[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

ঋণ বিশ্লেষণ

ঋণ বিশ্লেষণ বলতে আমরা বুঝি ঋণের জন্য আবেদনকারীর দরখাস্তের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে ঋণ প্রাপ্যতা বিচার-বিশ্লেষণ। ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থা, ঋণের উদ্দেশ্য, পরিশোধ ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়গুলো নির্ভুলভাবে যাচাই করে তথ্য সংগ্রহ এবং উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করলেই সঠিক ঋণ বিশ্লেষণ সম্ভব হয়। অন্যথায় এটি অসম্পূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

Table of Contents

ঋণ বিশ্লেষণ

 

ঋণ বিশ্লেষণের গুরুত্ব

কোনো আবেদনকারীর আর্থিক অবস্থা ও তার প্রার্থীত ঋণ সম্পর্কে বিস্তারিত বিচার-পর্যালোচনা ছাড়া ঋণ প্রদান করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতার চারিত্রিক অবস্থা, তহবিল ব্যবহার ক্ষমতা, পুঁজির অবস্থা, ঋণের উদ্দেশ্য, ব্যবহার পরিকল্পনা এবং ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব ইত্যাদি বিষয়গুলো ঋণ বিশ্লেষণের মূল বিবেচ্য বিষয়।

 

ঋণ প্রাপ্যতা নির্ণয়ের প্রধান দিকসমূহ

প্রধান বিষয়বস্তুবিবরণ
ঋণগ্রহীতার ঋণ সংক্রান্ত লেনদেনের ইতিহাসপূর্বের ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের তথ্য ও তার ধারাবাহিকতা যাচাই করা।
ঋণগ্রহীতার চারিত্রিক খবরাখবরঋণগ্রহীতার সততা, দায়বদ্ধতা এবং ব্যবসায়িক সুনামের মূল্যায়ন।
ঋণ ব্যবহার ক্ষমতাঋণের সঠিক ব্যবহার এবং তা থেকে উপার্জন করার সক্ষমতা।
ঋণ ফেরৎ দেয়ার ক্ষমতাঋণ পরিশোধের সামর্থ্য এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা।
পরিকল্পনাকালীন সমস্যা মোকাবিলায় পুঁজির ভূমিকাসমস্যার সময় বিদ্যমান পুঁজি ও সম্পদ কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
অর্থনৈতিক অবস্থার প্রভাবস্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ঋণ পরিশোধে প্রভাব।
ঝুঁকির উপাদান ও নগদ প্রবাহের প্রতিবন্ধকতাঋণখেলাপীর সম্ভাব্য ঝুঁকি ও নগদ প্রবাহের বাধা সনাক্তকরণ।

 

ঋণ বিশ্লেষণের ধাপসমূহ

ঋণ বিশ্লেষণ কার্যক্রম নিম্নোক্ত ধাপ অনুসরণ করে পরিচালিত হয়:

ধাপ নংধাপের নামবর্ণনা
মৌলিক তথ্য সংগ্রহ (ঋণগ্রহীতার তথ্য)আবেদনকারীর ব্যক্তিগত, আর্থিক ও ব্যবসায়িক তথ্য সংগ্রহ।
ঋণ সংক্রান্ত মৌলিক তথ্য সংগ্রহআবেদনকৃত ঋণের পরিমাণ, মেয়াদ, উদ্দেশ্য ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ।
ঝুঁকির প্রাথমিক পুনরীক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য তথ্য চিহ্নিতকরণঝুঁকি নিরূপণের জন্য প্রাথমিক তথ্য যাচাই ও প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত তথ্য সনাক্তকরণ।
পরিপূর্ণ তথ্য আহরণপ্রয়োজনীয় সব তথ্য বিশদভাবে সংগ্রহ।
তথ্য যাচাই ও সত্যতা নির্ধারণসংবেদনশীল তথ্য যাচাই, নকল বা ভুল তথ্য থাকলে সেগুলো বাদ দেয়া।
ঝুঁকির সূক্ষ্মতর বিশ্লেষণঝুঁকির প্রকৃতি ও মাত্রা নিরূপণ ও ঝুঁকি হ্রাসে পরিকল্পনা প্রণয়ন।
বিশ্লেষণ ভিত্তিক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণতথ্য ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ঋণ অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত।
ঋণের কাঠামো প্রণয়নঅনুমোদিত ঋণের শর্তাবলী, পরিশোধ পরিকল্পনা ইত্যাদি নির্ধারণ।

 

ঋণ বিশ্লেষণ: ধাপ এবং প্রক্রিয়ার বিস্তারিত:

ঋণ বিশ্লেষণ একটি সুচিন্তিত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ঋণগ্রহীতার অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক সক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়। ঋণ দেয়ার আগে ঝুঁকি নিরূপণ এবং ঋণ ফেরতের সম্ভাবনা যাচাই করা আবশ্যক। ঋণ বিশ্লেষণের প্রধান ধাপগুলোকে পর্যায়ক্রমে সংক্ষেপে নিম্নরূপ আলোচনা করা হলোঃ

(১) ভাবী ঋণগ্রহীতা সংক্রান্ত মৌলিক তথ্য সংগ্রহ
  • আবেদনকারীর ব্যবসায়িক অতীত ও বর্তমান আর্থিক অবস্থা যাচাই
  • আবেদনকারীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ
  • ঋণগ্রহীতা কোনও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা, বিশেষ করে পারিবারিক বা সামাজিক কলহ-সংক্রান্ত তথ্য যাচাই
(২) আবেদনকৃত ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ

ঋণের উদ্দেশ্য, পরিমাণ এবং তা বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা নিরূপণ করা হয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্তঃ

তথ্যের ধরনবিবরণ
ঋণগ্রহীতার তথ্যাদিব্যবসার ধরণ, সাফল্য ও আর্থিক অবস্থা
ঋণ সংক্রান্ত তথ্যাদিঋণের পরিমাণ, শর্তাবলী, অর্থায়ন পরিকল্পনা
প্রাথমিক ঝুঁকিঋণ ফেরত দেয়ার সম্ভাবনা, ঋণগ্রহীতার অতীত ঋণ পরিশোধের ইতিহাস
পূর্ণাঙ্গ তথ্যাদিব্যবসায়িক পরিকল্পনা, বাজার মূল্যায়ন, জামানতের মূল্যায়ন
সংবেদনশীল ঝুঁকির তথ্যাদিরাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি বিশ্লেষণ
(৩) ঝুঁকির প্রাথমিক পুনরীক্ষণ ও চূড়ান্ত বিশ্লেষণের জন্য তথ্য সনাক্তকরণ
  • ব্যবসায়ীর নিষ্ঠা, অভিজ্ঞতা ও আর্থিক লেনদেনের সুনাম মূল্যায়ন
  • রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ ও ঝুঁকি নিরূপণ
  • ব্যবসার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক বিশ্লেষণ
  • নগদ প্রবাহের স্থিতিশীলতা এবং ঋণ ফেরতের সম্ভাবনা যাচাই
  • ঋণের ব্যবহার ও ব্যবসার উপর এর প্রভাব মূল্যায়ন
(৪) অধিকতর পরিপূর্ণ তথ্য আহরণ
  • ব্যবসায়িক পরিকল্পনার বিস্তারিত সংগ্রহ
  • ব্যবসার ক্রিয়াকলাপ ও আর্থিক উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ
  • প্রয়োজনীয় সম্পূরক আর্থিক তথ্য ও পূর্বাভাস বিশ্লেষণ
(৫) সংবেদনশীল তথ্য যাচাই
  • ব্যবসায়িক স্থান পরিদর্শন
  • ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ক ও অন্যান্য ব্যবসায়িক যোগাযোগ যাচাই
  • ব্যবসার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ
  • ক্রয়-বিক্রয় ও ঋণ আদায়ের হার যাচাই
(৬) ঝুঁকির সূক্ষ্মতম বিশ্লেষণ
  • ব্যবসার মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিষ্ঠা ও দক্ষতা মূল্যায়ন
  • ঋণ ফেরতের মানসিক দৃঢ়তা নিরূপণ
  • রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি বিশ্লেষণ
  • ব্যবসার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক চিহ্নিতকরণ
  • ঋণের পরিচালনার সম্ভাবনা ও নগদ প্রবাহের শক্তি মূল্যায়ন
  • জামানত ও অন্যান্য নিরাপত্তা যাচাই
(৭) বিশ্লেষণ ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ
  • ঋণের ঝুঁকি স্তর নির্ধারণ
  • ঝুঁকি গ্রহণযোগ্য না হলে ঋণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান সহ কারণ উল্লেখ
  • ঝুঁকি গ্রহণযোগ্য হলে ঋণ অনুমোদনের সুপারিশ
(৮) ইতিবাচক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ঋণের কাঠামো প্রণয়ন
  • ঋণের ধরণ, মেয়াদ ও সুদের হার নির্ধারণ
  • শর্তাবলী গ্রহণযোগ্য হলে ঋণ অনুমোদন
  • ঋণগ্রহীতার সাথে শর্তাবলী আলোচনা
  • প্রয়োজনীয় দলিলপত্র প্রস্তুত ও সংরক্ষণ

 

ঋণ বিশ্লেষনের দৃষ্টি (View Points of Credit Analysis)

ঋণ কার্যক্রম ব্যাংকের জন্য এক ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ ব্যাংক যে তহবিল থেকে ঋণ প্রদান করে, তার বেশির ভাগই আসে আমানতকারীদের কাছ থেকে। ব্যাংককে অবশ্যই সেই তহবিলের মালিকদের টাকা চাহিদা মত ফেরত দিতে হয়। সুতরাং, ব্যাংকের দেওয়া ঋণ যথাসময়ে ফেরত না এলে ব্যাংক আমানতকারীদের আস্থা হারাতে পারে এবং নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অন্যদিকে, ঋণ কার্যক্রমই ব্যাংকের মুনাফার প্রধান উৎস। তাই আমানতকারীদের আস্থা রক্ষা করে নিরাপদ ও লাভজনক ঋণ প্রদানের পদ্ধতি অবলম্বন করাই ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য।

ঋণ ফেরতের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে ব্যাংক ঋণ ও ঋণগ্রহীতা সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে। এই প্রক্রিয়াকেই ঋণ বিশ্লেষণ (Credit Analysis) বলা হয়। ঋণ বিশ্লেষণের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও মূল লক্ষ্য একটাই — নিরাপদ ঋণ প্রদান ও তার সঠিক ফেরত আদায় নিশ্চিত করা।

১৯৭৫ সালে ব্যাংক বিশেষজ্ঞ Jack R Crigger তার গবেষণায় একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি উপস্থাপন করেন যার নাম “Five Cs of Credit” বা পাঁচটি সি। এর পাশাপাশি CAMPARI, PARSAR, এবং 5Rs নামক বিভিন্ন ঋণ বিশ্লেষণ পদ্ধতিও রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন ব্যাংক ও ঋণদাতাদের মধ্যে ব্যবহৃত হয়।

 

ঋণ বিশ্লেষণের জনপ্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি সমূহ
পদ্ধতিউপাদানসমূহব্যাখ্যা
CAMPARIC = Character (চরিত্র), A = Amount (পরিমাণ), M = Means (পরিশোধ উৎস), P = Purpose (উদ্দেশ্য), A = Accountability (দায়িত্বশীলতা), R = Risk (ঝুঁকি), I = Insurance (বীমা)ঋণগ্রহীতার ব্যক্তিত্ব ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা যাচাই করা হয়। ঋণের পরিমাণ, উদ্দেশ্য, ঝুঁকি ও বীমার বিষয়গুলোও বিবেচনায় আনা হয়।
PARSARP = Purpose (উদ্দেশ্য), A = Amount (পরিমাণ), R = Reason (ঘাটতির কারণ), S = Source of Repayment (পরিশোধের উৎস), A = Ability (ক্ষমতা), R = Risk (ঝুঁকি)ঋণ নেওয়ার উদ্দেশ্য, পরিমাণ, ঘাটতির কারণ, ঋণ পরিশোধের উৎস এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হয়।
Five CsCharacter (চরিত্র), Capacity (ক্ষমতা), Capital (পুঁজি), Collateral (জামানত), Condition (অবস্থা)ঋণগ্রহীতার বিশ্বাসযোগ্যতা, পরিশোধের সক্ষমতা, পুঁজি, জামানত ও ব্যবসার অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়। সবচেয়ে প্রচলিত এবং কার্যকর পদ্ধতি।
5 RsResponsibility (দায়িত্বশীলতা), Reliability (বিশ্বাসযোগ্যতা), Respectability (শ্রদ্ধাপ্রাপ্তি), Resource (সম্পদের উৎস), Return possibility (আয় সম্ভাবনা)ঋণগ্রহীতার দায়িত্বশীলতা, বিশ্বাসযোগ্যতা, সম্মান, সম্পদের উৎস ও আয় সম্ভাবনা বিবেচনা করা হয়।

 

Five Cs পদ্ধতির বিস্তারিত পরিচিতি

Five Cs পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। নিচের টেবিলে এটির উপাদানসমূহ ও সেগুলোর বিশ্লেষণের দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হলো:

সি (C)অর্থবিশ্লেষণের উপায়
Character (চরিত্র)ঋণগ্রহীতা কি চুক্তি অনুযায়ী ঋণ ফেরত দেবে?– ব্যাংকের সঙ্গে পূর্বের ঋণ লেনদেনের অভিজ্ঞতা
– অন্য ঋণদাতাদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ
– আবেদনপত্রের তথ্য যাচাই
Capacity (ক্ষমতা)ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতা– মাসিক আয় ও খরচের তুলনা
– আয়ের উৎস ও স্থিতিশীলতা
– আর্থিক অবস্থার স্থায়িত্ব
– ইতিবাচক তারল্য (Liquidity)
Capital (পুঁজি)ব্যবসার অসুবিধার মধ্যে বিকল্প পুঁজি সংগ্রহের ক্ষমতা– নীট সম্পত্তির পরিমাণ
– একক মালিকানাধীন বা অংশীদারির ব্যক্তিগত সম্পত্তি
– শেয়ারহোল্ডারদের দাবি যোগ্য তহবিল
Collateral (জামানত)ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে অক্ষম হলে জামানত বিক্রি করে ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা– ঋণ ও জামানতের অনুপাত
– জামানতের সহজ বিক্রয় যোগ্যতা
Condition (অবস্থা)অর্থনৈতিক অবস্থা ও তার প্রভাব– ঋণের মেয়াদকালের মধ্যে অর্থনৈতিক পূর্বাভাস
– ঋণগ্রহীতার আয়ের উৎস স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা

 

ঋণ বিশ্লেষণের এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ব্যাংককে ঝুঁকি কমিয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। যার ফলে ঋণ প্রদানের পরিপূর্ণতা ও ব্যাংকের মুনাফার নিশ্চয়তা বৃদ্ধি পায়।

 

ঋণ বিশ্লেষণে আর্থিক অনুপাতের ব্যবহার

 

ঋণ বিশ্লেষণে আর্থিক অনুপাতের ব্যবহার

[Use of Financial Ratios for Credit Analysis]

ঋণ বিশ্লেষণে আর্থিক বিবরণী থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন অনুপাত নিরূপণের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহণের উপযুক্ততা ও সক্ষমতা বিশ্লেষণ করা হয়। এসব অনুপাত সাধারণত চারটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত:

 

. তারল্য নিরূপক অনুপাত (Liquidity Ratios)

উদ্দেশ্য: স্বল্পমেয়াদী দায় পরিশোধে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নির্ধারণ।

অনুপাতের নামনির্ণায়ক সূত্র
১. চলতি অনুপাত (Current Ratio)চলতি সম্পত্তি / চলতি দায়
২. এসিড টেস্ট অনুপাত(চলতি সম্পত্তি – মজুতপণ্য) / চলতি দায়
৩. চলতি টেস্ট অনুপাতচলতি পুঁজি / চলতি সম্পত্তি
৪. মজুতমাল অনুপাতমজুতমাল / চলতি সম্পত্তি

 

. ব্যবস্থাপনা দক্ষতা নিরূপক (Efficiency Ratios)

উদ্দেশ্য: ব্যবস্থাপনার সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা ও বিক্রয় ও আদায় চক্র বিশ্লেষণ।

অনুপাতের নামনির্ণায়ক সূত্র
১. গড় আদায় মেয়াদ অনুপাতআদায়যোগ্য গড় দেনাদার / দিনপ্রতি গড় বিক্রয়
২. মজুতপণ্য চক্র অনুপাতবিক্রয় / গড় মজুতপণ্য
৩. স্থায়ী সম্পত্তি চক্র অনুপাতবিক্রয় / নিট স্থায়ী সম্পত্তি
৪. মোট সম্পত্তি চক্র অনুপাতবিক্রয় / মোট সম্পত্তি
৫. মুনাফা বিক্রয় অনুপাতমুনাফা / বিক্রয়

 

. পুঁজিঋণ ভারসাম্য নিরূপক (Leverage Ratios)

উদ্দেশ্য: আর্থিক ঝুঁকি এবং প্রতিষ্ঠানটির ঋণ ও পুঁজির ভারসাম্য যাচাই।

অনুপাতের নামনির্ণায়ক সূত্র
১. ঋণ-সম্পত্তি অনুপাতমোট ঋণ / মোট সম্পত্তি
২. ঋণ-মালিকের পুঁজি অনুপাতদীর্ঘমেয়াদী ঋণ / মালিকের মোট পুঁজি
৩. সুদের গুণিতক অনুপাতকর ও সুদের পূর্ব মোট আয় / বার্ষিক সুদ ব্যয়
৪. গড় পাওনাদার চক্র অনুপাতগড় পাওনাদার / দিনপ্রতি গড় ক্রয়

 

. লাভজনকতা নিরূপক (Profitability Ratios)

উদ্দেশ্য: বিক্রয় ও সম্পদের উপর কতটা লাভ হচ্ছে তা নির্ণয়।

অনুপাতের নামনির্ণায়ক সূত্র
১. বিক্রয়লব্ধ আয়নিট আয় / বিক্রয়
২. সম্পত্তিলব্ধ আয়নিট আয় / মোট সম্পত্তি
৩. মালিকের পুঁজিলব্ধ আয়নিট আয় / মালিকের মোট পুঁজি
৪. মোট মুনাফা অনুপাতমোট আয় / বিক্রয়
৫. উৎপাদন ব্যয় বিক্রয় ব্যয় অনুপাতউৎপাদন ব্যয় / বিক্রয় ব্যয়
৬. বন্টন ব্যয় বিক্রয় ব্যয় অনুপাতবন্টন ব্যয় / বিক্রয় ব্যয়
৭. প্রশাসনিক ব্যয় বিক্রয় ব্যয় অনুপাতপ্রশাসনিক ব্যয় / বিক্রয় ব্যয়

 

এই অনুপাতগুলোর সঠিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সহজেই নির্ধারণ করতে পারে যে ঋণগ্রহীতা আর্থিকভাবে কতটা শক্তিশালী, পরিচালন দক্ষতা কেমন, এবং ঋণ ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা কতটা সন্তোষজনক।

 

ঋণের দলিলাদী: ঋণ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় দলিলপত্রের গুরুত্ব ধরন

ব্যাংকিং কার্যক্রমে ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল পদক্ষেপ। ঋণের কার্যকর পরিচালনা, পুনরুদ্ধার এবং আইনি সুরক্ষার জন্য সঠিক ও সুনির্দিষ্ট দলিলপত্র প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, ঋণ খেলাপির মতো পরিস্থিতিতে এসব দলিল আইনি ভিত্তি ও প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

 

দলিলপত্রের আইনগত গুরুত্ব

ব্যাংক যখন ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হয় এবং ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করে বা এড়িয়ে চলে, তখন ব্যাংক আদালতের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এসময় আদালত ঋণচুক্তির বৈধতা, জামানতের মালিকানা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক প্রমাণাদি বিচার করে সিদ্ধান্ত দেয়। তাই ঋণ সম্পর্কিত সকল আইনগত দলিল যথাযথভাবে প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করাই ব্যাংকের জন্য নিরাপদ ও বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ।

 

সাধারণভাবে ব্যবহৃত দলিলপত্র

নিচের ছকে সাধারণভাবে সব ধরনের ঋণের জন্য প্রয়োজনীয় মূল দলিলপত্রগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো:

ক্র.দলিলের নাম
মূল ঋণ চুক্তিপত্র (Loan Agreement)
পূরণকৃত ঋণ আবেদনপত্র
ঋণগ্রহীতার আর্থিক বিবরণী
ঋণ বিশ্লেষণ প্রতিবেদন
জামানতের প্রমাণপত্র
ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষর ও অনুমতি
পরিচালনা পর্ষদের ঋণ অনুমোদন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত
অংশীদারী ব্যবসার চুক্তিনামা
যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিশ্চয়তা প্রদান পত্র
১০নিশ্চয়তা প্রদানকারী ব্যক্তির আর্থিক বিবরণী
১১ব্যাংক ও গ্রহীতার যোগাযোগের প্রমাণ
১২আইনি চুক্তিনামা (Stamped Agreement)
১৩জামানতের মালিকানার প্রমাণপত্র

 

ঋণের ধরন অনুযায়ী অতিরিক্ত দলিলপত্র

নিম্নে কিছু নির্দিষ্ট ঋণ বা জামানতের ধরন অনুযায়ী অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় দলিলপত্রের একটি বিস্তৃত তালিকা দেওয়া হলো:

দলিলের নামব্যাখ্যা / ব্যবহার
Fixed Deposit Receipt (FDR)জামানত হিসেবে ব্যবহৃত স্থায়ী আমানতের প্রমাণ
Letter of Attorneyনির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ
Demand Promissory Noteঋণগ্রহীতার কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রতিশ্রুতি চিঠি
Letter of Continuityঋণের ধারাবাহিকতা নিশ্চিতকারী দলিল
Deed of Hypothecationজামানতকৃত মালামালের ঘোষণাপত্র
Letter of Guaranteeগ্যারান্টার কর্তৃক দায়ভার গ্রহণপত্র
Mortgage of Propertyস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক দলিল
Latest Stock Statementপণ্যের সর্বশেষ স্টক বিবরণ
Letter of Undertakingনির্দিষ্ট অঙ্গীকারপত্র
Insurance Policy (Assigned to Bank)সম্পদের ঝুঁকির বিরুদ্ধে বিমা
Notice of Assignmentহস্তান্তর সংক্রান্ত নোটিশ
Stamped Letter on Lienজামানত রূপে রাখা সম্পদের ঘোষণা
Standing Instruction to Bankস্বয়ংক্রিয় অর্থ পরিশোধ নির্দেশনা
Undated Surrender Consent Letterবিমা পলিসি বাতিলের পূর্বানুমতি
Notes/Bonds Endorsed to Bankব্যাংকের নামে হস্তান্তরিত বন্ড/নোট
Memorandum of Depositsজামানতের তালিকা
Declaration of Ownershipসম্পত্তির মালিকানা ঘোষণা
Legal Assignment of Debtঋণ হস্তান্তরের আইনি দলিল
Power of Attorney (to Bank)ব্যাংকের নামে ক্ষমতা প্রদান দলিল
Agreement for Pledge/Creditপণ প্রতিশ্রুতি বা ক্রেডিট চুক্তি
Letter of Lien (with Set-off Clause)দায় ও পাওনার ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ দলিল
Insurance Covering Goodsপণ্যের ঝুঁকির বিরুদ্ধে বিমা দলিল
Invoice of Pledged Goodsজামানতকৃত পণ্যের চালান
Go-down Possession Letterগুদাম দখল হস্তান্তরের দলিল
Certificate of Charge Registrationকোম্পানির ক্ষেত্রে জামানত নিবন্ধন সনদ
Letter for Bill/Cheque Collection Instructionবিল/চেক সংগ্রহের নির্দেশনা দলিল

 

ঋণ কার্যক্রমে দলিলাদির যথাযথ প্রস্তুতি ও সংরক্ষণ একটি ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। ঋণ গ্রহীতা খেলাপি হলে আইনি প্রতিকার পেতে এইসব দলিলই একমাত্র অবলম্বন হয়ে ওঠে। তাই ঋণ অনুমোদনের পূর্বেই প্রয়োজনীয় সব দলিল সঠিকভাবে যাচাই, সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা উচিত।

 

 

Leave a Comment