“মিসেস সিলভিয়া কেস” [ কেস নম্বর ১ ] মিসেস সিলভিয়া ছিলেন একজন অত্যন্ত সুখী গৃহিনী, তার স্বামী একজন নির্দিষ্ট আয়ের পদস্থ কর্মকর্তা যিনি তার সততা ও কর্মদক্ষতার জন্য সুপরিচিত। যদিও তার স্বামী সাধারণ বিন্তু সম্মানজনক জীবন যাপনে আগ্রহী ছিলেন তথাপি মিসেস সিলভিয়ার মাঝে ছিল উচচা থাকা এবং বিলাস বহুল জীবন যাপনের অদম্য বাসনা, এটি খুব সহজেই অনুমেয় যে সিলভিয়ার স্বামীর পক্ষে তার প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত চাহিদা ও অদ্ভুত ইচছা পুরণ করা সম্ভব ছিল না।
কারণ সিলভিয়ার মাঝে ছিল সম্পদের জন্য উন্মদনা। একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে সিলভিয়ার সাথে পরিচয় ঘটে সুশান্ত সিং-এর সুখান্ত সিং ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। যদিও পরবর্তী সময়ে তার পরিবার কানাডায় স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে। গার্মেন্টস ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে মিস্টার সুধান্তের বাংলাদেশ আগমন।
সূধান্ত প্রথমে একটি বাছ হাউস খোলেন এবং সিলভিয়ার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দের্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে তার ব্যবসায়ের অংশীদার করে নেন। ক্রমান্বয়ে কাদের ঘনিষ্টতা বাড়ে এবং সুখান্ত সিলডিয়াকে তার জীবনসঙ্গিনী হওয়ার প্রস্তাব দেন। সিলভিয়া সানন্দে তার প্রস্তাবে সম্মতি দেন এবং তার স্বামীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সুখান্তকে বিয়ে করেন।
“মিসেস সিলভিয়া কেস” [ কেস নম্বর ১ ]
বিয়ের পর সিলভিয়া এবং সুখান্ত তাদের ব্যবসায় অর্থ সস্থানের লক্ষ্যে সিলভিয়ার বাবার একটি সম্পত্তি ব্যাংকে মর্টগেজ রাখেন। এখানে উল্লেখ্য যে মর্টগেজকৃত সম্পত্তিটির মালিকানা সিলভিয়ার বাবার সম্মতিতে তিন বছরের জন্য সিলভিয়ার নামে লীজ দেয়া হয়। এটি করা হয় শুধুমাত্র তাদের ব্যবসার উন্নতি তথা ঋণ লাভের সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে।
অতঃপর সিলভিয়া নিজেই ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেন। ব্যবসা সংক্রান্ত কাজ সহজে সমাধানের লক্ষ্যে তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা এবং উচচপদস্থ কর্মকর্তা ব্যক্তিদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। যার ফলে অল্প সময়েই তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বেশ ভালো অবস্থায় চলে আসে এবং রপ্তানী ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে।
সম্প্রসারনশীল ব্যবসায়িক কার্যক্রম, ব্যাংকে রক্ষিত হিসাবে টাকার পরিমান, ঋণ পরিশোধের আন্তরিকতা প্রভাবশালী মহলের পৃষ্টপোষকতা ও সুপারিশ এবং তদুপরি রাজনৈতিক যোগাযোগ তাদের ব্যবসার প্রতি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে করে তুলেছিল উৎসাহী ও আস্থাশীল।
আর তাই তাদের যে কোন প্রকার ঋণ প্রস্তাবই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সম্মানের সাথে গ্রহন ও মঞ্জুর করত। ফলশ্রুতিতে স্বর্ণ, নগদ ঋণ, ওভার ড্রাফট ইত্যাদি উপায়ে ব্যাংক হতে গৃহীত তাদের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াল ৩০ কোটি টাকা। আরও উল্লেখ্য যে বিদেশী বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান এবং উদার বাণিজ্যনীতির সুযোগে ঋণ প্রাপ্ততা তাদের কাছে হয়ে উঠেছিল এতই সহজ যে অনেক ক্ষেত্রে তাদের বেলায় সাধারণ ঋণ প্রদান প্রক্রিয়াও অনুসৃত হয়নি। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে ব্যাংকের ঋণ প্রদানের নীতিমালাও মানা হয়নি যা কিনা ব্যাংকের অন্য যে কোন বাংলাদেশী স্থানীয় উদ্যোক্তা বা মক্কেলের ক্ষেত্রে ছিল বাধ্যতামূলক।
মিঃ সিং তার ব্যবসা বর্ধিত করে রেডিমেট গার্মেন্টস এ প্রবেশ করলেন এবং এর উদ্দেশ্যে তিনি একটি ইন্ডাষ্ট্রি স্থাপন করলেন এবং স্থানীয় লীজিং কোম্পানী হতে প্রয়োজনীয় মেশিনপত্র লীজ নিলেন। মিঃ সিং কানাডা, আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে তার বসায়িক যোগাযোগ বিস্তৃত করতে সক্ষম হন। ব্যবসার সুযোগ নিয়ে তিনি রানী অর্ডার সম্পাদন করতেন এবং প্রাপ্ত জন্মভূমিতে পাচার বা জমা করতেন।
হতামধ্যে তাদের একটি সন্তানও হয়। কিন্তু দেড় বছর পর তিনি ব্যবসায়িক ভ্রমনের নাম করে সপরিবারে বিদেশে যান এবং বেশ কিছুদিন যাবার পর তাদের কোন প্রকার খোঁজ না পাওয়ায় বোঝা গেল তারা আসলে পালিয়ে গেছেন। হিসাব করে দেখা যায় যে, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর তাদের কাছে প্রাপ্য অর্থের পরিমান প্রায় ৪৫ কোটি টাকা এবং এই সমস্যা হতে নিস্তার পাবার কোন পথই নেই। ক সম্পত্তি ব্যাংকের কোন দায় পরিশোধ না করেই দেশ ত্যাগ করেছেন।
এখানে আরও উল্লেখ্য যে, এর কিছুদিন পর মিসেস সিলভিয়া দেশে ফিরেছিলেন এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সহায়তায় ব্যাংকের কাছে মর্টতারকৃত তার বাবার সম্পত্তিটিও ছাড়িয়ে নেন। ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলো উক্ত সিং সম্পত্তির বৈদেশিক ঠিকানায় সকল প্রকার যোগাযোগ করেও কোন প্রতিউত্তর পায়নি।

সম্ভবত তারা তাদের কানাডার ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। বাংলাদেশেও মিসেস সিলভিয়ার নামে বা মালিকানায় কোন সম্পত্তি নেই। এমনকি তার আত্মীয়-স্বজন ও ব্যাংকের ঋণ উদ্ধারে তাদের ঠিকানা প্রদান বা কোন প্রকার সহায়তা করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
বর্তমানে প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের প্রস্তুতি গ্রহন করছে। ব্যাংকিং বিষয়ের একজন ছাত্র বা / ব্যাংকের একজন এক্সিকিউটিভ হিসেবে তুমি আলোচিত সমস্যাটি বিশ্লেষন করে সমাধানের উপায় নির্দেশ কর।
আরও পড়ুনঃ
- ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সূচিপত্র
- কেস স্টাডি কাকে বলে ? [ What is Meant by Case Study? ]
- কেস স্টাডির ধাপসমূহ [ Stages of Case Study ]
- সমস্যাগ্রস্থ ঋণের কারণসমূহ [ Causes of Problem Loans ]
- ঋণ মর্যাদাকরণ বা আদায়যোগ্যতা ভিত্তিক ঋণের শ্রেণী বিন্যাসকরণ [ Loan Grading or Classifications Based on Recoverability ]