঋণের শ্রেণী বিভাগ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো ।
Table of Contents
ব্যাংক ঋণের শ্রেণী বিভাগ [ Classification of Bank Loan ]
ধার
১.ব্যবহারকারী ভিত্তিক ঋণ
- ব্যক্তি।
- শিল্প প্রতিষ্ঠান
- ব্যবসায়ী
- কৃষক
- ভূমিহীন
২.মেয়াদ ভিত্তিক
৩.জামানত ভিত্তিক
১.ব্যবহারকারী ভিত্তিকঃ
ব্যবহারকারীর ভিত্তিতে ঋণকে মূলত ব্যক্তি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, কৃষক ভূমিহীন ইত্যাদি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে স্বল্পাকারে আলোচনা করা গেল :
ব্যক্তি :
ব্যক্তিগত চাহিদা মিটানোর জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোর বিভিন্ন উপায়ে ক্ষণ প্রদান করে থাকে।
১। ভোগা ঋণ ও দৈনন্দিন ও পুনঃ
ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী যেমন টি ভি গ্রিজ, কম্পিউটার গাড়ী ইত্যাদির না করে থাকে।
২। গৃহ সংস্থান ক্ষণ :
স্বল্প আয়ের লোকদের আবাস সমস্যা নিরসনে গৃহ নির্মাণের লক্ষ্যে ব্যাংক রূপ প্রদান করে থাকে। এ ঋণ স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।
৩। শিক্ষা চিকিৎসা অন্যান্য ঋণ ;
সমাজের অব্যবসায়ী ব্যক্তিবর্গের ফেরৎ দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজনবোধে শিক্ষা চিকিৎসা সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য কণ প্রদান করে।
শিল্প প্রতিষ্ঠান ঋণ :
শিল্প প্রতিষ্ঠান যে যে ধরণের ঋণ সংগ্রহ করে থাকে তা প্রধানত দু’ধরণের। যথা : চলতি পুঁজি স্বর্ণ ও স্থায়ী পুঁজি ঋণ ।
চলতি পুঁজি ঋণ : কাঁচামাল, শ্রমিকের মজুরী, জ্বালানী খরচ চালানোর জন্য পুঁজির ঘাটতি ঘটলে সেজন্য ব্যাংক পূর্ণ সহায়তা করে এটিই চলতি পুঁজি ঋণ।
স্থায়ী পুঁজি ঋণ:
শিল্প প্রতিষ্ঠানের কলকব্জা যন্ত্রপাতি স্থাপন ও পুনঃস্থাপনে ব্যাপক মূলধনের প্রয়োজন হয়। ব্যাংক এ পুঁজির ঘাটতি নিরসনে ঋণ প্রদান করে থাকে।
ব্যবসায়ী ঋণ:
ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় পরিচালনার জন্য পুঁজির ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত ব্যবসায়ীদের ঋণকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :
চলতি পুঁজি ঋণ :
ব্যবসায়ীদের কারবারের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে এ পুঁজির ঘাটতি হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক চলতি পুঁজি ঋণ সরবরাহ করে পুঁজি সংকট নিরসন করে থাকে।
আমদানী রপ্তানী :
আমদানী রপ্তানী বাণিজ্য বৃদ্ধি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ব্যাংক প্রত্যয় পত্র বিনিময় বিল বাট্টাকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে আমদানী রপ্তানী পুঁজি ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
কৃষক
ব্যাংক কৃষকদের কৃষিকাজ সংশ্লিষ্ট নানা ধরণের ঋণ প্রদান করে থাকে। যেমন :
১। শস্য ঋণ :
কৃষিকাজে প্রয়োজনীয় বীজ, সার, হালের গরু ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য যে অর্থের প্রয়োজনে বাণিজ্যিক ব্যাংক তা ক্ষণদান করে থাকে।
২। অপস্য ঋণ :
কৃষকরা কৃষিকাজ ছাড়াও মুরগীর খামার পশুপালন মৎস্য চাষ ইত্যাদি করে থাকে। এসকল ব্যাপারে বাণিজ্যিক ব্যাংকে ক্ষুদ্রাকারে কৃষকদের ঋণ প্রদান করতে দেখা যায়।
৩। যন্ত্রপাতি :
চাষাবাদে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, যেমন : পাওয়ার টিলার সেচ যন্ত্র ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ প্রদান করে।

ভূমিহীন
যাদের একেবারে কোন জমি নেই বা থাকলেও তা ৫০ শতাংশের কম। মোটামুটিভাবে এ ধরণের লোকদের ভূমিহীন বলা যেতে পারে। বিভিন্ন ধরণের ঋণ প্রদান প্রসংগে নিম্নে আলোকপাত করা হল ।
১। ক্ষুদ্র ব্যবসায় ঋণ :
হাঁস মুরগী খামার, মৎস্য চাষ, গরু ইত্যাদি পালন ছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায় ভূমিহীনদের আর্থিক অনটন লাঘবের জন্য ব্যাংক ঋণ প্রদান করে।
২। গ্রহক্ষণ :
যাদের সামান্য জমি রয়েছে কিন্তু পাঁকা বা আধা পাকা ঘর তৈরী করার পূর্নাঙ্গ স্বামর্থ্য নেই সেক্ষেত্রে ব্যাংক ভূমিহীনদের গৃহঋণ প্রদান করে থাকে।
৩। চিকিৎসা :
ভূমিহীনদের সুচিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সময়ে সময়ে চিকিৎসা ঋণ প্রদান করে থাকে।
মুসলমান যে পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ না করে
সে পর্যন্ত বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না
এবং পূর্ণাত্মাদের সংগে মিলিত হতে পারবে না।
– আল হাদিস
২.মেয়াদ ভিত্তিক ঋণ :
ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক সুদাসলসহ ফেরৎ যোগ্য সময়কে ঋণের মেয়াদ বলে। ঋণের মেয়াদকে মূলত ৩ ভাগে ভাগ করা যায় যথাঃ
১। স্বল্পমেয়াদী :
সাধারণত ১ বছরের কম সময়ের জন্য ঋণকে স্বল্প মেয়াদী ঋণ বলে। বাণিজ্যিক ব্যাংক এ কয়েক মাসের মধ্যে সীমিত রাখে। স্বল্প মেয়াদী ঋণ আবার দুধরণের (ক) চাহিবামাত্র পরিশোধ্য ঋণ ও (খ) স্বল্প মেয়াদী নোটিশে পরিশোধ্য ঋণ।
২। মধ্য মেয়াদী ঋণ :
সাধারণত ১ থেকে ৫ বছরের সময়কে মধ্যমেয়াদী হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংক ১ বছর থেকে ৩ বছর মেয়াদী যে ঋণ প্রদান করে তাকে মধ্যমেয়াদী ঋণ বলে। ৩। দীর্ঘমেয়াদী : ব্যাংক তিন বছরের অধিক একটি নাতিদীর্ঘ সময়কে দীর্ঘ মেয়াদী বলে চিহ্নিত করেছে। এ সময়ের জন্য ব্যাংক যে ঋণ প্রদান করে তাকে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ বলে।
৩.জামানত ভিত্তিক ঋণ :
ব্যাংক ঋণ প্রদানের বিপরীতে যে জামানত সংরক্ষণ করে তাকে ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

১। জামানতহীন ঋণ :
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধিকতর সুনাম ও বিশ্বাস থাকার ফলে ব্যাংক জামানত ব্যতিরেকে ঋণ প্রদান করে তাকে জামানতহীন ঋণ বলে।
২। পূর্ণ জামানতযুক্ত ঋণ :
যে পরিমাণ ঋণ প্রদান করা হয়েছে ঠিক তদ্রূপ সম্পত্তি জামানত হিসাবে সংরক্ষন করে ঋণ প্রদান করলে তাকে পূর্ণ জামানতযুক্ত ঋণ বলে বাণিজ্যিক ব্যাংক ধরে নেয়।
৩।আংশিক জামানত ঋণ :
এ ধরণের ঋণের বিপরীতে পুরোপুরি জামানত না রেখে তার আংশিক পরিমাণ জামানত রেখে ঋণ প্রদান করলে তাকে আংশিক জামানত ঋণ বলে।
আরও পড়ুনঃ
- ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সূচিপত্র
- উৎকৃষ্টতম বনাম নিকৃষ্টতম তারল্য [ Best Liquidity Vs Worst Liqidity ]
- ব্যাংক তারল্যের প্রয়োজনীয়তার পরিমাণ অনুমান করণ [ Estimating a Bank’s Liquidity Needs ]
- তারল্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত তত্ত্ব সমূহ [ Liquidity Management Theory ]
- ব্যাংকের দৈনন্দিন নগদান ব্যবস্থাপনা [ Management of Day-to-day Cash in Bank ]