[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

ব্যাংক কর্মকান্ডের সাফল্য মূল্যায়ন [ Perfomance Evaluation of Bank ]

ব্যাংকিং খাত যে কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মতো লাভ-লোকসানের ভিত্তিতেই মূল্যায়িত হয়। একটি ব্যাংক যত বেশি লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড) প্রদান করে, সাধারণত সে ব্যাংককে তত বেশি সফল বলে গণ্য করা হয়। তবে সফলতা শুধু বর্তমান লাভের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে লাভজনকতা বজায় রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে রয়েছে ঋণ ঝুঁকি, তারল্য ঝুঁকি, সুদের হার ঝুঁকি, পুঁজি ঝুঁকি এবং কার্যকরী ঝুঁকি। এই ঝুঁকিগুলো যত দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তত ব্যাংকের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সাফল্য নিশ্চিত করা সম্ভব।

সঠিক ঝুঁকি মূল্যায়নের মাধ্যমে ব্যাংকের পরিচালনায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপকগণ ঝুঁকির প্রকৃতি ও মাত্রা বুঝতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে ব্যাংকের স্থিতিশীলতা ও লাভজনকতা নিশ্চিত করতে পারেন।

 

ব্যাংকের ঝুঁকি এবং তাদের মূল্যায়ন

ব্যাংকের সাফল্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ ধরণের ঝুঁকির মূল্যায়ন অপরিহার্য। নিম্নে ঝুঁকিগুলো এবং সংশ্লিষ্ট পরিমাপক সূত্রগুলো দেওয়া হল:

ঝুঁকির ধরণবিবরণ পরিমাপক সূচক
. ঋণ ঝুঁকি (Credit Risk)– নীট ক্ষতিঃ ক্ষতি মোট ঋণের অনুপাত
– ঋণ ক্ষতি রিজার্ভ ও মোট ক্ষতির অনুপাত
– মোট ঋণ ক্ষতির প্রভিশন ও মোট ঋণের অনুপাত
– খেলাপী ঋণ ও মোট ঋণের অনুপাত
– বার্ষিক ঋণ বৃদ্ধির হার
. তারল্য ঝুঁকি (Liquidity Risk)– মোট পেয়ার হোল্ডারদের পুঁজির অনুপাত মোট সম্পদের সাথে
– মূল আমানত (Core Deposit) ও মোট সম্পদের অনুপাত
– বিক্রয়যোগ্য সম্পদের অনুপাত মোট সম্পদের সাথে
– এক বছরের কম বা বেশী মেয়াদের ঋণপত্র ও মোট সম্পদের অনুপাত
– ঋণপত্রের বাজার মূল্য ও লিখিত মূল্যের অনুপাত
. সুদের হার ঝুঁকি (Interest Rate Risk)– দায় বাবদ সম্পত্তি ও উপার্জনক্ষম সম্পত্তির অনুপাত
– তিন মাসের পূর্ণ মূল্যায়িত সম্পদ ও এক বছরের মধ্যে পূর্ণ মূল্যায়িত সম্পদের অনুপাত
. পুঁজি ঝুঁকি (Capital Risk)– মোট শেয়ার হোল্ডারদের ঝুঁকি ও মোট সম্পত্তির অনুপাত
– প্রাথমিক পুঁজি ও মোট সম্পত্তির অনুপাত
– নগদ লভ্যাংশ ও মোট আয়ের অনুপাত
. কার্যকরী ঝুঁকি (Operating Risk)– কর্মচারী প্রতি মোট সম্পত্তির অনুপাত
– কর্মচারী প্রতি বেতন ও ভাতার পরিমাণ
– বাড়ীভাড়া ও আসবাবপত্রের সুদ বহির্ভুত খরচের অংশ

 

ঝুঁকি পরিমাপক সূচক বিশ্লেষণ

নিচে বিভিন্ন ঝুঁকির মূল সূচকগুলোর ব্যাখ্যা এবং তাদের ব্যাংক কার্যক্রমে প্রভাব সংক্ষেপে দেয়া হলো:

ঝুঁকির ধরণসূচকঅর্থ এবং প্রভাব
ঋণ ঝুঁকিখেলাপী ঋণ/মোট ঋণখেলাপী ঋণের পরিমাণ বেশি হলে ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে।
ঋণ ক্ষতি রিজার্ভঋণ ক্ষতির জন্য বরাদ্দ রাখা রিজার্ভ ব্যাংকের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়ক।
তারল্য ঝুঁকিমূল আমানত / মোট সম্পদমূল আমানত বেশি থাকলে ব্যাংকের নগদ প্রবাহ সুষ্ঠু থাকে।
বিক্রয়যোগ্য সম্পদের অনুপাতদ্রুত নগদে পরিণতযোগ্য সম্পদ ব্যাংকের তারল্য রক্ষা করে।
সুদের হার ঝুঁকিদায় সম্পত্তি / উপার্জনক্ষম সম্পদসুদের হারের পরিবর্তনে ব্যাংকের উপার্জন ও ব্যয় প্রভাবিত হয়।
পুঁজি ঝুঁকিশেয়ারহোল্ডারদের পুঁজি / মোট সম্পদউচ্চ পুঁজি ব্যাংকের স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে।
নগদ লভ্যাংশ / মোট আয়নগদ লভ্যাংশ বেশি হলে ব্যাংকের লাভজনকতা ভালো।
কার্যকরী ঝুঁকিকর্মচারী প্রতি সম্পদসম্পদের সাথে কর্মচারীর দক্ষতা ও পরিচালন ক্ষমতা পরিমাপ করে।
বাড়ীভাড়া ও আসবাবপত্রের খরচব্যাংকের অপারেটিং খরচের একটি অংশ যা লাভজনকতাকে প্রভাবিত করে।

 

ব্যাংক সঠিকভাবে ঝুঁকি নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে লাভজনকতা বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে। ঝুঁকি গুলো যথাযথভাবে পরিমাপ করতে পারলে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে যা ব্যাংকের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তাই ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋণ ঝুঁকি, তারল্য ঝুঁকি, সুদের হার ঝুঁকি, পুঁজি ঝুঁকি এবং কার্যকরী ঝুঁকি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে ব্যাংকের সুস্থ পরিচালনা নিশ্চিত করবেন।

Leave a Comment