ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (CIB) হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন নব-প্রতিষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ, যা দেশের ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সরবরাহের কাজ করে। এটি একটি সমৃদ্ধ তথ্য ভাণ্ডার, যা ব্যাংকিং খাতের ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতাদের তথ্য সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
CIB বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকিং তথ্যের স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ঋণনীতি প্রণয়ন ও কার্যকরী করার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
Table of Contents
প্রধান কার্যক্রম
ক্রমিক | কার্যক্রম | বিবরণ |
১ | তথ্য সংগ্রহ | বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা। |
২ | তথ্য সংকলন ও শ্রেণীবদ্ধকরণ | প্রাপ্ত তথ্য গুলো শ্রেণীবদ্ধ ও প্রক্রিয়াজাত করে কম্পিউটার ভিত্তিক সিস্টেমে সংরক্ষণ। |
৩ | তথ্য সরবরাহ | সরকার, তফশীলি ব্যাংক ও অর্থলগ্নী সংস্থাগুলোর ঋণনীতি প্রণয়ন ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ। |
৪ | ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিস্থিতি নজরদারি | ঋণগ্রহীতাদের বকেয়া ঋণ পরিমাণ ও পরিশোধের তথ্য নিয়মিত আপডেট। |
CIB এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ইতিপূর্বে বাংলাদেশের অর্থবাজারে তথ্য আদানপ্রদানে কোন কেন্দ্রীভূত ও সুশৃঙ্খল পদ্ধতি না থাকায় ঋণনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিত। এর ফলে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিমাণ ও ঋণগ্রহীতা তথ্যের বিভ্রান্তি ও অসামঞ্জস্যতা দেখা যেত।
CIB এর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই তথ্যগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে সংগ্রহ ও পরিচালিত হওয়ায় ঋণনৈতিক প্রণয়ন প্রক্রিয়া অনেক বেশি কার্যকর ও স্বচ্ছ হয়েছে, যা অর্থবাজারের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া ও ফরম
CIB তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত ফরম-১ (CIB ফরম-১) ব্যবহার করে থাকে। ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ এই ফরম পূরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করে। এই ফরমে মোট ৫টি সেগমেন্ট রয়েছে, যা নিম্নরূপ:
সেগমেন্ট নম্বর | বিষয়বস্তু |
সেগমেন্ট ১ | ঋণগ্রহীতার তথ্য (ঋণগ্রহীতামাত্র) |
সেগমেন্ট ২ | ঋণগ্রহীতার তথ্য (কেবলমাত্র মালিকদের) |
সেগমেন্ট ৩ | ঋণগ্রহীতার তথ্য (ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান) |
সেগমেন্ট ৪ | উদ্ঘাটন ম্যাট্রিক্স (উদ্ঘাটিত তথ্যসমূহ) |
সেগমেন্ট ৫ | জামিনদারের তথ্য (তৃতীয় পক্ষের জামিন/সিকিউরিটি) |
তথ্য পূরণের নিয়মাবলী
- নিয়মিত সময়সীমা
- ১ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব ঋণবাকির তথ্য মাসিক ভিত্তিতে আগামী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে প্রেরণ করতে হবে।
- অন্যান্য ঋণ তথ্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মাসের শেষ তারিখের মধ্যে পাঠাতে হবে।
- তথ্য প্রদান পদ্ধতি
- ফরম-১ এ তথ্য ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে (Capital Letter) টাইপ বা স্পষ্টভাবে লিখতে হবে।
- পেন্সিল দিয়ে লেখা তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়।
- ঋণের পরিমাণ লক্ষ টাকায় পূরণ করতে হবে, অন্য কোনো একক ব্যবহার করা যাবে না।
- ফরম পূরণের অন্যান্য নির্দেশনা
- মালিক ও ঋণগ্রহীতার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য পূরণের ক্ষেত্রে পূর্বের তথ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণতা রাখতে হবে।
- ফরম-১ এর কোনো সেগমেন্টে স্থান না থাকলে অতিরিক্ত শীট সংযুক্ত করা যাবে।
- শাখাগুলোর প্রধান কার্যালয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও পরামর্শ রাখা বাধ্যতামূলক।
সনদপত্র ও তথ্য যাচাই
বিভিন্ন শাখা থেকে ফরম দাখিলের সময় নিম্নলিখিত তথ্য সংবলিত সনদপত্র প্রধান কার্যালয়ে পাঠাতে হবে:
ক্রমিক | তথ্যের বিবরণ |
ক | মোট শাখার সংখ্যা |
খ | দাখিলকৃত শাখার সংখ্যা |
গ | দাখিলকৃত শাখাগুলোর নামের তালিকা |
ঘ | বাতিলকৃত ঋণগ্রহীতার ও ছাড়কৃত জামিনদারের নাম, ঠিকানা ও কোড নম্বর |
ঙ | নতুন ঋণগ্রহীতার তথ্যের নিশ্চয়তা |
অতিরিক্ত তথ্য ও সম্পূরক দিক
CIB এর প্রযুক্তিগত দিক
- তথ্য সংরক্ষণে MIS (Management Information System) ব্যবহার করা হয়, যা তথ্য বিশ্লেষণ এবং রিপোর্টিংয়ে বিশেষভাবে কার্যকর।
- আধুনিক কম্পিউটার সিস্টেম ও ডেটাবেস প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
CIB এর সুবিধা
- ঋণগ্রহীতাদের ঋণ ইতিহাস জানা থাকায় ঋণ দেয়ার ঝুঁকি কমে।
- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দেওয়ার আগে নির্ভরযোগ্য তথ্য পায়, যা ঋণ ক্ষতি কমায়।
- অর্থনীতির স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
- ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন তথ্য আদান প্রদান প্রক্রিয়া চালু করার মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদানের গতি ও নির্ভুলতা বৃদ্ধি।
- ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক আচরণ পর্যবেক্ষণের জন্য উন্নত বিশ্লেষণাত্মক মডেল তৈরি।
ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (CIB) বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা যা কেন্দ্রীয়ভাবে ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সরবরাহের মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং খাতকে আরও স্বচ্ছ, দক্ষ ও কার্যকর করে তুলছে। সঠিক ও সময়োপযোগী তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।