[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

ব্যাংকিং কেস স্টাডি নং ৫৭ : হাতেম শিকদার

হাতেম শিকদারের জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার রায়পুর উপজেলার হাইরমারা গ্রামে। প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে তিনি স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করেন, তবে পিতার মৃত্যুর কারণে শিক্ষাজীবন এগোয়নি। তাঁর পিতা ছিলেন গ্রামের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, যিনি ব্যবসা করলেও সফল ছিলেন না। ছয় ভাইবোনের মধ্যে হাতেম ছিলেন দ্বিতীয়।

এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে না পারলেও তিনি বিদ্যুৎ লাইনের একটি কারিগরি কোর্স সম্পন্ন করেন এবং চাকরির সন্ধানে নামেন। প্রথম চাকরি শুরু করেন মেঘনা টেক্সটাইল মিলে একজন ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে। দক্ষতা, নিষ্ঠা ও কর্মঠতায় তিনি সুনাম অর্জন করেন।

১৯৬৩ সালে তিনি একই পদে বাটা সু কোম্পানিতে যোগ দেন এবং ধীরে ধীরে তার জীবন সংগ্রামের যাত্রা এগিয়ে চলে। সততা, পরিশ্রম ও ভদ্র আচরণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁকে অত্যন্ত পছন্দ করত। ১৯৮০ সালে তিনি মেইন্টেন্যান্স সুপারভাইজার পদে চাকরি থেকে অবসর নেন।

ব্যবসায়িক যাত্রার সূচনা

চাকরিজীবনের সময় থেকেই তিনি একজন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ১৯৮০ সালে সুযোগ আসে—তিনি বাটার দুই উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যৌথভাবে একটি জুতা কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের একজন ছিলেন বেই ট্যানারির পরিচালক মি. শামসুর রহমান

এই প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল বাসকো। হাতেম শিকদার এতে ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করে শেয়ারহোল্ডার হন। এক বছর পর তিনি এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দুই নতুন অংশীদার নিয়ে আরেকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন—হোমল্যান্ড ফুটওয়্যার লিমিটেড। এটি বিসিক শিল্প নগরীতে স্থাপিত হয় এবং প্রকল্প ব্যয় ছিল সাড়ে তিন কোটি টাকা। তিনি নিজের উপার্জিত দুই লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন।

এই উদ্যোগের ব্যাপারে তিনি কাউকে কিছু জানাননি। পরিবারের কেউ বা বন্ধুবান্ধব কেউই তাকে উৎসাহ দেয়নি—তবুও একক সাহসে তিনি এগিয়ে যান। ১৯৭০ সালে চাকরিরত অবস্থায় তিনি বিবাহ করেন। পরিবারে তার সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর এবং তাঁর একমাত্র পুত্র বর্তমানে আমেরিকার নিউ ইয়র্কে একটি কোম্পানিতে কর্মরত। পরিবারের সবার সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি সবার খোঁজখবর রাখেন।

ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বর্তমান অবস্থা

জীবনের চক্রে ঘুরে ঘুরে তাঁর ব্যবসাও ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হয়। হোমল্যান্ড ফুটওয়্যার থাকাকালীন তিনি বাটা কোম্পানিকে কাঠের বক্স সরবরাহ শুরু করেন। পরবর্তীতে সেই চুক্তি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি কেমিক্যাল সরবরাহ শুরু করেন এবং এখন তিনি একজন কেমিক্যাল আমদানিকারক

  • তাঁর প্রতিষ্ঠান S Traders একটি কেমিক্যাল আমদানিকারক সংস্থা।
  • Shikder Enterprise একটি intending firm
  • Hatem Shoe Co. শুধু জুতা তৈরি করে না, বরং এটি বাটা জুতার অ্যাসেম্বলিং ফার্ম হিসেবেও কাজ করছে।

উদ্যোক্তা হিসেবে মূল্যায়ন

হাতেম শিকদারের জীবন ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা, তবে সেটি একটি সফল জীবন। একটি সাধারণ কর্মজীবী মানুষ হিসেবে যাত্রা শুরু করে তিনি হয়েছেন একজন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা। তাঁর সফলতার পেছনে কোনও বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়ের অবদান নেই—পুরো কৃতিত্ব তাঁর নিজের। উচ্চ সমাজের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক না থাকলেও, বক্তৃতা কাজে তিনি ছিলেন নির্ভরযোগ্য

মানুষ যদি আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে সততা পরিশ্রমের সাথে কাজ করে, তবে সে ব্যর্থ হয় না।”
— হাতেম শিকদার

তিনি মনে করেন, সফল হতে হলে লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। উল্লেখ্য, যদিও তিনি শিক্ষাগতভাবে বেশি অগ্রসর নন, তবুও তিনি নিজে কম্পিউটার চালান, অফিসে ই-মেইল, ইন্টারনেটসহ সব আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা নিজেই সামলান।

 

বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন: উদ্যোক্তা হাতেম শিকদারের সফলতা ও সীমাবদ্ধতা

আপনি যদি একজন ব্যবসা প্রশাসনের শিক্ষার্থী (MBA/M.Com) হন, তবে নিচের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করুন:

১. ইতিবাচক দিকসমূহ (Positive Aspects)

  • আত্মনির্ভরতা: একক প্রচেষ্টায় সফলতা অর্জন।
  • পরিশ্রম নিষ্ঠা: চাকরি জীবন ও ব্যবসায় সমানভাবে প্রমাণিত।
  • ব্যবসা বহুমুখীকরণ: জুতা শিল্প → কাঠের বাক্স → কেমিক্যাল → অ্যাসেম্বলিং।
  • নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে আগ্রহ: নিজ হাতে প্রযুক্তির ব্যবহার ও অফিস পরিচালনা।

 

২. সীমাবদ্ধতা বা নেতিবাচক দিক (Negative Aspects)

  • প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব: বড় প্রকল্পে কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
  • নেটওয়ার্কিং দুর্বলতা: উচ্চ পর্যায়ের সমাজ বা নীতিনির্ধারণী মহলে যোগসূত্র না থাকা।
  • ঝুঁকিপূর্ণ একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ: কোনোরকম পরামর্শ বা উৎসাহ ছাড়াই বৃহৎ বিনিয়োগ।

 

 

google news logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

হাতেম শিকদারের কেসটি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সমাজের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা। এটি প্রমাণ করে যে, উচ্চশিক্ষা বা আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াও সততা, পরিশ্রম এবং দৃঢ় সংকল্প থাকলে একজন সাধারণ মানুষও হয়ে উঠতে পারেন এক জন সফল উদ্যোক্তা। তাঁর জীবন কাহিনি শিক্ষার্থীদের শেখায়—“leadership comes not only from qualification, but from commitment and courage.”

Leave a Comment