[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

ব্যাংকিং কেস স্টাডি নং ৫৪ : এম/এস সাবিনা কেমিক্যাল লিমিটেড

মিসেস সাবিনা ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে যোগ দেন। তাঁর স্বামী ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী। তবে, ১৯৭৫ সালে এক দুর্ঘটনায় কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে তিনি নিহত হন।

১৯৮৯ সালে মিসেস সাবিনাকে ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়—স্থানীয় কাঁচামাল, প্রযুক্তি স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে দেশীয় বাজারের জন্য জিঙ্ক সালফাইড (Zinc Sulfide) উৎপাদনকারী একটি ইউনিট স্থাপনের জন্য। এই প্রকল্পে ব্যাংকের Special Assistance Fund (SAF) এর অধীনে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল।

 

ব্যাংকিং কেস স্টাডি নং ৫৪

 

প্রকল্প গঠন ও ব্যাংক সহায়তা

  • মিসেস সাবিনা প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন করেন, যার পরিচালক ছিলেন তার পারিবারিক সদস্যরা।
  • ব্যাংক ১৯৮৯ সালে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ অনুমোদন করে, যার মাধ্যমে ৭০০ মেট্রিক টন সলিড জিঙ্ক সালফাইড উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কারখানা স্থাপনের লক্ষ্য ছিল।
  • প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী নির্মাণ কাজ উদ্যোক্তার নিজস্ব তহবিল দিয়ে সম্পন্ন করা হয়। তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা দেখা দেয়—মূল্যায়ন পর্যায়ে নির্মাণ ব্যয় অপ্রতুলভাবে অনুমান করা হয়েছিল। বাস্তবে নির্মাণ ব্যয় প্রাথমিক অনুমানের দ্বিগুণ হয়ে যায়।
  • অন্যদিকে, ব্যাংক যন্ত্রপাতি কেনার অর্থ ছাড়ে বিলম্ব করে, ফলে সময়মতো সব যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

 

প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যা

  • ১৯৯২ সালে প্রকল্পটি আংশিকভাবে চালু হয়, তবে সব যন্ত্রপাতি না থাকায় সলিড জিঙ্ক সালফাইড না হয়ে কেবল লিকুইড জিঙ্ক সালফাইড উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
  • এই লিকুইড জিঙ্ক সালফাইড ছিল কীটনাশক উৎপাদনের কাঁচামাল, কিন্তু সরকারি নীতির কারণে (Govt. embargo) এটি বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
  • ফলে প্রকল্পটির উৎপাদন কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়

 

পুনরায় ব্যাংক প্রস্তাবনা

১৯৯৮ সালে উদ্যোক্তারা পুনরায় ব্যাংকের কাছে আবেদন করেন:

  • ৪০ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত ঋণ চেয়ে, যাতে বাকি যন্ত্রপাতি কেনা যায় এবং সলিড জিঙ্ক সালফাইড উৎপাদন শুরু করা যায়।
  • একইসাথে, তারা পূর্বের ঋণে জমা হওয়া সুদ মওকুফের আবেদন করেন, কারণ প্রকল্পটি থেকে কোনও উপকার তারা পাননি।
  • প্রস্তাবিত ঋণটি ছিল যন্ত্রপাতির খরচ ও আংশিক ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল মেটানোর জন্য, যাতে প্রকল্পকে বাণিজ্যিকভাবে সচল করা যায়।

 

???? বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন: প্রকল্প ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান

ব্যবসা প্রশাসনের একজন শিক্ষার্থী (MBA/M.Com) বা একজন ব্যাংক নির্বাহী হিসেবে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কেসটি বিশ্লেষণ করুন:

 

১. ঋণ ছাড়ে বিলম্ব (Delay in Disbursement of Bank Loan)
  • ব্যাংক যন্ত্রপাতি কেনার অর্থ যথাসময়ে ছাড়ে না, ফলে প্রকল্প স্থাপন সময়মতো সম্পন্ন হয়নি।

মূল প্রশ্ন:
→ অর্থ ছাড়ে বিলম্বে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কীভাবে ব্যাহত হয়?

 

২. তদারকি ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে নজরদারির ঘাটতি

(Lack of Monitoring and Supervision in the Implementation Stage)

  • নির্মাণ ব্যয়ের অতিরিক্ততা, বাজেট উপেক্ষা এবং বাস্তবায়নে দেরি প্রতিরোধে ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর নজরদারি ছিল না।

মূল প্রশ্ন:
→ ব্যাংকের প্রকৌশলী বা মনিটরিং টিম যদি সক্রিয় হতো, তবে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা যেত কি?

 

৩. ভুল প্রকল্প মূল্যায়ন (Faulty Project Appraisal)
  • প্রাথমিক পর্যায়ে নির্মাণ ব্যয় অপ্রতুলভাবে মূল্যায়িত হয়।
  • স্থানীয় প্রযুক্তি এবং কাঁচামালের গুণমান সম্পর্কেও যথাযথ যাচাই করা হয়নি।

মূল প্রশ্ন:
→ ব্যর্থ মূল্যায়ন কীভাবে প্রকল্পের ভবিষ্যতকে নির্ধারণ করে?

 

৪. সরকারি নীতির প্রতিবন্ধকতা (Government Policy)
  • উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধ (Govt. embargo) প্রকল্পের বাজারে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে।

মূল প্রশ্ন:
→ সরকারি নীতি ও বাজার অনুমোদনের বিষয়টি আগে যাচাই না করাই কি বড় ভুল ছিল?

 

 

google news logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

 

Sabina Chemical Ltd. কেসটি স্পষ্টভাবে বোঝায়—একটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প প্রকল্প শুরু করার জন্য শুধুমাত্র ভালো উদ্দেশ্য বা একাডেমিক যোগ্যতা যথেষ্ট নয়। সঠিক মূল্যায়ন, সময়মতো অর্থ ছাড়, কার্যকর মনিটরিং এবং নীতি-পরিবেশের স্বচ্ছতা—সবই একটি প্রকল্পের সাফল্যে সমানভাবে জরুরি।

এখানে উদ্যোক্তার আন্তরিকতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও, ব্যাংকের ধীর প্রতিক্রিয়া, বাজেট ত্রুটি, এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে পুরো উদ্যোগটি ভেঙে পড়ে।

 

Leave a Comment