[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

ব্যাংকিং কেস স্টাডি নং ৫৮ : এম/এস সান স্পিনিং মিলস লিমিটেড

নারায়ণগঞ্জের একজন ধর্মপরায়ণ ও সম্মানিত ব্যবসায়ী ছিলেন জনাব রমিজউদ্দিন। তিনি টেক্সটাইল, কেমিক্যাল এবং সুতা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যদিও তিনি উচ্চশিক্ষিত ছিলেন না, তবুও অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও স্মার্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি গঠন করেন এবং সেখানে কয়েকজন শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ করে একটি স্পিনিং মিল স্থাপনের উদ্যোগ নেন।

এই প্রকল্পের জন্য তাঁরা ব্যাংকের কাছে একটি প্রস্তাবনা দাখিল করেন।

ব্যাংকিং সহায়তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন

  • প্রথম ধাপ:
    ১৯৮৭ সালে ব্যাংক ১৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে, যার মাধ্যমে ৭.০০ লক্ষ কেজি সুতার বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্পিনিং মিল স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। যথাসময়ে সব ধরনের কাগজপত্র ও যন্ত্রপাতি আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। উদ্যোক্তারা নিজেদের তহবিল থেকে কারখানা নির্মাণ কাজও নির্ধারিত সময়েই শেষ করেন।
  • প্রতিবন্ধকতা:
    ব্যাংকের তহবিল ঘাটতির কারণে এল/সি খোলা প্রায় ১২ মাস পিছিয়ে যায়, যার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় ধরনের বিলম্ব ঘটে।
  • কার্যক্রম শুরু:
    ১৯৯২ সালে যন্ত্রপাতি স্থাপন সম্পন্ন হয় এবং মিলটি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। ঋণের মেয়াদ ছিল ১২ বছর, যার মধ্যে প্রথম ২ বছর গ্রেস পিরিয়ড এবং অবশিষ্ট ১০ বছরে ২০টি অর্ধ-বার্ষিক কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ছিল।

 

ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ ও নতুন চ্যালেঞ্জ

  • ১৯৯৬ সালের শুরুতে উদ্যোক্তারা উৎপাদনক্ষমতা ১২ লক্ষ কেজি/বছরে উন্নীত করার জন্য একটি সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ব্যাংকে উপস্থাপন করেন।
  • ব্যাংক এই প্রস্তাব অনুমোদন করে এবং অতিরিক্ত ২০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে। সম্প্রসারণ প্রকল্পটি ১৯৯৭ সালে সম্পন্ন হয়।
  • মূল উদ্যোক্তা তখন পরিচালকের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং তাঁর পুত্রগণ, যারা উচ্চশিক্ষিত ও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়, কোম্পানির পরিচালনা übernehmen করেন।
  • নতুন পরিচালকদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তাঁরা ফান্ড ডাইভার্সন (fund diversion) ঘটান। অর্থাৎ, সান স্পিনিং মিলসের অর্থ অন্য তিনটি শিল্প ইউনিটে বিনিয়োগ করেন এবং পাশাপাশি অন্যান্য ব্যাংক থেকেও নতুন ঋণ গ্রহণ করেন।

 

বর্তমান অবস্থা

  • উদ্যোক্তারা কখনোই নির্ধারিত কিস্তি দেওয়ার সময় ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি, তবে তথ্য অনুযায়ী তাঁরা কেবল ৫০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেছেন, যেখানে কোটি টাকা বকেয়া বিবেচনায় রয়েছে।
  • বর্তমানে কোম্পানির পক্ষ থেকে ঋণ পুনঃনির্ধারণ (rephasement) চেয়ে ব্যাংকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

 

???? বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন: শিল্প উদ্যোগ ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান

আপনি যদি একজন ব্যবসা প্রশাসনের শিক্ষার্থী (MBA/M.Com) অথবা একজন ব্যাংক নির্বাহী হন, তবে নিচের বিষয়গুলোর ভিত্তিতে কেসটি বিশ্লেষণ করুন:

১. ইচ্ছাকৃত খেলাপি হওয়া (Willful Defaulter)

  • সময়মতো ঋণ গ্রহণ ও উৎপাদন শুরু
  • পরে ঋণ পরিশোধে গড়িমসি, যদিও তারা যোগাযোগ চালু রেখেছেন
  • উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ঋণের বাইরে অন্যখাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে

মূল প্রশ্ন:
→ তারা কি সচেতনভাবে ব্যাংক ঋণ অন্য খাতে ব্যবহার করেছেন এবং তা পরিশোধে অনিচ্ছুক থেকেছেন?

 

২. অর্থের অপব্যবহার/ভিন্ন খাতে ব্যয় (Diversion of Fund Towards Expansion of Other Business)

  • মূল মিলের ঋণ ব্যবহার করে আরও তিনটি শিল্প ইউনিট শুরু করা
  • এ ধরনের ফান্ড ডাইভার্সন ব্যাংকিং চুক্তির লঙ্ঘন এবং ঝুঁকি সৃষ্টি করে

মূল প্রশ্ন:
→ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই তারা কীভাবে অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে এবং এর ফলে মূল প্রকল্প কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?

 

৩. অতিরিক্ত সম্প্রসারণের ঝুঁকি (Stretching Business Beyond Means and Capacity)

  • অতিরিক্ত ব্যবসায়িক বিস্তারে মনোযোগ দেওয়ায় মূল প্রকল্প উপেক্ষিত হয়েছে
  • মানবসম্পদ, ব্যবস্থাপনা ও অর্থ—তিনটির সীমাবদ্ধতার কারণে টেকসই পরিচালনা সম্ভব হয়নি

মূল প্রশ্ন:
→ বাস্তব সক্ষমতা বিবেচনা না করে অতিরিক্ত ব্যবসায়িক বিস্তারে কী ধরনের অপূর্ণতা সৃষ্টি হয়েছে?

 

 

google news logo
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

 

এই কেসটি স্পষ্ট করে যে, একটি ভালোভাবে শুরু হওয়া প্রকল্পও অবসাদগ্রস্ত বা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে যদি:

  • উদ্যোক্তারা ফান্ড ব্যবহারে সতর্ক না থাকেন,
  • অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবতা বিবর্জিত হয়ে পড়ে, এবং
  • পরিচালনায় দূরদর্শিতা ও দায়বদ্ধতার অভাব থাকে।

এটি ব্যাংকারদের জন্য একটি সতর্কবার্তা, যাতে তারা ঋণ অনুমোদনের পাশাপাশি পরবর্তী পর্যায়ে কার্যকর মনিটরিং ফান্ড ইউটিলাইজেশন ট্র্যাকিং চালু রাখেন।

Leave a Comment